একযাত্রায় দুই ফল।
ইসলামী মৌলবাদের বিরূদ্ধে মুসলিম দেশগুলো ইচ্ছা করলে যে কোন পদক্ষেপ নিতে সক্ষম। শাপলা চত্তর থেকে মাঝরাতে তাদের পিটিয়ে হাসিনা পালাতে বাধ্য করেছিলেন। ইচ্ছা করলে এর চেয়ে অনেক বড় পদক্ষেপও নিতে হাসিনা সক্ষম। তার কারন তিনি মুসলমান। আর এটা মুসলিম রাষ্ট্র।এখজন মুসলমান যখন সন্ত্রাসী মুসলমান হত্যা করে তখন তা মেনে নেয় সবাই। অমুসলিম মুসলিম সবাই মেনে নেয়, কিছু রেডীক্যাল ছাড়া।
সৌদী আরব ইয়েমেনে লক্ষ লক্ষ মুসলমান হত্যা করছে। বাংলাদেশ সৌদী আরবের সাথে সামরিক চুক্তি করেছে। বাংলাদসেশী সেনাবাহিনী দিয়ে সৌদীদের ইছামত মুসলমান মারছে। কোন রিএকশন নেই কোথাও। দশ লক্ষ ইয়েমেনী খাদ্যাভাবে মরছে। না। আমাদের কোন মুসলিম কমুনিটি এটা নিয়ে কথা বলবেনা। আসলে কথা হচ্ছে এটা ইসলামে ইসলামে লড়াই। এটা আভ্যন্তরীন রক্তক্ষয়ী এক লড়াই যা হাজার বছর ধরে চালু আছে এবং থাকবে। এটা ইসলামের অনুষঙ্গ তাই এটা আলাপের বিষয় হয়না।
কিন্তু যদি এটা কাশ্মীরে ঘটে বা গাজাতে ঘটে কিংবা ভারতে ঘটে তখন তা কেউ মানবেনা।এটা হয়ে যাবে যাম্প্রদায়িকতা। লক্ষ লক্ষ মানুষের ঢল নামবে শুক্রবার। ভয়ে কাপবে অমুসলিমরা। লক্ষ্যবস্তু হয়ে যাবে রসরাজ, চাকমা কিংবা দশ বছরের কিশোরী পূর্ণিমা।
আবার যদি চীন মুসলমানদের লাগাতার হত্যা করে বা, ১০ লক্ষ মুসলমানকে প্রতি ব্যাচে ইসলাম ধর্মত্যাগে বাধ্য করায়, মসজিদ ভেঙ্গে দেয়, দাড়ি রাখা বন্ধ করে দেয় কিনবা রোজা রাখা শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে নিষিদ্ধ করে, তাতে আমরা সাম্প্রদায়িকতা দেখিনা। পাকিস্তানীরাও দেখেনা। কারণ আর যাই হোক ৬২ সনে চীন ভারত আক্রমন করেছিল। এখনও শত্রুতা বহাল আছে। আর শত্রুতা বহাল আছে বলেই চীন আমাদের বন্ধু। কোরানে আছে “এক মুসলমান অন্য মুসলমানের দোষ ঢেকে রাখবে।” চীন মুসলমান বিরোধী হলেও তারা সেই সূযোগটা কি করে পাচ্ছে সেটা স্পষ্ট।
এখানে ভারত বিরোধীতাকেই প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে কারণ আমাদের নজর দিল্লীর মস্নদের দিকে। এরদোগান চান অটম্যান সাম্রাজ্য আর আমরা চাই মোগলদের উত্তরাধিকার।
অনেক দেশ হিজাব নিকাব নিষিদ্ধ করেছে, বাংলাদেশে হাসিনাও চাইলে করতে পারবেন। কিন্তু ভারত কি পারবে? কাশ্মীরে হিজাব পরে সন্ত্রাসীরা অনেকবার সন্ত্রাস চালিয়েছে, কিন্তু ভারত সেটা নিষিদ্ধ করতে পারবেনা।, চীতকার উঠবে বিশ্বব্যাপী। অথচ সেদিন শ্রীলঙ্কায়ও বোরখা নিষিদ্ধ করল। যদি এমনটা ভারতে হত লক্ষ লক্ষ লোকের মিছিল বের হত বাংলাদেশে।
আমাদের মানুষের কথাবার্তায় মনে হয় ভারত ইসলাম শেষ করে দিচ্ছে। এক বাবরি মসজিদ ভাঙ্গার খিস্তি থামার কোন লক্ষন নেই। মোদী এটাকে কোর্টের রায়ের উপর ছেড়ে নীরব। কিন্তু মমতা বললেন ” শালা মোদী তুমি এতো বছরে রাম মন্দিরটাও করতে পারলেনা!” অর্থাৎ মমতা চান মোদী রামমন্দির নিয়ে মেতে উঠুন। তাতে যদি মমতা একটা দাঙ্গা লাগাতে পারেন তবে তার জন্য কম কি! অথচ যেগুলো ছিল অবশ্য করনীয় সেগুলিই করতে পারছেন না মোদী।তিন তালাক আইন পাশ করতে পারলোনা। খোরপোশের টাকা পরিত্যক্তা স্ত্রীকে দিতে দিলোনা কংরেস, যদিও হাই কোর্ট রায় দিয়েছিল।
ভারতে শরীয়া আইন আজও বহাল আছে, কমন ফেমিলি লো মোদী করতে চেয়েও পারেন নি। কারন বিরোধীরা মুসলমানদেরকে মৌলবাদী বানাতে চায়। যেমন আমেরিকা চেয়েছিল আফাগানদের বেলা। মোদি তাই সাম্প্রদায়িক আখ্যা পান। তাকে সরাবার জন্য ভণ্ডের দল ওহাবীদের অর্থে পাগলের মত উত্মত্ত হয়ে যা ইচ্ছা করছে।
আমাদের দেশের মুসলমানদের বুঝা উচিত, বাংলাদেশে ইসলামীক পারিবারিক আইন আধুনিকায়ন করায় কি ইসলাম চলে গেছে? তবে কেন ভারতে তেমন আইন করা যায়না? কে কাকে ভয় পাচ্ছে? অঙ্কটা না বুঝার কথা নয়। ভারতের মানবতাবাদীরাও তিন তালাক বহাল থাকার পক্ষে। শাহবানু খরপোষের টাকা পেলোনা তার অত্যাচারী স্বামীর কাছ থেকে তাতেও ভারতের মানবতাবাদীরা খুশী। কারন সকলেই ইসলামকে রাজনীতির হাতিয়ার বানিয়েছে। যেমন বানিয়েছে আমেরিকা, তেমনি হিন্দুরা এবং মুসলমানেরা উভয়ে। এতো চাপ ইসলাম সইতে পারছেনা বলেই এতো অসহিষ্ণুতা দেখা যাচ্ছে, নইলে আমরা শৈশব থেকে মুসলমান্দের মধ্যে বাস করেছি, সম্মানের সাথে। বন্ধুত্বের সম্পর্ক কোনদিন ধর্ম কলুষিত করতে পারেনি।
ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করেছে উপমহাদেশের সবকটি রাজনৈতিক দল। আওয়ামী লীগ আর মুসলিম লীগের কিংবা জামাতের পার্থক্য আদৌ কতটা? ভারতেও বাম দল থেকে কংরেস সকলেই ধর্মকে ব্যবহার করছে। বিজেপি সাম্প্রদায়িকতা মুক্ত করার জন্য একটি পথ খুজছে। পথটি সহজ নয় কারন কিছু বলতে গেলেই সাম্প্রদায়িক তকমা দিয়ে দেয়া হচ্ছে বিজেপিকে। তবু ভারতের অসাম্প্রদায়িকতা রক্ষার জন্য বাস্তব পদক্ষেপ গুলো নিতে হবেই তাতে আপাতত যত সমালোচনাই করুক মানুষ।