এই দেশের চেহারা আগামী বিশ বছর পর কি রকম হতে পারে আন্দাজ করতে না পারাটা বুদ্ধি প্রতিবন্ধিতার লক্ষণ।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, ৩১ ডিসেম্বর বিকেল থেকে ঢাকা শহরের সকল বার বন্ধ থাকবে। থার্টি ফার্স্ট নাইটে কোনো ধরনের আতশবাজি, পটকা ফোটানো যাবে না। উন্মুক্ত স্থানে নাচ-গান করা যাবে না।’ এবার তফাতটা খেয়াল করুন, জানুয়ারিতে ইজতেমা আয়োজনের প্রস্তুতি বৈঠকে (১৬ অক্টোবর,২০১৭) স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘প্রতিবারের মতো এবারও যাতে সুন্দর ও নিরাপদভাবে ইজতেমা শেষ করতে পারি এজন্য আরও কিছু করার প্রয়োজন আছে কি না এ জন্য সবার সঙ্গে আলোচনা করেছি। ইজতেমাস্থলে প্রতিবারের মতো এবারও ইউনিফর্মধারী পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকে পুলিশ, রর্যাথব, আনসার ও প্রয়োজনীয়সংখ্যক নিরাপত্তা বাহিনী থাকবে। নিরাপত্তার জন্য যা যা প্রয়োজন সবকিছুই সেই মাঠে আমরা রাখব।’ সাংবাদিকরা মন্ত্রীকে জিজ্ঞেস করেছিলেন ইজতেমায় কোন নিরাপত্তা হুমকি আছে কিনা, জবাবে মন্ত্রী দৃঢ়ভাবে ইজতেমার পক্ষ নিয়ে বলেছিলেন, ‘এখন পর্যন্ত কোনো থ্রেটের কথা আমরা জানি না। আমরা মনে করি, যে কোনো সময় যে কোনো কিছু হতে পারে। সেজন্য গোয়েন্দা থেকে আরম্ভ করে আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী সবসময় সজাগ থাকবে এবং রয়েছে।’

মাননীয় মন্ত্রী এবং তার সরকার কেন তাদের মেরুদ্বন্ডটা এভাবে বাংলা নববর্ষ অনুষ্ঠানের সময় সোজা রাখতে পারলেন না? কেন নিরাপত্তার অজুহাত তুলে বিকেলের মধ্যে সবাইকে রাস্তা ছেড়ে দিতে বলেছিলেন? থার্টিফাস্ট নাইটকে বাঙালী সংস্কৃতির মৌলবাদীরা ইসলামী মৌলবাদীদের মতই অপসংস্কৃতি মনে করে বলে হয়ত দেশের প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক মহল কোন উচ্চবাচ্য করবে না। তবে তাদের মনে রাখা উচিত সরকার যেভাবে ‘উন্মুক্ত স্থানে নাচানাচি করা যাবে না’ বলছে সেটা কিন্তু শুভ লক্ষণ নয়। এই ভাষা ইসলামিস্টদের ভাষা। বাংলা নববর্ষ পালনকে ইসলামিস্টরা এভাবে আরো কদর্যভাবে বলে ‘উন্মুক্ত স্থানে ছেলেমেয়ে উলঙ্গ হয়ে নাচানাচি করা চলবে না’। তবে এটাও ঠিক সরকার যখন সারাদেশে প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী বৈশাখী মেলাগুলো নিরাপত্তা দোহাই দেখিয়ে বন্ধ করে দিচ্ছিল তখন ঢাকার এইসব সাংস্কৃতিক ব্যক্তিবর্গ তাদের দলবাজী অব্যাহত রেখে পার্টির প্রতি একনিষ্ঠ আনুগত্য প্রমাণে নিশ্চুপ ছিলেন। শুধুমাত্র নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে সাধুসঙ্গ, বাউল উৎসব, বৈশাখী মেলা, রাশমেলা, যাত্রা, সার্কাসসহ যাবতীয় গ্রামীণ উৎসব বন্ধ করা হয়েছে। সরকারের এমপি-মন্ত্রীরা ওয়াজ মাহফিলে যোগ দিয়ে একই সময় প্রমাণ করেছেন তারা ঠিক কিসের পৃষ্ঠপোষকতা করতে ইচ্ছুক।

ধর্মীয় সম্মেলনগুলোতে ইসলামী রাজনীতির মতবাদ কৌশলে প্রচার করা হয়। ইজতেমার মত সম্মেলনে ছোট ছোট দলে খুবই চাতুরীর মাধ্যমে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের মধ্যে জিহাদের চেতনা ঢুকিয়ে দেয়া হয়। ‘মুসলিম উম্মাহ’ এইরকম জাতীয়তাবোধ জাগ্রত করে দেশের গণতন্ত্র, সরকার ব্যবস্থার উপর কৌশলে অনাস্থা সৃষ্টির চেষ্টা করা হয়। ওয়াজ মাহফিলে প্রকাশ্যে অমুসলিমদের ধর্মীয় বিশ্বাস নিয়ে কটুক্তি, নাস্তিকদের হত্যার আহ্বান প্রকাশ্যে চালালেও ইজতেমা মূলত আন্তর্জাতিক জিহাদবাদীদের অবাধে বাংলাদেশে প্রবেশের সুযোগ তৈরি করে দেয় যার পুরো সৎ ব্যবহার করে জিহাদবাদীরা তাদের সাংগঠনিক কাজকর্ম নির্বিঘ্নে চালায়। আর সরকার সেটাই তাদের সর্বোচ্চ ক্ষমতা দিয়ে পৃষ্ঠপোষকতা করে চলেছে। বলছি না এটাই প্রথম কোন সরকার ইজতেমাকে সরকারীভাবে খেদমত করছে। বলতে চাইছি, জনগণের সাংস্কৃতিক চর্চার গলা টিপে ধর্মীয় ভাববোধ জাগ্রত করার চেষ্টা এটাই সম্ভবত প্রথম ঘটছে। তারপরও এই দেশের চেহারা আগামী বিশ বছর পর কি রকম হতে পারে আন্দাজ করতে না পারাটা বুদ্ধি প্রতিবন্ধিতার লক্ষণ। যারা আজো আস্থা রাখতে চান এবং প্রচার করতে চান ‘আস্থা রাখুন’ তাদের জন্য সহানুভূতি রইল। বিজয় দিবসে ফেইসবুকে প্রো-পিক জাতীয় পতাকা দিয়ে রাঙিয়ে আপনাদের দেশপ্রেম অমর হোক…!

http://www.sylhettoday24.com/news/details/National/49971

https://www.jagonews24.com/national/news/357847