যখন জনমানসে বয়ে বেড়ানো এই বিকার অথবা ব্যাধি –!!!

আচ্ছা ইংরেজরা কি তাদের শেকসপিয়ার ( Shakespeare ) কে প্রতিদিন পান ? ফরাসীরা কি নিত্যদিন পান তাদের বোদলেয়ার ( Baudelaire ) কে ? না, তা তারা পান না। আমরা পাই। রবীন্দ্রনাথ, নজরুল তাঁদের গান নিয়ে প্রতিদিন আসেন । এসে মননে সঙ্গী হন আমাদের। কম কথা নয়!
——-
শুধু কি তাই ? প্রতিবছর ঘটা করে রবীন্দ্র-নজরুল জয়ন্তী পালন করি এই আমরাই। রীতিমত সাংবৎসিক উৎসব প্রবর্তন করেছি তাঁদের স্মরণে। জানি সব দেশ তাদের মহৎ কবিদের স্মরণ করে। সাহিত্যের উত্তরাধিকার একটা জাতিকে যে বিপুল গৌরবের অংশীদার করে , কোন জাতি বোধকরি তা হারাতে চায়না। অনেক দেশ স্মরণ করে তাদের মহৎ কবিদের।
——
কিন্তু এই স্মরণটা হয় মূলত অ্যাকাডেমিক আঙ্গিকে। পরিসরে। বছর জুড়ে তারা পঠিত হন লাইব্রেরিতে ,আলোচিত হন শিক্ষাঙ্গনে। আপন আপন দেশের সাহিত্যানুরাগী মহলে অবাধ বিচরণ তাদের । কিন্তু এর বাইরে একটা দেশে যে বিশাল জনগোষ্ঠী থাকে তাদের মনোযোগের কেন্দ্রে কবিরা সাধারণত থাকেননা। কোন দেশেই থাকেননা। এটা নিয়ম।
——-
কিন্তু আমরা নিয়ম মানিনি। আমরা আমাদের অসামান্য এই দুই কবিপ্রতিভাকে নিত্য দিনের সঙ্গী করেছি। খ্যাতনামা রাজনীতিক ও সমাজ সংস্কারকদের জন্মদিন যেমন তাদের অনুসারীদের দ্বারা প্রতিবছর পালিত হয় তেমনি রবীন্দ্রনাথ ও কাজী নজরুলের জন্ম-মৃত্যু দিনও পালন করি আমরা। মানে বাঙালীরা।
—–
আড়ম্বরপ্রিয়, উৎসবপ্রিয় বাঙালীর এ পর্যন্ত ঠিক আছে। কিন্তু তারপরই বাধে গোল। এই দুই মহৎ স্রষ্টার সৃষ্টি নিয়ে কথা উঠলেই ‘ বাঙালী মুসলিম জনমানস ‘ ভাবতে বসে যায়, রবীন্দ্রনাথ হিন্দু ,সুতরাং আমাদের নন ,বিপরীতে নজরুল মুসলিম তাই আমাদের। শিক্ষিত-অশিক্ষিত বিপুল মানুষের মধ্যে এই প্রবণতা দেখা যায় । অন্য কবিদের নিয়ে এই প্রবণতার প্রকাশ না ঘটলেও রবীন্দ্রনাথ – নজরুলকে নিয়ে এটা যেন অনিবার্যভাবে ঘটে।
——
মননে এই ভ্রান্তি অথবা ব্যাধি বয়ে বেড়াচ্ছেন যারা , তারা কী রবীন্দ্রনাথ – নজরুলের কাছে পৌঁছুতে পারেন ? বুঝতে কী পারেন তাদের এই ব্যাধি ( সাম্প্রদায়িক মন ) সকল শুভ ও সুন্দরের পথ আগলে রেখেছে ?
——
সাম্প্রদায়িকতা , প্রকারান্তরে ধর্ম এভাবে সব কিছু বিনষ্ট করে দেয়।হ