যদি কেউ নাস্তিক হয় বা ধর্মত্যাগ করে তবে সেটাই বা কেন অপরাধ বলে গণ্য হবে?

ইসলামের কোন বিষয়ে ভিন্নমত পোষণ করামাত্রই কি মানুষ কাফের হয়ে যায়? এটা একটা দেশ নাকি মোল্লার মুল্লুক??
©Mufti Masud
শরিয়ত বয়াতি বলেছিলেন, “গান বাজনা হারাম এমন কথা কোরানের কোথাও লেখা নেই। কেউ দেখাতে পারলে তাকে ৫০ লাখ টাকা পুরস্কার দেব।”


ব্যস হয়ে গেল, বাংলাদেশের মোল্লা আর তৌহিদী জনতা শরিয়ত বয়াতিকে নাস্তিক দাবি করে তাঁর ফাঁসির দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করেছে! আমি যদি ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকেও দেখি তবু কি বলা যাবে, শরীয়ত বয়াতি নাস্তিক হয়ে গেছে? আর বয়াতি কি ভুল বলেছে? কোরআনের কোথায় স্পষ্ট করে লেখা আছে যে, গান-বাজনা হারাম? পারলে আমাকে দেখান! তাছাড়া শরিয়ত বয়াতি ইসলামের কোন একটি বিষয়ে তার মতামত প্রকাশ করেছেন, চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছেন, এটা কি তাঁকে কাফের বা নাস্তিক হিসেবে প্রমাণ করার জন্য যথেষ্ট?

 যদি তাই-ই হয়, তবে ইসলামের বিভিন্ন মাসআলা-মাসায়েলের ক্ষেত্রে যে ইমামদের মতবিরোধ রয়েছে তাদের সকলকে কি কাফের বলবেন? ইমাম আবু হানিফা বলেছিলেন, নামাজের মধ্যে কোরআনকে ফার্সি ভাষায় তেলাওয়াত করলেও নামাজ হয়ে যাবে। আবু হানিফার এই মতামতের সাথে পৃথিবীর কোন আলেম একমত না। এমন ফতোয়া দেয়ার কারণে আবু হানিফা কি কাফের? কট্টরপন্থী ওহাবীদের প্রধান আদর্শ ইবনে তাইমিয়া বলেছিলেন যে, কোন কাফের যদি সারাজীবন ভালো কাজ করে তবে কুফুরি করার কারণে সে জাহান্নামের আগুনে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত শাস্তি ভোগ করে পরবর্তীতে সে জান্নাতে বা বেহেস্তে যাবে। 
দুনিয়ার কোন আলেম তার সাথে একমত হননি। দুনিয়ার সকল আলেম মনে করেন, অমুসলিমরা কখনোই জান্নাতে যেতে পারবে না। কিন্তু দুনিয়ার সব আলেমরা কি ইবনে তাইমিয়াকে কাফের বলে? ইসলামের কোন বিষয়ে ভিন্নমত পোষণ করামাত্রই কি মানুষ কাফের হয়ে যায়? কাফের হওয়ার সংজ্ঞা কি? একজন মানুষ কিভাবে কাফের হয়, কখন কাফের হয় সে বিষয়ে কি ন্যূনতম ধারণা আছে উন্মত্ত তৌহিদী জনতার? 
যে উন্মত্ত তৌহিদী জনতা কিছু হলেই রাস্তায় নেমে মানুষের ফাঁসি চায়, আর যে মুরগির ঠ্যাং খাওয়া হুজুর এগুলোকে উসকে দেয় তারা কি প্রমাণ দেখাতে পারবে যে শরিয়ত বয়াতি কাফের বা নাস্তিক হয়ে গেছে? আমি যখন মসজিদের ইমাম ছিলাম তখন জুমার বয়ানে আমি ফতোয়া দিতাম যে, কোন বরের জন্য তার স্ত্রীকে পেটানো জায়েজ নেই। আমার এই ফতোয়া কোরআনের সাথে সরাসরি সাংঘর্ষিক, কারণ কোরানে সরাসরি ‘অবাধ্য’ স্ত্রীকে পেটানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
তখনতো মুরগির ঠ্যাং খাওয়া হুজুররা আর তৌহিদী জনতা আমার আমাকে কাফের বলে আমার ফাঁসির দাবিতে বিক্ষোভ করেনি! (অবশ্য অন্যান্য ইমাম এবং স্থানীয় আওয়ামী রাজনীতিবিদেরা আমার এই ফতোয়ার সমালোচনা করত, পেছনে পেছনে ক্ষোভে ফুঁসে উঠত।) 
তৌহিদী ধর্ষকদের এত উন্মাদনা কেন? এত স্পর্শকাতরতা কেন? ওড়না ছাড়া মেয়েদের দেখলেও কেন তাদের ধর্ষণাঙ্গ আনব্রেকেবল স্টার্টিং মোডে চলে যায়?আমাকে নাস্তিক বলতে পারেন, কারণ আমি সত্যিই একজন গর্বিত এক্স মুসলিম এবং নাস্তিক। কিন্তু আমার ফাঁসি চাইতে পারেন না, কারণ আমার বাকস্বাধীনতা আছে। তবে আপনাদের সন্ত্রাসের ধর্ম আমাকে হত্যা করতে বলে, একজন মুফতি হিসেবে তা আমি জানি। 

আমি আশ্চর্য হয়ে যাই যখন দেখি, শরিয়ত বয়াতি যিনি একজন বিশ্বাসী মুসলিম, কিন্তু তিনি শুধু ইসলামের একটি বিষয়ে একটি মতামত প্রকাশ করেছেন যা তাকে ইসলাম থেকে বহির্ভূত করে দেয়না, এবং তাকে নাস্তিকও বানিয়ে দেয় না, অথচ তার ফাঁসির দাবিতে মুরগির ঠ্যাং খাওয়া হুজুর আর তৌহিদী ধর্ষকেরা রাস্তার মধ্যে জিহাদ শুরু করে দিয়েছেন! 
মুরগির ঠ্যাং খাওয়া হুজুর আর তৌহিদী ধর্ষকদের চাহিদা অনুযায়ী আমাদের ধর্ষক, খুনি, ফ্যাসিবাদী ধর্মব্যবসায়ী সরকার সত্যাসত্য যাচাই না করে, শরীয়ত বয়াতি নাস্তিক হয়েছে কি হয়নি সেটা জানতে না চেয়ে সোজাসুজি তাঁকে গ্রেপ্তার করে ফেলল কেন? আর যদি কেউ নাস্তিক হয় বা ধর্মত্যাগ করে তবে সেটাই বা কেন অপরাধ বলে গণ্য হবে? বাংলাদেশের সংবিধানে কি ভিন্নমত পোষণ করা, ধর্ম পরিবর্তন করা অথবা নাস্তিক হয়ে যাওয়া অপরাধ এমনটা লেখা আছে?
কি বিচিত্র সেলুকাস!
এটা একটা দেশ নাকি মোল্লার মুল্লুক?