ধর্ম, ধর্মান্তর এবং কবীর সুমন।

ধর্ম, ধর্মান্তর এবং কবীর সুমন।
লেখক-পথিক সাহু।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~

পাত্র আর ধর্ম, দুটোই ধারণ করার গুনসম্পন্ন হলেও, পাত্র পদার্থ ধারন করে, কিন্তু ধর্ম আধ্যাত্মিকতা, মানবতা, বিবেক ধারন করে। অর্থাৎ, প্রকৃত মানুষ হয়ে ওঠার জন্য যে সকল গুনাবলীর প্রয়োজন তার চর্চাই হল ধর্মযাপন। জাগতিক সকল বস্তুর নিজস্ব ধর্ম কাউকেই সংজ্ঞায়িত করার দরকার হয়না, কারন তারা স্বধর্মে স্বয়ং প্রতিষ্ঠিত। কিন্তু পরিবেশ, অভিরুচি, স্বার্থস্বিদ্ধির উপরে ভর করে নিজের সিদ্ধান্ত নিজে নেওয়া এই মানুষটি ক্ষণে ক্ষণে কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ ইত্যাদি জাগতিক আকর্ষণে আবিষ্ট হয়ে পড়ে। তাই তার আত্মোন্মেষের জন্য নিয়ত ‘মানুষ, হওয়ার পরিচয় দিতে এক আদর্শ বোধের অনুশীলন প্রয়োজন। ফলত, এই ধর্ম, বা মানবধর্মের সৃষ্টি প্রাকৃতিক আর পাঁচটি বস্তুর মতোই সহজাত। পৃথিবী সূর্যের চারিদিকে ঘুরে, এটা পৃথিবীর ধর্ম। এ ধর্ম থেকে বিচ্যুত হলে তার গ্রহ স্বত্বাটিও খারিজ হয়ে যাবে। আর আমরা মানব ধর্ম পালনে ব্যার্থ হলে, আমরা তখন জানোয়ার হব।
কিন্তু এই ধর্ম একেবারেই মানুষের নিজস্ব স্বম্পদ, চেতনার ভিত্তি, বিকাশের অন্তরাত্মা। এ কখনোই এক থার্ড পার্সন বলতে পারে না, মানুষের ধর্ম কেমন হওয়া উচিৎ! জগৎসংসারে কার এমন ক্ষমতা আছে, পদার্থের গুণাবলী পরিবর্তন করে দেয়! তবুও সে চেষ্টা কম হয় না, বিকাশে বন্ধ করে, অন্তরাত্মা কলুষিত করে চেতনার ভিত্তি নাড়িয়ে দেয়। তখন তার পশু হওয়া থেকে আটকানো যায় না। কোনো বিশেষ মানুষের সৃষ্ট ‘ধর্ম’ কখনো নিজের হীনবুদ্ধি নিয়ে মানুষের গুনাবলীকে নিয়ন্ত্রন করে আপন স্বার্থসিদ্ধির কাজে লাগালে, সে ব্যবসাকে ‘ধর্ম’ বলে প্রচার করাই প্রতারণা। মানুষকে তাই টুপি না পরালে এ প্রতারণা ধর্মের বিকাশ হবে না।
আব্রাহামিক রিলিজিয়ন গুলো তাদের মানুষকে কিছু বিশেষ গুন শেখানোর চাতুরি নিয়ে এশিয়া, ইউরোপ, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া দখলে মত্ত হয়। রাজনৈতিক অভিসন্ধিকে ‘ধর্মের’ মোড়কে বেচে লোক ঠকিয়ে চলে। মানবধর্ম কোনো মনুষ্যদ্বারা সংজ্ঞায়িত গুণাবলী হতে পারে না। যা মনুষ্যসৃষ্ট, তা আবার ধর্ম কীসের? তাকে মতবাদ বলো, রিলিজিয়ন বলো, কিন্তু ‘ধর্ম’ বলে মানুষকে প্রতারিত করার মানে হয় না। যেখানে আধ্যাত্মবাদ বাদ দিয়ে, রাজনৈতিক প্রসার, জিঘাংসা মূলমন্ত্র হয়, তা কেবল পশুধর্ম ছাড়া কিছুর বিকাশ করতে পারে না।
মানুষ আবার তার নিজের ধর্ম পালটায় কীভাবে? আসলে অমানুষ, জানোয়ার হওয়ার একটা প্রবৃত্তি আমাদের মাঝে থাকে বলেই, নিয়ত মানবতা, বিবেক, আধ্যাত্মিকতার অনুশীলনের প্রয়োজন। আর তা বন্ধ হলে কী হয়, জগত কেমন ভাবে জোকার বানায়, তার এক নমুনা না দিলে এ লেখা অসম্পূর্ণ থেকে যায়!

হিন্দু সুমন আশির দশকে বাংলাদেশি সোফিয়া নাজমা চৌধুরীকে বিয়ে করার মাধ্যমে তিনি প্রথম ধর্মান্তরিত হয়ে মুসলিম হন। সোফিয়া ছিলেন ভয়েস অফ আমেরিকায় তার সহকর্মী। পরবর্তীতে জার্মান কন্যা মারিয়াকে বিয়ে করার সময় ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করেন। পরে এই মারিয়াকে শারিরিকভাবে আঘাত করার মতো বাজে রকমের সব অভিযোগে তিনি অভিযুক্ত হন। এরপর মারিয়ার সাথে ডিভোর্স না হওয়ায় সাবিনা ইয়াসমিনকে বিয়ে করার জন্য পুনারায় তিনি ইসলামের পতাকাতলে চলে আসেন। তার নিজের ভাষ্যমতে তার বিয়ে সংখ্যা দাঁড়িয়েছে পাঁচে।

সুমন এমন এক পাত্র, যা থেকে সেই চির বিতর্কিত প্রশ্ন উঠে আসে, তৈলাধার কি পাত্র, না পাত্রাধার তৈল! নারীই ওনার ধর্ম! মানবতার ধর্ম সেখানে উপেক্ষিত, পদদলিত। উনি কখনো ধারন করেন না, নিজেই তরল পদার্থ হয়ে অপরের আকারের মাঝে খাপে খাপে বিগলিত হয়ে তার আকারই ধারন করেন, প্রকৃতি ধারন করেন। তাই পাত্র হতে গিয়ে পাত্রের ধারণ ধর্ম ত্যাগ করে তরল হয়ে যান। বিধাতায় মজা লুটে নেন অলক্ষে এমন জোকার গড়ে! ধর্মের অনুসন্ধানে উনি পথে নামেন নি, পথে নামতে গিয়ে এধর্ম ওধর্মে লাফালাফি জুড়েছেন আপন উলম্ফনবৃত্তি পাথেয় করে। আত্মপ্রতারনার পরিস্ফুরনে মাথায় টুপি চাপান! নব ‘ধর্ম’ পালনে, বা মানবধর্ম থেকে স্খলনে এ চালিয়াতির দায়ভার অবচেতনেই মাথা পেতে নেন। তবে পূর্বের স্বত্বাটির আবেশ অন্তরে তখনো কিঞ্চিৎ থেকে যায়, বহিরঙ্গের মত তার পরিশোধন এক লহমায় হয় না বলে। বেশ পাল্টাতে সময় লাগেনা, কিন্তু আবেশ যে অন্তরাত্মায় মিশে থাকে। এত সহজে স্খালন করে স্খলিত হতে পারেন না সহসা!
তাই তাকে মমতার মন্দির গড়ার স্বপ্ন দেখতে হয়! মানবধর্ম আর মনুষ্য সৃষ্ট মতবাদের যাঁতাকলে পিষে গিয়ে মাকুর মত এদিক-ওদিক সুতো বুনেই চলে!