কাবাঘরের ইমাম কি ইসলাম কম বুঝে?

কাবা শরীফের ইমাম ও খতীব শাইখ সালেহ আত তালিব হাফিযাহুল্লাহকে সৌদি সরকার গ্রেফতার করেছে হজ চালাকালীন সময়ে। বিষয়টা খুব গুরুত্বপূর্ণ মডারেটপন্থি মুসলমানদের জন্য। কেন গ্রেফতার হলেন এই খতীব? সৌদি আরব যখন সেদেশের নারীদের নুন্যতম চলাফেরার স্বাধীনতা দিতে চাচ্ছে, নাটক সিনেমা দেখার মত নির্দোষ বিনোদন দেখার ব্যবস্থা করে দিচ্ছে তখন এই কাবা শরীফের খতিব মুসলমানদের উদ্দশ্য করে বলেন, ‘তোমরা যে কোন ধরণের গোনাহের অনুষ্ঠানকে বর্জন করো এবং ঐ সমস্ত মানুষদের অনুষ্ঠানকে বর্জন করো যাদের কর্ম পদ্ধতী সন্দেহযুক্ত, এবং যারা নারীদেরকে রাস্তায় বের করে এবং ড্রাইভিং লাইসেন্সের অনুমতি দেয়, যারা নারীদেরকে উলঙ্গপনার দিকে আহবান করে, যারা নারী-পুরুষের অবাদে মেলামেশার দিকে উৎসাহিত করে বর্তমান সমাজে ফাসাদ শুরু করেছে, তাদেরকে বয়কট করুন।…আপনারা পরিপূর্ণভাবে গান-বাজনা এবং কমেডি, কৌতুক ও সিনেমার অনুষ্ঠানকে বয়কট করুন ৷ যদিও যারা এই সিনেমা ও কমেডি চালু করেছে তারা এটাকে নিছক বিনোদন মনে করে…’ (অনুবাদ মুফতি নুরুজ্জামান নোমানী, ইন্টারনেট থেকে প্রাপ্ত)।

সম্প্রতি সৌদি আরবে গির্জা নির্মাণ করার অনুমোদন এবং সেখানে অমুসলিমদের সামাজিক অনুষ্ঠানে যাতায়াতে সৌদি সরকার জনগণকে উৎসাহিত করছে। সৌদি আরব নিজেই জিহাদের চেতনায় আক্রান্ত হওয়াতে মুসলমানদের মধ্যে সর্বধর্মীয় সহিষ্ণুতাসহ অতিমাত্রায় ধর্ম চিন্তার বাইরে সঙ্গীত শিল্প বিনোদনে জনগণকে আসক্ত করার ব্যবস্থা নিচ্ছে। এই অনুসঙ্গগুলো ছাড়া একজন মানুষের মাঝে সুকুমার সত্ত্বা জাগ্রত হয় না। কিন্তু কাবাঘরের ইমাম তার ধর্মীয় কর্তব্য হিসেবে জানেন এ সবই ইসলামে হারাম! ইসলাম সিনেমা দেখা, গান শোনা বা তৈরি করা সম্পূর্ণ হারাম কারণ এসব জিনিস মানুষকে জিহাদের চেতনা থেকে দূরে সরিয়ে রাখে। নারীকে জনশক্তি বলে ইসলাম মনে করে না। ইসলাম মনে করে নারীকে আল্লাহ বানিয়েছে পুরুষের যৌন চাহিদা মেটানোর জন্য। এর বাইরে সন্তান জন্মদান ও পুরুষের সংসারে দাসী হয়ে থাকা ছাড়া তার অন্য কোন ভূমিকা নেই। ‘মাহরান’ বা পুরুষ অভিভাবক ছাড়া ইসলাম কোন নারীকে ভ্রমণ করার অনুমতি দেয়নি। মডারেট হিজাব পরা মহিলারা ইসলাম সম্পর্কে এরকম অভিযোগকে অস্বীকার করলেও ঠিকই হজ করতে একা যেতে পারে না! তখন কিন্তু ইসলামী বিধান মেনে মাহরান সঙ্গে করে হজ করতে যান।

ইসলাম পুরোপুরি সারা বিশ্বে কায়েম হলে কেমন হতে পারে পৃথিবীর চেহারাটা সেটা সৌদি আরবকে দেখলে কিছুটা আন্দাজ করা যায়। যদিও সৌদি আরবও একশভাগ ভাবে নবী মুহাম্মদের ইসলামকে অনুসরণ করতে পারেনি। সেটি করে দেখিয়েছে আইএস তাদের সীমিত পরিসরে সিরিয়াতে। মডারেট মুসলমানরা আগুন নিয়ে খেলা করেন। তারা ইসলামেও আছেন আবার নাচাগানাতেও আছেন। রাষ্ট্রীয়ভাবে ইসলামিকরণকে এরা সমর্থন করেন। এটিই আগুন নিয়ে খেলা। ধর্মকে একবার রাষ্ট্র রাজনীতিতে জায়গা করে দিলে ধর্ম রাষ্ট্রীয় শক্তিতে তার শাস্ত্র প্রয়োগের চেষ্টা করে যাবেই। বাংলাদেশে যেমন ইসলামিকরা রাজনীতি ও রাষ্ট্রে জায়গা করে নেয়াতে এখন যে কোন সংস্কৃতি শিল্পের উপর এরা হুমকি হয়ে পড়ছে। আর ধর্মটি যদি এক্ষেত্রে ইসলাম হয়ে থাকে তাহলে বিপদটা অনেক বেশি। কেন বেশি সেটি বলছি এবার…।

হলিউডের ‘বেনহুর’ সিনেমা দেখে পোপ আর্শিবাদ করেছিলেন। সিনেমাটিতে যীশু খ্রিস্টকে দেখানো হয়েছিলো। আপনি কি মনে করেন আহমদ শফীর কোন ইসলামিক ঘরোনার সিনেমা দেখেও এরকম প্রশংসা করার সুযোগ আছে? পৃথিবীর বড় বড় গির্জার দেয়ালে ভিঞ্চি যুগের বিখ্যাত সব তৈলচিত্র শোভা পাচ্ছে। আপনি কি কোন মসজিদে এরকম চিত্রকর্ম শোভা পেতে দেখতে পাবেন? আপনি কি মন্দিরে পুজা দিতে যেতে কোন জিন্স পরা মেয়েকে দেখেননি? গির্জাতে বা মন্দিরে সঙ্গীতের সময় বা প্রার্থনার সময় নারী পুরুষ একত্রে বসে থাকে। এটি ইসলামের কোন অনুষ্ঠানে কি অনুমোদন আছে? নিজের বাবা-মা মারা গেলেও মেয়েরা গোরস্তানে যেতে পারে না পুরুষদের সঙ্গে!

ধর্ম হিসেবে ইসলাম টিকে থাকলে চিরকাল মুসলমানদের মধ্যে এইসব বিতর্ক চলে আসবেই। ইসলামের সঙ্গে আর্ট শিল্প সঙ্গীতের সংঘাত স্পষ্টতর। যদিও মডারেটরা সেটিকে সব সময়ই নিজেদের স্বার্থে ঘোলাটে করে রাখে। কাবাঘরের ইমাম কি ইসলাম কম বুঝে? নাকি সে আরবী জানে না? নাকি সে কুরআন হাদিসের সঠিক ব্যাখ্যা জানে না? আব্দুর নূর তুষার কিংবা সরওয়ার ফারুকী কি এই গ্রান্ড মুফতির চাইতে ইসলাম বেশি জানে?