কুরআনের ভাস্কর্য আইনমন্ত্রীকে দিয়ে উদ্বোধন করাটা চিত্তাকর্ষক।

কুরআনের ভাস্কর্য আইনমন্ত্রীকে দিয়ে উদ্বোধন করাটা চিত্তাকর্ষক। তিনি ব্রাহ্মণবাড়ীয়ার সাংসদ বলেই ভাস্কর্যটি উদ্বোধন করছেন ঠিকই, তবে ‘কুরআনের আইন চাই’- এমন দাবীদাররা কুরআনের ভাস্কর্য প্রতিষ্ঠাকে একটি মাইলফলক ধরলে সেটি একজন আইনমন্ত্রীকে দিয়েই তারা উদ্বোধন করালো!

বাংলাদেশের ঐ শ্রেণীটি যারা ভারতে হিন্দুত্ববাদ, ইউরোপের ইসলামফোবিয়া, সাম্রাজ্যবাদীদের মুসলিম বিশ্বে লুন্ঠনকারী বলে গলার রগ ফোলায়, সেই সোসাইটি কুরআনের ভাস্কর্য নির্মাণকে সাম্প্রদায়িক হিসেবে দেখে না। ‘মুসলিম বিশ্ব’ কথাটাতেও কোন সাম্প্রদায়িকতা দেখতে পায় না। কিন্তু ৯০ ভাগ মুসলমানের উ্ছেদ নির্মূলের প্রতিবাদ প্রতিরোধ করতে ‘হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষধ’ গঠনা করা তাদের কাছে সাম্প্রদায়িকতা। ওআইসিতে কোন সাম্প্রদায়িকতা নেই সব সাম্প্রদায়িকতা বঙ্কিমচন্দ্রে! শরীয়া শাসনে কিছু যায় আসে না সব ক্ষোভ জায়েনবাদে। এদেরকে আপনি কখনই সৌদি আরবে শরীয়ার বিরোধীতা করতে দেখবেন না। তাদের কাছে ট্রাম্প, বাল থ্যাকারই কেবল সাম্প্রদায়িক বর্ণবাদী…।

এরাই কিন্তু জাস্টিসিয়া ভাস্কর্য ভাঙ্গতে ইন্দন জুগিয়েছিলো। ইসলামপন্থিরা জাস্টিসিয়া ভাস্কর্য ভেঙ্গে ফেলতে স্টেটকাট কখা বলেছিলো। ইসলামে ভাস্কর্য হারাম, মুসলমানের দেশে একে একে কোন ভাস্কর্য-মূর্তিই রাখা হবে না- ব্যস। কিন্তু ঐ শ্রেণীটি অন্য পথ ধরেছিলো। তারা ইসলামপন্থিদের আপত্তির পর অন্য পথ ধরল। তারা বলতে শুরু করল, জাস্টিসিয়া গ্রীক দেবীর আদলে গড়া বিধায় এটি আমাদের সংস্কৃতির আওতায় পড়ে না। তাছাড়া জাস্টিসিয়াকে শাড়ি পরিয়ে কিমদ্ভূতকার করা হয়েছে… ইত্যাদি।

এরা বাংলাদেশে নানা উপ-পরিচয়ে বিভক্ত। আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, প্রগতিশীল বুদ্ধিজীবী, কমিউনিস্ট ইত্যাদি রাজনৈতিক মোড়কে। তারা বাংলাদেশে একটি পক্ষ। তাদের নিয়ে বাংলাদেশে প্রায় তিনটি পক্ষ আছে মূলত। এক- পিউর ইসলামপন্থি, দুই- বাঙালী মুসলমান, তিন- মুসলমান বাঙালী। মুসলমান বাঙালীরাই মুসলমানদের জন্য পৃথক রাষ্ট্র পাকিস্তান গঠন করেছিলো। কিন্তু তারপরও তারা ‘ইসলামপন্থি’ নয় কারণ তারা ইসলামি শাসন বা কুরআনের আইন চাননি পাকিস্তানে। তারা মুসলমান এই পরিচয়ে হিন্দুদের উপর সাতন্ত্রতা প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছেন। তারা বাংলা ভাষাতে প্রচুর আরবী-ফারসীর শব্দের আমদানী করে মূল বাংলা ভাষা থেকে ভিন্নতর ‘মুসলমানি বাংলা ভাষা’ তৈরি করতে চেয়েছেন। এই অভিন্ন অবস্থানে আস্থাশীল থেকেই মুসলমান বাঙালীদের একাংশ ষাটের দশকে ‘বাঙালী মুসলমান’ হয়েছিলেন। এর রূপান্তর কেবলই রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন, চাকরিবাকরি মায় অর্থনৈতিক কারণে। জাতিগত বৈষম্যের কারণে পাকিস্তান ভেঙ্গে যাবার উপক্রম হলে ‘মুসলমান বাঙালী’ পক্ষ আর ইসলামপন্থিরা পাকিস্তান রক্ষায় ষাটের দশকের এই পক্ষটিকে ভারতের দালাল, নাস্তিক সোভিয়েত-ভারতের চর, ইসলাম বিরোধী শক্তি হিসেবে প্রচার করে যা আদতে ছিলো মিথ্যাচার। হিন্দুসহ অমুসলিম নাগরিকদের প্রশ্নে কার্যত এই অংশটি অপর অংশগুলো মতই ছিলো উদাসিন। পাকিস্তান সৃষ্টি মাধ্যমে বাঙালী হিন্দুদের পূর্ববঙ্গে মধ্যবিত্ত শ্রেণীর শক্তি খর্ব হয়ে মিলিয়ে যেতে থাকে যাতে এই পক্ষটিও নিরব থেকে সমর্থন জুগিয়ে গিয়েছিলো…।

এই ‘বাঙালী মুসলমানই’ জয়ী হয়ে পরবর্তীকালে বাংলাদেশ গঠন করে। আজো তিনটি পক্ষ জাগ্রত এক বাস্তবতা। তাদের মধ্যে মত পার্থক্য থাকলেও নিউক্লিয়াস একই হওয়াতে আজকে বাংলাদেশে কুরআনের ভাস্কর্য নির্মাণ তাদের কালে অনভিপ্রেত কিছু নয়।