কাবাঘরের উপর দুটো কার্টুন- একটা আল্লাহ অন্যটি নবীর- এতেই বসিরহাটের হিন্দু বাড়িঘর, দোকানপাট ভাংচুর হলো। রুগী নিয়ে যাওয়া এ্যাম্বুলেন্স, পাবলিক বাস কিছুই বাদ যায়নি। আমরা তো অনলাইনে বহু আগে থেকে এরকম ফটোশপ দেখে এসেছি যে, একটা হিন্দু দেবীর উপর কুকুর মুতে দিচ্ছে কিংবা মূর্তির উপর কেউ দাঁড়িয়ে আছে- এরকম ফটোশপ দেখে কয়টা মুসলমানের বাড়িঘর উড়ে গেছে?
ভারতে মুসলমানদের দোষী করা হচ্ছে। হিন্দুত্ববাদ জেগে উঠছে চারদিকে। পাকিস্তানের পাঞ্জাবের সরকার যেখানে হিন্দুদের উচ্ছেদ করে গৃহহীন করে দিচ্ছে সেখানে ভারতে হিন্দুরা মার খাচ্ছে সংখ্যালঘু মুসলমানদের হাতে- এটা অপমান আর নিজেদের পৌরুষ্যে আঘাত করছে হিন্দুদের। ফলাফল ধর্ম নিয়ে জীবনেও মাথা না ঘামানো, নিজের হিন্দুত্ব নিয়ে উদাসিন মানুষজনও হিন্দুত্ববাদকে তাদের রক্ষা বলে ভাবতে শুরু করেছে। দুপক্ষ থেকে যারা ঘৃণা ছড়াচ্ছে তারাও জানে না সমাধান কোথায়। একই দেশে তো দুপক্ষকেই থাকতে হবে। এদিকে যারা নানা রকম সম্প্রীতির কাহিনী প্রচার করে এই সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতিকে মলম দিতে চাচ্ছেন- তারাও জানেন তাদের এই প্রচেষ্টা একটা ঘাকে খুচিয়ে রক্তরক্তি না করে যেভাবেই হোক ব্যান্ডেজ করে আপাতত ক্ষত থেকে রক্ত বন্ধ হোক এটুকুই তাদের সাধ্য- ক্ষতের চিকিৎসা তারা জানে না বলেই ভারতের স্বাধীনতার পর আজতক পর্যন্ত ভারতের সেক্যুলাররা একটা কানা গলির শেষ মাথায় এসে এখণ দাঁড়িয়ে আছে।
সমস্যাটা ধর্ম চর্চায়। একদম শুরুতে এটা বুঝতে হবে। মুসলমান নষ্ট হয় মসজিদে গিয়ে। একজন ক্বারি, মুফতি, মাওলানাকে আপনি কি করে তার ধর্ম চর্চা থেকে বিরত করবেন? বসিরহাটের ঘটনার অনেকগুলো ভিডিও আমি দেখেছি যা স্থানীয়ভাবে মোবাইলে ধারণকৃত। শত শত লোক রাজপথ দখল করে এগিয়ে চলছে নারায়ে তাকবির আল্লাহো আকবর বলতে বলতে…। কাউকে বলে না দিলে সে হয়ত ভাবতে পারে এটা বাংলাদেশের নাসিরনগরের ভিডিও বুঝি! এত লোক বাইরে থেকে নিশ্চয় আসেনি। এরা স্থানীয় লোকজন দেখলেই বুঝা যায়। তাদেরকে শুধু ফটোশপের কথাটা বলা হয়েছে আর তাতেই তারা হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর তেড়ে এগিয়েছে ‘নারায়ে তাকবির আল্লাহো আকবর’ বলে। এখানে কাজ করেছে ধর্মীয় লোকজন। ভারতকে দারুল হার্ব ভাবার তালিম দিয়ে চলেছে এইসব ধর্মীয় পেশার লোকজন। বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী এলাকায় জেএমবি, আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সক্রিয় সদস্যরা ভারতের এই অঞ্চলের মুসলমানদের জিহাদী মানসিকতায় তালিম দিয়ে যাচ্ছে দিনের পর দিন। আনন্দ বাজারের সম্প্রীতির গল্প দিয়ে এই সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ থামানো যাবে না। আক্বাস আলী আর তপন বাগচির বন্ধুত্ব কিংবা হরিদাসীর সঙ্গে আয়েশা খাতুনের ছোরদি-বড়দি সম্পর্ক- এরকম বেতিক্রম প্রচার করে এই উপমহাদেশে বসিরহাট কিংবা নাসিরনগরের ঘটনাকে বন্ধ করা যায়নি। তাই আগে অসুখের কারণটা জানুন আর তারপর চিকিৎসার ব্যবস্থা নিন।
ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে চিঠি লিখেছেন বিশিষ্ট নাগরিকরা। তারা বাংলাদেশ থেকে আসা জিহাদীদের মদদকে বসিরহাট ঘটনার জন্য দায়ী করেছেন। কথা তো মিথ্যে নয় তার প্রমাণ জেএমবির ইন্ডিয়ান শাখার আমির সোহেল মাহফুজ সম্প্রীতি ঢাকায় গ্রেফতার হয়েছে যে ২০১৪ সালের খাগড়াগড়ের বোমা বিস্ফোরণের মূল হোতা। সে একজন বাংলাদেশী। পশ্চিমবাংলার সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোতে যেখানে মুসলমান অধ্যুষিত সেখানে এই জিহাদীদের নেটওয়ার্ক গড়ে উঠছে। মমতা বান্যার্জীর প্রশাসন, তার দল প্রশ্রয় না দিলে এই নেটওয়ার্ক কি করে গড়ে উঠল?
বাংলাদেশের জন্য কাজটি যতখানি কঠিন ভারতের জন্য ততখানিই সহজ। ভারতের প্রথম কাজই হবে একমুখি শিক্ষায় ফেলে মাদ্রাসা শিক্ষাকে বাতিল করা। মসজিদ, মাদ্রাসাকে অনুদান বন্ধ করে সেই অর্থ মুসলমান সমাজের ছেলেমেয়েদের আধুনিক শিক্ষাটা নিশ্চিত করা। ভারত ইসলামী নেতাদের যতখানি রাষ্ট্রীয়ভাবে নিষ্কৃয় করে ফেলতে পারবে সেটা বাংলাদেশ পারবে না। ভারতীয় রাজনীতিবিদরাই পারেন ভারতের কোটি কোটি মুসলমানদের ভবিষ্য নিশ্চিত করতে। তাদের একটা হিংসার দর্শনের চর্চায় জড়িয়ে পড়ার সুযোগ করে দিয়ে বাকী ভারতবাসীর ঘৃণার পাত্র করে তুলে না ফেলে তাদের প্রগতিশীল মননের চেষ্টাই ভারতের বসিরহাট অধ্যায়গুলোকে চিরতরে অবসান করতে পারে। নইলে যে পরিস্থিতি ভবিষ্যতে অপেক্ষা করে থাকবে সেটা কারোর জন্যই ভাল হবে না…।