“গীতার আলোকে”— মানুষের দুঃখ এবং অশান্তির কারন
ডাঃ মৃনাল কান্তি দেবনাথ
শ্রী গীতায় ১৮ টি অধ্যায়, ৭০০ শ্লোক। অনেক পন্ডিতেরা বলেন, প্রথম অধ্যায়ে বিশেষ কিছু নেই, না পড়লেও চলে।
তাই কি? প্রথম অধ্যায়ে যদি বিশেষ কিছু নাই থাকে তাহলে গীতাকার ৪৬ শ্লোকের এই অধ্যায় টা লিখলেন কেনো?? প্রথম অধ্যায়ের নাম “বিষাদ যোগ”। অর্থ্যাৎ, অর্জুন বিষাদগ্রস্থ। অর্জুন দুঃখিত, অর্জুনের মনঃকষ্ট, মনে অশান্তি।
সবাই শান্তি চায়,কিন্তু অর্জুনের শান্তি নেই। অর্জুন সমগ্র মানব জাতির প্রতিভু, উদাহরন, প্রতীক। মানব সমাজের প্রতিটি মানুষ একটিই জিনিষ চায়, শান্তি, —‘শান্তি, শান্তি হি’। কিন্তু শান্তি সব সময় অধরা। কেনো ????
সমাজের কিছু মানুষ, দুর্বৃত্ব, সমাজের মধ্যে অশান্তির সৃষ্টি করে, আর তার প্রভাবে বাকীরা ভোগে। ভোগে, কারন তারা প্রতিকার জানে না, অশান্তির উৎপত্তি কিসে তা জানে না, যারা অশান্তি করে তাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ করে না, নিজেদের গুটিয়ে রাখে। ভাবে চুপ চাপ থাকলেই “শান্তি”। এটাই মানব জীবনের সবচেয়ে বড়ো ভুল। সব অন্যায় সহ্য করা আর নিজে অন্যায় করা একই ব্যাপার। মানুষ এটাই করে, সব সহ্য করে যায়। প্রতিবাদের ভাষায় ফোঁসও করে না। পড়ে পড়ে মার খায়। একে বলে এক প্রকার ‘মোহ’, মানসিক বিকার।
শ্রী গীতার ১৬ তম অধ্যায়ের নাম ‘দেবাসুর যোগ’। এখানে দৈব গুন সম্পন্ন মানুষ (সুর) আর দানবীয় গুন সম্পন্ন মানুষের (অসুর) গুনাবলী বর্ননা করা হয়েছে। কিন্তু প্রথম অধ্যায়েই প্রতীকি দানব এবং সেই দানবীয় শক্তির কাছে ‘মোহগ্রস্থ’ মানুষ কিভাবে আত্মসমর্পন করে, পরিশেষ অশান্তিতে থাকে, সমাজে ,সংসারে ব্যাভিচার এবং আসুরিক শক্তির বিকাশ ঘটাতে, সমাজকে ধংস করতে পরোক্ষভাবে সাহয্য করে এবং সেই ধংসের একটি পরোক্ষ কারন হয়ে দাঁড়ায় তার পরিচয় দেওয়া হয়েছে।
একটি উদাহরন দেই——
“মানুষের ইতিহাস খুজলে কোথাও পাবেন না যে, সমাজের কিছু কর্নধার, শাধু মাত্র ক্ষমতা লাভের আশায়, মহান হবার আশায়, গীতার ভুল ব্যাখ্যা করে ‘অহিংসার নামে’, একটি সুপ্রাচীন দেশকে (নিজ মাতৃভুমিকে) তিন টুকরো করে দেয়। এরা কাউকে প্রতিবাদ করতে বলে না, রুখে দাড়াতে বলে না, সমস্ত দেশ বাসীকে বোকা বানিয়ে, চুপি চুপি আগ্রাসী শক্তির নেতাদের সংগে এক টেবিলে বসে চুক্তি পত্রে সাক্ষর করে আর দেশ বাসীকে তাই মেনে নিতে বলে, তারা মেনেও নেয়। অহিংসার নামে এরা যে হিংসা, রিরংসা আর মানুষকে ছিন্নমুল করার খেলায় মেতেছিলো, তাকে কি বলবেন???? অহিংসার নামে এরা শতাব্দী ব্যাপি এক হিংসার জন্ম দিয়ে গেছে, সাধারন মানুষের ঘর সংসার ভেঙ্গে চুরে দিয়েছে, আজো অবধি দুই দেশ রক্তের হোলি খেলায় মেতে আছে, একে অপরের দিকে বিদ্ধংসী ‘পারমানবিক বোমা’ তৈরী করে রেখেছে। কি হতো সম্মুখ সংগ্রামে নামলে????? ৫,১০, ৫০, ১০০ হাজার মানুষ মারা যেতো হয়তো। কতো মানুষ মরেছে বিগত সাত দশকে এবং আরো মরবে????
সমাজের নেতারা মোহগ্রস্থ হলে, মানসিক বিকারগ্রস্থ হলে সমাজে এই উথাল পাথাল হয়। আর সেই সাময়িক মানসিক বিকার গ্রস্থ অর্জুন ( সমাজের সব বিকার গ্রস্থ সমাজ নেতার প্রতীক) কে প্রকৃত রাস্তা দেখাতেই শ্রী কৃষ্ণের শিক্ষা।