জ্যোতির্পদার্থবিজ্ঞান মেঘনাদ সাহা FRS, মেঘনাদ সাহা বাঙ্গালীর বিজ্ঞান জগতের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র।

মেঘনাদ সাহা FRS (অক্টোবর ৬, ১৮৯৩ফেব্রুয়ারি ১৬, ১৯৫৬) ছিলেন একজন জ্যোতির্পদার্থবিজ্ঞানী যিনি পদার্থবিজ্ঞানে থার্মাল আয়নাইজেসন তত্ত্বের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে বিখ্যাত। তার আবিষ্কৃত সাহা আয়োনাইজেসন সমীকরণ নক্ষত্রের রাসায়নিক ও ভৌত ধর্মাবলী ব্যাখ্যায় ব্যবহৃত হয়।

জীবনী

 

বার্লিনে তরুণ মেঘনাদ সাহা।

মেঘনাদ সাহার জন্ম ১৮৯৩ সালের ৬ অক্টোবরঢাকার কাছে শ্যাওড়াতলী গ্রামে। গরীব ঘরে জন্ম তার। বাবা জগন্নাথ সাহা ছিলেন মুদি। ছেলেবেলায় সাভারের অধরচন্দ্র উচ্চবিদ্যালয় এ পড়েন এক আত্মীয়ের বাড়িতে ঝুটা কাজের বিনিময়ে থেকে। অর্থাভাবে বহুপ্রতিকূলতার মাঝে তিনি ঢাকা কলেজিয়েট স্কুলে তার স্কুল শিক্ষা সম্পন্ন করেন এবং পরে ঢাকা কলেজে অধ্যায়ন করেন। তিনি কলকাতাপ্রেসিডেন্সী কলেজেসত্যেন্দ্রনাথ বসুপ্রশান্ত চন্দ্র মহালনবিশের সহপাঠী এবং আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসুআচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়ের ছাত্র ছিলেন। ধর্মীয় মতাদর্শে তিনি ছিলেন নাস্তিক

 

সময় ড. সাহা এলাহাবাদ থেকে কলকাতায় প্রত্যাবর্তন করেন এবং ১৯৩৮ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘পালিত অধ্যাপক’ (Palit Professor) হিসেবে যোগদান করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর সময়কালে পদার্থবিজ্ঞানের পাঠ্যক্রমে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন সাধিত হয়। পারমাণবিক পদার্থ বিজ্ঞানে নব আবিষ্কৃত ইউরেনিয়ামের পারমাণবিক বিদারণ বিক্রিয়া (nuclear fission reaction) এবং শিল্প-কারখানায় পারমাণবিক শক্তি ব্যবহারের ওপর অধ্যাপক সাহা গুরুত্ব আরোপ করেন।

তিনি এম.এসসি পাঠ্যক্রমের একটি বিশেষ বিষয় হিসেবে নিউক্লিয়ার ফিজিক্সকে অন্তর্ভুক্ত করেন এবং এর জন্য একটি বিশেষ গবেষণাগার প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন। নিউক্লিয়ার ফিজিক্স চর্চার একটি পৃথক ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার জন্য তাঁর একক প্রচেষ্টার ফলশ্রুতি হিসেবে ১৯৪৮ সালে শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী কলকাতায় এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন এবং ১৯৫১ সালে প্রখ্যাত বিজ্ঞানী মেরী জুলিও কুরী ইনস্টিটিউটটি উদ্বোধন করেন। গবেষণা কেন্দ্রটির নাম দেওয়া হয় ‘ইনস্টিটিউট অব নিউক্লিয়ার ফিজিক্স’। ড. সাহার মৃত্যুর পর প্রতিষ্ঠানটির নামকরণ হয়েছে ‘সাহা ইনস্টিটিউট অব নিউক্লিয়ার ফিজিক্স’।

 

ভারতের অন্য একজন খ্যাতনামা পদার্থ বিজ্ঞানী হোমি ভব (Homi Bhaba) পরমাণু শক্তি কমিশন গঠনের প্রস্তাব করলে ১৯৪৮ সালে ভারত সরকার ড. সাহার মতামত জানতে চান। তিনি এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করেন এবং যুক্তি দেখান যে, প্রয়োজনীয় পরমাণু জনশক্তির যেমন অভাব রয়েছে, তেমনি তখন পর্যন্ত ভারতে এর সুষ্ঠু শিল্পভিত্তি গড়ে ওঠে নি। মেঘনাদ সাহার বিরোধিতা সত্ত্বেও ভারত সরকার ভব-এর প্রস্তাব অনুসারে পরমাণু শক্তি কমিশন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এগিয়ে যায় এবং সাহা নিজেকে ক্রমশ তার সর্বাধিক শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ব পন্ডিত নেহেরুর কাছ থেকে দূরে সরিয়ে নেন।

 

তবে অধ্যাপক সাহা জাতীয় ও আঞ্চলিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি নিয়ে তাঁর চিন্তাভাবনা অব্যাহত রাখেন এবং তাঁর জার্নালে তিনি এসব বিষয় নিয়ে লেখালেখি চালিয়ে যেতে থাকেন। ভারতের নতুন সরকারের কাছে রাজনৈতিক কর্মসূচি হিসেবে তাঁর অনেক চিন্তাভাবনা বলিষ্ঠভাবে উপস্থাপিত হয়। দামোদর উপত্যকার উন্নয়ন, খরা ও দুর্ভিক্ষের পুনঃসংঘটনের সমস্যা, জাতীয় ভিত্তিতে বিজ্ঞানের সংগঠন, জলতাত্ত্বিক গবেষণার উন্নয়ন প্রভৃতি জাতীয় পর্যায়ের নদী উপত্যকা উন্নয়ন কর্মসূচির প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে পরিগণিত হয়।

 

তাঁর রাজনৈতিক দায়বদ্ধতার অনুভূতি তাঁকে ১৯৫১ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে রাজনীতিতে প্রবেশ করতে উদ্বুদ্ধ করে। একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মেঘনাদ সাহা তাঁর নিকটতম কংগ্রেস প্রার্থীকে বিপুল ব্যবধানে পরাজিত করে ভারতের লোকসভার সদস্য নির্বাচিত হন। একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে তিনি ১৯৪৭ সালের দেশ বিভাগের পর লক্ষ লক্ষ শরণার্থীর ত্রাণ ও পুনর্বাসন প্রক্রিয়ায় সংশি­ষ্ট ছিলেন। শরণার্থী পুনর্বাসন প্রক্রিয়াকে সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন করার লক্ষ্যে ড. সাহা বেঙ্গল রিলিফ কমিটি গঠন করেছিলেন।

 

বিস্তৃত জ্ঞানের প্রতি আগ্রহ মেঘনাদ সাহাকে পঞ্জিকা সংস্কার প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত করেছিল। জনগণ এবং শিক্ষার প্রতি সতত নিবেদিত প্রফেসর মেঘনাদ সাহা ছিলেন একজন অক্লান্ত কর্মী। ১৯৫৪-র পর থেকে পরিশ্রমী এই জ্ঞানকর্মীর স্বাস্থ্যের দ্রুত অবনতি ঘটতে শুরু করে এবং ১৯৫৬ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি এক বৈঠকে যোগদানের উদ্দেশ্যে দিলি­র পরিকল্পনা কমিশন দপ্তরে যাওয়ার পথে প্রফেসর মেঘনাদ সাহার মহাপ্রয়াণ ঘটে।  [মধুমিতা মজুমদার এবং মাসুদ হাসান চৌধুরী]

 

গবেষণা

মেঘনাদ
সাহা পরমাণু বিজ্ঞান, আয়ন মণ্ডল, পঞ্জিকা সংস্কার, বন্যা প্রতিরোধ ও নদী পরিকল্পনা বিষয়ে গবেষণা করেন। তাপীয় আয়নবাদ (Thermal Ionaisation) সংক্রান্ত তত্ত্ব উদ্ভাবন করে জ্যোতির্পদার্থবিজ্ঞানে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখেন। মেঘনাদ সাহা সম্পর্কে আলবার্ট আইনস্টাইনের উক্তি

Dr. M.N. Shaha has won an honoured name in the whole scientific world

রচিত গ্রন্থাবলী

  • The Principle of Relativity
  • Treatise on Heat
  • Treatise on Modern Physics
  • Junior Textbook of Heat with Metereology

 

আরো পড়ুন…. 

রসায়নবিদ, বিজ্ঞানশিক্ষক, দার্শনিক, কবি প্রফুল্ল চন্দ্র রায়।।-দূরর্ম

বিখ্যাত নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় ধ্বংসের সেই মর্মান্তিক কাহিনী-দূরর্ম

রাষ্ট্রভাবনা রবীন্দ্রনাথ ও রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ।-দুরর্ম