অশান্তি ছড়াবেন না। একটি সম্প্রীতি মূলক ছোট গল্প..!

অশান্তি ছড়াবেন না। একটি সম্প্রীতি মূলক ছোট গল্প..!

রমেন পড়েছে খুব আতান্তরে। ছোট ভাই সুরেন ছোট থেকেই ডানপিটে, উগ্র। অসৎ সঙ্গে মিশে, বাজে বই পড়ে পড়ে বখে গেছে। রমেন চেষ্টা কম করে নি, এমনকি বোঝাতে গিয়ে ছোট ভাইয়ের কাছে অপমানও কম জোটে নি, কিন্তু সুরেনের লেখাপড়া হয় নি।

বাবার সঙ্গে উদয়াস্ত খেটে রমেন ব্যবসা দাঁড় করিয়েছে, বাউণ্ডুলে সুরেনের বিশেষ কোন ভুমিকাই ছিল না, তবুও সুরেনের দাবি মেনে ভাগাভাগি করার সময় প্রাপ্যের চেয়ে কিছু বেশিই দেওয়া হয়েছিল। রমেনের যা কিছু ছিল সুরেনের অংশে, সব ফেলে চলে আসতে হয় রমেনকে। বাবা থাকতেন রমেনের সঙ্গেই। এদিকে সুরেনের এক ছেলে সুখেন বায়না করে যে, সে দাদুর স্মৃতি বিজড়িত অংশে জ্যাঠুর সঙ্গেই থাকবে, বাবার সঙ্গে নয়। উদারমনা রমেন খুসীই হল, ভাবলো – ভালই তো, সুখেন পুত্র স্নেহে বড় হবে, ভাগাভাগির কারণে যে ক্ষতিটা হয়েছে, কাকা ভাতিজা মিলে ব্যবসাটাকে আবার দাঁড় করানো যাবে, সুখে দুঃখে একসাথে থাকা যাবে। কিন্তু কিছুদিন পরই সুখেনের রক্ত কথা বলতে এবং জাত চেনাতে শুরু করল, বাবার মত সেই একই রকম উচ্ছৃঙ্খল, কৃতঘ্ন। সুখেনকে কাজে লাগিয়ে সুরেন রোজ বাড়িতে এসে গাজোয়ারী ঝামেলা পাকাচ্ছে, এ বাড়ির পরম্পরাগত অনুশাসন অগ্রাহ্য করে বাড়ির সুস্থ পরিবেশ নষ্ট করছে। এমনকি সুখেনকে দিয়ে এখন আলাদা আরও অংশ দাবি করিয়ে রোজ এসে হামলা হুজ্জতি করছে, সুখেনকে দিয়েও করাচ্ছে ।

আত্মীয়রা বাইরে থেকে জ্ঞান দেয়, “সুরেন তো সবসময়ই একটু গোঁয়ার টাইপের , কিন্তু তুমি তো এরকম নও। একটু সহ্য কর, ভাইয়ে ভাইয়ে মিলে মিশে থাকা উচিত। তাছাড়া সুখেনও তো তোমার ছেলের মতোই। মিলেমিশে থাক। ” অর্থাৎ যেহেতু রমেন এরকম নয়, তাই চিরকাল রমেনকে মুখবুজে সুরেনের অত্যাচার সহ্য করতে হবে এবং ভাইয়ে ভাইয়ে মিলেমিশে থাকাটা যে ভালো – সেটা বোঝার দায়ও কেবল রমেনেরই, সুরেনের কোন দায় নেই। তাই সুরেন লাঠি দিয়ে মাথা ফাঁক করে দিলেও সেটা এমন কিছু নয়, ও তো এমনই। কিন্তু রমেন সুরেনকে আটকানোর উদ্দেশ্যে গেইটে তালা লাগালেই সেটা হয়ে যাবে অত্যন্ত অনুচিত কাজ। এমনকি অমানুষ সুরেন বেশ কয়েকবার বৌদি ভাইঝির উদ্দেশ্যেও অশালীন আচরণ করেছে, সুখেনও জ্যাঠিমা আর জ্যাঠতুতো ভাই বোনদের সঙ্গে এটাই করে যাচ্ছে । রমেন বুঝতে পারে, নীতিবাগীশ আত্মীয়রা বদমেজাজি সুরেনকে ভয় পায় বলেই ঘাঁটাতে চায় না। তাছাড়া ভালমানুষের মুখোশ পরা কিছু আত্মীয় এবং প্রতিবেশী সুরেনের এই মারকুটে স্বভাবকে নিজেদের কাজে লাগিয়ে রমেনকে দুর্বল করে দিতে চাইছে । কয়েকজন স্পষ্ট বক্তা আত্মীয় স্বজন সুরেনের অনৈতিক কাজের প্রতিবাদ করে ভীষণ ভাবে অপমানিত হয়েছে। এলাকার প্রভাবশালী প্রোমোটার অমরেশবাবুর অনেকদিনের নজর বাড়িটার দিকে। রমেন ভালো করেই জানে, ভাইয়ে ভাইয়ে বা কাকা ভাতিজার এই ঝামেলার সুযোগ নেবে অমরেশবাবু, ভাইয়ে ভাইয়ে মিল থাকলে সেটা হত না। কিন্তু সুরেনের তো এসব নিয়ে ভাবার বালাই নেই।

এই অবস্থায় রমেন বুঝতেই পারছে না যে ওর কি করা উচিত। একদিকে নিজের সন্তানদের ভবিষ্যত চিন্তা করলে সুরেনকে এখনই প্রতিরোধ করা দরকার, সুখেনকেও। রমেনের ভদ্রতাকে দুর্বলতা ভেবে ওদের সাহস দিনে দিনে বেড়েই চলেছে। এদিকে অমরেশবাবুর হাবভাব ভালো ঠেকছে না। কিন্তু ছোট ভাই এবং ভাতিজার হাত থেকে নিজেকে, নিজের সন্তানদের বাঁচাতে পারলে তবে তো অমরেশ বাবু নিয়ে ভাবা যাবে ।
এদিকে প্রতিরোধ করতে গেলেই সুরেন সুখেন যাবে আরো ক্ষেপে, সংঘাত হবে, হৈ চৈ হবে, অশান্তি যাবে আরো বেড়ে। সুরেনকে কাজে লাগানো আত্মীয় স্বজন আর প্রতিবেশীরা এসে বলবে, এসব কি শুরু হয়েছে? এতদিন তো এখানে এমন সমস্যা ছিল না? মজার কথা হল, যতক্ষণ পর্যন্ত রমেন, সুরেনের যাবতীয় অত্যাচার, সুখেনের যত অন্যায় দাবি অশান্তির ভয়ে মুখ বুজে সহ্য করে যাচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত কিন্তু সত্যিই কোন অশান্তি নেই, এলাকায় সত্যিই কিন্তু আপাত শান্তি সম্প্রীতি বিরাজমান। কিন্তু অশান্তির ভয়ে এখন চুপ থাকলে এরপর?

এদিকে ছোট থেকেই পাখি পড়ার মত করে পারিপার্শ্বিকের শিখিয়ে দেওয়া ‘শান্তি সম্প্রীতি’ শব্দটা রমেনের কানে ঘরির কাঁটার মত একঘেয়ে সুরে বাজতেই থাকে…

বন্ধুরা বলুন তো, রমেনের সত্যিই কি করা উচিত? নিজেদের স্বার্থেই যে ভাইয়ে ভাইয়ে মিলে মিশে থাকা উচিত, সম্প্রীতির যে কোন বিকল্প নেই – এটা তো মিথ্যে নয়। ভাইয়ে ভাইয়ে মারামারি করে ব্যস্ত না থেকে যে আরো অনেক কিছু করার ছিল – মিথ্যে তো নয় এটাও। আবার একতরফা অত্যাচারই বা কতদিন? আগে ঐ সুরেনের মত বর্বরের কাছ থেকে নিজেকে, নিজের পরিবারকে বাঁচাতে তো হবে।

বাবা বলে গেছেন “ভাই ভাই মিলে মিশে থাকবে” – কথাটা কি ভুল? মুখে বড় বড় কথা বলা আমার সেকুলার বন্ধুরা বাবার ঐ কথাটা মানতে গিয়ে নিজেরা নিজেদের ব্যক্তিগত পারিবারিক জীবনে এই অবস্থায় কোনটা করে থাকেন ? এই ঠিক কথাটা বজায় রাখতে গিয়ে মুখে বড় বড় কথা বলা আমার মাকু ভাইরা ব্যক্তিগত জীবনে লম্পট লোভী স্বার্থপর নৃশংস অত্যাচারী ভাইয়ের অত্যাচার কোন সীমা পর্যন্ত সহ্য করে একসঙ্গে থাকতে পেরেছেন বা পারছেন – জানতে ইচ্ছে করে খুব। জানতে ইচ্ছে করে খুব, মানুষে মানুষে কোন প্রভেদ না দেখা আমার মাকু দাদারা খিদিরপুর, মেটিয়াবুরুজের মতো এলাকায় খুব সস্তায় বাড়ি পেলেও কিনে সেখানে একদিনও থাকবেন কি না সেটাও।

(আমার পুরনো একটা লেখা)