একটা মন্ত্র সারা পৃথিবীতে ভারতী সংস্কৃকিকে তুলে ধরল……………………………….!!!

আজকের পৃথিবী জুড়ে “হরে কৃষ্ণ মন্ত্র” নামক ১৬ শব্দের বৈষ্ণব মন্ত্রটি শুধু ভক্তের ভক্তি নয় বরং এক বিষ্ময়েরও নাম। ইন্টারনেটে ঘাঁটাঘাঁটি করলে দেখা যায় এই মন্ত্রের মাহাত্ম্য নিয়ে গবেষণাও কম হয়নি। কিন্তু, কীভাবে এলো এই মন্ত্র তা নিয়ে খুব বেশি লেখা অবশ্য পেলাম না। হয়ত অনেক সময় দিলে পাওয়া সম্ভব। মোটামুটি ভাবে জানতে পারলাম কিছু। অনুরোধ রইল কোন ভুল থাকলে তা জানানোর।

কালি-সন্তরণ উপনিষদে এই মহামন্ত্রের উল্লেখ হয় প্রথম। পরবর্তীতে, ১৫০০ সালের দিকে চৈতন্য মহাপ্রভুর ভক্তি আন্দোলনের মাধ্যমে এই মন্ত্র ক্রমেই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠে মানুষের কাছে। শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভু সম্ভবত এই একটি মন্ত্রের মাধ্যমে সকল বর্ণ বিভেদের উর্দ্ধে উঠার পথ দেখিয়েছিলেন হিন্দু ধর্মের মানুষদের। একটি মন্ত্র যা উচ্চারণ করবে পৃথিবীর যেকোন প্রান্তে থাকা হিন্দু ধর্মের যেকোন অনুসারী। তবে, এই মন্ত্রকে ছড়িয়ে দেয়ার ক্ষেত্রে তিনি কিন্তু শুধু হিন্দুদের কাছে গিয়েছেন তা নয়; তিনি গিয়েছেন সকল ধর্মের মানুষের কাছেই।

“Hare Krishna! The Mantra, the Movement and the Swami Who Started It” নামের ডকুমেন্টারিতে অবশ্য উঠে এসেছে অতি সম্প্রতি ইউরোপসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে অন্য ধর্ম ও সংস্কৃতির মানুষগুলোর মাঝেও কীভাবে এই মন্ত্র জনপ্রিয় হয়ে উঠলো তার গল্প। সেখানে দেখানো হয়েছেম, ১৯৬৫ সালে এক ৭০ বছরের বৃদ্ধ জরাজীর্ণ বস্ত্রে জাহাজে চড়ে হাজির হন আমেরিকায়। তাঁর কাছে ছিল হাতে গোণা তিন চারটা নিজের অনুবাদ করা ধর্মীয় বই আর তার গুরুর কাছ থেকে পাওয়া নির্দেশনা “offer spiritual wisdom to the people of the world” ! ইনিই শ্রীলা প্রভুপাদ। অনেক কষ্টের মধ্য দিয়েই যাচ্ছিল তাঁর দিন। তবে, তার কয়েকজন অনুসারীর মাধ্যমেই টোয়েন্টি সিক্স সেকেন্ড এভিনিউ এর একটা ছোট্ট দোকানের সামনে প্রতিষ্ঠা করেন “Krisna Consciousness Temple” উপমহাদেশের বাইরে যা ছিল প্রথম কোন কৃষ্ণ মন্দির। আস্তে আস্তে পরিচি লাভ করে সেই মন্দির। একসময় তাঁর কীর্তন  অ্যালবামটিও জনপ্রিয়তা লাভ করে। আজ সেই স্থানটিতে দশতলা বিল্ডিং! কৃষ্ণ মন্দিরটি রয়েছে অসাধারণ জাঁকজমের সাথে। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা মানুষ এখন সেখানে যায়। ক্রমেই জনপ্রিয় হচ্ছে এই মন্ত্র। উদ্দেশ্যতো এটাই ছিল। কলি যুগের অমঙ্গল থেকে নিজেকে রক্ষা করার জন্য এই মন্ত্র উচ্চারণ করে কৃষ্ণ ভাবনায় ডুব দিয়ে মুক্তির পথ খুঁজবে মানুষ।

এক্ষেত্রে আরো একজন কৃষ্ণভক্তের কথা উল্লেখ না করলেও হয়ত চলে কারন তাঁর কথা জানেন না এমন মানুষতো নেই বললেই চলে। তিনি জর্জ হ্যারিসন। বাংলাদেশের মানুষ তাঁকে চেনে, “Concert for Bangladesh” এর জন্য। কিন্তু, এই অঞ্চলের মানুষকে তিনি জেনেছিলেন কীভাবে? দেশের গন্ডি পেড়িয়ে ঈশ্বরের সৃষ্টিকে ভালবাসা প্রেরনা তিনি পেয়েছিলেন কোথায়? সেটাও এই কৃষ্ণ মন্ত্র থেকেই। এক সাক্ষাতকারে তিনি বলেছিলেন, “Like six hours we sang, because we couldn’t stop once we got going. As soon as we stopped, it was like the lights went out. It went on to the point where our jaws were aching, singing the mantra over and over and over and over and over. We felt exalted; it was a very happy time for us.”

ইউটিউবে একটু সার্চ করলেই দেখবেন এই মহামন্ত্রকে কতটা ভক্তিভরে, কত চমৎকার সুরের ব্যাঞ্জনায় পরিবেশন করেছেন পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মানুষ। চাইলে হেডফোন কানে লাগিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা এই এক মন্ত্র শুনে আর মনে মনে জপ করে কাটিয়ে দেয়া যায়। জীবনের সমস্ত আক্ষেপ, সময় না পাওয়া, সমস্ত ব্যাথা ভুলে থাকার জন্য হৃদয়ের গভীর থেকে সেই সুরে সুর মিলিয়ে গাওয়া যায়ঃ

“হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে
হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে”