নোয়াখালী দাঙ্গা:

নোয়াখালী দাঙ্গা: ১৯৪৬ এর নোয়াখালীর হিন্দু নিধন যজ্ঞ নিয়ে লিখতে বসেছি।

নোয়াখালী দাঙ্গা: ৯৪৬ এর নোয়াখালীর হিন্দু নিধন যজ্ঞ নিয়ে লিখতে বসেছি বলেই ভেবে বসবেন না, এই লেখা ক্রিকেটের ওয়ান ডে ম্যাচে রাহুল দ্রাবিড়ের টেকনিক্যালি কারেক্ট ব্যাটিংয়ে সীমাবদ্ধ থাকবে ।

একদমই তা থাকবেনা, এই লেখা সৌরভ-শচীন জুটির মত মারকাটারি ব্যাটিং তুলে ধরবে আপনাদের সামনে । সেদিনের নোয়াখালী থেকে প্রাণে বেঁচে যাওয়া স্বল্প সংখ্যক সংখ্যালঘু হিন্দু ভুক্তভুগীর জবানবন্দিও থাকবে আবার সেদিনের নোয়াখালীতে ঘটে যাওয়া রক্তাক্ত হিংসার সত্য ঘটনাও থাকবে ।

তাই যারা কেবল নিরামিষ আশা করেছিলেন, তারা কিঞ্চিৎ নিরাশ হবেন । এখানে আমিষের ছড়াছড়ি যে ! চলুন কিছু কিছু মানুষের চোখে সেদিনের নোয়াখালী দেখি:

➤নোয়াখালীর তেঁতুইয়া বাবুপুর গ্রামের দেবেন্দ্র কুমার নাথ : “ধর্মান্তকরণের পরই নব মুসলমানদের ঐসলামিক নামকরণ করা হতো । নামকরণের ব্যাপারে অবশ্য মুসলমানরা খুব সদয় ছিল । ধর্মান্তরিত হিন্দুদের তাদের পছন্দের মত নাম বেছে নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হতো ।

যেমন খালিশপাড়ার প্রিয়ময় চক্রবর্তী নাম নিয়েছিলেন ‘মৌলভী হায়দার আলি চৌধুরী ঠাকুর’ । সদয় মুসলমানেরা চৌধুরী,ঠাকুর ও মৌলভী প্রভৃতি খেতাব বংশ মর্যাদা ও উচ্চবর্ণের পরিচয় হিসেবে আমাদের দিয়েছিলো । নামকরণের পরেই হিন্দুদের বাধ্য করা হতো ‘গোস্ত’ খেতে এবং কলেমা পড়তে ।”

➤নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ থেকে পালিয়ে বেঁচে ফেরা শরণার্থী উত্তম বসু:”এত করেও খাঁটি মুসলমান হওয়া সম্পন্ন হতো না, যতক্ষণ না ধর্মান্তরিত হিন্দুদের বাড়ির মেয়েকে মুসলমানরা বিয়ে করতো ।

আমাদের পাশের গ্রামের এক ভদ্রলোকের ছয় বছরের একটি মেয়েকে ‘কলেমা’ পড়িয়ে মুসলমান ছেলের সাথে বিয়ে দেওয়া হয়েছিল । হিন্দুরা যে মুসলমান হয়ে গেছে এটা প্রমান করাই ছিল এই বিয়ের উদ্দেশ্য ।”

➤উত্তম বসুর সাথে পালিয়ে আসা নোয়াখালীর হাজীগঞ্জের জনৈক: ” ওরা বললো আমাদের বাড়ির মেয়েদের ওদের সাথে বিয়ে দিতে হবে । আমার মামাতো বোন দেখতে খুব সুন্দরী ছিল । দেখলাম অনেকেরই চোখ ওর দিকে । গ্রামের লীগের প্রেসিডেন্ট মামার কাছে গিয়ে ওকে বিয়ে করবার প্রস্তাব দিলো ।

মামার না বলার কোনো উপায় ছিল না । ওই লীগের প্রেসিডেন্ট তখন ষাটের ঘরে । আমার মামাতো বোন মাত্র পনেরো । অনেক পরামর্শ করে আমরা ঠিক করলাম, আমিই আমার মামাতো বোনকে বিয়ে করবো ।

সেইমত মৌলভীকে জানালাম যে ইসলাম ধর্মে মামাতো বোনকে বিয়ে করার বিধান আছে, এবং আমরা সবাই মুসলমান হয়ে গেছি । ভাগ্যগুনে উনি রাজি হয়ে গেলেন । সাতদিন আমরা স্বামী-স্ত্রীর অভিনয় করলাম । পরে মিলিটারি গিয়ে আমাদের উদ্ধার করে । “

কি পাঠক, নিরামিষ না আমিষ ? কি মনে হচ্ছে সেদিনের বাঙালি মুসলমানকে ? তাদের কর্মকান্ডকে ? এখনো সিকিভাগ বলিনি, অনেক বাকি । পড়তে থাকুন আর জানতে থাকুন । এগুলো জেনে আজকে তৈরী না হলে আগামী প্রজন্মে বাঙালি ও বাঙালিয়ানা দুটোই প্রশ্নের মুখে পরে বিলুপ্ত হবে !

আর পড়ুন……

 

রেফ: Amrita Bazar Patrika 22-10-46
Bell Papers C.S.A.S. Cambridge.
বিনয়ভূষণ ঘোষ-দ্বি-জাতি তত্ত্ব ও বাঙালী