নরেন্দ মোদি ক্ষমতা থাকায় মুসলিমরা ভারত ছেড়ে সব পালিয়েছে?

ব্রুনাই তেল সমৃদ্ধ ধনী দেশ। সেখানকার জনগণ গরীব নয়। তবু ব্রুনাই ছাড়ছে সেখানকার নাগরিকরা। শুধু সমকামিরা নয়, বিবাহবর্হিভূত প্রেমিক-প্রেমিকারা সেখানে বিপদগ্রস্ত। ব্রুনাইতে অজ্ঞেয়বাদী নাস্তিকদের জীবন বিপন্ন কারণ সেখানে ২০১৩ সালে আইন পাশ হয়েছে হযরত মুহাম্মদকে নবী না মানার সাজা হচ্ছে পাথর ছুড়ে হত্যা। এই আইনের প্যাঁচে ফেলে নাস্তিকই কেবল নয় অন্য যে কোন ধর্মের অনুসারীদের ফাঁসানো যাবে। একজন খ্রিস্টান হিন্দু তাদের ধর্মীয় বিশ্বাসের কারণেই মুহাম্মদকে নবী হিসেবে মানবে না। ব্রুনাইতে অবশ্য মুসলিম ছাড়া অন্য কেউ নাগরিক হিসেবে বিবেচিত নয়। সেখানে প্রচুর বিদেশী অমুসলিম শ্রমিক কাজ করে। এইসব শ্রমিকরা দুটো পয়সার জন্য ধনী দেশে কামলা দিতে গেলেও যারা সেখানকার ধনী নাগরিক তাদের অর্থের অভাব না থাকলেও তারা কেউ শান্তিতে নেই। সিএনএনের কাছে ব্রুনাই থেকে পালিয়ে আসা কয়েকজন বলেছে, সেখানে কেউ শান্তিতে বসবাস করতে পারে না কারণ সেখানে কোন স্বাধীনতা নেই…।

অঢেল অর্থ, খাওয়া পরার কোন সমস্যা নেই, সমাজে ধমী গরীবের কোন বৈষম্য নেই, তেল বেচা অর্থ সুলতান নিজের সম্পদ মনে করলেও জনগণকে মুঠি করে যা দেয় তাতে প্রত্যেকেই আরাম আয়েশী জীবন যাপন করে দিন কাটায়। এরকম রাষ্ট্রেও মানুষ সুখি নয় কারণ তার কোন স্বাধীনতা নেই! এ কারণেই মানুষ ব্রুনাই থেকে পালায়। সৌদি থেকে পালায়। ইরান থেকে পালায়। উত্তর কোরিয়া থেকে পালায়। চীন থেকে পালায়।… সব স্বৈরাচারী ও ব্যক্তি স্বাধীনতা হরণকারী দেশ থেকেই মানুষ পালায়। তা যতই ধম সম্পদের মাঝেই তারা থাকুক, স্বাধীনতার হীনতায় কে বাঁচিতে চায় হে?

তবু এই দেশগুলোতে কেউ ফ্যাসিবাদের প্রতিধ্বনি শুনতে পায় না? ব্রুনাইয়ের সুলতানকে কি আগামী বছর নির্বাচনে পরাজিত হলে সরে যেতে হবে? ইরানের নির্বাচনে যে দলই জিতুক তাতে কি ইসলামিক রিপাবলিক উঠে যাবে? সৌদি আরবের সালাফিদের কি ভোটে পরাজিত করে লিবারালদের জয়ি হয়ে আসার কোন পন্থা আছে? উত্তর কোরিয়া, চীন, কিউবাতে কি নির্বাচনের মাধ্যমে পরিবর্তন সম্ভব? জগদ্দল পাথরের মত যে শাসন ও দর্শন চেপে বসে আছে, যেখান থেকে ভিন্নমতালম্বীরা পালিয়ে স্বাধীন ব্যক্তি স্বাধীনতার দেশে মাইগ্রেট করে- তবু সেইসব শাসন ও শাসকরা কেউ ফ্যাসিবাদী নয়! তারা পৃথিবীর মানব সভ্যতার জন্য হুমকি নয়- হুমকি কেবল নরেন্দ মোদী? ডোনাল্ড ট্রাম্প? ট্রাম্পকে পরের ভোটে পরাজিত করলেই সে ইতিহাসের অংশ হয়ে যাবে। কিন্তু কিম জং-কে ভোটে পরাজিত করে কোন গণতন্ত্রপন্থি নেতাকে কি জনগণ নির্বাচিত করতে পারবে? ব্রুনাইয়ের সুলতান কাল মারা গেলেও ইসলামের শরীয়া অনুশাসন তো উঠে যাবে না। দুনিয়ার কোন ‘ভালো মুসলিম’ কি প্রমাণ করে দেখাতে পারবে ‘ইসলামি শাসন ব্যবস্থা’ কুরআন হাদিসে নেই? পারবে না। ধর্ম প্রেমি মুসলমান চাইবেই দেশটা ইসলামী শাসনে পরিচালিত হোক। সৌদি ধনী ঘরের মেয়েরা হুটহাট বিদেশে পালিয়ে গিয়ে বলছে আমাকে আশ্রয় দিন। সৌদি ফেরত পাঠালে আমাকে আমার পরিবার মেরে ফেলবে। আমি সেখানে ফিরতে চাই না। আমি স্বাধীনতা নিয়ে বাঁচতে চাই। সৌদি আরবের পুরুষদের মোবাইলে বিশেষ অ্যাপ থাকে যা দিয়ে তারা তাদের মেয়ে স্ত্রী বোনদের গতিবিধি নজরদারী করে। সৌদি মেয়েরা চুল খোলা রাখতে পারে না সেটা সৌদি বাদশার ইচ্ছা বলে নয়, এটা ইসলামের নিয়ম বলে। এই নিয়ম মুসলমানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ হলেই দাবী করে। সংখ্যালঘু হলে সংখ্যাগুরুদের এই নিয়মগুলোকে সন্মান করতে বলে। বাংলাদেশী নাজমা বেগম আমেরিকায় ‘হিজাব দিবস’ পালন করিয়ে নিয়েছে মানে ফ্যাসিবাদ দিবস পালন করিয়ে নিয়েছে। হিজাব বোরখা মুসলিম নারীদের চয়েজ নয়- এটি ধর্মীয় একটি অনুশাসন যা পালন না করলে মুসলিম নারীদের শরীয়া অনুযায়ী বেত্রাঘাত করা হয়। ইন্দোনেশিয়ার মেয়েরা তাদের প্রেমিকদের সঙ্গে দেখা করতে গেলে ধর্মীয় পুলিম তাদের ধরে বেত মারে। তখন কেউ বলে না ডেটিং মাই চয়েজ! কেউ তখন ফ্যাসিবাদের পদধ্বনি শুনতে পায় না। নরেন্দ মোদিকে অপছন্দ করি কারণ যে কোন ধর্মীয় জাতীয়তাবাদী লোকই আমার অপছন্দ। যে লোক সমাজে রাষ্ট্রে সাম্প্রদায়িকতা ছড়ায় তাকে ‘ঘৃণা’ করি। কিন্তু নরেন্দ মোদি ক্ষমতা থাকায় মুসলিমরা ভারত ছেড়ে সব পালিয়েছে? ব্রুনাইতে সমকামিরা দেশ ছাড়ছে প্রাণ বাঁচাতে- তবু কেউ ফ্যাসিবাদের পদধ্ববনি শুনতে পাচ্ছে না কেন?

কমিউনিস্টরা তাদের নির্বাসিত জীবনের জন্য বেছে নেন সেক্যুলার গণতান্ত্রিক ব্যক্তি স্বাধীনতার দেশগুলোকে। আয়াতুল্লাহ খোমিনির মত ইসলামিক শাসনতন্ত্রী ইরানে ইসলামিক বিপ্লবের আগে দীর্ঘকাল ফ্রান্সে নির্বাসিত ছিলো। শিল্প সাহিত্য সংগীতের দেশ ফ্রান্স প্রবলভাবে সেক্যুলার ও ব্যক্তি স্বাধীনতাকে মূল্য দেয়। যে লোকটি মনে মনে স্বপ্ন দেখছে একদিন তার দেশের সব নারীদের স্বাধীনতা হরণ করবে, তাদের চলাফেলা বন্ধ করে দিবে, ইসলাম ছাড়া আর কোন আইন চলবে না, ধর্মীয় অনুশাসন অমান্য করলে শাস্তি পেতে হবে, হিজাব বোরখা না পড়লেই বেতা মারা হবে- সেই লোকটিও নিজেকে নিরাপদ মনে করছে ফ্রান্সকে কারণ সেখানে প্রত্যেককে তার নিজের মত করে থাকতে দেয়া হয়। এটাই সেক্যুলারিজমের গুণ। এটাই পৃথিবীর শেষতম সমাধান।
Susupto Pathok