আজ যোগেন মন্ডলের করুণ কাহিনী শুনু।

@@ আজ যোগেন মন্ডলের করুণ কাহিনী শুনুন@@
………………………………………………
√√দেশ ভাগের সেই সময় যোগেন মন্ডল ছিলেন নমঃশুদ্র জাতের অর্থাৎ পূর্ববঙ্গের (বাংলাদেশ) নিচুজাতির লোকেদের সব থেকে বড় নেতা। নমঃশুদ্রদের কাছে ওনার কথাই ছিল শেষ কথা। দেশ ভাগের সময় উনি বললেন – “আমার কোন নমঃশূদ্র ভাই হিন্দুস্তানে যাবে না।… পাকিস্তান দিতে হবে…. দিতে হবে। – এই পাকিস্তানে আমরা পাকিস্তানীরা আর নমঃশূদ্ররা ( তিনি নমঃশূদ্রদের হিন্দু বলেই মনে করতেন না ) ভাই-ভাই হয়েই থাকব। হিন্দুদের সঙ্গে থাকব না। দেখবেন, আমাদের কোন অসুবিধা হবে না”। বাংলাদেশে আওয়াজ উঠল – ” নমঃশুদ্র-মুসলিম ভাইভাই বর্ণহিন্দুর রক্ত চাই”। পাকিস্তানের জন্ম হল, যোগেন্দ্র নাথ মন্ডল পাকিস্তানের আইন মন্ত্রী হয়ে বসলেন — এই পর্যন্ত সব ঠিকঠাকই চলছিল, কিন্তু তারপরেই শুরু হল মহা গন্ডগোল…!! পাকিস্তান হওয়ার ঠিক পরে অর্থাৎ – 1947 এর 15 অগাস্টের পর থেকেই হিন্দুদের উপরে নেমে এলো অমানুষিক অত্যাচার। বিশেষ করে, 1950 এর ফেব্রুয়ারির পর থেকে – সব থেকে বেশী অত্যাচার নেমে এলো গরীব নমঃশূদ্র জাতের উপরে। কারন ততদিনে উচ্চবর্নের হিন্দু হয় বর্ডার ক্রস করে পালিয়েছেন, নয়তো মরেছেন অথবা কিছু তরবারীর সামনে কলেমা পড়ে মুসলমান হয়েছেন। অতএব নমঃশুদ্র জাতের মেয়ে বউদের উপরে ধর্ষনের সব সীমা ছাড়িয়ে গেল। দক্ষিণ বাংলাদেশের ভোলা দ্বীপে নমঃশুদ্র জেলে মেয়েদের আট থেকে সত্তর বছর বয়স্ক প্রায় দুই হাজার মেয়ে বউকে একইদিনে দুপুরে গনহাড়ে ধর্ষণ করা হল, একই সাথে মাঠে শুইয়েও ধর্ষণ চলল।
সর্বত্র হিন্দু মেয়ে বউদের উপরে বিশেষ করে তপশিলী মেয়ে বউদের তাঁদের বাড়ির উঠোনেই রেপ করা হতে লাগল – আবার রাতের বেলা শিশু পুত্র কে মেরে ফেলা হবে এই ভয় দেখিয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া হতে লাগল — রাত দশটায় নিয়ে যাওয়া হতে লাগলো আর ফেরত দিতে লাগল ভোরের বেলা – স্বামী পুত্রের প্রাণ রক্ষায় তপশীলি মেয়ে বউরা তাই করতে লাগল। যোগেন মন্ডলের ছিল দুই মেয়ে আর বউ। অবস্থা বেগতিক দেখে যোগেন মন্ডল তার মেয়ে বউকে নিয়ে তাঁর প্রাণপ্রিয় নমঃশূদ্র গরীব ভাই বোনেদের ফেলে রেখে, নমঃশুদ্র মেয়ে বউদের হায়নার মুখে রেখে পালিয়ে কলকাতায় এলেন… সেই হিন্দুদের কাছে, … সেই হিন্দুস্থানের মাটিতে। .. যা এককালে তাঁর কাছে চক্ষুশূল ছিল। পড়ে রইল তাঁর প্রায় দেড় কোটি অত্যন্ত গরীব নমঃশূদ্র জাতের ভাই বোনেরা যারা তার কথা শুনে ১৯৪৭ এ দেশভাগের সময়েও ভারতে আসার সুযোগ থাকা স্বত্বেও ভারতে আসেননি। অবশেষে, তিনি তাঁর অভিজ্ঞতা দিয়ে বুঝলেন – “ঐ দেশে ( পুর্ব পাকিস্থান/ অধুনা বাংলাদেশ) আর হিন্দু থাকতে পারবে না”…। সেই ট্র্যাডিশন সমানে চলছে। ভাবুন একবার, একটি দেশের এক আইন মন্ত্রী শুধুমাত্র হিন্দু হবার কারনে প্রান ভয়ে রাতের বউ মেয়ে নিয়ে অন্ধকারে অন্য একটি দেশে পালিয়ে গিয়ে সেখান থেকে তৎকালীন পাকিস্থানের প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খান’কে তাঁর পদত্যাগ পত্র পাঠিয়ে দিচ্ছেন! এই হল সেকুলার বিপ্লব। আর – এই হল এদের বিচার আর চিন্তা ধারা। বর্তমানের দিকভ্রষ্ট রাজনীতির দলিত- মুসলিম ঐক্যের এক উজ্জ্বল এবং আদর্শ উদাহরণ পঞ্চাশের দশকের এই যোগেন্দ্র নাথ মন্ডল ।