প্রাচীন ভারতের সতীদাহ প্রথা কিভাবে এল…..!!

#প্রাচীন ভারতের সতীদাহ প্রথা ও সনাতন ধর্ম ( হিন্দুধর্ম )
#সতীদাহ প্রথার উৎপত্তি –#ঐতিহাসিক কারন – ১. #পুণ্যভুমি ভারতবর্ষে মুসলিম আক্রমণ ও নৃশংস অত্যাচার শুরু করে মুহহ্মদ বিন কাশিম। তার সঙ্গে রাজা দাহির পরাজিত হলে ৭১২ খৃষ্টাব্দের ১৭ জুন দাহিরের দুই স্ত্রী সূর্যদেবী ও পরমল দেবী কাশিমের হাতে বন্দী হন। বন্দী অবস্থায় তারা সংবাদ পান যে, মুসলমানরা নারীদের যুদ্ধবন্ধীর মর্যাদা দেয় না। বরং তারা নারীদের স্বর্বসম্মুখে উলঙ্গ করে নানাভাবে লাঞ্ছিত অপমানিত করে ধর্ষণ করে। তখন তারা বিষপানে আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত গ্রহন করেন।

একজন সৈনিক খবর দেন মুসলমানরা মৃতদেহ কেও ধর্ষন করে। ধর্ম ও আত্মসম্মান রক্ষার্থে অতপর তারা সিদ্ধান্ত নেন যে, স্বামীর সৎকার করার অনুমতি নিয়ে স্বামীর চিতায় আত্মহূতি দিবেন এবং সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অগ্নিতে আত্মহূতি দেন। তৎপর হতে ভারতের হিন্দু নারীগন মুসলমানদের স্পর্শ হতে রক্ষা পেতে জহরব্রত বা স্বামীর চিতায় আত্মহূতি দিয়ে সতিত্ব , ধর্ম ও আত্মসম্মান রক্ষা করতে থাকেন। এরপর হতে এ প্রথার নাম হয়ে দাড়ায় সতীদাহ প্রথা।
#সম্রাট আলাউদ্দিন রাজপুত রানা রতন সিংহের স্ত্রী পদ্মাবতীকে হস্তগত করতে গেলে রাজপুত সৈন্যরা বাধা দেয়। অতপর যুদ্ধ করতে করতে সকল পুরুষ মারা যাবার পর দূর্গের অভ্যন্তরে থাকা ১৪হাজার নারী সহ রানী পদ্মাবতী জহরব্রত উৎসব পালন করে মুসলমানদের হাত হতে রক্ষা পান। মুসলিম শাসন অবসানে প্রথাটি এমনি এমনি বিলু্প্ত হয়ে যায়।
২. ১৩০০ শতাব্দিতে অশিক্ষত আলাউদ্দিন খিলজী (সম্রাট জালাল উদ্দিন খিলজীর মৃত ভাইয়ের ছেলে ) ছিলেন ভারতের সম্রাট । তিনি সাম্রাজ্য পরিচালনার জন্য আরব থেকে কিছু ইসলামী আইন বিশ্বেষজ্ঞ আনয়ন করেন । সেই সময়ে অমুসলিম প্রজাদের জন্য ২টি কর আইনের জন্ম হয় ১ ) #নজর_এ_মরেচা ২ ) #নজর_এ_বেওয়া ।
১ ) #নজর_এ_মরেচা – অমুসলিম প্রজাদের ছেলে বা মেয়েদের বিয়ে দেওয়ার পারমিশানের নেওয়ার জন্য কর ।
২ ) #নজর_এ_বেওয়া – অমুসলিম প্রজাদের কোন নারী নিঃসন্তান অবস্থায় বিধবা হইলে তাহাকে স্বামী বা পিতার গৃহে রাখিবার জন্য বার্ষিক কর ।
#এই দুই করের জন্য নির্দিষ্ট কোন অর্থের পরিমাপ ছিল না , সেই সময়ের পরগনার দেওয়ান বা কাজী যাহা ধার্য করিতেন প্রজারা তাহাই দিতে বাধ্য থাকিত । যাহারা সেই অর্থ দিতে অসমর্থ হইত, তাহাদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হতো বা সেই কন্যা বা বধুকে বাজেয়াপ্ত করে হাউলিতে চালান করা হতো । এই সকল নারীকে যে সুরক্ষিত বাড়ীতে রাখা হতো তাহার নাম “হাউলি “বা “হাভেলী” ।
#এই হাভেলীতে থাকা অবস্থায় সেই নারীদের যে বাচ্চা হতো সেই বাচ্চাদের নাম হতো “ নজরতরপের বাচ্চা”। সেই বাচ্চা ছেলে হলে তাকে ধর্ম শিক্ষা ও অস্ত্র শিক্ষা দিয়ে সেনাবাহীনিতে নিয়োগ দেওয়া হতো । আর মেয়ে বাচ্চা হলে তাদেরকে নর্তকী হিসাবে প্রস্তুত করা হতো ।
#নজরে বেওয়া সম্মন্ধ্যে আবার ভিন্ন কাহিনীও জনশ্রুতি হিসাবে কিংবদন্তি আছে যে , কুমারী ও বিধবাদের সন্তান সম্ভবা বা সন্তান প্রসব হলেই কেবল তাদেরকে এই কর প্রদান করতে হতো । আর না দিতে পারলেই সেই মা ও বাচ্চা সহ হাউলীতে পাঠানো হতো । পরিশেষে সেই বাচ্চা ছেলে হলে সৈনিক মেয়ে হলে নর্তকী হিসাবে ভবিতব্য নির্ধারন হতো ।
#এছাড়াও দীনেশ চন্দ্র সেন তার “বৃহৎ বঙ্গ পুর্বোক্ত” গ্রন্থ এবং “প্রাগুরু” নামক গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, “যে কোন রমনী ভাল নাচিতে ও গাহিতে পারিতেন তাহলে তার রক্ষে ছিল না । ময়মনসিংহ জেলার মুসলমান নবাবের নিযুক্ত এক শ্রেনীর লোক ছিল, যাদের উপাধি ছিল “সিন্ধুকী”। হিন্দু ঘরের রূপবতী ও গুনবতী রমনীদের ঠিকানা নবাব সরকারে জানিয়ে দেওয়াই তাদের কাজ ছিল । এর বিনিময়ে তারা বিস্তর জায়গীর পাইতেন” ।
#কুমারি মাতা হওয়া ও নবাবের লোলুপ দৃস্টির হাত থেকে বাচার জন্য শুরু হয়েছিল গৌরীদান প্রথা । আর বিধবা মাতা ও সুন্দরী বিধবাদের প্রতি মুসলিম জায়গীর ও নবাবের কুদৃস্টি / “নজরে বেওয়ার” হাত থেকে বাচার জন্য হিন্দু সমাজপতিরা সতীদাহ প্রথার প্রবর্তন করেছিলেন বলেই জানা যায় ।
#হিন্দু নারীদের পুনঃ বিবাহের ধর্মীয় অনুমতি –
১ #ইয়ং নারী পতি লোকং বৃণানা নিপদ্যত উপত্ব্য মর্ন্ত্য প্রেতম্।
ধর্মং পুরাণমনু পালয়ন্তী তস্ম্যৈ প্রজাং দ্রবিণং চেহ ধেহি।। ( অথর্ববেদ ১৮.১.৩ )
অর্থাৎ – #হে মনুষ্য!এই স্ত্রী পুনর্বিবাহের আকাঙ্খা করিয়া মৃত পতির পরে তোমার নিকট আসিয়াছে।সে সনাতন ধর্মকে পালন করিয়া যাতে সন্তানাদি এবং সুখভোগ করতে পারে।
২ #ইয়ং নারী পতিলোকং বৃণানা নিপদ্যত উপত্বা মর্ত্য প্রেতম।
বিশ্বং পুরাণ মনু পালয়ন্তী তস্যৈ প্রজাং দ্রবিণং চেহ ধেহি।। ( তৈত্তিরীয় আরন্যক ৬.১.৩)
অর্থাৎ – #হে মনুষ্য!মৃত পতির এই স্ত্রী তোমার ভার্যা।সে পতিগৃহ সুখের কামনা করিয়া মৃত পতির পরে তোমাকে প্রাপ্ত হইয়াছে।কিরুপ ভাবে?অনাদি কাল হইতে সম্পূর্ন স্ত্রী ধর্মকে পালন করিয়া।সেই পত্নীকে তুমি সন্তানাদি এবং ধনসম্পত্তি সহ সুখ নিশ্চিত কর।
৩ #উদীষর্ব নার্ষ্যভি জীবলোকংগতাসুমেতমুপশেষ এহি।
হস্তাগ্রাভস্য দিধিষোস্তবেদং পত্যুর্জনিত্বমভি সংবভূব।।(অথর্ববেদ ১৮.৩.২ ও ঋগবেদ ১০.১৮.৮ )
অর্থাৎ – #হে নারী!মৃত পতির শোকে অচল হয়ে লাভ কি?বাস্তবজীবনে ফিরে এস।পুনরায় তোমার পাণিগ্রহনকারী পতির সাথে তোমার আবার পত্নীত্ব তৈরী হবে।
#সতীদাহ যে সনাতন ধর্মীয় নিয়ম নয় তাঁর আরও একটি বড় প্রমান হল ভগবান গৌতম বুদ্ধের জীবনী… ভগবান গৌতম বুদ্ধ ও তাঁর সমসাময়িক সময়ের বিবরন জানা যায় বৌদ্ধ ধর্ম গ্রন্থ ত্রিপিটক থেকে, ত্রিপিটক থেকে সে সময়ের চিকিৎসক জীবক, মহারাজা বিম্বিসার, অজাতসুত্রু, রাজা প্রসেঞ্জিত ও আম্রপালি সম্পর্কে জানা যায়, সুতরং ত্রিপিটক একটি গুরুত্ত পূর্ণ শাস্র যা থেকে তৎকালীন ভারতের ব্যাপারে জানা যায় , কিন্তু সমসগ্র ত্রিপিতিক শাস্রএ এই সতী দাহের ব্যাপারে লেখা নেই, এমন কি মহারাজ শুদ্ধধন মারা গেলে ভগবান বুদ্ধ তাঁর পরলৌকিক ক্রিয়া সম্পূর্ণ করেন, কিছু দিন পরে বুদ্ধের মাতা তথা শুদ্ধধন পত্নী বিধবা প্রজাপতি , বুদ্ধ পত্নী জসধারা, ও সকল বিধবারা বুদ্ধের কাছে সন্ন্যাস ধর্মে দীক্ষিত হন, সুতরং তখন যদি সতীদাহ প্রথা চালু হত তাহলে বুদ্ধের মাতা প্রজাপতি সহ সকল বিধবারা মারা যেতেন স্বামীর চিতায় কিন্তু তারা মারা যাননি বরং তারা বুদ্ধের কাছে সন্ন্যাস ধর্মে দীক্ষিত হয়েছিলেন… তাই এটা অত্যন্ত সহজ ব্যাপার যে সতীদাহ প্রথা তখন চালু হইনি, এটা চালু হয়েছে ভারতে মুসলিম রাজত্ব শুরু হওয়ার পর… এমন কি প্রাচীন ভারতের কিছু পণ্ডিত যেমন অতিশ দীপঙ্কর, কালিদাস, বেদব্যাস, বাল্মিকি, পর্যটক সি হিয়াং তি, আল বেরুনি, কারো লেখাতে এই সতী দাহের কথা উল্লেখ নেই