শামিমা বেগমকে ইংলেন্ডে আশ্রয় দিতেই হবে- সেটা তার জন্মভূমি- এরকম মানবতার অবতার সাজাটা তো ভন্ডামী!

যে ডাক্তার রোজ দুই চারটা অপারেশন করছে যান্ত্রিক পেশাদার অবস্থান থেকে, সেই একই ডাক্তার নিজের সন্তানের অপারেশ করতে গিয়ে একই রকম যান্ত্রিক পেশাদার থাকতে পারবে? আমরা সকলেই জানি সেটা সম্ভব না। কারণ এখানে বাবা বা মার সঙ্গে সন্তানের আবেগটা এড়ানো সম্ভব না। তাই নিজের নয় বন্ধুর সন্তানসম সন্তানকে অপারেশন করা খুব সহজেই সম্ভব হচ্ছে। এই যেমন ধরেন রোহিঙ্গা আর ইয়াজিদি নারী কি এক? রোহিঙ্গা নারীদের ধর্ষণ করেছে বার্মীজ সেনারা। ইয়াজিদি নারীদের ধর্ষণ করেছে মুসলিম মুজাহিদরা। তাদের উপর অত্যাচার করেছে নারী মুজাহিদীনরা। আপনি কতজন লোক পাবেন বার্মিজ সেনাদের মানবাধিকার রক্ষার পক্ষে? আপনি কতজনকে বলতে শুনবেন, বার্মিজ সেনারাও মানুষ এবং তাদের মানবাধিকার সবার আগে রক্ষা করতে হবে। মুক্তিযুদ্ধে যে মহিলার হাত থেকে তার স্বামীকে টেনে আল বদরা নিয়ে গেছে, যে মা তার একমাত্র সন্তান হারিয়েছে রাজাকারদের হাতে, তার পক্ষে রাজাকার আল বদরদের ফাঁসির দাবীকে ফ্যাসিবাদের পদধ্বনি কি বলা সম্ভব? সম্ভব নয়। সম্ভব তার পক্ষে যিনি আসলে সমস্ত আবেগের উর্ধে গিয়ে সবার প্রতি ন্যায় বিচার করতে পারেন। একজন আজীবন মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, সত্য জাতির সামনে তুলে ধরার জন্য যিনি জীবনপাত করেছেন, তেমন কেউ যদি বলত, যে কোন মূল্যে যুদ্ধাপরাধের ফাঁসি চাই- এটা ফ্যাসিবাদী চাওয়া, আমরা তাদের বিচার চাই- অবশ্যই সেটা আইন ও প্রমাণের ভিত্তিতে। কিন্তু জীবনে যে লোক রাজাকারদের নৃশংসতা নিয়ে দুই লাইন লিখেনি সে যখন যুদ্ধাপরাধের বিচারের সময় রাজাকারদের মানবাধিকার রক্ষার তাগিদ দেয়, কিংবা একমাত্র ফাঁসির দাবীকে ফ্যাসিবাদের পদধ্বনি শুনতে পায় সেটা কি স্বাভাবিক আচরণ? আপনি কি মনে করেন আসিফ নজরুল কিংবা ফরহাদ মজহারের যুদ্ধাপরাধ ইস্যু নিয়ে অবস্থান মানবাধিকারের পক্ষ ও ফ্যাসিবাদের বিপক্ষ অবস্থান থেকে ছিলো?

একজন ইসলামিক মাইন্ডের লোক যিনি ইসলামিক রাষ্ট্র চান, তিনি যখন সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ চায় বিধায় গণতান্ত্রিক নিয়ম অনুযায়ী ইসলামিক রাষ্ট্র করা উচিত- তার এই গণতন্ত্রের দোহাই যেমন গণতন্ত্রের প্রতি সমর্থন নয় তেমনি হঠাৎ শামিমা বেগমদের মত জঙ্গি নারীদের ‘নারী’ ও ‘মানুষ’ কিনা এরকম প্রশ্ন তুলে তাদের মানবাধিকার রক্ষার জন্য আদাজল খেয়ে নামাটা কি স্বাভাবিক? এটা স্বাভাবিক হতো যদি একই লোক আইএস খিলাফতে এই শামিমা বেগমদের হাতে ইয়াজিদি নারীদের প্রতি চরম অমানবিক আচরণ নিয়ে পূর্বে সরব থাকত। শামিমা বেগমরা ছিলো তাদের জিহাদী স্বামীর হয়ে হেরেম পাহাড়াদার। তারা তাদের স্বামীদের জন্য ইয়াজিদি ও খ্রিস্টান নারীদের মারধোর করে কথা শুনতে বাধ্য করাতো। তাদের আটকে রাখত। নির্মম অত্যাচার করত জিহাদী স্বামীর সঙ্গে সবালীল সেক্স করার জন্য। আইএস খিলাফত ছত্রভঙ্গ হবার পর বন্দি শিবির থেকে পালিয়ে আসা ইয়াজিদি নারীদের জবাববন্দিতে উঠে আসা ভয়ংকর নৃশংস এইসব নারী জঙ্গিদের কথা যারা ভুলেও তাদের লেখায় আনেনি, চোখ বন্ধ করে রেখেছিলো- তারাই যখন শামিমা বেগম সহ শত শত মুসলিম জঙ্গি নারীদের মানবাধিকার রক্ষার জন্য সোচ্চার- সেটা কি স্বাভাবিক? যিনি জীবনেও তসলিমা নাসরিনের দেশে ফেরার পক্ষ নিয়ে দুই লাইন লিখেননি- তিনি শামিমা বেগমকে ইংলেন্ডে আশ্রয় দিতেই হবে- সেটা তার জন্মভূমি- এরকম মানবতার অবতার সাজাটা তো ভন্ডামী!

ধরেন কেউ ক্ষুব্ধ হয়ে মন্তব্য করে বসল, এইসব জঙ্গি মেয়েগুলিরে পাছায় বেতের বাড়ি দিয়ে জিজ্ঞেস করা উচিত সে নারী বা মানুষ কিনা? সঙ্গে সঙ্গে যদি কেউ পাল্টা প্রশ্ন করে বসে- তসলিমা নাসরিন যে নাস্তিক তার জন্য তাকে কি বেতের বাড়ি দিয়ে জিজ্ঞেস করা উচিত সে নাস্তিক কেন? ইসলামিক বিশ্বাসে মানুষের গলা কেটে দম্ভ করা একটা জঙ্গি আর নাস্তিককে সমান করে দেখাটা জঙ্গিবাদটাকে লঘু করল না নাস্তিকতাকে গুরু করে তুলল? এরকম প্রশ্নকর্তার উদ্দেশ্য ও আইডিওলজি কেমন সেটা কি বুঝতে কষ্ট হয়? শামিমা বেগমের মত জঙ্গি নারীদের অনেকেই কাফের তথা অমুসলিম নারীদের গলা কেটেছে। তারা বলছে এসব করা মোটেই অন্যায় নয়। তারা দম্ভ ভরে এখনো বলছে কাফের নারীরা হচ্ছে তাদের স্বামীদের সম্পত্তি যা আল্লার তরফ থেকে ঠিক করে দেয়া হয়েছে। এরকম ঠান্ডা মাথার খুনি ও অপরাধীর সঙ্গে একজন লেখকের তুলনা দেয়াটা, বা নাস্তিকতার তুলনা দেয়াটা ফ্যাসিস্ট চরিত্র নয়? নাস্তিকদের লেখা বা কথায় কেউ মারা যায় না। তারা কাউকে হত্যা করে না। তারা কাউকে ধর্ম পালন করতে বাধা দেয় না। বরং তারা সংখ্যাগুরুর হাতে সংখ্যালঘুর ধর্মীয় অধিকার খর্ব হলে রুখে দাঁড়ায়। জঙ্গি আর নাস্তিকদের একই কাতারে ফেলে মডারেট মুসলিম নামের ইসলামিক একটা প্রজাতী। দুর্ভাগ্যজনক এরকম প্রশ্ন তুলছে ফেইসবুকে বামপন্থি হিসেবে পরিচিত যারা এমন কেউ কেউ। তাদের এই অবস্থান ফরহাদ মজহারের মত নষ্ট। ইসলামিকদের গণতন্ত্রের দোহাই দিয়ে ফ্যাসিজম প্রতিষ্ঠার মত ভন্ডামীতে পূর্ণ। ইসলামিক জঙ্গিরা মুসলমান বলেই তাদের এই মানবাধিকারের দোহাই। কালে কালে মিলিযে নিবেন এই এরাই নিজেদের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের প্রতি ঘৃণা বিদ্বেষ হিংসা মানবাধিকারকে দুই পয়সার দাম না দিয়ে প্রকাশ করতে থাকবে। পারলে স্ক্রিণশর্ট নিয়ে রাখতে পারেন, নইলে এদের এখনকার কথা ডিলিট করে এরা দাবী করবে, এই কথা আমি কবে বলেছি তা প্রমাণ করে দেখান…!
Susupto Pathok