আসামের মিঞা কবিতার বিরুদ্ধে উঠা মিথ্যাচার অভিযোগ, মুসলিমদের বিরুদ্ধে তাকিয়াবাজীর প্রবল অভিযোড় দাঁড় করিয়েছে।

আসামের বুদ্ধিজীবীরা সেখানকার মুসলমানদের বিরুদ্ধে মিথ্যাচারের অভিযোগ তুলছেন। আসামের মুসলিমরা ‘মিঞা কবিতা’ লিখে কল্পিত ধর্ষণ নির্যাতনের কথা প্রকাশ করছেন। কবিতায় মুসলিম নারীদের ধর্ষণ, মুসলিম হিসেবে আসামে তাদের উপর নির্যাতনের কথা ফুটিয়ে তুলছেন। কিন্তু কার্যত এরকম ঘটনার পর কোন মুসলিম থানা-পুলিশ করেছে তেমন রেকর্ড নেই। যদি আসামে সত্যিই মুসলিম নির্যাতন ঘটে তাহলে তারা কেন আদালতের আশ্রয় নেয়নি? আদালতে বিচার পাবার কথা পরে, এসব করলে তো বাইরের লোক জানতে পারবে যে আসামে মুসলিম নিপীড়ন ঘটছে। যেমন তারা মিঞা কবিতা লিখে বাইরের লোকদের জানাচ্ছেন। বিবিসির সাংবাদিক আসাম ঘুরে এসে দেখেছেন, বাঙালি মুসলিমরা যদি গণহত্যা বা ধর্ষণের শিকার হয়েও থাকেন, তাহলে পুলিশে অভিযোগ না করে কবিতায় কেন তা বলা হচ্ছে – আসামে সে প্রশ্ন অনেকেই তুলছেন।”

না, এখানে হিন্দুত্ববাদীদের টেনে আনার দরকার নেই, খোদ আসামের সজ্জন বুদ্ধিজীবীরা মিঞা কবিতার উদ্দেশ্য নিয়ে মুখ খুলতে শুরু করেছেন। এই কবিতা লিখে আসামে কল্পিত এক মুসলিম হত্যা ধর্ষণের ছবি বাইরের লোকদের দেখানোই উদ্দেশ্য। দুই-একটা ঘটনা যে ঘটে না তা নয়, কিন্তু যেভাবে হাউ কাউ করা হয় তাতে মনে হতে পারে গোটা ভারত জুড়ে মুসলিমদের ধরে ধরে জয় শ্রী রাম বলানো হচ্ছে কিংবা ধরে ধরে পিটানো হচ্ছে। পুরো মুসলিম কমিউনিটি একটা অঘোষিত পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এই মুসলিম নির্যাতনের হিউমার ছড়ানোর পিছনে কাজ করছে। আসাম তার প্রমাণিত একটি উদাহরন। যেখানে সোচ্চার হয়েছে আসামের সুশীল শ্রেণী। ভদ্র আর মানবিক মানুষরাও।

মুসলমানদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হচ্ছে- এই তত্ত্বটি শুনতে শুনতেই একজন মুসলিম বড় হতে থাকে। এসব শুনতে শুনতে আমিও বড় হয়েছি। গোটা পৃথিবী মুসলমানদের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করছে। মুসলমানদের মঙ্গল চায় না অমুসলিমরা… ইত্যাদি। এগু্লো সমস্ত মুসলিমদের সামাজিক ও পারিবারিক চর্চার বিষয়বস্তু। ভারত ভাগ হয়েছে যেখানে মুসলিমরা সংখ্যায় বেশি ছিলো। গোটা উপমহাদেশ মুসলিম পরিচয়ে বিভক্ত হয়েছে। অথচ ভারতে হিন্দু শিখ খ্রিস্টান ও বৌদ্ধের বিরাট একটা অবস্থান রয়েছে। এখান্ সহাবস্থানের কোন সমস্যা হয়নি। কিন্তু যেখানে মুসলিমরা সংখ্যায় বেশি সেখানেই তীব্র নির্যাতনের অভিযোগ উঠছে। শ্রীলংকায় মুসলিমরা সংখ্যাগরিষ্ঠ সিংহলজিদের বিরুদ্ধে সহিংসতায় জড়িয়েছে। সেখানে ইসলামিক জিহাদী সংগঠন শক্তিশালী ঘাটি গেড়েছে। আসামে এই মুসলিমরা কেন মূল সমাজে আত্তিকরণ হতে পারল না সেই জবাব পাওয়া যাবে মুসলিম কমিউনিটির সমগ্র বিশ্বের চিত্র থেকে। ইসলামিক জাতীয়তাবাদ ইসলাম ধর্মের অন্যতম শর্ত। এই জাতীয়তাবাদ মুসলিমদেরকে তাদের নিজ নৃতাত্ত্বিক জাতি পরিচয়ের সঙ্গে সাংঘর্ষিক করে তোলে। বার্মার রাখাইন, ভারতের আসাম, কাস্মির, শ্রীলংকার মুসলিম সমাজ ক্রমশ বিচ্ছিন্নতার আন্দোলনের দিকে চলে যাচ্ছে। তারা দাবী করছে বা অন্যত্র করতে শুরু করবে- তাদের নিজেদের জন্য পৃথক দেশ! যে দেশ হবে কেবল মুসলমানদের দেশ। আফগানিস্থান ছিলো বৌদ্ধদের দেশ। সেই আফগান এখন মুসলিমদের হাতে পরে আধা মধ্যযুগীয় মুসলিম দেশ সেজেছে। যদি আপনি সমগ্র বিশ্বের উদাহরণ দেখেন তাহলে দেখবেন মুসলিমরা সংখ্যাগরিষ্ঠ হবার পর নিজেদের জন্য আলাদা আবাস দাবী করে আদায় করে ছেড়েছে। এটাও ইসলামের একটা প্রধান শর্ত। মুসলিমরা দারুল হার্ব (কাফেরদের শাসন) থেকে দারুল ইসলাম (মুসলমানদের শাসন) যেতে ক্রমাগত চেষ্টা করে যেতে থাকবে। পৃথিবীর একমাত্র রাজনৈতিক ধর্মের নাম ইসলাম। এটি আপনি অন্য আর কোন ধর্মে পাবেন না। যে কারণে ভারতের হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান, ইহুদী নিয়ে কোন সমস্যা হয়নি। কিন্তু শ্রীলংকায় সমস্যা হচ্ছে। আসামে হচ্ছে। রাখাইনে হচ্ছে। উইঘুরে হচ্ছে। হতেই থাকবে…।

নিজেদের নিপীড়িত নির্যাতিত দাবী করলে এক সময় বিচ্ছিন্নতার অধিকার জন্মে। আসামের মিঞা কবিতার কোন সত্যতা পাওয়া যায়নি। লাগামহীন ধর্ষণ নির্যাতনের অভিযোগে আসামের মুসলিমরা থানা-পুলিশ না হোক, স্থানীয় মুসলিম লিডারদের কাছে যাবারও কোন প্রমাণ নেই। তবু এসব নির্যাতিত কবিতা লিখার উদ্দেশ্য যে কি তা তো উপরেই বলেছি। মনে পড়ে যাচ্ছে সাইফ আলী খান ও কারিনা কাপূড়ের ছেলে হবার কথা। দুই ধর্মের দুজন মানুষ বিয়ে করেছিলেন ধর্মীয় বৈবাহিক শর্ত ভঙ্গ করে। এরকম ভালোবাসার একটি সন্তানের নাম যখন “তৈমুর” রাখা হলো তখন বিস্মিত না হয়ে পারিনি। তৈমুর হচ্ছে ভারতের এক আতংকের নাম! এক রক্তলোলুপ পিশাচের নাম। ভারতীয়দের মাথার খুলি দিয়ে পিরামিড বানাতো সে। সে ভারতের আসার উদ্দেশ্য নিজের আত্মজীবনীতে স্বীকার করেছিলো, সে লিখেছিলো, তার ভারতের আসার উদ্দেশ্য ছিলো কাফেরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে ইসলামের বিজয় পতাকা উড়ানো…। সেই কুখ্যাত লোকটির নামের সঙ্গে নিজের সন্তানের নাম কেন রাখলেন সাইফ? কোন উত্তর নেই। তবে সেসময় এই প্রসঙ্গে তীব্র সমালোচনার মুখে আসামের একজন মুসলিম কবি যার নিজের নামও তৈমুর ছিলো, তিনি লিখেছিলেন, তৈমুর নাম আমরা আমাদের সন্তানদের নাম হিসেবে রেখে যাবো ততদিন পর্যন্ত যতদিন এই নির্যাতন নিপীড়নের চলতে থাকবে, এটা বুঝাতে যে আমরা একসময় এরকম পাল্টা জবাব দেবার মত কিছু পাবো, অতিতের এরকম কিছু উদাহরণ আমাদের প্রেরণা যোগায়…। বছর দুই আগের ফেইসবুক পোস্ট পড়ে লিখছি, কাজেই হুবহু কবি এরকম লিখেছেন তা বলছি না, কিন্তু ভাবার্থ হুবহু এরকমই ছিলো। একজন খুনি, মানুষের ইতিহাসের অন্যতম গণহত্যার নায়ক কেন মুসলিম সমাজের প্রেরণা হবে? এই মানসিকতা আর আসামের মিঞা কবিতার বিরুদ্ধে উঠা মিথ্যাচারের অভিযোগ মিলিয়ে নিলে মুসলিমদের বিরুদ্ধে তাকিয়াবাজীর প্রবল অভিযোড় দাঁড় করা যায়। সেটাই হচ্ছে কম বেশি…।