রোহিঙ্গাদের বর্তমান এই অমানবিক অবস্থার জন্য বাংলাদেশও দায়ী!
রোহিঙ্গা এবং মায়ানমার সরকার পরস্পর ভয়ংকর বিরোধী হলেও মূলত এই দুই পক্ষের উদ্দেশ্য আবার একটাই,আর তা হলো বাংলাদেশ!
রোহিঙ্গা বিরোধী মায়ানমার সরকার চায় রোহিঙ্গাদেরকে সে দেশ থেকে তাড়িয়ে বাংলাদেশে পাঠাতে
আবার রোহিঙ্গা সমর্থক বাংলাদেশের দেশবিরোধী শক্তি এবং আন্তর্জাতিক কিছু গোষ্ঠি চায় রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে এনে পার্বত্য এলাকায় শক্ত অবস্থান তৈরি করতে!
গভীরভাবে ভাবলে বোঝা যাবে এই দুই গোষ্ঠী মিলেই মূলত সাধারণ রোহিঙ্গা নারী শিশুদের হত্যা করছে নিজনিজ উদ্দেশ্য সফল করার জন্য।এমতাবস্থায় রোহিঙ্গাদের থেকে বড় হুমকি বা সমস্যায় পড়ে গেছে আমাদের এই বাংলাদেশ!
তাদেরকে যেভাবে হত্যা করা হচ্ছে এটা একেবারেই সহ্য করার মতো নয়,এটা নিকৃষ্ট বর্বরতা সর্বোচ্চা ধাপকে অতিক্রম করেছে মায়ানমার সরকার।কিন্তু এর পেছন মূল দায়টা আমরা বহন করছি।একটা সময়ে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছিলাম,কিন্তু তাদেরকে আমরা তাদের দেশে পাঠাতে ব্যর্থ হয়েছি,এটা নিশ্চিতভাবে আমাদের রাষ্ট্রগত ব্যর্থতা।আমাদের মানবিকতার পরে এই ব্যর্থতাই মূলত সাধারণ রোহিঙ্গাদের উপরে ধারাবাহিক অত্যাচারের নিয়ম চালু হয়ে গিয়েছে।আমরা তাদেরকে ফেরত পাঠাতে পারিনি বরং দিন দিন তা বেড়ে এখন বাংলাদেশের রোহিঙ্গাদের সংখ্যা আনুমানিক ৩০ থেকে ৪০ লক্ষ।কক্সবাজার এবং চট্টগ্রামের স্থানীয়দের কাছে জানলে জানতে পারবেন সেখানে কী ভয়ংকর সংখ্যা রোহিঙ্গারা স্থান করে নিয়েছে!এই ধারাবাহিক স্থান করে নেয়ার কারণেই মায়ানমার সরকারের প্রচেষ্টা তাদের বাংলাদেশে পাঠানোর এবং রোহিঙ্গাদেরও প্রচেষ্টা বাংলাদেশে আসার।আমাদের রাষ্ট্র যদি তখনই কঠর হতো তাহলে আজ এই অবস্থার সম্মুখীন হতে হতো না।
আমাদের নিজেদেরই হাজারো সমস্যা থাকার পরেও বাংলাদেশ সরকার তাদেরকে আশ্রয় দিয়ে কোন অন্যায় করেনি বরং শ্রেষ্ঠ মানবিকতা দেখিয়েছে রোহিঙ্গাদের জন্য,কিন্তু তার প্রতিদানে এদেশে থাকা রোহিঙ্গারা কি দিয়েছে আমাদের?
আমরা তাদের কাছে প্রতিদান চাইনি,চেয়েছি শুধু তারা যেন উপকারের পরিবর্তে আমাদের ক্ষতি না করে,কিন্তু তারা ঠিক সেই কাজটিই করে চলেছে।বাংলাদেশে থাকা রোহিঙ্গারা জঙ্গিপনা থেকে শুরু করে সব ধরণের অপরাধের সাথে জড়িত।দেশবিরোধীদের সবথেকে বড় হাতিয়ার এখন এদেশে থাকা রোহিঙ্গারা।বাংলাদেশের পাসপোর্ট বানিয়ে বিদেশে গিয়ে নানান অপরাধের সাথে জড়িয়ে বাংলাদেশের শ্রম বাজারের সর্বনাশ করছে।তারা তাদের আয়ের একটি নির্দিষ্ট অর্থ জঙ্গি তৎপরতায় যুক্ত করছে।পার্বত্য এলাকায় ঘটে যাওয়া ভয়ংকর সাম্প্রদায়ীক বর্বরতার তারাই ঘটাচ্ছে।সুনির্দিষ্ট তদন্তে পরিস্কার উঠে এসেছে কক্সবাজার এবং পার্বত্য এলাকার রোহিঙ্গাদের নিয়ে আন্তর্জাতিক জঙ্গি গোষ্ঠী ওই এলাকায় শক্ত ঘাঁটি করার পরিকল্পনা এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে!
ভেবে দেখুন বাংলাদেশে ছয় লক্ষের উপরে পাকিস্তানী রয়েছে, ৪০লক্ষের উপরে রোহিঙ্গা রয়েছে! এই বাংলাদেশ আর কত পারে ভেবে দেখুনতো!
আরো ভেবে দেখুনতো এই সংখ্যাটা যদি কোনদিন নির্দিষ্ট এলাকা জুড়ে বিদ্রোহ শুরু করে সেই এলাকার স্বাধীনতা দাবী করে তাহলে কি অবস্থা হবে? আমাদের অস্ত্র আছে সব আছে,কিন্তু বিশ্বের অবাধ মিডিয়ার যুগে আমরা তাদেরকে মেরে ফেলে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে পারবো?
তা কখনোই সম্ভব না।
ইতিমধ্যেই আমরা আমাদের রাষ্ট্রীয় সর্বনাশ করে ফেলেছি এই রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে দিয়ে,তারপরেও এখন যদি একজন রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেয়া হয় তাহলে সেই আশ্রয়ের সাথে সাথে মায়ানমার সরকার দশটি বুলেট বেশী খরচ করবে আরো রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে তাড়াতে।একজন রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে আশ্রয় দেয়া পরিস্কারভাবে বাংলাদেশ এবং রোহিঙ্গাদের সর্বনাশ করা।
তাই বলে কি আমরা চোখ বন্ধ করে মায়ানমার সরকারের এই বর্বরতা সহ্য করবো?
না তা হতে পারে না,এই অমানবিকতা সহ্য করাটাও অমানবিকতা।আমাদের সুনির্দিষ্টভাবে কিছু করার আছে তাদের জন্য।তাদেরকে বাংলাদেশে আশ্রয় না দিয়ে বরং মায়ানমার সরকারের বর্বরতা রোধ করতে আন্তর্জাতিক মহলকে কার্যকর ভূমিকা পালনে বাংলাদেশ সরকারকে পদক্ষেপ নিতে হবে।অন্তত একশত ভুক্তোভোগী রোহিঙ্গাকে বিশ্বের নজর কাড়তে পারে এমন স্থানে জড় করে মিডিয়ার সমাবেশ ঘটিয়ে আমরণ অনশনের ব্যবস্থা করা যেতে পারে,তাহলে হয়তো মাথামোটা মুসলিম দেশসহ বিশ্বের বিবেক জাগ্রত হয়ে এই বর্বরতা রোধে ভূমিকা পালনে এগিয়ে আসতে পারে।এভাবে একটি পরিস্থিতি তৈরি করে বর্বরতা বন্ধের সাথে সাথে বাংলাদেশে থাকা রোহিঙ্গাদের তাদের নিজ ভূমিতে ফিরিয়ে দেয়ার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা এখন বাংলাদেশের প্রধান কাজ মনে করি।
মনোয়ার কবির।