আপনি স্বাধীন কিনা সেটি কোন পতাকা দ্বারা জাতীয়তাবাদ দ্বারা নিশ্চিত হবে না।

বাংলাদেশের সব ক’টি নদীর উৎস ভারতের নদীগুলো থেকে। তিন দিকে ভারতকে রেখে তখনকার ‘পূ্র্ব পাকিস্তান’ নামে যে দেশটি ‘স্বাধীন’ হয়েছিলো তা কেবলই গুটি কয়েক মানুষের গদিতে বসাকে সফল করার জন্য। কারণ এভাবে কেটে ভাগ হওয়া কোন অঞ্চলের মানুষ কোনদিনই স্বাধীন হতে পারে না। ভৌগলিক বাস্তবতায় বাংলাদেশ ভারতের কাছে মুখাপেক্ষী। মনে রাখতে হবে বাংলাদেশের জন্ম হয়েছিলো পাকিস্তানের জন্ম হয়েছিলো বলেই। কাজেই বাংলাদেশের জন্ম অনর্থক বলছি না, বলছি পূর্ব পাকিস্তানের জন্মটাই অনর্থক ছিলো। গোটা উপমহাদেশ যুক্তরাজ্য ব্যবস্থায় এক দেশ হিসেবে থাকাই ছিলো যৌক্তিক।

মনে করি বাংলাদেশ থেকে ঢাকা স্বাধীন হতে চাইছে। যেহেতু ঢাকাবাসী চাইছে না বাংলাদেশের সঙ্গে থাকতে তাহলে তাদেরকে সেই সুযোগ তো দিতেই হবে। এখন ঢাকা স্বাধীন হলো। তাদের আলাদা নতুন একটা পতাকা মিলল। একটা জাতির পিতার ছবিও দেয়ালে লটকানো হলো। এবার ঢাক খাবে কি? চট্টগ্রামে তো জাহাজ ভীড়ে। সেটা তো এখন অন্যদেশ। সমুদ্রগুলো এখন বিদেশ। মালপত্র বিদেশ থেকে কিনে, পোর্টে টাকা পয়সা দিয়ে, তারপর কয়েকটা বিদেশী জেলা দিয়ে ট্রাক আসতে যেতে ট্যাক্স দিতে দিতে যে দাম পড়ে জিনিসের, তাতে নতুন জাতি ঢাকাবাসীর কেনার ক্ষমতা ফুরিয়ে আসছে। কারণ ছোট এই নতুন দেশে কর্মসংস্থান কম। ঢাকাকে চট্টগ্রাম খুলনা সিলেটকে খুশি করতে গিয়ে নানা রকম সুবিধা দিতে হয়। আবার না দিলেও নিজেদের সমস্যায় পড়তে হয়। ঢাকার জনগণ কাজের সন্ধানে চট্টগ্রাম, সিলেট, খুলনা চলে আসে। প্রতিবেশী হিসেবে ভালো অবস্থানে থাকা এই দেশগুলোর প্রতি ঢাকার আছে ঈর্ষা আর চাপা ক্ষোভ। ক্ষোভ কারণ তাদের বড়ভাই সুলভ হাবভাব। তবু প্রতিনিয়ত ঢাকার লোকজন কাজের জন্য এসব দেশে চলে আসে। চিকিৎসার জন্য, ব্যবসার জন্য ঢাকাকে চেয়ে থাকতে হয় ঐসব দেশের দিকে। কি মূল্য আছে ঢাকার এই স্বাধীনতার যেখানে তার জনগণ প্রতিনিয়ত পরাধীন? যদি ঢাকা খুলনা চট্টগ্রাম সিলেট যুক্তরাজ্য ব্যবস্থায় থাকত তাহলে কি তাদের জন্য সুবিধার হত না? চট্টগ্রামের জুম্মাল্যান্ড ঠিক তেমন কিছু হবে যদি বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হতে চায়। কাশ্মির ভারত থেকে বিতারিত হলে কি করে খাবে? শুধু পর্যট্রন দিয়ে কি পেটভরে ভাত খেতে পারবে? এই পৃথিবীকে কুমড়ার চিলের মত কেটে ভাগ না করে যৌথভাবে থাকাটাই মানবজাতির জন্য মঙ্গল। বোকা জনগণকে কিছু ‘রাজপরিবার’ স্বাধীনতা, দেশপ্রেম নামের গালভরা শব্দে তাদের মাথায় কাঠাল ভেঙ্গে খেতে চায়। পাকিস্তানের বাইশ পরিবার থেকে বাংলাদেশ পড়েছে এরকম কিছু পরিবারের হাতে। তাদের পারিবারিক রাজনৈতিক ব্যবসার জন্য ‘স্বাধীনতা’ ‘সর্বভ্রৌমত্ব’ জাতীয় শব্দ দিয়ে জনগণকে তাতিয়ে রাখতে হবে। আমি অস্বীকার করছি না এই মুহূর্তে স্বাধীনতাকামী জাতিদের আকাঙ্খাকে। অত্যাচারিত হলে, নিপীড়িত হলে প্রতিরোধ ছাড়া উপায় নেই। পাকিস্তানের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ছাড়া উপায় ছিলো না। আমি কেবল ধান্দাবাজদের ভাগ করে নিজেদের ইতিহাস রচনার জন্য গোটা একটা জাতিকে চিরতরে অন্যের অনুগ্রহের শিকার হওয়া সম্পর্কে সতর্ক হতে বলছি। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে ছোট ছোট দেশগুলো একটি করে পতাকা ছাড়া কিছুই পায়নি। কিন্তু সোভিয়ত ইউনিয়নের অনেক কিছু করার ক্ষমতা ছিলো। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের প্রতিটি রাজ্য নিজেদের স্বাধীন ঘোষণা করে গৃহযুদ্ধ শুরু করেছিলো। সেই যুদ্ধ দমন করে মার্কিনরা আজ পৃথিবীর বুকে শ্রেষ্ঠ। অখন্ড ভারতবর্ষ তেমনই একটা শক্তি হতে পারত। ধর্ম আর জাতীয়তা সব শেষ করেছে। সুভাষ বসু ব্যর্থ হয়েছে। যা হয়নি তা নিয়ে কথা বাড়িয়ে অবশ্য লাভ নেই।

ব্যক্তি মানুষের স্বাধীনতাকে বেশির ভাগ রাষ্ট্র ব্যবস্থাই অস্বীকার করে দমন করতে চায়। বাংলাদেশে আমি স্বাধীন ছিলাম না। আমার মত শত শত ব্লগার যে যেভাবে পেরেছে পালিয়েছে। আপনি স্বাধীন কিনা সেটি কোন পতাকা দ্বারা জাতীয়তাবাদ দ্বারা নিশ্চিত হবে না। কাজেই স্বাধীন ও সর্বভ্রৌমত্ব বলতে আমি কেবল ব্যক্তি মানুষের মুক্তিকে বুঝি। দেশ নামক কোন মানচিত্রকে নয়…।