একখান যুক্তি ফেইসবুকে খুব ঘুরতেছে, ব্রিটিশরা খারাপ কারণ তারা আমাদের শাসন করেছে এবং আমাদের সম্পদ লুট করে নিজ দেশে পাচার করেছে।
সম্পূরক যুক্তি হিসেবে যখন মনে করিয়ে দেয়া হলো, মুঘল, তুর্কী, পাঠান, শেখরাও আমাদের শাসন শোষণ করেছিলো- তারা তো দেথি আমাদের ‘ইসলামী ইতিহাসের বীর’ হয়ে পূজিত হয়?
এবার যে যুক্তিটা দেয়া হয় আপাতত শক্তিশালী মনে হলেও আসলে ফসকা গেড়ো! বলা হয় মুঘল, তুর্কী পাঠান ভাইয়ারা তো এদেশে থেকে গিয়ে ভারতীয় হয়ে গিয়েছিলো। তারা তো সম্পদ লুট করে নিজ দেশে পাঠায়নি।…
কেন এই যুক্তকে ফসকা গেড়ো বললাম, কারণ এই যুক্তিতে তো মার্কিনদেরও দায়মুক্তি দেয়া উচিত? আমেরিকা-অস্ট্রেলিয়ান সাদা চামড়ার মানুষদের পূর্বপুরুষরা ইংলেন্ড থেকে এসব দেশে এসে স্থানীয়দের মেরে-ধরে-খেদিয়ে সেখানেই থেকে গিয়েছিলো। এমনকি মার্কিনরা তাদের পূর্বপুরুষদের দেশ ইংলেন্ডের রানীকে ট্যাক্স দিতে অস্বীকার করে যুদ্ধ ঘোষণা করে স্বাধীনতা আদায় করেছিলো। তবু আমাদের সুশীল ঐতিহাসিকরা তো তাদেরকে মুঘল-তুর্কী-পাঠান-শেখদের মত করে দায় মুক্তি দিতে চান না? তুর্কী-মুঘলারা মুসলমান বলেই কি তাদের বর্গি হানাদার বলতে আপনাদের আপত্তি?
ব্রিটিশ উপনিবেশ সারা পৃথিবীতে যেমন নিয়েছে তেমন দিয়েছে বহু কিছু। মুসলিম শাসিত ভারত থেকে ইংরেজ শাসনে ভারত অনেক কিছু পেয়েছে। ইংরেজ শাসনে এখানে একটা শিক্ষিত সমাজ গড়ে উঠেছিলো। প্রশাসন, আইন কাঠামো তৈরি হয়েছিলো। ব্রিটিশ রাজত্বে ধরাকে সরা জ্ঞান করা সামন্ত প্রভুরা ইংরেজ আইনকে ভয় পেতো। ইংরেজরা এসেছিলো বলেই ভারতবর্ষ রামমোহন, বিদ্যাসাগরের মত মানুষ তৈরি হতে পেরেছিলো। ইংরেজরা এসেছিলো বলেই ভারতীয়রা ‘দেশ’ বলে একটা কিছুর অস্তিত্ব অনুভব করেছিলো। রাইট, বঙ্কিম চন্দ্র চট্টপাধ্যায়ের মত আমিও মনে করি, ব্রিটিশ শাসন ভারতবর্ষের জন্য একদিক থেকে আর্শিবাদ ছিলো। একই রকম মনে করতেন স্যার সৈয়দ আহমদও। … যাই হোক, ভারতের দালাল থেকে এখন আর ব্রিটিশদের দালাল হতে চাই না! তবে সত্য বলতে গেলো এসব বলতেই হবে। ইংলেন্ড এখন কসমোপলিট্রন সমাজের এক মহান নির্দশন। এমন জাতি বর্ণ ধর্মের মিশ্রন আর কোথায় আছে? ইংরেজদের মেয়র একজন পাকিস্তানী মুসলমান। ইংরেজদের পার্লামেন্টে এখন ভারতীয়, বাংলাদেশী পাকিস্তানীদের সংখ্যা নেহাত কম নয়। ভবিষ্যতে কোন বাংলাদেশী, ভারতীয় কিংবা পাকিস্তানী বংশদ্ভূত কেউ প্রধানমন্ত্রী হতে পারবে। মুসলমানদের বাবার দেশ সৌদি আরব তো অনারব মুসলমানদেরই নাগরিত্ব দেয় না! ভাবুন তো, বৃটিশ পাসপোর্টধারী বাংলাদেশীরা, ভারতীয়রা, পাকিস্তানীরা ইংলেন্ডের সঙ্গে খেলা সময় ইংলেন্ডের মাটিতেই ইংলেন্ডের পরাজয় চেয়ে গ্যালারিতে চিৎকার করছে- আপনি এটা কল্পনা করতে পারেন বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তানে কেউ সহ্য করবে? ব্রিটিশরা আপনার আমার মত ন্যাশনালিস্ট নয়। তারাই সভ্য। উপনিবেশকালে তাদের শোষণকে আর কতকাল দেখিয়ে নিজেদের বর্তমান ইতর চেহারাটা ঢেকে রাখবেন?