বৈদিক জীবনাচরন…………………………….!!!

পবিত্র বেদ; সৃষ্টির প্রারম্ভে আপ্তকাম মহর্ষিগন কর্তৃক হৃদয়ে প্রাপ্ত মহাবিশ্বের সংবিধান,একটি পরিপূর্ন জীবনবিধি। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে আমাদের আচরন ও কার্যবিধি কেমন হওয়া উচিত তা নিয়ে সনাতন মানব ধর্মালম্বী ভাই ও বোনদের জন্য সংক্ষিপ্তভাবে উপস্থাপন করছি বৈদিক জীবনাচরন।১. একজন বৈদিক ধর্মালম্বীর প্রথম ও প্রধান লক্ষ্য থাকা উচিত তার চারিত্রিক উন্নয়ন।
ওঁ বিশ্বানি দেব সবিতর দুরিতানি পরসুব।


যদভদ্রম তান আসুভ।। যজুর্বেদ ৩০.৩
অনুবাদ- হে পরমেশ্বর,আমি যাতে আমার খারাপ গুনসমূহ বর্জন করতে পারি এবং সত্গুনসমূহকে আয়ত্ত্ব করে নিজ চরিত্রের উন্নতি ঘটাতে পারি।

২. মাহিরভূর্মা প্রদাকুর
অতনর্ভা প্রেহি(যজুর্বেদ ৬.১২) অর্থাত্ হে মনুষ্য,হিংস্র বা উগ্র হয়োনা।নমনীয় ও সত্যনিষ্ঠ হও।
৩. ম ভ্রাতা ভ্রাতারম অরত্যহ অথ (অথর্ববেদ ৩.৩০.৬)
অর্থাত্ সকল মানুষ ই ভাই-ভাই এবং একজন ভাই যেনো কখনো অন্য ভাইয়ের ক্ষতি করার চেষ্টা না করে।
৪.গরীব-দুঃখী ও বিপদগ্রস্তদের সামর্থ্য অনুযায়ী দান করা বৈদিক ধর্মালম্বীর কর্তব্য।
শত হস্ত সংহারা,সহস্র হস্ত সংকীরথ।(অথর্ববেদ ৩.২৪.৫)
অনুবাদ-আয় করতে হাতটিকে শতটিতে বৃদ্ধি কর আর দান করতে তাকে হাজারে রুপান্তরিত কর।
“সামর্থবানদের উচিত গরীবদের দান করা।তাদের দুরদৃষ্টিসম্পন্ন হওয়া উচিত,মনে রাখা উচিত অর্থসম্পত্তি চিরস্থায়ী নয়।আজ যে ধনী সে ধন কাল তার নাও থাকতে পারে! (ঋগ্বেদ ১০.১১৭.৫)
৫.পানিদূষন,বায়ুদূষন,মাটি দূষন করবেননা-
মাপোমৌস্রাদ্ধিহিন্স্রী (যজুর্বেদ৬.২২)
অর্থাত্ পুকুর,নদী,খাল,বনাঞ্চল এসব দূষিত বা ধ্বংস করোনা।
“বায়ুতে আমরা স্বাচ্ছন্দ্যে বেঁচে থাকি,একে দূষিত
করোনা।” (যজুর্বেদ ৬.২৩)
পৃথ্বীম মা হিন্সিম অর্থাত্ মাটির দূষন
করোনা। (যজুর্বেদ ১৩.১৮)
৬ .মা গৃধ কস্য স্বিদ্ধনম (যজুর্বেদ ৪০.১) অর্থাত্ লোভাতুর হয়োনা
৭.যেকোন ধরনের অশ্লীলতা বৈদিক ধরমালম্বীদের জন্য বর্জনীয়-
“হে নারী ও পুরুষ,তোমরা ভদ্র ও সংযত হও।পোশাক-পরিচ্ছেদ ও আচরনে অশ্লীলতা ও অসভ্যতা বর্জন কর।”(ঋগ্বেদ ৮.৩৩.১৯)
অশ্লীল কথা না বলা,শোনা বা দেখা নিয়ে পবিত্র বেদ এর উপদেশ
#ওঁ ভদ্রং কর্ণেভি শৃনুয়াম
দেবা ভদ্রংপশ্যেমাক্ষ ভির্যজত্রা।
স্থিরৈরঙ্গৈস্তস্টুবাঁ সস্তনুভির্ব্যশে ম
দেবহিতং যদায়ুঃ।। (যজুর্বেদ ২৫/১১)
দেবাঃ-ঈশ্বর, যজত্রা- আরাধনা করি,কর্ণেভি-কান দিয়ে,ভদ্রম- ভদ্র বা শ্লীল কথাবার্তা, শৃনুয়াম- শুনি,অক্ষভি- চোখ দিয়ে যেন,ভদ্রম- শ্লীল ,ভদ্র এবং মঙ্গলময় দৃশ্য, পশ্যেম- দেখি,স্থিরৈ-সুদৃঢ় (সত্কর্মসম্পাদনে), অঙ্গৈ-অঙ্গ, তনুভি-শরীর দ্বারা,তষ্টুবাংস-ঈশ্বরের স্তুতি করতে,যত্-যে, আয়ু-আয়ু, দেবহিতম- আরাধ্যসেবায় লাগে, সস্তনুভির্ব্যবেশম- তাই যেন প্রাপ্ত হই।
অর্থাৎ, হে ঈশ্বর,আমরা যেন তোমার যজন করি,কান দিয়ে শ্লীল ও মঙ্গলময় কথাবার্তা শুনি,চোখ দিয়ে শ্লীল ও মঙ্গলময় দৃশ্য দেখি।তোমার আরাধনাতে যে আয়ুস্কাল ও সুদৃড় দেহ প্রয়োজন তা যেন আমরা প্রাপ্ত হই।
৮.(ঋগ্বেদ ১.৮৯.২) দেবানাম সখ্যমুপ্সেদীনাম ব্যায়াম অর্থাত্ বিদ্বান ও সচ্চরিত্র লোকেদের সাথে বন্ধুত্ব কর,দুশ্চরিত্রদের বর্জন কর।
৯.”কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে নিজের ভাগ্যকে গড়ে তোল।”(ঋগবেদ ১০.৬০.১২)
১০.”সর্বভূতের কল্যানের জন্য নিজের মনস্থির কর।” (যজুর্বেদ ৩৪.১)
১১.অন্যো অন্যস্ময় ভল্গ বদন্তথ (অথর্ববেদ ৩.৩০.৫) অর্থাত্ সদা সত্যাশ্রয়ী ও সত্যবাদী হবে।
সত্যবদ্ধতি ত্বম সূর্যন্তু (অথর্ববেদ ৪.১৬.৬) অর্থাত্ সত্যবাদীকে সর্বদা সম্মান করবে।
১২.একজন বৈদিক ধর্মালম্বী সর্বভূতে সমদর্শী হবে।তার জন্যে কেউ ছোট নয়,কেউ বড় নয়।সকলেই এক অমৃতের সন্তান!
অজ্যেষ্ঠাসো অকনিষ্ঠাস
এতে সং ভ্রাতারো তাবৃধুঃ সৌভগায়
যুবা পিতা স্বপা রুদ্র
এযাং সুদুঘা পুশ্নিঃ সুদিনা মরুদ্ভঃ ॥ (ঋগবেদ ৫.৬০.৫)
#বঙ্গানুবাদ : কর্ম ও গুনভেদে কেউ ব্রাহ্মন,কেউ ক্ষত্রিয়,কেউ বৈশ্য,কেউ শুদ্র।তাদের মধ্যে কেহ বড় নয় কেহ ছোট নয়।
ইহারা ভাই ভাই । সৌভাগ্য লাভের জন্য ইহারা প্রযত্ন করে ।ইহাদের পিতা তরুন শুভকর্ম ঈশ্বর এবং জননীরুপ প্রকৃতি। পুরুষার্থী সন্তানই সৌভাগ্য প্রাপ্ত হন।
১৩.একজন বৈসপ্ত মর্যাদাঃ কবয়স্তস্তক্ষুস্তাসামেকামিদভ্যয়হুরো ঘাত।। ঋগবেদ ১০.৫.৬
“সপ্ত হল নিষেধসমূহ যা নির্দেশিত হয়েছে,জ্ঞানীগন যাকে সবসময় এড়িয়ে চলেন,যেগুলো মানুষকে সর্বদাই বিপথগামী করে।”কি সেই সপ্ত মহাপরাধসমূহ ?
#মহর্ষি যস্ক তাঁর নিরুক্ত সংহিতায় বর্ননা করেছেন,
“চুরি,অশ্লীলতা ও ব্যভিচার,হত্যা,ভ্রুননিধন,অগ্নিসংযোগ,নেশা/ মদ্যপান,অসততা।”দিক ধর্মালম্বীর জন্য যেকোন ধরনের নেশাজাতীয় পদার্থ নিষিদ্ধ।
১৪.বৈদিক ধর্ম মানবতার ধর্ম। এখানে কোন ধরনের অস্পৃশ্যতা প্রথার কোন সুযোগ নেই-
অথর্ববেদ ৩.৩০.৬
মানী প্রপা সহ বোরন্নভাগঃ সমানে যোক্তো সহ বো যুনজমি।
#সমঞ্চোহগ্নিং যপর্যতারা নাভি মিবাভিতঃ।।
বঃ-তোমাদের,পপা-পান,সমানী- একসঙ্গে একপাত্রে হউক,বঃ অন্নভাগাঃ- তোমাদের আহারও একসাথে হউক,বঃ- তোমাদিঘে,সহ- সঙ্গে,সমানে যোক্ত্রে-এক বন্ধনে,যুনজমি-যুক্ত করেছি,সম্যন্চঃ-সবাই মিলে,অগ্নিং সপর্যত- একসাথে উপাসনা কর(যজ্ঞাদি,ধ্যন),ইব- যেমন,অরাং নাভিং অভিত-যেমন করে রথচক্রের চারপাশে অর থাকে।
#অর্থাত্,হে মনুষ্যগন তোমাদের ভোজন ও আহার হোক একসাথে,একপাত্রে, তোমাদের সকলকে এক পবিত্র বন্ধনে যুক্ত করেছি,তোমরা সকলে এক হয়ে পরমাত্মার উপাসনা(যজ্ঞাদি,ধ্যন) কর ঠিক যেমন করে রথচক্রের চারদিকে অর থাকে!
বৈদিক জীবনবিধি মেনে চলুন,একটি মহৎ পৃথিবী গড়ে তুলুন।
ওঁ শান্তি শান্তি শান্তি
সনাতন ভাবনা at রবিবার, জুলাই ১২, ২০১৫