ইসলামের সমালোচনা করলেই নাকি উগ্রপন্থার উত্থান ঘটে। এ

ইসলামের সমালোচনা করলেই নাকি উগ্রপন্থার উত্থান ঘটে। এসব কারণে বলতে হবে ইসলাম খুবই মানবিক একটি ধর্ম। সব দোষ ধর্ম ব্যবসায়ী মোল্লাদের। তারাই নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য কুরআন-হাদিসের অপব্যাখ্যা করে মুসলমানদের বিভ্রান্ত করছে…। যারা এরকম প্রস্তাব করেন তারা প্রথমত শঠতা করতেই প্ররোচিত করলেন। এর বিপদ সাংঘাতিক এবং বহুমুখী।

মুসলমানরা তাদের নবীকে খুব ভালোবাসে তাই তার সমালোচনা শুনে তারা ক্ষিপ্ত হয়ে আরো বেশি রক্ষণশীল হয়ে উঠবে। তাই ইসলামের নবীকে না দুষে মোল্লাদের উপর সব দোষ চাপান (বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে ইসলামের সব দোষ জামাত ইসলামের কাধে চাপান)। যারা নাস্তিকরা কিভাবে লিখবে এই নছিয়ত করেন এবার তারা জবাব দিন, শিয়া-সুন্নীর নবী তো একজনই এবং তাদের নবী প্রেম, কুরআন প্রেম, একই হাদিস বই থাকার পরও কেন একে অন্যের রক্ত ঝরাচ্ছে? পাকিস্তান আফগানিস্থানে মসজিদে বোমা মেরে একসঙ্গে শতাধিক মুসল্লিকে হত্যা করা হয়েছে কাদের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে? আপনাদের পরামর্শ অনুসারে তাহলে শিয়াদের এখন বলতে হয়, আপনাদের ভিন্নমতই সুন্নীদের উগ্র করে তুলছে কাজেই আপনারা এটা ত্যাগ করুন। পাকিস্তানে আহমদিয়াদের ধর্মীয় অধিকার আইন করে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বাংলাদেশে আহমদিয়া মসজিদ পুলিশ কর্তৃক বাজেয়াপ্ত করা সহ তাদের সমস্ত প্রকাশনা নিষিদ্ধ করেছে সুন্নীদের জঙ্গি আন্দোলনের কারণে। এবারো কি দোষ চাপাবেন আহমদিয়াদের? বাংলাদেশে বিরামহীন হিন্দু মন্দিরে হামলা করে মূর্তি ভংচুরের জন্য তাহলে নিশ্চয় হিন্দুরাই দায়ী কারণ হিন্দুরা তো জানেই মূর্তি ইসলামে নিষিদ্ধ। এটা জেনেও কেন হিন্দুরা মূর্তি পুজা করে মুসলমানদের উগ্র হতে বাধ্য করছে!

নাস্তিকরা তখনই ইসলামের নেপথ্য কাহিনী নিয়ে লেখালেখি শুরু করেছে যখন জিহাদের কারণ নির্ণয় করতে গিয়ে মানুষ দিশা পাচ্ছিল না। জিহাদ  বা ইসলামী সন্ত্রাস নিয়ন্ত্রণ বা দমন করতে রাষ্ট্রগুলো যখন ভুল পদক্ষেপ নিচ্ছিল তখন বিশ্বজুড়ে নাস্তিকরা লেখালেখি করে দেখিয়েছে জিহাদ বা ইসলামী সন্ত্রাসবাদ স্পষ্টভাবে কুরআনে ঘোষিত আছে। প্রায় সাড়ে বারোশ বছর পূর্বে রচিত হাদিস, সিরাত, তাফসিরে সন্ত্রাসবাদের সুস্পষ্ট উচ্চারণের সন্ধান মানুষকে জানিয়ে নাস্তিকরা কোন ভুল করেনি। নাস্তিকদের লেখা পড়ে ইসলামপন্থিদের উগ্রতা বা উগ্রমতালম্বি হবার কোন প্রমাণ নেই। ভারতবর্ষে তুরস্কের অটম্যান খিলাফত এবং তার শেষ খলিফাকে নিজেদের খলিফা ঘোষণা করে যে ‘খিলাফত আন্দোলন’ সংঘঠিত হয়েছিলো- এতখানি পরগাছাসূলফ অবস্থান নেয়ার শানে নযুলটা কি কেউ বলতে পারেন? কেন মুসলমানরা বিদেশী এক শাসককে নিজেদের শাসনকর্তা হিসেবে মাণ্য করল? তার ধর্মীয় কারণ অনুসন্ধান করে প্রকাশ করবে যারা তারাই উগ্র?

উগ্রবাদী মুসলমানদের দায় নাকি নাস্তিকদের পর সাম্রাজ্যবাদী আমেরিকা ও তার সহযোগীদের। আর বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক হামলা নির্যাতনের দায় নাকি ভারতের হিন্দুত্ববাদী আচরণ। তো ভারত তো এবার জেরুজালেম প্রশ্নে সরাসরি ফিলিস্তিনের পক্ষে জাতিসংঘে ভোট দিলো। ফলশ্রুতিতে আমরা কি ঘটতে দেখলাম? ফিলিস্তিন ‘মুসলিম উম্মাহর’ টানে তাদের দুতকে পাকিস্তানে পাঠিয়ে ফের কাস্মির প্রশ্নে পাকিস্তানের পাশে থাকার দৃঢ প্রত্যায় ঘোষণা করে এসেছে। এমনকি মুম্বাইতে জিহাদী হামলার অনতম পরিকল্পনাকারী হাফিজ সৈয়দের সঙ্গে মোলাকাত করে এসেছে। এই হচ্ছে ‘মুসলিম বিশ্বের’ সঙ্গে উদার নরম হবার পুরস্কার!

সাধারণত বামপন্থিরা নাস্তিকদের উপর ইসলামের মূল ধরে নাড়া দেয়ায় নাখোশ। তারা মনে করে চাল ডাল তেল নুনের বিপ্লব বাদ দিয়ে ইসলামের আবর্জনা ঘেটে নাস্তিকরা মুসলমানদের বিপ্লবে যোগ দেবার বদলে আরো বেশি করে ধর্মীয় আফিনে বুধ করে থাকতে সাহায্য করছে। এ হচ্ছে বামেদের উদোর পিন্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপানো। তারাই বরং সাম্রাজ্যবাদীদের শত্রু ইসলামিস্টদের শত্রুর শত্রু বন্ধু বানিয়েছে। তাদের এই নীতি মুসলিম শাসনে শরীয়া শাসন এবং নারী নিপীড়িত শাসন ব্যবস্থাও সমর্থন লাভ করেছে। ইরানের এখন সরকার বিরোধী আন্দোলন চলছে। এ জন্য ইরান আমেরিকারকে দায়ী করেছে। কমিউনিস্টরা এখন ইরানকে আরেকটা মার্কিন দখলদারীত্ব বানাতে দেয়া হবে বলে ইরানের ধর্মীয় পুলিশের হাতে নাজেহাল নারী সমাজ, ধর্ষণের বিচার না পাওয়া নারীদের কথা, ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা ছড়ানোর বহু অভিযোগে অভিযুক্ত ইসলামী রিপাবলিক ইরানকে সমর্থন করবে হয়ত। স্বাভাবিক সময়েও তারা ইরানের নারীর অবস্থান এবং ধর্মীয় শাসনতন্ত্রের সমালোচনা করেনি। খালি ট্রাম্প আর বিজেপি সরকার সাম্প্রদায়িক? আর উগ্রবাদীতার জন্য নাস্তিকরাই দায়ী?

ধর্মের কুৎসিত চেহারা মানুষকে না দেখালে তাদের মোহভঙ্গ ঘটবে না। অন্তত ধর্মের ইতর চেহারাটা একবার চিনিয়ে দিতে পারলে ধর্মকে ছেড়ে দিতে না পারলেও ধর্মের নামে, ধর্মের নবীর নামে চকচকে ধারালো অনুভূতিখানাটা ভোতা হয়ে যাবে। এ কারণেই ধর্ম নিয়ে কোন রকম রাখঢাক ছাড়াই লেখা উচিত।