যদিও ঘুমান্ত মানুষের ঘুম ভাঙ্গাতে পরবেননা। তবুও যারা অত্যাচারিত, তারা কিছুটা শান্তনা পাবে। বাতাস এখন দক্ষিণ দিকে প্রবাহিত হচ্ছে। এখন খুব শক্ত করে হাল ধরে রাখলে, আবার একসময় উল্টা দিকে প্রবাহিত করা সম্ভব।

সাম্প্রদায়িক শক্তির উত্থানের প্রতিবাদে ভারত জুড়ে প্রতিবাদী মানুষের পাল্টা উত্থান অসাম্প্রদায়িক সেক্যুলার শক্তি জয়। গো-মাংস বহন করার অভিযোগে পিটিয়ে মেরে ফেলার ঘটনার প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছে ভারতীয়রা। বিশিষ্ট নাগরিকরা রাস্তায় নেমে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের ক্ষোভ জানাচ্ছেন। কবি, সাহিত্যিক, অভিনয় শিল্পী, খেলোয়ার, সাংবাদিকসহ শিল্পের সব মাধ্যমের শিল্পীরা সোচ্চার হয়ে উঠেছেন। পক্ষান্তরে বাংলাদেশে আমরা কি ঘটতে দেখেছি? ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের উপর হামলা নির্যাতনকালে উল্টো ভিকটিমদের দেশপ্রেম নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করা হয়েছিল। বেশির ভাগ বিশিষ্ট নাগরিকরা ক্রিকেট খেলা নিয়ে মত্ত থেকেছেন। আর আদিবাসী ইস্যুতে তাদের নিশ্চুপতা তাদের উগ্র জাতীয়তাবাদই প্রমাণিত করেছে…।

২.
ভারতের প্রতিবাদের প্রেক্ষাপটে তাদের প্রধানমন্ত্রী বলতে বাধ্য হয়েছেন, গরুকে সন্মান করতে গিয়ে মানুষ হত্যা কখনো সমর্থন করা যায় না। অন্য দিকে আমাদের প্রধানমন্ত্রী দেশে চলমান সাম্প্রদায়িক উত্থানে একটা কথাও বলেননি। বরং জনগণের পালস ধরতে পেরে তিনিও ক্রিকেট খেলায় চোখের পানি ফেলেছেন। খেলোয়ারদের বাড়ি করে দিয়েছেন। অথচ যাদের ধর্মীয় আর জাতিগত পরিচয়ের কারণে ঘর পুড়িয়ে দেয়া হয়েছিল তারা থেকেছে খোলা আকাশের নিচে। প্রধানমন্ত্রী তাদের একটা ফোন করে খবরও নেননি। কারণ ভারতে যে প্রতিবাদ হয়েছে, বুদ্ধিজীবীরা তাদের যে ঐতিহাসিক ভূমিকা রেখেছে বাংলাদেশে সেটা হয়নি।

৩.
বাংলাদেশের বিশিষ্ট নাগরিকদের এই নিরবতার কারণ কি? বাংলাদেশের প্রগতিশীলদের প্রথম প্রজন্ম মনে করতেন ধর্ম বিশ্বাস অবিশ্বাস নির্বিশেষে তাদের ‘মুসলমান’ পরিচয়টি এই অঞ্চলের জন্য বাস্তব এবং গ্রহণযোগ্য। প্রগতিশীল বলে পরিচয় দেয়া সেই প্রজন্মের এখন তৃতীয় প্রজন্ম বাংলাদেশে আজো নিজেদের ‘মুসলমান’ বলেই মনে করেন। একই সঙ্গে তারা ‘বাঙালী জাতীয়তাবাদের’ ধারক-বাহক হওয়াতে ধর্মীয় ও জাতিগতভাবে পৃথক সত্ত্বা নিজেদের ভেতর অনুভব করেন। ভারতে হিন্দুত্ববাদ এ কারণেই টিকবে না। দেশের মাথা যেখানে নত না হয়ে তীব্র প্রতিবাদে মুখর হয়েছে সেখানে হিন্দু মৌলবাদ তাদের পরাজয় অচিরেই দেখতে পাবে। এর ঠিক বিপরীত কারণেই বাংলাদেশের জন্য কোন সুখবর নেই। বাংলাদেশের মাথায় পঁচন ধরেছিল সবার আগে…।

৪.
মুসলমানদের সেক্যুলার হতে গেলে নাস্তিক হতে হয়! নতুবা শেখ হাসিনার মত সেক্যুলার হতে হবে। অন্যদিকে বৌদ্ধ-খ্রিস্টান-হিন্দু-ইহুদীদের সেক্যুলার হতে গেলে নাস্তিক হতেই হবে এমন নয়- একটু উদার হলেই চলে। এগুলো এতটাই তিতা সত্য যে বেশির ভাগ মানুষেরই হজম হবে না। উল্টো আমাকেই সাম্প্রদায়িক ট্যাগ মেরে দিবে। ইসলাম ধর্মের দর্শনটার সঙ্গে পৃথিবীর অন্য সব ধর্মের দর্শনে একটা মৌলিক পার্থক্য রয়ে গেছে। সেটা রাজনীতি। সব ধর্ম বিশ্বাসী মুসলমানই ইসলামের সেই রাজনীতি দ্বারা চেতনে অবচেতনে প্রভাবিত হবেই…।
Pathok