বাল্মীকি রামায়ণের সহজবোধ্য বাংলা পদ্যানুবাদক কৃত্তিবাস ওঝা………..।।।

  1. কৃত্তিবাস ওঝা (জন্মঃ আনুমানিক ১৩৮১ বঙ্গাব্দ – মৃত্যুঃ আনুমানিক
    ১৪৬১ বঙ্গাব্দ) ছিলেন মধ্যযুগীয় বাংলা সাহিত্যের একজন প্রধান কবি। তিনি
    অধুনা রাজশাহী জেলার অন্তর্গত প্রেমতলীর নিকটে, মতান্তরে পশ্চিমবঙ্গের নদিয়া জেলার অন্তর্গত ফুলিয়া গ্রামে বাস করতেন। গৌড়েশ্বরের আদেশে তিনি বাল্মীকি রামায়ণের সহজবোধ্য বাংলা পদ্যানুবাদ করেছিলেন।[১]
    বাঙালির আবেগ, অনুভূতি ও রুচির দিক লক্ষ্য রেখে সর্বজনবোধ্য পদ্যে মূল
    সংস্কৃত রামায়ণের ভাবানুবাদ করায় কৃত্তিবাসী রামায়ণের ব্যাপক জনপ্রিয়তা
    লাভ ঘটে।

    কৃত্তিবাসী রামায়ণ

    কৃত্তিবাস অনূদিত রামায়ণ কৃত্তিবাসী রামায়ণ নামে পরিচিত। কৃত্তিবাসী রামায়ণ-এর
    প্রধান বৈশিষ্ট্য হল এটি মূল রামায়ণের আক্ষরিক অনুবাদ নয়। কৃত্তিবাস
    রামায়ণ-বহির্ভূত অনেক গল্প এই অনুবাদে গ্রহণ করেছিলেন। তদুপরি বাংলার
    সামাজিক রীতিনীতি ও লৌকিক জীবনের নানা অনুষঙ্গের প্রবেশ ঘটিয়ে তিনি
    সংস্কৃত রামায়ণ উপাখ্যানের বঙ্গীকরণ করেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের
    ভাষায়, এই কাব্যে “প্রাচীন বাঙালি সমাজই আপনাকে ব্যক্ত করিয়াছে।” বাঙালি
    সমাজে এই বইটি ব্যাপক জনপ্রিয়। কয়েক শতাব্দী ধরে বইটি বাংলা ঘরে ঘরে
    পঠিত। বাঙালি সমাজে এই বইটি ব্যাপক জনপ্রিয়। কয়েক শতাব্দী ধরে বইটি বাংলা
    ঘরে ঘরে পঠিত। ১৮০২ সালে উইলিয়াম কেরির প্রচেষ্টায় শ্রীরামপুর মিশন প্রেস থেকে কৃত্তিবাসী রামায়ণ প্রথম পাঁচ খণ্ডে মুদ্রিত হয়। এরপর ১৮৩০-৩৪ সালে জয়গোপাল তর্কালঙ্কারের সম্পাদনায় দুখণ্ডে এর দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশিত হয়।[৩]

    কবি-পরিচয়

    কৃত্তিবাসী রামায়ণ-এর কোনো কোনো পুঁথি থেকে “কৃত্তিবাসের আত্মপরিচয়” শীর্ষক একটি অসম্পূর্ণ অধ্যায় পাওয়া যায়।

    এই অধ্যায় থেকে কবির বংশপরিচয়, “আদিত্য বার শ্রীপঞ্চমী পূণ্য মাঘ মাস
    তথি মধ্যে জন্ম লইলাম কৃত্তিবাস।” ব্যক্তিপরিচিতি “মালিনী নামেতে মাতা,
    পিতা বনমালী ছয় ভাই উপজিল সংসারে গুনশালি।” ও অন্যান্য প্রাসঙ্গিক বিষয়ে
    অনেক তথ্যের সন্ধান মেলে। কবির পূর্বপুরুষ নরসিংহ ওঝা ছিলেন পূর্ববঙ্গের
    বেদানুজ রাজার অমাত্য। তাঁরা ছিলেন “মুখুটি” (মুখোপাধ্যায়) বংশজাত।
    পারিবারিক শিক্ষকতা বৃত্তির জন্য “উপাধ্যায়” পদবি লোকমুখে বিকৃত হয়ে হয়
    “ওঝা”। পূর্ববঙ্গের রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে নরসিংহ ওঝা নদিয়ায় চলে এসে ফুলিয়া
    গ্রামে বসতি স্থাপন করেছিলেন। তাঁর পুত্র গর্ভেশ্বর। গর্ভেশ্বরের পুত্র
    মুরারি। মুরারির সাত পুত্রের অন্যতম ছিলেন কৃত্তিবাসের পিতা বনমালী।
    কৃত্তিবাসের মায়ের নাম ছিল মালিনী। কৃত্তিবাসেরা ছিলেন ছয় ভাই। তাঁদের এক
    বৈমাত্রেয় বোনও ছিল। ভাইদের মধ্যে কৃত্তিবাস ছিলেন জ্যেষ্ঠ ও সর্বাপেক্ষা
    অধিক গুণবান।

    বারো বছর বয়সে কৃত্তিবাস গঙ্গা নদী
    পার হয়ে উত্তরবঙ্গে গুরুগৃহে বিদ্যাশিক্ষা করতে যান। শিক্ষাশেষে
    রাজপণ্ডিত হওয়ার অভিপ্রায় নিয়ে গৌড়েশ্বরের রাজসভায় উপস্থিত হন এবং
    একটি সরস শ্লোকরচনা করে রাজাকে তুষ্ট করেন- “রাজ পণ্ডিত হব মনে আশা করে,
    পঞ্চ শ্লোক ভেটিলাম রাজা গৌরেশ্বরে।”

    রাজা একটি পুষ্পমাল্য দিয়ে কবিকে বরণ করে নেন। রাজা কবির প্রত্যাশা জিজ্ঞাসা করলে, কবি বলেন

    আর কিছু নাঞি চাই করি পরিহার।
    যথা যাই তথায় গৌরবমাত্র সার।।

    কবির উত্তরে সন্তুষ্ট হয়ে রাজা তাঁকে রামায়ণ রচনার নির্দেশ দেন। রাজার আদেশে কৃত্তিবাস তাঁর শ্রীরাম পাঁচালী রচনা করেন।[৪]

    সাহিত্যকীর্তি

    কৃত্তিবাসী রামায়ণ

    • ১. আদিকাণ্ড
    • ২. অযোধ্যাকাণ্ড
    • ৩. আরণ্যকাণ্ড
    • ৪. কিষ্কিন্ধ্যাকাণ্ড
    • ৫. সুন্দরাকাণ্ড
    • ৬. লঙ্কাকাণ্ড

    শ্রীরাম পাঁচালী

    মৌলিক অংশসমূহ

    • বীরবাহুর যুদ্ধ
    • তরণীসেনের কাহিনী
    • মহীরাবণ-অহীরাবণের কাহিনী
    • রামের অকালবোধন
    • মৃত্যুপথযাত্রী রাবণের কাছে রামচন্দ্রের শিক্ষা
    • সীতার রাবণমূর্তি অঙ্কন ও রামের সন্দেহ
    • লব-কুশের যুদ্ধ

    তথ্যসূত্র

  2. Sen, Sukumar (১৯৭৯) [১৯৬০]। History of Bengali (3rd সংস্করণ)। New Delhi: Sahitya Akademi। পৃ: 63–65। আইএসবিএন 81-7201-107-5
  3. সেলিনা হোসেন ও নুরুল ইসলাম সম্পাদিত; বাংলা একাডেমী চরিতাভিধান; দ্বিতীয় সংস্করণ: ফেব্রুয়ারি, ১৯৯৭; পৃষ্ঠা: ১২৬, ISBN 984-07-4354-6
  4. “জানা-অজানা: কৃত্তিবাস ওঝা”বাংলাদেশ প্রতিদিন। ৯ মার্চ, ২০১৫। সংগৃহীত ১২ জানুয়ারী, ২০১৬
  5. Sen, Sukumar (1991, reprint 2007). Bangala Sahityer Itihas, Vol.I, (বাংলা), Kolkata: Ananda Publishers, ISBN 81-7066-966-9, pp.105-10