নিজেদের ধর্মের মধ্যেও কোনো ভিন্নমত কিংবা ফেরকা তারা সহ্য করতে রাজি নয়।

আফগানিস্তানের কাবুলে আত্মঘাতী বোমা হামলায় ৬৩ জন সাধারণ মানুষ মারা গেছে। প্রায় দুই শতাধিক মানুষ আহত, যার মধ্যে অনেকেরই মারা যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এই সমস্ত মানুষ এখানে এসেছিল বিয়ের অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণ রক্ষা করতে, একমাত্র শিয়া মতাবলম্বী হওয়া ছাড়া তাদের আর অন্য কোনো অপরাধ আছে বলে মনে হয় না।

শিয়া মতাবলম্বী হওয়া অপরাধ বলছি কেন জিজ্ঞেস করতে পারেন। তার উত্তর হলো মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চল গুলোতে ইসলাম বাদে আর কোন রকমের ধর্ম, মতামত কালচার, এই সমস্ত কিছুই হল নিষিদ্ধ এবং অপরাধ। এমনকি মুসলিম ধর্মালম্বীরা এতটাই অসহিষ্ণু যে, নিজেদের ধর্মের মধ্যেও কোনো ভিন্নমত কিংবা ফেরকা তারা সহ্য করতে রাজি নয়। আমি নিজেদের ধর্মের বলে উল্লেখ করলেও বাস্তবতা হলো একজন সুন্নি একজন শিয়াকে মুসলিম বলে মনে করে না। সেই কারণে প্রতিদিন সৌদি আরব কর্তৃক ইয়েমেনের জনগণকে গণহারে হত্যা করা হলেও মুসলিম বিশ্বের মন কেঁদে ওঠে না। সেখানে হাজার খানেক মসজিদ বোমা মেরে উড়িয়ে দিয়েছে সৌদি আরব, কিন্তু মুসলমানদের ঈমানে তাতে করে বিন্দুমাত্র আঘাত লাগে না। এর কারণ দুটো, এক হুথি বিদ্রোহীরা শিয়া বলে,  দ্বিতীয়তঃ সৌদি আরব হলো এই সমস্ত মুসলিম মোল্লাদের ঠাকুর, ঠাকুরকে চটালে কপালে প্রসাদ আর জুটবে না।

যতদিন পর্যন্ত মুসলিম সংখ্যা গরিষ্ঠ অঞ্চল গুলোতে অন্যান্য ধর্মালম্বীরা বসবাস করে, ততদিনই এদের একমাত্র কাজ হয় তাদের জীবনকে অতিষ্ঠ করে তোলা। অতিষ্ঠ হয়ে সৌদি আরব পাকিস্তানের মতো যখন এই সমস্ত ধর্মালম্বীরা পালিয়ে বাঁচে, তখন নিজেদের মধ্যে ফেরকা নিয়ে এরা কাটাকাটি শুরু করে দেয়। অর্থাৎ একজন ধর্মপ্রাণ মুসলমান হল তাই, যে নিজে শান্তিতে থাকে না, এবং অপরকেও শান্তিতে থাকতে দেয় না।

এখন বলতে পারেন মুসলিমরা এমন টা করে কেন? তারা কি আলাদা ধরনের মানুষ ! প্রাণী বিবর্তনের আলাদা কোন পথ দিয়ে কি তারা বিকশিত হয়েছে! না , তেমন টা মোটেও নয়। সমস্যা হয়েছে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমান কুরআন হাদিসের চর্চাঃ করা ছাড়া, পৃথিবীর আর অন্য সমস্ত বিষয়ের দিকে পেছনে পিট ফিরে বসেছে। কোন অবস্থাতেই তারা তাদের ভাষ্যমতে এই সমস্ত ইহুদী-নাসারাদের বানানো জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চা করবে না। আর সেই পনেরোশো বছর আগেকার কোরআন হাদিসের শিক্ষা পৃথিবীর সমস্ত সমাজ এবং মানুষ থেকে মুসলমানদের বিচ্ছিন্ন করে জঙ্গিতে পরিণত করেছে। কেননা কোরআন হাদিসের বর্ণনায় অন্য ধর্মের মানুষের ভাল চাওয়া পর্যন্ত অপরাধ, তাদের সাথে বন্ধুত্ব করা অপরাধ। সব ফরজের বড় ফরজ করা হয়েছে জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহকে, আর তা করতে যতটা নিষ্ঠুরতা অবলম্বন করা প্রয়োজন, যত হত্যা করা দরকার, যত রক্তপাতের প্রয়োজন, সবকিছু ইসলামে জায়েজ।

ইসলাম ধর্মের এই বাস্তব অবস্থাকে কোন অবস্থাতেই উপেক্ষা করা যায় না। কোরআন হাদিসের নিরবিচ্ছিন্ন চর্চা এবং নিরবিচ্ছিন্ন সামাজিক শান্তি – এই দুইটা একসাথে কোন ভাবেই হওয়া সম্ভব  নয়। মদিনা সনদ দিয়ে আর যাই হোক, আধুনিক অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র গড়ে তোলা যায় না।