বৈদিক মনিষীদের মানব সভ্যতায় বিস্ময়কর অবদান!!

বৈদিক মনিষী

বৈদিক মনিষীদের মানব সভ্যতায় বিস্ময়কর অবদান!! আজ অতি সাধারণ মানুষের মুখে মুখে শুনতে হয় জ্ঞান, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও উন্নয়নের নানা ক্ষেত্রে ইহুদী, খ্রিষ্টান প্রযুক্তিবিদদের বিশ্বসেরা অবদানের কথা।

কিন্তু আমরা ক’জন স্মরণ করতে পারি এসব ধর্ম বা ধর্ম প্রচারকদের জম্নের বহু আগে সভ্যতার উন্নয়নে ভারতবর্ষের বৈদিক মনিষীরা বিস্ময়কর অবদান রেখে গেছেন, এবং তাদের ধ্যান, জ্ঞান ও অর্জনকে নতুন নতুন ভাবে চর্বন চুর্ষন পূর্বক আবিস্কার হচ্ছে এবং যা অনাধি অবধি এভাবে চলবে।

আজ ইহুদী, খ্রিষ্টান ও মুসলিম ধর্মাবল্বীদের নিকট আমাদের রাষ্ট্রনীতি অর্থনীতি, আইন, বিজ্ঞান, দর্শন ও সভ্যতার উন্নতির ক্ষেত্রে বিষয়ে নানান কথা শুনতে হচ্ছে। অথচ চিকিৎসা বিদ্যা, বাস্তুবিদ্যা, দর্শন, সহ এমন কোন শাখা নেই যেখানে তাদের বিস্ময়কর প্রকাশ ছিলো না।

শুধুমাত্র সাহিত্যের বিচারে চিন্তা করা যায়, তাহলে দেখা যাবে বৈদিক যুগে প্রণীত মহাভারত, রামায়ন পুরান, মহাপুরান ও সংহিতা গুলি এতোই উচ্চমার্গের যে, এযাবৎকাল অবদি এমন কোন মনিষীর জন্ম হয়নি যিনি ঋষি ব্যাসদেবের মতো মহাকাব্য মহাভারত কিংবা বাল্মিকীর মতো রামায়ণের মতো কোন সাহিত্য কিংবা কাছাকাছি কোন একটি মহাকাব্য রচনা করতে পেরেছেন। ভবিষ্যতে করতে পারবেন কি না সন্দেহ।

আজ ফরমালিনের কথা আমরা সবাই জানি। ফল মূল শাক শবজী তাজা রাখার জন্য এর অপব্যবহার হচ্ছে যত্রতত্র। বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিতে শব বা মৃত দেহ সংরক্ষনের এটির ব্যবহার করা হয়।

অথচ দ্বাপর যুগে রাজা দশরত পুত্র শোকে প্রান ত্যাগ করার পর, মাতুলালয়ে অবস্হানকারী পুত্র ভরতের জন্য রাজা দশরতের মৃতদেহ তৈলাধারে সংরক্ষনের ব্যবস্হা করেছিলেন দশরতের কূলগুরু ঋষি বিশ্ববাল্মিকী। তৈলাধারে যে তৈল ঢালা হয়েছিলো সেই তরল গুলি আজকের দিনে ফরমালিন নামেই পরিচিত। ফরমালিনের জনক ঋষি বাল্মিকি এটা কোথাও নেই, আছে পশ্চিমা কোন আবিস্কারকের নাম।

বৈদিক-মনিষীদের-নামের-তালিকা
বৈদিক-মনিষীদের-নামের-তালিকা

আজকাল বাসাবাড়ী জীবানু মুক্ত রাখার জন্য সেভলন, সেপনিল, ডেটল, হারপিক, ফিনাইল ইত্যাদি তরণ রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়। অথচ কেহই জানে না, কবে থেকে কার নির্দেশের কিংবা উপদেশে হিন্দুবাড়ীর আঙ্গিনা, বসত ভিটি ও জায়গা জীবানুমুক্ত রাখার জন্য গো-ছনা ও গো-বিষ্টা ব্যবহার করা হয়ে আসছে।

গো-ছনা আর গো-বিষ্টার মধ্যে জীবানু নাশক উপদান আছে এবং এভাবে ব্যবহার করার ফলে কোনরুপ পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ছাড়াই জীবনুমুক্ত পরিবেশ পা্ওয়া যায়– এটি বৈদিক ঋষিরা তাদের অনুসারীদের উপদেশ দিয়ে গেছেন বলেই আজও হিন্দুরা গ্রামের বাড়ীতে গো-ছনা, গো-বিষ্ঠা ব্যবহার করে থাকে। জীবানুমুক্ত পরিবেশের জন্য এটা যে কতবড় আবিষ্কার ছিলো এটা অন্য ধর্মাবলম্বী তো দূরের কথা স্বয়ং হিন্দুদের মাথাও ব্যাপারটা কাজ করে কি না সন্দেহ।

লতা গুল্ম তথা ভেজস থেকে ঔষুধ আবিস্কার করা হয়। অথচ আমাদের আর্য ঋষিরা নিম, তুলশি, দূর্বাঘাষ, অর্জন, নাগেশ্বর, অশোক সহ বৃক্ষ নানা ঔষুধি গাছ দিয়ে চিকিৎসা করে রোগ সারাতেন, আজও ভেজস চিকিৎসা টিকে আছে।

ঔষুধি গাছগুলি রক্ষার জন্য এসব ঋষিরা ঐসব ঔষুধি লতা গুল্ম, বৃক্ষকে দেবতা বা দেবী জ্ঞানে পূর্জার প্রচলন তথা প্রাকৃতিক ভারসাম্য (ইকোলজিক্যাল ব্যালেন্স) রক্ষার শিক্ষা দিয়ে গেছেন। একারণে তাঁদের উত্তরসূরী হিসাবে আমরা প্রকৃতির ভিন্ন ভিন্ন শক্তিকে পূজা করি।

হিন্দুদের পূজো দেখে তাদের প্রতিবেশীরা হাসে, হিন্দুদের মধ্যেও অনেকে হাসাহাসি করে, কিন্তু কেন প্রকৃতির ভিন্ন ভিন্ন শক্তিকে বিভিন্ন দেবতা ও দেবী জ্ঞানে পূজো করা হয় – তা খতিয়ে দেখার চেষ্টা করে না।

পূজো মাধ্যমে প্রকৃতির উপকার স্বীকার করার মধ্যে প্রকৃতিকে রক্ষা করার সূক্ষ্ম যে দর্শণ/বিধান ভারতীয় ঋষিরা নানা ভাবে দিয়ে গেছেন, সেধারণা থেকেই আজ জাতিসজ্ঞ বিশ্ব ধরিত্রী দিবস, গাছ লাগাও প্রকৃতি বাঁচাও সহ নানা দিবসের অনুষ্ঠান বিশ্বময় করতে চেষ্টা করে যাচ্ছেন, আমরা তা পালনও করি।

নিচে অতি সংক্ষেপে শুধু সংগৃহীত কয়েকজন মনিষীর নাম নিচে উল্লেখ করছি, যাদের অবদান অনাধিকাল পর্যন্ত টিকে থাকবে।

বৈদিক মনিষী
১. আর্যভট্ট (৪৭৬ খ্রিস্টপূর্ব)- গণিতশাস্ত্র আর জ্যোতির্বিদ্যা
২. ভাস্করাচার্য (১১১৪ থেকে ১১৮৩ খ্রিস্টপূর্ব)-বীজগণিতে মহা পণ্ডিত ( অ্যালজেবরা)
৩. কণাদ (৬০০ খ্রিস্টপূর্ব)- পারমাণবিক তত্ত্বের প্রতিষ্ঠাতা
৪. নাগার্জুন (১০০ খ্রিস্টপূর্ব)- রাসায়নিক বিজ্ঞ
৫. চরক (৬০০ খ্রিস্টপূর্ব)- ঔষধ বিজ্ঞান
৬. সুশ্রুত (৬০০ খ্রিস্টপূর্ব)- অস্ত্রোপচারের পুনঃসংযোজনবিদ (সর্বপ্রথম প্ল্যাস্টিক সার্জেন)
৭. বরাহ মিহির (৪৯৯ থেকে ৫৮৭ খ্রিস্টপূর্ব)- বিখ্যাত জ্যোতিষী ও জ্যোতির্বেত্তা
৮. পতঞ্জলি (২০০ খ্রিস্টপূর্ব)- যোগ পণ্ডিত (ইংরেজিতে yoga)
৯. ভরদ্বাজ (৮০০ খ্রিস্টপূর্ব)- ব্যোমযান প্রযুক্তিবিদ্যার বিজ্ঞ (বিমান সম্বন্ধী বিজ্ঞান)
১০. কপিল (৩০০০ খ্রিস্টপূর্ব)- বিশ্বতত্ত্ব/সৃষ্টিতত্ত্বের মহা পণ্ডিত

ইংরেজিতে কসমোলজি উপরের এসব মনিষীরা যখন বিশ্ব কল্যানে কাজ করেছিল, তখন পৃথিবীময় একটা ধর্ম দর্শণ প্রচলিত ছিলো মানবতা। বিগত হাজার চারেক সময়ের মধ্যে প্রচলিত হয়েছে বহু ধর্ম দর্শণ । যেগুলোর কোন কোনটা ভয়ংকর রকমের ফ্যান্টাসিতে ভরা এবং যার কাজ হলেই প্রযুক্তির স্বাদ আস্বাদন করে ও সৃষ্টি কর্তার নামে প্রগতির চাকা উল্টো ঘুরানোর নিত্য চেষ্টা শেখানো।

লেখক-অভিরুপ বন্দ্যোপাধ্যায়-কলকাতা

আর পড়ুন……

Scroll to Top