ইসলামের ইতিহাস নামের একটা জিনিস আমাদের পড়ানো হয় যেখানে আফগান, তুর্কী জাতিদের ভারত শাসনামলকে ‘ইসলামের ইতিহাস’ বলা হয়। বঙ্গে সুলতানী শাসন বলুন আর মুঘল পাঠান জাতিদের শাসন- সবটাই ভারতের ‘মুসলিম শাসন’। অথচ ভারতবর্ষ দুইশো বছর ইংরেজরা শাসন করেছিল। আমরা তো বলি না খ্রিস্টানরা দুইশো বছর শাসন করেছিল। বরং ইউরোপীয়ান জাতিসমূহদের নাম ধরেই উল্লেখ করি। তারা ধর্মের পরিচয়ে খ্রিস্টান ছিল। তবু তারা তাদের নিজস্ব জাতিসত্ত্বার পরিচয়েই ইতিহাসে স্থান করে নিয়েছে। কিন্তু ভারতবর্ষকে আফগানরা, তুর্কীরা বা আরবরা শাসন করেছে বলা হয় না, বলা হয় মুসলমানরা শাসন করেছে। এই মুসলমান পরিচয়টি মুসলমানরাই খাড়া করেছে। অমুসলিম ঐতিহাসিকরাও সেভাবেই এটাকে মুসলিম শাসন বা ইসলামের ইতিহাস বলছে। সেক্যুলার বাম প্রগতিশীলরাও তাদের শাসনামলকে মুসলিম শাসন বলছে…। অদ্ভূত ব্যাপার হচ্ছে, যখনই আপনি কথিত ভারতের এইসব মুসলিম শাসনগুলোকে মুসলিম জাতীয়তাবাদ এবং ইসলামী ফ্যালাসির নিক্তিতে ফেলে বিচার করতে বসবেন তখনই কিছু লোক চিঁ চিঁ করে চেঁচাতে শুরু করবে, আপনি কেন এর মধ্যে ধর্মকে টানছেন, কেন মুসলমানকে টানছেন, সেই সময় কি আজকের মত ধর্মীয় জাতীয়তাবাদ ছিল, রাষ্ট্র ব্যবস্থা ছিল… ব্লা ব্লা ব্লা…। তাহলে আমাদের স্কুলগুলোতে ছোট ছোট বাচ্চাদের ইসলামের ইতিহাস আর মুসলিম শাসনের নামে এই যে আফগান তুর্কী জাতির কীর্তি পড়ানো হচ্ছে- এর শানে নযূলটা কি?
ফরাসী, পূর্তগিজ, ইংরেজ- এই তিন ইউরোপীয়ান জাতি ভারতবর্ষকে উপনিবেশ বানানোর চেষ্টা করেছিল। শেষতক সফল হয় ইংরেজরা। ভারতে তাদেরই সময়কালকে ইংরেজ আমল বলা হয়, খ্রিস্টান শাসনামল নয়। কিন্তু ৭১২ খ্রিস্টাব্দে মুহাম্মদ বিন কাসিম ভারতের সিন্ধু দখলকে ইসলামী শাসনের সূচনাকাল বলে ধরা হয়। দামেস্কের খলিফা আলওয়ালিদ এবং বাগদাদের গভর্নর হাজ্জাজ বিন ইউসুফের প্রত্যক্ষ মদদে সিন্ধু দখল করে নেয়া হয়েছিল। এটাকে ইসলামের খিলাফত ভারতে ইসলামের বিজয় বলে ঘোষণা করেছিল। মুহাম্মদ বিন কাসিম ভারতের হিন্দুদের কুরআনের বিধান অনুসারে হত্যা করা হবে কিনা তা নিয়ে দ্বিধায় পড়ে যান। ইসলাম মতে নন আহলে কিতাবীদের জিজিয়া কর দিয়ে বাঁচার অধিকার নেই। এটা শুধু ইহুদী-খ্রিস্টানদের জন্য প্রযজ্য। মূর্তি পুজারীদের সেই সুযোগ ইসলাম দেয়নি। কিন্তু হিন্দুদের সব হত্যা করে ফেললে জিজিয়া আসবে কোত্থেকে? ইসলামী খিলাফতের যে জাঁকজমক তা তো কাফেরদের জিজিয়া করের তেলেসমাতী। কাজেই হাদিস থেকে খুঁজে বের করা হয়েছিল প্রফেট একবার মদিনার মূর্তি পুজারীদের জিজিয়া গ্রহণের মাধ্যমে তাদের বসবাস করার অনুমতি দিয়েছিলেন। এভাবেই সিন্ধুর স্থানীয় জনগণ মুসলিম শাসনে জিজিয়া করের আওয়াত এসে বসবাস করার অনুমতি পায়। ভারতের দিল্লির মত বড় বড় শহরগুলোতে যে হিন্দু শূন্য হয়ে যায়নি মুসলিম শাসনে তার অন্যতম কারণ হচ্ছে জিজিয়া কর। শাসকদের স্থানীয়দের ইসলামের অনুপ্রবেশ করানোতে কোন আগ্রহই ছিল না। প্রজারা মুসলমান হয়ে গেলে বিধান অনুযায়ী তারা জিজিয়া কর দিতে বাধ্য নয়।… এসব কারণেই কি এগুলো ইসলামের ইতিহাস? মুসলিম শাসন?
…খালি আমি বললেই দোষ!