ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বাসুদেবের অস্তিত্বের কথা বিশ্বাস করেন না? কিন্তু এবার থেকে বিশ্বাস করতে হবে। শুধু তাই নয়। প্রাচীন ভারতের ইতিহাসটাও নতুন করে লেখার হয়তো সময় এসেছে। পুরাণকে কল্পলোকের গল্পকথা যাঁরা মানেন আসলে যে তা ইতিহাসেরই প্রতিচ্ছবি এ কথা বলাই যায়। অনেকে ধন্ধে রয়েছেন জলের তলায় থাকা প্রাচীন দ্বরকা নগরী কি আসলে বিষ্ণুলোক? বহু গবেষক মনে করেন, ভারতের অন্যতম মহাকাব্য মহাভারত সত্যি ঘটনা, তার চরিত্র, কাহিনি বিন্যাস রাজনীতি আসলে সমাজ থেকেই নেওয়া, তার জন্যই এই মহাকাব্য অনেকটাই সমকালীন হয়ে রয়েছে সহস্রাব্দ ধরে।
মহাভারত বা পুরাণের সূত্র মতে, পাণ্ডবদের হস্তিনাপুর জয়ের পর, শ্রীকৃষ্ণ বাসুদেব মথুরার পরিবর্তে দ্বারকা শহরে থাকতে শুরু করেন। যা অধুনা গুজরাটে অবস্থিত। কিন্তু এই দ্বারকা নগরী আসলে প্রাচীন দ্বারকা নয়। এটা একটা ক্ষুদ্র অংশ বিশেষ। শ্রীকৃষ্ণের নগরী দ্বারকা বর্তমানে রয়েছে জলের তলায়। আর তার হদিশ মিলেছে সমুদ্রবিজ্ঞানীদের কাছে। গুজরাটের আরব সাগরের পশ্চিমে লম্বায় ১৫ কিলোমিটার এবং চওড়ায় ৬ কিলোমিটার জুড়ে ছিল প্রাচীন দ্বারকা নগরীর অস্তিত্ব। যার ঐতিহাসিক প্রমাণ্য তথ্য পাওয়া গিয়েছে হালে।
![](http://travelweekbazar.com/wp-content/uploads/2017/03/dwarka-300x199.jpg)
কী ভাবে মিলল এই নগরীর খোঁজ? ভারতের ন্যাশানাল ইনস্টিটিউট অফ ওসেন টেকনোলজি সমুদ্র দূষণ নিয়ে একটি সমীক্ষা চালায়। অত্যাধুনিক স্ক্যানার যন্ত্র সোনার, যা জলের তলায় বহু নীচ পর্যন্ত শব্দ তরঙ্গের বিম পাঠাতে পারে। সেই যন্ত্র মারফৎ জানতে পারে, জলের প্রায় ১২০ ফুট নীচে একটি প্রকাণ্ড জ্যামিতিক কাঠামো রয়েছে। তারই খোঁজ চালাতে গিয়ে গবেষকদের চোখ কপালে ওঠে। উঠে আসে বিশাল এক প্রচীন নগরীর তথ্য। সময়কাল পরীক্ষা নিরিক্ষার জন্য উদ্ধার করা হয় বেশ কিছু জিনিস, যার থেকে জানা যায়, এই কাঠামো তৈরি হয়েছিল প্রায় ১০ হাজার বছরেরও আগে।
আন্তর্জাতিক ইতিহাস গবেষকদের দাবি, মেসোপটেমিয়ার সবচেয়ে পুরনো বৃহৎ নগর বলে বিশ্ব ইতিহাসে স্থান পেয়েছে। কিন্তু এই আবিষ্কার বিশ্ব ইতিহাসের পাতাকেই ঘেঁটে দিয়েছে। নতুন করে ইতিহাস লেখার প্রয়োজন রয়েছে।
ঐতিহাসিকদের মত, সময়ের সঙ্গে প্রকৃতি তার রূপ পরিবর্তন করেছে। ঠিক যে ভাবে টেথিস সাগর সরে গিয়ে হিমালয়ের জন্ম নিয়েছে, ঠিক তেমনই আরব সাগর স্থান পরিবর্তন করায় একটা বৃহৎ প্রাচীন নগরী জলের তলায় চলে গিয়েছে। যা বহু বছর ধরে মানুষের কাছে অধরা ছিল। তবে এখন যা প্রামাণ্য তথ্য পাওয়া গিয়েছে, তার উপর ভর করে আরও গবেষণা চালাতে হবে। যে ইতিহাস মিলেছে তাকেই মাইল ফলক ধরে চললে ভুল হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এখানে একটা কথা উল্লেখ্য, একাংশ পৌরাণিক গবেষকদের মত, পুরাণে বলছে, ক্ষীরপাই সমুদ্রের গর্ভে শেষনাগের উপর অনাদি অনন্তকাল ধরে অধিষ্ঠান করছেন ভগবান শ্রীবিষ্ণু সঙ্গে নারায়ণী। তাহলে কি এই আরবসাগরই পুরাণের ক্ষীরপাই? যেখানে সলিল সমাধিতে রয়েছে বিষ্ণুর অন্যতম অবতার শ্রীকৃষ্ণের প্রাচীন বাসভূমি। তাহলে কি এই প্রাচীন দ্বারকা নগরী আসলে বিষ্ণুলোক? মানুন বা মানুন পুরাণ শুধু কল্পনার গল্প বলে না, হয়তো তার রহস্য উন্মোচন হয়, বহু বছর বাদে। ঈশ্বর যে আছেন তার প্রমাণ দেন প্রকৃতিক গর্ভে লুকিয়ে থাকা অস্তিত্বে। তাইতো কখনও কখনও বিজ্ঞানও নিজের কাছে হেরে যায়। আজ বিজ্ঞানের কাছে যা সত্যি আগামিকাল তা মিথ্যে হয়ে দাঁড়ায়।