ভারতকে আইসিসি চুরি করে এশিয়া কাপ জিতিয়ে দিয়েছে।

ভারতকে আইসিসি চুরি করে এশিয়া কাপ জিতিয়ে দিয়েছে। এর পক্ষে কোন যুক্তি প্রমাণ থাকার দরকার নেই। যেমন রবীন্দ্রনাথ নজরুলকে বিষ খাইয়ে পাগল করে দিয়ে নোবেল বাগিয়ে নিয়েছে- এই গল্প যেমন দাবানলের মত এদেশে ছড়িয়ে পড়েছে প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম, কোন রকম যুক্তি প্রমাণের বদলে হাস্যকর ছেলেমানুষী গল্পে এই বিশ্বাস স্থাপন করার মধ্যে আছে সদ্দিচ্ছা। ৯১ নির্বাচনে ভারত বাংলাদেশ দখল করে নিবে, দেশ বিক্রি হয়ে যাবে ভারতের কাছে- এই প্রচারণাটা বিপুলভাবে আমজনতা গ্রহণ করেছিলো। অশিক্ষিতদের কথা বাদ দেন, শিক্ষিত শিল্পী সাহিত্যিক মননশীলতার চর্চা করেন এমন লোকজন, বাংলা একাডেমির মেডেল গলায় ঝুলিয়ে চলেন এমন আতেঁল পর্যন্ত রবীন্দ্রনাথ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরোধীতা করেছিলেন- এরকম ডাঁহা মিথ্যা, ঐতিহাসিক প্রমাণ দলিল না থাকা একটা মিথ্যা প্রচারণাকে কয়েক মাস আগে ফেইসবুকে টেনে নিয়ে এসেছিলেন। সেখানে ভারত খেলায় চুরি করে জিতেছে এরকম আবেগময় দাবী, সদ্য ম্যাচ হারা বাংলাদেশে যখন আমি এরকম দাবীর পিছনে তথ্য প্রমাণ চাইব তখন তো আমি স্রেফ ‘ভারতের দালাল’!

না, আমি আইসিসির ৩৯ ধারায় লিটন দাস যে আউট ছিলো তার দলিল উপস্থাপন করব না। কারণ খেলাধুলা ততদিন বেঁচে থাকবে যতদিন এখানে মানবিক ভুল ঘটা অব্যাহত থাকবে। ম্যাচের পরদিন যদি খেলা নিয়ে কোন আলাপ না থাকে তাহলে সেই খেলার অপমৃত্যু ঘটবে। রেফারি কিংবা আম্পায়ার ভুল করবে, চোখ এড়াবে কিংবা তিনি সঠিক মনে করে সিদ্ধান্ত নিবে, দর্শকদের সেটা পছন্দ হবে না, তাদের কাছে মনে হবে এটা সঠিক হয়নি- এরকম না থাকলে খেলা নিয়ে মানুষ আলোচনা করবে না। বাংলাদেশী দর্শকদের ভারত চোর, আইসিসি চুরি করে ভারতকে জিতিয়ে দিয়েছে- এসবকে আসলে ক্রিকেট বিশ্বে কেউ গুরুত্ব দেয় না। যে দল র্যাং কিংয়ের এক নম্বর, যাদের অস্ট্রেলিয়া ইংলেন্ড দক্ষিণ আফ্রিকা পাকিস্তানকে হারাতে চুরির আশ্রয় নিতে হয় না তাদের কেন বাংলাদেশের মত উদিয়মান দেশের সঙ্গে চুরি এবং আইসিসির সঙ্গে আঁতাত করে জিততে হয়- এই প্রশ্নও করব না। কারণ ঐ যে রবীন্দ্রনাথ জোচ্চুরি করে নজরুলের নোবেল কেড়ে নিয়েছে…!

না, আমাদের জনগণের ভারতীয় ক্রিকেট বা ভারত বিরোধীতার বিপক্ষে দাঁড়াবার কোন ইচ্ছে নেই। বাংলাদেশীরা হোক সে প্রগতিশীল কিংবা সাংস্কৃতিক কর্মী, কবি কিংবা উপন্যাসিক- মুসলিম জাতীয়তাবাদের উর্ধে তারা কখনই উঠতে পারবে না। বরং যারাই তাদের এই দিকটি দেখাতে যাবে তাদেরকেই সাম্প্রদায়িক বলে উল্টো তারা গালি দিবে। এই ভদ্রলোকরাই এশিয়া কাপের ফাইনালের পর ভারত চুরি ছাড়া কোনদিন জিতেনি বলে দাবী করেছে। এটা নিয়ে আমার কোন ক্ষোভ নেই। ভারত আমার কাছে বিদেশ। সেখানে যেতে হলে আমার ভিসা পাসপোর্ট লাগবে। ভারতকে চোর বললে আমার কি?… না বিষয়টা শুধু ভারত নয়, একটু বুঝার চেষ্টা করুন, এখানে যে অসুস্থ চিন্তা ও কালচারের চর্চা ঘটছে সেই বিপদটাকে বুঝুন। এশিয়া কাপ ফাইনালে যে থার্ড আম্পায়ার লিটন দাসকে আউট দিয়েছিলো বাংলাদেশী রপোর্টিং গ্রুপ তার ফেইসবুক আইডিকে ডিজেবল করিয়ে দিয়েছে। এর আগে গ্রেট সুনীল গাভাস্কারের ফেইসবুক আইডি একই রকম করে বন্ধ করা হয়েছিলো। বিখ্যাত ক্রিকেট ভাষ্যকার, সাবেক গ্রেট ক্রিকেটার যে-ই বাংলাদেশ ক্রিকেটের সমালোচনা করেছে তাদেরই ফেইসবুক আইডি বন্ধ করে দিয়েছে বাংলাদেশী রিপোটিং গ্রুপ। এই জিনিস আবার আমাদের জাতীয় দৈনিকগুলো গর্বভরে ফলাও করে ছাপছে। এখানে যে প্রতিক্রিয়াশীলতার চর্চা সেটাকে গোটা জাতি এপ্রিশিয়েট করে যাচ্ছে! ক্রিকেট বিশ্বে এখন সবাই জানে বাংলাদেশের ক্রিকেট নিয়ে সমালোচনা করলেই তাদের সামাজিক মাধ্যম বন্ধ করে দেয়া হবে। ফেইসবুক এ্যাকাউন্ট ব্যাংক এ্যাকাউন্ট নয় যে এটা বন্ধ করে দিলে ব্যক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কিন্তু বাংলাদেশ সম্পর্কে যে ধারণাটা পৌঁছে যাচ্ছে ক্রিকেটকে কেন্দ্র করে বিদেশীদের কাছে সেটা কেউ ভাবছেই না? একজনও পাওয়া গেলো না যারা এই ক্রিকেটীয় প্রতিক্রিয়াশীলতাকে এখনি বন্ধ করতে বলেছেন। ৯৪ বিশ্বকাপ ফুটবলে কলম্বিয়ার ফুটবলার আত্মঘাতি গোল দিয়ে দলীয় পরাজয়ের দায়ে নিজের দেশে এয়ারপোর্টে আততায়ীর গুলিতে মারা গিয়েছিলেন। মান্নান হীরা, ইরেশ জাকের, সুবর্ণা মুস্তফা, মুস্তফা সরওয়ার ফারুকীসহ আমাদের নাস্তিক-মানবাধিকার ফেইসবুক এক্টিভিস্টদের মত ‘দেশপ্রেমিক’ ‘ক্রিকেট পাগলারা’ কি ভাবিকালের এরকম কোন ক্রিকেট ফ্যানদের জন্ম নিতে ক্ষেত্র তৈরি করে দিতে সহায়তা করছেন না? ভাবুন তো সেদিন মাশরাফি সৌম্য সরকারকে লাস্ট ওভার করতে প্রথমে মনস্থির করেছিলন, সেদিন যদি সৌম্য বল করত আর প্রথম বলেই ছয় খেয়ে ম্যাচ শেষ করে দিতো তাহলে সৌম্যকে কি বলে গালি দেয়া হতো? একদিন ভারতের বিরুদ্ধে ম্যাচে কেউ স্ট্যাম্পিং মিস করলে, ক্যাচ মিস করলে- সেই খেলোয়ার যদি মুসলিম না হয়- যে তীব্র সাম্প্রদায়িক ঘৃণার সৃষ্টি হবে তার দায় এইসব ভদ্রলোকদের যারা ভারত চোর বলে গায়ের ঝাল মেটাচ্ছে।

ক্রিকেট বিশ্বে কেউ কাউকে বলে না আইসিসি টাকা খেয়ে বা ভয়ে অমুক দেশকে জেতাতে আম্পায়ারকে নির্দেশ দিয়েছে। একমাত্র বাংলাদেশ ছাড়া এরকম দাবী কেউ করে না। সে হিসেবে বাংলাদেশের উচিত আইসিসি’র সদস্য পদ প্রত্যাহার করে নিজরাই আলাদা ক্রিকেট সংস্থা গঠন করে ক্রিকেট খেলা। জাতিসংঘ থাকার পরও মুসলমানরা মিলে ওআইসি বানিয়েছে। রেডক্রস থাকার পরও মুসলমানদের জন্য আলাদা আলাদা করে রেডক্রিসেন্ট করা হয়েছে কারণ ক্রস নাকি খ্রিস্টানদের চিহৃ! তাই বাংলাদেশ পাকিস্তান আফগানিস্থান মিলে আলাদা মুসলিম ক্রিকেট সংস্থা বানিয়ে খেলতে পারে। সেখানে কেউ চুরি করে জিতবে না। কেউ ‘দাদাগিরি’ করতে পারবে না। সবাই তখন সুখে শান্তিতে বসবাস করতে পারবে…!

সুষুপ্ত_পাঠক