“আর্য্যরা কি করে বেমালুম ভুলে গেলো সেই ককেশাস আর ভোলগার কথা ?”
ডাঃ মৃনাল কান্তি দেবনাথ
তুর্কিরা, সেই মধ্য এশিয়া থেকে দাস হিসাবে এসে আফগানিস্তান দখল করে ,এশিয়া মাইনর দখল করে (পারস্য সাম্রাজ্যের অংশ), খ্রীষ্টানদের কনস্টানটিনোপলকে ইস্তানবুল বানিয়ে সেই দেশ টার নাম দিলো “তুর্কি=টার্কি’। তারা ভোলেনি মধ্য এশিইয়ায় নিজেদের উৎপত্তি স্থান। এই দুই দেশের মধ্যে সংষ্কৃতি,নাম ধাম সব একই রয়ে গেলো। অথচ দেখুন, এই সবের সামান্য কিছু বছর (পন্ডিতদের মতে এর মাত্র হাজার দেড়েক বছর আগে) আগে আর্য্যরা ভারতে এসে তাদের উৎপত্তিস্থান সব ভুলে গেলো। যেখান থেকে এলো, সেই আমুদরিয়া, ককেশাস পর্বত, ক্যাস্পিয়ান সাগর কোনো কিছু আর মনে রাখলো না। তাদের লেখা সাহিত্যে সেই সব জায়গার কথা এক বারের জন্যও লিখলো না। সত্যি, অবাক হতে হয়।
অপ্রাসঙ্গিক হলেও বলি, দক্ষিন আমেরিকার গায়ানা নামক জায়গায়, রাজধানী জর্জটাউন থেকে প্রায় ৬০ মাইল দূরে (বিখ্যাত ক্রিকেটার চন্দ্রপালের গ্রামের পরের গ্রাম) পর পর দুটি গ্রাম আছে। একটির নাম “41 Bengal” আর একটির নাম “Calcutta”।
১৯৮০-৮৩ সালে আমি যখন গায়ানায় কাজ করছিলাম ,তখন ওই গ্রাম দুটিতে গিয়ে এক অশীতিপর বৃদ্ধের কাছ থেকে জেনেছিলাম ওই গ্রাম দুটির মানুষ জনকে প্রায় ১৫০ বছর আগে ব্রিটিশ ক্ষেত খামারে কাজ করার জন্য কলকাতা এবং বাংলা থেকে ৪১ টি পরিবারকে এবং আরো কিছু পরিবারকে ওখানে নিয়ে যায়। তারাই সেই নাম দুটি দিয়েছে।
মানুষ যখন দেশ ছাড়ে তখন সংগে নিয়ে যায় সেই দেশের স্মৃতি। চেষ্টা করে তাকে পুনরায় ফিরিয়ে আনতে। ( আমার সংগে ক্যামেরা ছিলো না তখন। ২০১৩ সালে আবার গিয়েছিলাম ঐ অঞ্চলে। সেই গ্রাম খুজে পাইনি কারন আধুনিকতা এসে সব কিছু গ্রাস করে নিয়ে গেছে।
ইউরোপে আজো প্রায় ১২ মিলিয়ন হিন্দু দাসেদের বংশধরেরা আছে।তাদের বলে “রোমা”। তারা আজো (১৫০০ বছর পর) নিজেদের ভারতীয় বংশ উদ্ভুত বলে পরিচয় দেয়। তারা রাম এবং মা কালীর ভক্ত। (আমার লেখা ‘হিন্দু দাসদের কাহিনী’ পড়ুন) ।
বিখ্যাত সাহিত্যিক, নোবেলজয়ী ত্রিনিদাদের মানুষ ভি এস নইপাল তার শিকড়ের খোজে অনেকবার ভারতে এসেছেন। প্রথম বই লেখেন “মিঃ এন্ড মিসেস বিশ্বাস”। ত্রিনিদাদে পাকাপাকি ভাবে তৈরী হয় “দেওয়ালি নগর”। মানুষ কখনো তার শিকড় হারাতে চায় না। ভাবতে অবাক লাগে পন্ডিতেরা বলেন “আর্য্যরা ককেশাসের থেকে আগত এক যুদ্ধবাজ জাতি। অথচ তারা ককেশাস, ভোলগা কে মনে রাখে না। সত্যি কি অদ্ভুত তাই না???
আরো অদ্ভুত লাগে রাহুল সাংকৃত্যায়নের মতো সাহিত্যিক (জানি তিনি বাম পন্থী লেখক ছিলেন) একটি মিথ্যার ঝুড়ির ( আর্য্যরা বহিরাগত এবং ভারত জোর করে দখল করেছিলো-এই তত্ব) ওপরে বিশ্বাস রেখে বই লেখেন “ভোলগা থেকে গংগা”। কোথায় ভোলগা আর কোথায় মা গংগা ! সেই ভোলগা তীরের মানুষ গুলো বেমালুম ভুলে গেলো ভোলগা নদী,শুধু লিখে গেলো “নদীতমা সরস্বতী” আর ‘গঙ্গা যমুনা সিন্ধু কাবেরী, নর্মদার কথা।