ইতিহাস বারবার ফিরে আসে কিন্তু বর্বররা তা থেকে শিক্ষা নেয়না।

গতকাল রাত একটা। বিছানায় শুয়ে শুয়ে ফোন টিপছি। হঠাৎ রুমমেট বলে উঠলো হিমেল টেবিলে আবার মূর্তিটা রাখলি কেন? উত্তর দিলাম কেন? কি সমস্যা আপনার? সে বলল তার নামাজ পড়তে সমস্যা হয় তাতে। আমি বললাম আমার কি করার আছে তাতে? সে বলল কথা বাড়াবি না। উঠে বসলাম। কথা বাড়ালে কি করবেন? ওনি বলেন ভালভাবে বলতেছি ওইটা সরা। না সরালে কি করবেন? রুমে ৪ জন থাকি। দুইজন বয়সে বড়। বাট  ভার্সিটিতে তিনজনেই আমার জুনিয়র। ভালভাবে বললাম। আমি কারো ধর্ম পালনে বাঁধা দেই না। আপনার সমস্যা হলে এদিকে চলে আসেন। আমি ওইদিকে চলে যাই। না যাবে না। আবার বলে তাহলে কিছু দিয়ে ঢেকে রাখ। আমাকে মূর্তি আর আমার মৃত কাকার ছবি টেবিল থেকে সরাতেই হবে। বাধ্য হয়ে বললাম। This not our supreme court. this is my table, ,,yeah it’s my personal table. B.SC engineering পাস করলো। বাট সহজ কথাটা বুঝতেই চায় না বেচারা। তর্ক করতেই থাকে। টেবিল থেকে সে মূর্তি টা হঠাবেই। ওনার ধর্ম টা আসমানি। আর আমার টা নদীতে ভেসে এসেছে। সোজা বলে দিলাম সরাব না, যদি কিছু করার থাকে, করতে পারেন, করেন আপনি। বেচারি নামাজ বেডে শুয়ে শুয়ে পড়বে। কথা আসলে নামাজ পরা না। কথা হল মালাউনের বাচ্চা রুমে মুর্তি রাখতে পারবে না। আর আমি মালাউনের বাচ্চা কি এতই মূর্খ !!?? ওনি বলবে আর আমি আমার ধর্মকে ড্রয়ারে ভরে রেখে দিব। কি আর করার। বেচারি নামাজ না পড়েই ঘুমিয়ে পড়লো। একজন বলে আমার সমস্যা কি? বললাম আমি চাই না আমার মত কাফেরের (নিকৃষ্টতম প্রাণী) জন্য আপনাদের জান্নাত মিস হোক। তাই আমি চাই আপনারা অন্য কোথাও চলে যান।

আর হ্যা, ওনারা মাঝে মাঝে আমাকে মুসলিম হবার দাওয়াত দিত।

আসেন দেখি  এই আয়াতে কি বলে???

وَدُّواْ لَوْ تَكْفُرُونَ كَمَا كَفَرُواْ فَتَكُونُونَ سَوَاء فَلاَ تَتَّخِذُواْ مِنْهُمْ أَوْلِيَاء حَتَّىَ يُهَاجِرُواْ فِي سَبِيلِ اللّهِ فَإِن تَوَلَّوْاْ فَخُذُوهُمْ وَاقْتُلُوهُمْ حَيْثُ وَجَدتَّمُوهُمْ وَلاَ تَتَّخِذُواْ مِنْهُمْ وَلِيًّا وَلاَ نَصِيرًا
89

তারা চায় যে, তারা যেমন কাফের, তোমরাও তেমনি কাফের হয়ে যাও, যাতে তোমরা এবং তারা সব সমান হয়ে যাও। অতএব, তাদের মধ্যে কাউকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না, যে পর্যন্ত না তারা আল্লাহর পথে হিজরত করে চলে আসে। অতঃপর যদি তারা বিমুখ হয়, তবে তাদেরকে পাকড়াও কর এবং যেখানে পাও হত্যা কর। তাদের মধ্যে কাউকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না এবং সাহায্যকারী বানিও না।

সকালে উঠেই আবার সেইম কথা। বললাম পরে কথা বলি। বাহিরে গিয়ে এক ফ্রেন্ড কে কল দিলাম। ওর নাম সারোয়ার। ওর কাছে শেয়ার করলাম বিষয়টা। সব শুনে ও বলল, তুই তোর রুমমেট কে জিজ্ঞেস কর কেন রুমে নামাজ পরে?? নামাজ পরার স্থান মসজিদে। ধর্মে লিখা আছে, যতক্ষন শরীরে শক্তি আছে মসজিদে নামাজ পড়তে হবে। যদি কোন কারণে নামাজ মিস হয়ে যায় তাহলে রুমে পড়া যাবে।

দুজনেই মুসলিম। পার্থক্য এখানেই একজন ধর্মান্ধঞ্জিয়ার। আরেকজন ইঞ্জিনিয়ার। কেউ উগ্র আর কেউ উগ্র নয়।

ত্যাড়ার সাথে ত্যারামি না করলে হয় না।

কে যেন বলেছিলেন সব মুসলিম এক??? তাকে বলি সবাই এক না। সবাই আলাদা। সম্পূর্ন আলাদা সবাই। সবাই উগ্র হলে সৌদি আরবের মত হয়ে যেত দেশ।

আমরা কি পারি??

১৯৪৯ সালে সদ্য ভূমিষ্ট ইসরাইল রাষ্ট্রটিকে ছয়টি মুসলিম দেশ একজোট হয়ে আক্রমন করে। সৌদী আরবের নেত্রীত্বাধীন সেই জোটে কাতার এবং ইয়ামেনও ছিলো। মাত্র তিন সপ্তাহে লজ্জাজনক পরাজয় ঘটেছিলো যৌথবাহিনীর। বার বার ভাগ্যের হাতে মার খেয়ে অতীত থেকে শিক্ষা নেয়া আত্মবিশ্বাসী ইহুদীদের সামনে টিকতে পারেনি সম্মিলিত মুসলিম শক্তি। ইতিহাস আজ সবার যায়গা ঠিক করে দিয়েছে। জোটের ছয়টি দেশের মধ্যে তিনটিই ধ্বংসস্তুপে পরিনত হয়েছে নিজেদের মধ্যে হানাহানী করে; কাতারও আজ সৌদী আরব কর্তৃক হুমকির মুখে। ইতিহাস বারবার ফিরে আসে কিন্তু বর্বররা তা থেকে শিক্ষা নেয়না। শুনেছি বাচ্চা শুয়োরের দাঁত গজালে প্রথমে বাপের পাছায় কামড় বসায়। সপ্তম শতাব্দীতে আরবের পাহাড়গুহায় যে বিষবৃক্ষটি রোপিত হয়েছিলো তা আজকে পুষ্প পল্লবে সুশোভিত। সমানে ধ্বংস করে চলেছে একের পর এক জনপদ। পৃথিবীজুড়ে সাতশ কোটি মানুষকে করে রেখেছে আতংকিত। আর ইসরাইল? ইন্টারনেটের যুগ, চাইলেই খোঁজ নিয়ে দেখা যেতে পারে। ইসরাইলের জিডিপি ৫৭ টি মুসলিমপ্রধান দেশের সম্মিলিত জিডিপির চাইতেও বেশী। ইসরাইলের অর্থনীতি পশ্চিমা সমমানের। অভ্যান্তরীন নিরাপত্তা, মানবসম্পদ উন্নয়নে ইসরাইল পৃথিবীর যে কোন দেশের চাইতে এগিয়ে। বৈজ্ঞানিক গবেষনা এবং উদ্ভবনে খোদ আমেরিকাকে ছাড়িয়ে গেছে। দেড় কোটির ইহুদীদের বিজ্ঞানে অবদান রেখে বাগিয়ে নিয়েছে ১৫৩ টি নোবেল পুরস্কার আর দেড়শ কোটির আমাদের অর্জন সাকুল্যে দুই! ধর্মের বই পড়ে বংশপরম্পরায় মানুষের প্রতি ঘৃণা পুষে রেখে আমরা কি পেয়েছি? উত্তর জানতে ইহুদীদের মত রকেট সায়েন্টিস্ট হওয়ার প্রয়োজন নেই। প্রতিনিয়ত নিজেরা শেষ হচ্ছি, অন্যকে শেষ করছি তবুও মধ্যযুগের ধর্মের বইগুলো আকড়ে পড়ে আছি। ইহুদিরা বিজ্ঞানের বই খুলে মঙ্গলে আলু চাষের উপায় খুঁজে আর আমরা কোরান হাদীস খুলে খুঁজি কিভাবে শরীয়তসম্মতভাবে বউ পেটাতে হবে! তবুও জোর গলায় দাবি করি আমরা পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ট জাতি, কেউ মেনে না নিলে চাপাতি হাতে তেড়ে যাই!! এটাই আমার দেশ। আমি ঘৃণা করি এই দেশ। কারন এই দেশ কখনোই আমার ছিল না, আজও নেই , আর কখনোই আমার হবে না।

লেখক, কৌশিক বন্দোপাধ্যায়ের।