ইরানে যেখানে বোরখা হিজাব খুলে নারীরা চুল ছেড়ে প্রতিবাদ জানায় তখন ইউরোপ আমেরিকাতে অভিবাসী মুসলিমরা হিজাব, শরীয়ার দাবী তুলে শোরগোল তুলে ফেলে।

কিছুদিন আগে বিশ্ব হিজাব দিবস নামে সেক্যুলার ব্যক্তি স্বাধীনতার দেশগুলোতে বসবাস করা মুসলিম নারী পুরুষরা উল্লাসসহকারে ‘ধর্মীয় অধিকার’ পালন করল। বাংলাদেশী নাজমা নামের এক নারীই এই দিবসের মূলে। এই নাজমাকে ইরান কিংবা সৌদি আরবে থাকতে দেয়া উচিত ছিলো। তার দাবী আমেরিকাতে তাকে হিজাব নিয়ে কটুক্তি শুনতে হয়েছিলো। তাই হিজাব পরার অধিকারের জন্য সে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলো। আমেরিকাতে কিংবা ইউরোপে আইনত সম্ভবত একজন পুরুষ একসঙ্গে একাধিক স্ত্রী রাখতে পারবে না। কিংবা কেউ রাখলেও নিশ্চিত হাসাহাসি করবে। নাজমার স্বামীর উচিত চার স্ত্রী রাখা তার অধিকার বলে সামাজিক আন্দোলন শুরু করা। নাজমা কি সেই আন্দোলনে স্বামীকে উৎসাহিত দিবে? ভারতের মুসলিম নারীরা যেখানে ইসলামী আইন অনুযায়ী পুরুষের একত্রে চার স্ত্রীর রাখাকে বেআইনী করতে রাজপথে নামে, ইরানে যেখানে বোরখা হিজাব খুলে নারীরা চুল ছেড়ে প্রতিবাদ জানায় তখন ইউরোপ আমেরিকাতে অভিবাসী মুসলিমরা হিজাব, শরীয়ার দাবী তুলে শোরগোল তুলে ফেলে। এ জন্য বললাম নাজমাদের সৌদি আরব ইরানে পাঠানো উচিত। মুসলিম নারীর অধিকার কি জিনিস দেখে আসতে পারবে। আরো একটা বিষয়, ইউরোপে হিজাব নিষিদ্ধ করতে গেলে ‘ইসলাম বিদ্বেষ’ ‘মুসলিম নিগৃহ’ বলে বাম ও মডারেটরা হৈ চৈ করে। ইরান সৌদির মত আফ্রিকা, এশিয়ার মুসলিম নারীরা ইসলামী বাধ্যবাধকতায় যে পরিমাণ বৈষম্যের শিকার হচ্ছে তার বিরুদ্ধে তাদের কোন প্রতিবাদ নেই! পৃথিবীতে ইসলামী শাসনে থাকা দেশগুলোর মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়েও এরা একদমই কথা বলতে নারাজ…।

মুসলমানদের ধর্মীয় বিশ্বাসে এক অদ্ভূত ভন্ডামীতে পূর্ণ। এরা কখনই শরীয়া শাসিত ইসলামী সরকারের অধিনে থাকা কোন মুসলিম রাষ্ট্রের প্রতিই আকৃষ্ট হয় না। এদের সমস্ত আকর্ষণ সেক্যুলার গণতান্ত্রিক ব্যক্তিস্বাধীনতার দেশগুলোর দিকে। আশ্চর্যের ব্যাপার হচ্ছে এই অধর্মীয় রাষ্ট্রগুলো সব গড়ে তুলেছে অমুসলিমরা। এদের শাসনে মুসলমানরা নিজেদের ধর্মীয় অধিকার প্রতিষ্ঠার সব রকম প্রচেষ্টাই চালায়। বলাই বাহুল্য গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় সেটা সব ধার্মীকই পেয়ে থাকে। কিন্তু এরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়ে অন্যের ধর্মীয় অধিকার হয় কেড়ে নেয় নয়ত খর্ব করে। ঢাকা শহরকে ‘ইসরলামিক টুরিজম’ ঘোষণা তেমনি একটি অংশ। যে কোন প্রকারেই হোক ইসলামী লেবাস পরিয়ে একটি দেশকে গণতান্ত্রিক দৃষ্টিকোণ থেকে ভিন্নধর্মীদের কাছে নিজ দেশে পরবাসী করে দেয়। ওআইসিতে যোগদান বাংলাদেশকে ‘মুসলিম রাষ্ট্র’ বানিয়ে মু্ক্তিযুদ্ধে আত্মত্যাগকারী সর্বধর্মীয় মানুষদের সঙ্গে বেঈমানী করা হয়েছে। মুখে মুক্তিযুদ্ধের কথা বলে মদিনা সনদে দেশ চালানোর প্রতিশ্রুতি, আহমদ শফীর কাছে কর্মচারীকে দোয়া চাইতে পাঠানো একটা রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের সঙ্গে প্রতারণা করা…।

মুসলমান যখন ‘আসলি’ ইসলামের স্বাদ পায় তখনই হিজাব নেকাব বোরখা শরীয়ার মুখে লাথি দিয়ে প্রতিবাদ করে উঠে। বাংলাদেশীদের এখনো সেই সময় আসেনি। যেদিন আসবে সেদিন এইসব ভন্ডদেরও দিন শেষ হয়ে যাবে।