ধর্মের অজুহাতে ঈশ্বর কে বিক্রি করা বন্ধ হোক।।

ধর্মের অজুহাতে ঈশ্বর কে বিক্রি করা বন্ধ হোক :-
——————————————————
বিষয় :- বেলুড় মঠে ‘ উইল চেয়ার দেখলে ঈশ্বর পালায় !!
**********************************
আমি নিজে একজন ঈশ্বর বিশ্বাসি , চরম হিন্দুত্ববাদী ৷ কিন্তু আমি পশ্চিমবঙ্গের কোন মঠ বা মন্দিরে খুব একটা পূজা পার্বণ দিই না , শুধু মাত্র তারাপীঠ ‘ বাদে ৷ তারপীঠ ‘ আমার কাছে সবথেকে প্রিয় ঈশ্বর ক্ষেত্র ৷ কেন জানেন ? আপনারা যেটা ভাবছেন , সেটা নয় ( ভর পেটা মাল ‘ খাওয়া যায় বলে নয় ) ৷ কারণ তারাপীঠে আমি ঈশ্বর কে খুঁজে পাই ৷ দেখুন বন্ধুরা আমি নিজেও জানি না যে , ঈশ্বর কেমন , তিনি কি জিভ বার করে থাকেন নাকি সাপ জড়িয়ে বসে থাকেন নাকি দশটা চোখ আর তিন টি চোখ আছে !! আমার কাছে ঈশ্বর মানে নিষ্পাপ পবিত্র একটি অনুভূতি একটি আত্মশক্তি বিশেষ ৷ আর তারাপীঠে সেটা কিছুটা হলেও পাই কারণ অন্যান মন্দিরের মতন এখানে কোন ধর্ম নিয়ে নিয়মকানুন নিয়ে ঢাকঢাক-গুড়গুড় ব্যাপার স্যাপার নেই , মানুষের মনের শ্রদ্ধা-ভক্তি নিয়ে কোন মানুষের তৈরি নিয়মকানুনের নৌটঙ্কি নেই ৷ যে খুশি যেকোন অবস্থা তে , স্নান করে বা না করে , ময়লা , নোংরা জামাকাপড় পরে যেমন খুশি তেমন ভাবেই মাতৃ রুপি ঈশ্বরের আরাধন করতে পারবে ৷ ধনী দরিদ্র , উঁচুনিচু , সমস্ত বর্ণ সমস্ত মানুষ নির্বিশেষে সমান অধিকারে মা এর পূজা দিতে পারবে ৷ কোন দক্ষিনা আদায়েরও নিয়ম-বিধি নেই ৷ এটাই তো হওয়া উচিত , মনের পবিত্রতাই তো ঈশ্বর সাধনের মূল মন্ত্র হওয়া উচিত ৷ মানুষের তৈরি নিয়মকানুনে কি ঈশ্বর সাধনা হয় নাকি !! ঈশ্বর তো মনের রাজা ৷ …..
.
এবার আসা যাক মূল বিষয়ে , বন্ধুরা আপনারা হয়তো অনেকেই জানেন না , বেলুড় মঠের উপাসনা গৃহে প্রবেশের একটি অতি লজ্জাজনক এবং নিন্দনীয় বিধি নিষেধ ও নিয়ম আছে , সেই নিয়ম টি হল , ” বেলুড় মঠে কোন শারীরক প্রতিবন্ধী হুইল চেয়ার সমেত প্রবেশ করতে পারবে না ৷ ……
আমার প্রশ্ন হল কেন পারবে না ?
সেই প্রতিবন্ধী  ব্যক্তি  কি ঈশ্বরের কোন দূর বর্তী আত্মীয় ?
নাকি তার উইল চেয়ারের শব্দে বিশ্রাম রত ঈশ্বরের ঘুম ভেঙ্গে যাবে ?…..
নাকি তিনি উইল চেয়ারে যাতায়াত করেন বলে ঈশ্বরের সংবিধান বহির্ভূত ? কোন কারণে সেই মানুষ টিকে এই ধরণে আপমান জনক শর্তে সম্মুখীন হতে হবে ??… বন্ধুরা এই নিয়ম দ্বারা already অনেক মানুষই আপমানিত হয়েছে এবং এর প্রতিবাদও করেছে কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয় নি ৷
.
এটা ঈশ্বরের তৈরি নিয়ম নয় , বেলুড় মঠ তত্ত্বাবধান কমিটির দ্বারা তৈরি নিয়ম , যেটা সরাসরি শুধু অন্যায় নয় বৈষম্য সৃষ্টি কারক বিধানও বটে কারণ একজন শারীরক প্রতিবন্ধী কে সরাসরি কোড- আনকোড বুঝিয়ে দেওয়া হচ্ছে আপনি অন্যদের সমকক্ষ নন এটা সম্পূর্ণ সংবিধান বিরোধী ৷ এটা মানবতার অপমান ৷
কিন্তু বেলুড় মঠ পরিচালন কমিটি অজুহাত দেখাচ্ছে , যেহেতু হুইল চেয়ার টি বিভিন্ন রাস্তাঘাটের উপর দিয়ে আসে সেহেতু তার ধূল-বালি – কাদার দ্বারা উপাসনা গৃহ টি নোংরা হতে পারে ৷
এখানে প্রশ্ন হল একটি মানুষের মানুষিক শান্তি লাভ ও ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভই তো মূল উদ্দেশ্যেই একটি মঠ বা মন্দির স্থাপন করা হয় তাহলে উপাসনা গৃহের নোংরা হওয়াটা বড় হলো নাকি মানুষ টির মানুষিক শান্তি প্রাপ্তি টা !! …
আর তাছাড়া বেলুড় মঠের মতন মঠ বা আশ্রম গুলি তে হাজার হাজার সেবক ও পরিচালক থাকে , তারা কি একটি মানুষ কে একটু শান্তি দেওয়ার জন্য একটু কষ্ট করে একটু পরিষ্কার করতে পারবে না উপাসনা গৃহ টি ? তাদের তো মানুষের সেবাই প্রধান কাজ ৷ আর তাছাড়া প্রতি বছর এই সব মঠ গুলি কোটি কোটি টাকা অনুদান পায় মন্দির পরিচালন ও সেবার জন্য ( এমনকী বিদেশ থেকেও প্রচুর অনুদান আসে ) , তাহলে তারা কি একটু বিশেষ ব্যবস্থা করতে পারে না এই সকল শারীরক প্রতিবন্ধী মানুষগুলোর জন্য যাতে তারা একটু সুবিধা পায় হুইল চেয়ার নিয়ে প্রবেশ করতে !! ………
.
হরিয়ানার বাবা রাম-রহিম জ্বরে উত্তাল বর্তমান দেশ ৷ এই সকল মঠ , বাবাগিড়ি , ধর্মিয় নিয়মকানুন বিধিনিষেধের জন্যই আজ হিন্দু ধর্ম একটি জটিল পর্যায়ে দাঁড়িয়ে ৷ ঈশ্বর সাধনাই যদি ধর্মের মূল উদ্দেশ্য হয় তো সেই সাধনা হোক সহজ লভ্য , সরল , নিষ্পাপ সেখানে নিয়মের বেড়া জ্বালে ভক্তির থেকে নিয়ম কে বড় করে হিন্দু ধর্ম কে পশ্চাদপদ করে কুলষিত করার অধিকার কোন মঠ , কোন মন্দির কোন বাবা – ধাবাদের নেই , কারণ মন্দির মঠ এর নিয়ম কোন ঈশ্বর তৈরি করেন নি মানুষ ই তৈরি করেছে সুতরাং এই সব আবল তাবল নিয়ম , ঢঙ্গীপণ , বাবা গিরি কে হিন্দু ধর্মের অবনতিই হচ্ছে উন্নতি নয় ৷