এখন মরতে গেলেও ইহুদি নাসারাই লাগে!অনেকের মনে প্রশ্ন, দেড়শ কোটি মুসলিম দুনিয়ায় থাকতে মাত্র ৫০/৬০ লক্ষ ইহুদী কিভাবে মাথার উপর ছুড়ি ঘুরাচ্ছে? ইয়েস, মিলিয়ন ডলার প্রশ্ন! উত্তরটা আপনারও জানা, তারপরও দিচ্ছি- জ্ঞানবিজ্ঞান আর প্রযুক্তি দিয়ে।
অনেকে বলেন সালাউদ্দিন আইয়ুবির মতো বীর আর নাই, তাই আমাদের পরাজয় হচ্ছে! এদের কে বুঝাবে যে যুগের পরিবর্তন হয়েছে? মানুষ এখন ঢাল-তলোয়ার, বর্শা দিয়ে ঘোড়ায় চড়ে যুদ্ধ করে না! করে স্বয়ংক্রিয় ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে, ওয়ার প্লেন রাডার দিয়ে, একে ৪৭ দিয়ে!
তাহলে মুসলিমরা কেন পারছে না? কারণ মুসলিমরা জ্ঞান বিজ্ঞানকে ভয় পায়- তাদের ধারণা, জ্ঞান-বিজ্ঞানে উন্নত হলে ধর্ম বলতে কিছু থাকবে না, তাই একে ইহুদী নাসারার ষড়যন্ত্র আখ্যা দিয়ে এর থেকে দূরে থাকাটাই মঙ্গল! তা না হলে বেহেশত হাতছাড়া হয়ে যাবে। আফসোস মুসলমানরা এখনো বহু বিবাহ, তালাক, হিল্লা আর মেয়েদের ঘরে আবদ্ধ রাখার আইন নিয়েই পড়ে আছে! মানুষ যেসময় জ্ঞান বিজ্ঞানে এগিয়ে চন্দ্র সূর্য গ্রহ নক্ষত্রে কৃত্রিম উপগ্রহ পাঠিয়ে গবেষণায় ব্যস্ত- আমরা তখনো বিয়ে নিয়ে ব্যস্ত!
![ইহুদি নাসারার ষড়যন্ত্র!](https://topwar.ru/uploads/posts/2020-03/1583387963_izgnanie-evreev_-cvetnaja-gravjura-xix-veka.jpg)
আমরা যখন কলেরাকে উলাওটা নামন দানবের কাজ, কুষ্ঠ রোগী আর গুটি বসন্তকে সৃষ্টিকর্তার অভিশাপ আখ্যা দিতে ব্যস্ত– তখন ইহুদি নাসারারা বের করলো টিকা প্রতিষেধক! জীবাণু দিয়েই জীবাণু মারার কৌশল! যক্ষ্মা টাইফয়েড পোলিও হলেও চলতো পানিপড়া চিকিৎসা। শুধু সঠিক জ্ঞানচর্চার অভাবে আমরা ইহুদি নাসারার সাথে পারি না!
ইসরায়েলের আয়তন কত? জনসংখ্যা? অথচ সেই পুঁচকে একটা দেশের ভয়ে মরক্কো থেকে ধরে ইন্দোনেশিয়া পর্যন্ত কোন মুসলিম দেশ টু শব্দটিও উচ্চারণ করতে পারেনা! ২০১৪ তে গাজা অবরুদ্ধ করে ১৪০০ প্যালেস্টাইনি মেরেছে শুধু ব্যারেল বোমা, নিয়ন্ত্রণ ক্রুড মিসাইল আর হোয়াইট ফসফরাস দিয়ে!
তাদের আছে অত্যাধুনিক আন্তঃ মহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র– যা দিয়ে জায়গায় বসে কম্পিউটার টিপে আরেকটা দেশের একটা শহরে নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে নিখুঁত আক্রমণ করতে পারবে! মিসাইল ডিফেন্স সিস্টেম- আরেক দেশ থেকে ছোঁড়া মিসাইল ভূমিতে পরার আগেই ধ্বংস হয়ে যাবে আকাশপথে! আছে নিউক্লিয়ার বা এটম বোম্ব!
আছে সুদক্ষ পাইলটসহ ওয়ার প্লেইন, আছে শব্দবিহীন রাডার ফাঁকি দেয়ার মতো পাইলটবিহীন বোমারু বিমান! এখন বলেন কোন আরব বা মুসলিম দেশটার এত কিছু আছে? আর তাই ইসরায়েলের সাথে কেউ ভিড়ে না! ১৯৬৭ এ একবার ভিড়েছিলো– ১৭ টি আরব দেশ মাত্র ৫ দিনে আত্মসমর্পণ করে! তথাপি মিশর হারিয়েছিলো সিনাই উপত্যকা, জর্ডান হারিয়েছিল ডেড সি, সিরিয়া গোলান মালভূমি!
আজকে আমরা কিছু হলেই বলি ইহুদি নাসারার ষড়যন্ত্র! অথচ তাদের এই বিস্ময়কর উন্নয়ন দেখেও শিখি না আমাদের গ্যাপটা কোথায়! তিতা হলেও সত্য, এই ইহুদী নাসারার আবিষ্কারের দরুন আজকে দুটো ভাত রুটি খেতে পারছি- কি অবাক হচ্ছেন? জিন গবেষণা করে চাউলের গমের শস্যদানার হাইব্রডাইজেশন না করলে বছরে বছরে দূর্ভিক্ষ হতো! বছরে একবার ফসলে কি ৭০০ কোটি মানুষের আহার হতো?
এইসব ফার্মি, পোল্ট্রি, ব্রয়লার লেয়ার খাদ্য বিপ্লব ঘটিয়েছে! যাকে আমরা বলি জি এম ও ফুড! প্রচণ্ড গরমে এসি, ফ্যান, বিদ্যুৎ তো আছেই! আজকে বিজ্ঞানের অবদানেই মরুভূমি তে ফসল ফলে। লবণাক্ত পানিকে রিফাইন করে পানের উপযোগী করা হয়েছে। এখন আর পানির অভাবে তায়াম্মুম করা লাগে না! তারপরও কি ইহুদি নাসারার অবদান নাই? গরু, ঘোড়া, উটের বদলে চড়ছি ফেরারি অডি গাড়িতে!
উড়োজাহাজ, বুলেট ট্রেন তো আছেই! আছে কিডনি-লিভার পর্যন্ত চেঞ্জ করার অবদান! এই যে রক্তের গ্রুপ আর তা দিয়ে মানুষ বাঁচানো- এটাও তাদের আবিষ্কার! এরপরও ইহুদি নাসারার অবদান নাই? এই যে কম্পিউটার, ইন্টারনেট ফেইসবুক- এইগুলাই বা কম কি? তারপরও এরা ষড়যন্ত্র করেই যাচ্ছে, তাই না?
হ্যাঁ, একমাত্র ছাগুরাই বিশ্বাস করে ইহুদী নাসারা দিনরাত ষড়যন্ত্র করছে, আর আমাদের এই অভাব এই দৈনদশার জন্য তারাই একমাত্র দায়ী! অথচ তাদের আবিষ্কৃত জিনিস ছাড়া একদিনও কেউ চলতে পারবে না। এইতো সৌদি আরব কিছুদিন আগেই আমেরিকা থেকে ১১০ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র কেনার চুক্তি করেছে!
এই ইহুদি নাসারার কাছ থেকেই কিনেছে! এই যে সৌদির তেল স্বর্ণ মাটির নিচে পড়েছিলো- তা এই ইহুদি নাসারার আবিষ্কার করা প্রযুক্তির কারণেই বিক্রি করে দু’ পয়সা কামাচ্ছে! তালেবান বলেন আইএস বলেন, ইহুদির আবিষ্কার Ak 47, m15 বন্দুক, আর ডি এক্স দিয়ে সুইসাইড বেল্ট বানায়! অর্থাৎ মরতে গেলেও ইহুদি নাসারাই লাগে!
![ইহুদি জাতির ইতিহাস](https://durmor.com/wp-content/uploads/2017/12/ইহুদি-জাতির-ইতিহাস.jpg)
মোদ্দাকথা, মুসলিম জাতি যতদিন শিক্ষাদীক্ষা জ্ঞানবিজ্ঞানে প্রভুত উন্নতি না করবে, ততদিন মার খেয়েই যাবে! নিজেরাই নিজেদের মারবে! কখনো শিয়া সুন্নি নিয়ে, কখনো খিলাফত জিহাদ নিয়ে! আজকের সিরিয়া, লিবিয়া, ইয়েমেন, সোমালিয়া তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ! অথচ, পাশাপাশি বৌদ্ধরা, হিন্দুরা, খ্রিস্টান ইহুদী জরাথ্রুস্ট্ররা- কোথায় পৌঁছে গেছে! আর সৌদি আরব প্রতিবেশি ইরানকে আইসোলেট করে রেখেছে; কারণ তারা সহি মুসলিম না! শিয়া!
অথচ পুঁচকে একটা ইসরায়েল আর প্রায় ১ কোটি ইহুদি, ১.৮ বিলিয়ন মুসলমানকে তুর্কিনাচন নাচাচ্ছে! কি অর্থনীতি, কি রাজনীতি, কি সামরিক শক্তি- সব দিক থেকেই! আজ পর্যন্ত শুনছেন একটা ইহুদি যুবক সুইসাইড বোম এটাক করছে? ওদের যুবারা পড়াশোনা করে দেশের বিজ্ঞানি, পাইলট, মিলিটারি, প্রফেসর ডাক্তার হয়!
আর মুসলিম যুবারা হয় জিহাদি! নিউজ শুনেন, দিনাজপুরের কাহারুলে মসজিদে সাড়ে চার বছরের শিশুকে ধর্ষণ করেন ৪২ বছরের মাদ্রাসা শিক্ষক! কাবুলে মসজিদে বোমা বিস্ফারণ! নিহত কয়েক ডজন! মিশরের সিনাইয়ে মসজিদে বোমা বিস্ফোরণ, নিহত ২৫৩ জন! এইখানেও কি ইহুদি নাসারার হাত ছিলো?
মুসলিম জাতির এই দৈন দশার কবে মুক্তি মিলবে? নিজেদের ভেতরের এই হানাহানি, ফতোয়াবাজি আর জিহাদ নামক ক্যান্সার থেকে আদৌ মুক্তি মিলবে কি? নাকি আজীবন ইহুদি নাসারার ঘাড়েই দোষ চাপিয়ে দিবে? আর উলটা নিজেরা নিজেরা কামড়াকামড়ি করে আধমরা হয়ে পড়ে থাকবে; সেই সুযোগে জেরুজালেম না– আরো অনেক কিছুই হাতছাড়া হবে!
লেখক-
মো: হারুন আর রশিদ
টি,এন ঢাকা- বাংলাদেশ।
আরো পড়ুন….