বাঙালি_পল্টনের_ইতিহাস_পর্ব_১

#বাঙালি_পল্টনের_ইতিহাস_পর্ব_১

নজরুলের জীবনী পড়ার সময় একটি লাইন হয়ত সবাই পড়েছেন, নজরুল প্রথম বিশ্বযুদ্ধে বাঙালি পল্টনে যোগ দেন। কি ছিল সেই বাঙালি পল্টন?

রেজিমেন্ট এর বাংলা হল পল্টন, যদিও পল্টন শব্দটি এসেছে প্লাটুন থেকে।

বিভিন্ন সেনাবাহিনীতে রেজিমেন্ট একটি প্রশাসনিক এবং সৈনিক নিয়োগ কেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত। ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর পদাতিক রেজিমেন্টে সাধারণত জাতি/অঞ্চল ভিত্তিতে সৈনিক নিয়োগ দেওয়া হয়। ব্রিটিশ উপনিবেশ ছিল এমন দেশগুলোতেও সাধারণত একই নিয়ম অনুসরন করা হয়।

ব্রিটিশ সেনাবাহিনী তাদের “রয়্যাল গুর্খা রাইফেলস” এর জন্য নেপাল থেকে গুর্খা নিয়োগ দেয়।

বেঙ্গল আর্মি এর ইউরোপীয় রেজিমেন্ট থেকে ১৭৫৬ সালে গঠিত হয়। পরের বছর স্থানীয়ভাবে সংগ্রহ করা বাঙালি সিপাহীদের নিয়ে ‘’লাল পল্টন’’ ব্যাটেলিয়ন গঠিত হয়। ব্রিটিশ সেনাদের মত প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও অস্ত্রধারী এই বাহিনী ১৭৫৭ সালের পলাশীর যুদ্ধে অংশ নেয় এবং ১৭৬৪ সাল পর্যন্ত ২০টিরও বেশি ভারতীয় ব্যাটেলিয়ন গড়ে উঠে।

ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ধীরে ধীরে বেঙ্গল আর্মির শক্তিবৃদ্ধি করে। ১৭৯৬ সাল নাগাদ তিন ব্যাটেলিয়ন ইউরোপীয় গোলন্দাজ, তিন রেজিমেন্ট ইউরোপীয় পদাতিক, দশ রেজিমেন্ট ভারতীয় অশ্বারোহী এবং বারো রেজিমেন্ট (প্রত্যেকটিতে দুই ব্যাটেলিয়ন করে) ভারতীয় পদাতিক বাহিনী গড়ে তোলে।

১৮২৪ সালে বেঙ্গল আর্মিকে পুনরায় সংগঠিত করা হয়। নিয়মিত পদাতিক বাহিনীকে ৬৮টি একক ব্যাটেলিয়ন রেজিমেন্টে ভাগ করা হয়। এগুলোকে তাদের প্রতিষ্ঠাকাল অনুযায়ী সংখ্যা দ্বারা চিহ্নিত করা হয়। নয়টি অতিরিক্ত পদাতিক রেজিমেন্ট পরবর্তীকালে গঠিত হয়। ১৮২৬ থেকে ১৮৪৩ এর মধ্যে কয়েকটি ইউনিটকে ভেঙ্গে দেয়া হয়।

১৮৪০ এর দশকে বেঙ্গল আর্মিতে অনিয়মিত পদাতিক ও অশ্বারোহী রেজিমেন্ট এতে নতুন মাত্রা আনে।এগুলো স্থায়ীভাবে গঠিত ইউনিট হলেও নিয়মিত বাহিনীর তুলনায় এরা নিয়মমাফিক প্রশিক্ষণ ও ব্রিটিশ অফিসার স্বল্প সংখ্যায় পেত। সেনা রিক্রুটের মূল উৎস ছিল উচ্চ বর্ণের ব্রাহ্মণ ও রাজপুত গোষ্ঠী। তবে আটটি নিয়মিত অশ্বারোহী রেজিমেন্ট মূলত মুসলিম সওয়ারদের নিয়ে গঠিত ছিল।

১৮৪০ ও ১৮৫০ এর দশকে বেশ কিছু সংখ্যক নেপালি গুর্খা ও পাঞ্জাবের শিখ গোষ্ঠীর মানুষ বেঙ্গল আর্মির অন্তর্ভুক্ত হয়। গুর্খা ও শিখরা পৃথক ইউনিটে দায়িত্ব পালন করলেও কিছু সংখ্যক পরে পদাতিক রেজিমেন্টের অন্তর্ভুক্ত হয়।

সর্বমোট ৬৪টি নিয়মিত পদাতিক ও অশ্বারোহী রেজিমেন্ট সিপাহী বিদ্রোহের সময় বিদ্রোহ করে। আবার আনুগত্য সন্দেহজনক হওয়ার জন্য কিছুকে ভেঙ্গে দেয়া হয়।

১৮৫৭ সালের পর থেকে বেঙ্গল আর্মিতে বাঙালিদের সংখ্যা হ্রাস পেতে থাকে। এর কারণ ১৮৫৭ সালের বিদ্রোহে তারা প্রাথমিক ভূমিকা পালন করেছিল।

পাঞ্জাবি মুসলিম, শিখ, গুর্খা, বালুচ ও পাঠানদের মধ্য থেকে সংগ্রহ সেনাদের নিয়ে নতুন ও কম বৈশিষ্ট্যের মিল সম্পন্ন বেঙ্গল আর্মি গঠন করা হয়। তবে বিদ্রোহ পূর্ব সময়কার ১২টি পদাতিক রেজিমেন্ট দায়িত্বপালন অব্যাহত রাখে। এদের ক্ষেত্রে রিক্রুটমেন্টের নিয়ম পূর্বের মতই ছিল। বিভিন্ন উৎস থেকে আগত সেনাদের নিয়ে গঠিত বাহিনী বিদ্রোহের জন্য সংগঠিত হতে পারবে না এমন একটা কথা চালু ছিল।

১৮৯৫ সালে পৃথক তিনটি প্রেসিডেন্সির সেনাবাহিনী বিলুপ্ত করা হয় এবং ভারতের সেনাবাহিনিকে চারটি কমান্ডে ভাগ করা হয়। প্রত্যেক ভাগ একজন লেফটেন্যান্ট জেনারেল দ্বারা পরিচালিত হত। এগুলো হল, মাদ্রাজ (বার্মা সহ), পাঞ্জাব (উত্তর পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ এর অন্তর্ভুক্ত), বাংলা ও বোম্বে (এডেন সহ)।

ক্রমশঃ……

তথ্যঃ

Mollo, Boris (১৯৮১)। The Indian Army।