“মনু এবং মনু সমহিতা”

ব্যক্তিত্বের বিকাশ……………………………………………………..।।।

পরম করুণাময় স্রষ্টার কী আজব লীলা যে, তাঁর সৃষ্টি জগতে কোনো দু’জন
মানুষের
ব্যক্তিত্বের(Personality) গঠন এক রকম নয়। এমনকি চেহারা, মেজাজ,
আচরণে তেমন কোনো মিল নেই। মানুষের ব্যক্তিত্ব একটি মাত্র বৈশিষ্ট্য বা
গুণের ফসল নয়। এটা ব্যক্তির সার্বিক বৈশিষ্ট্যের বহিঃপ্রকাশ মাত্র।
ব্যক্তিত্ব বলতে আমরা বুঝি সামাজিক পরিবেশে সুসামঞ্জস্য স্থাপনকারী
আচরণগুলোর সমন্বয়সাধন। ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে রবার্ট জেন্ড একটি চমৎকার
মন্তব্য করেছেন, ‘জনসাধারণের মাঝে একটি বিষয়ই হলো সাধারণ তারা প্রত্যেকেই
স্বতন্ত্র’ (people have one thing is common, they are all
different_Robert Zend)।
ওয়ারেন (Warren-1934) ব্যক্তিত্বের একটি সুন্দর
সংজ্ঞা দিয়েছেন, তা হলো, কোন ব্যক্তির চিন্তা, অনুভূতি, ইচ্ছা ও শারীরিক
বৈশিষ্ট্যসমূহের সমন্বিত সংগঠন, যা এক ব্যক্তিকে অন্য ব্যক্তি থেকে পৃথক
করে তাকে ব্যক্তিত্ব বলে। আবার এলপর্ট (Allport-1936) বলেন, “ব্যক্তিত্ব
হলো ব্যক্তির মনোদৈহিক প্রক্রিয়াগুলোর এক গতিময় সংগঠন যা পরিবেশের তার
উপযোগ স্থাপনের স্বকীয় ধরন নির্ধারিত করে।” ব্যক্তিত্ব সম্বন্ধে আরো অনেক
মনোবিজ্ঞানী ও গবেষক সংজ্ঞা দিয়েছেন তাদের মধ্যে স্টেনজার (Stanger-1948),
উডয়ার্থ ও মারকুইস (Woodwarth & Marquis, 1957) এবং হুইটটেকার অন্যতম।
প্রকৃতপক্ষে “Personality” শব্দটি ল্যাটিন শব্দ “Persona” থেকে এসেছে, যার
আভিধানিক অর্থ হলো Mask অর্থাৎ মুখোশ।

ব্যক্তিত্ব বিকাশের উপাদান

একজন মানুষের ব্যক্তিত্ব বিভিন্ন উপাদানের সমন্বয়ে গঠিত হয়। সংক্ষেপে ব্যক্তিত্ব বিকাশের উপাদান নিম্নরূপ-

দৈহিক গঠন : দৈহিক আকৃতি, চেহারা, শক্তি, সামর্থ্য প্রভৃতি ব্যক্তিত্ব
বিকাশে প্রভাব বিস্তার করে থাকে। যেমন : একজন শীর্ণ-ক্ষীণ দেহের লোক
সাধারণত চঞ্চল ও অন্তর্মুখী এবং স্থূলদেহের মানুষ আরামপ্রিয় ও উল্লসিত
প্রকৃতির হয়। অপেক্ষাকৃত একজন সুন্দর চেহারার লোক সহজেই অন্যের দৃষ্টি
আকর্ষণ করতে পারে। তাছাড়া ব্যক্তির দৈহিক শক্তি ও সামর্থ্য ব্যক্তিত্ব
গঠনেও সাহায্য করে থাকে।

অন্তক্ষরাগ্রন্থি : যেসব অন্তক্ষরাগ্রন্থি ব্যক্তিত্বের ওপর প্রভাব
বিস্তার করে সেগুলো হলো- থাইরয়েড গ্রন্থি, যৌনগ্রন্থি ও পিটুইটারি গ্রন্থি।
থাইরয়েড গ্রন্থি গলার সামনে দু’পাশে দু’টি থাকে এবং এ থেকে নিঃসৃত হরমোন
বা রসকে থাইরোক্রিন বলে। এই হরমোন কমে গেলে মানুষ ক্রমেই স্থূল ও অলস
স্বভাবের হয়, আবার বেড়ে গেলে তীব্রভাবে কর্মচঞ্চল হয়ে পড়ে। শিশুদের এই
গ্রন্থি বিনষ্ট হলে ক্রেটিনিজম নামক এক প্রকার শারীরিক রোগ হয়। এ্যাডরেনাল
বা সুপ্রারেনাল গ্রন্থিদ্বয় উভয় কিডনির ওপর অবস্থিত। এখান থেকে
এপিনেফ্রিন(এ্যাডরেনালিন) নামক হরমোন বেশি নিঃসৃত হলে শ্বাস-প্রশ্বাস
বৃদ্ধি পায়, রক্তচাপ বেড়ে যায়, হৃৎপিণ্ড উত্তেজিত হয় এবং যকৃত থেকে
সংরক্ষিত শর্করা বেশি পরিমাণে রক্তে ক্ষরিত করে প্রতিক্রিয়ার জন্য শক্তি
জোগায়। যৌনগ্রন্থি পুরুষের অণ্ডকোষ ও মহিলাদের ডিম্বাশয় থাকে। এ থেকে
পুরুষের বেলায় এনড্রোজেন এবং মহিলাদের বেলায় এসট্রোজেন নামক প্রধান হরমোন
নিঃসৃত হয়ে থাকে। পিটুইটারি গ্রন্থি মগজের ভেতরে ও নিম্নে প্রায় মধ্যখানে
থাকে। এ থেকে নিঃসৃত হরমোন শরীরের বিভিন্ন গ্রন্থিকে উদ্দীপিত করে।

বুদ্ধি : বুদ্ধি হলো ব্যক্তিত্ব গঠনের অন্যতম উপাদান। একজন মানসিক
প্রতিবন্ধী বা অপেক্ষাকৃত কম বুদ্ধিসম্পন্ন ব্যক্তির চেয়ে একজন স্বাভাবিক
বুদ্ধি বা অতি বুদ্ধিসম্পন্ন লোকের ব্যক্তিত্ব অধিক আকর্ষণীয়।

কৃষ্টি বা সংস্কৃতি : পরিবার, সমাজ, ধর্ম, মূল্যবোধ, ন্যায়, অন্যায়,
মনোভাব সবই কৃষ্টির অন্তর্ভুক্ত। সেজন্য প্রত্যেক কৃষ্টি বা সংস্কৃতির
মধ্যে ব্যক্তিত্বের পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। শিশু ও কিশোরদের ব্যক্তিত্ব
বিকাশের ক্ষেত্রে মাতা-পিতা, পরিবারের সদস্য, আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশী,
খেলার সাথী, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রভৃতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
এদের কাছ থেকে শিশু ও কিশোররা ন্যায়, অন্যায়, মূল্যবোধ, মনোভাব, ধর্মীয়
রীতিনীতি, সামাজিক নিয়মকানুন প্রভৃতি শেখে এবং চর্চাও করে থাকে।

বংশগত : ব্যক্তির বংশগতি তার আচরণের ওপর প্রভাব বিস্তার করে থাকে।
প্রত্যেক ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব তার স্বকীয় বংশগতি ও পরিবেশের যৌথ ক্রিয়ার
ফলাফল।

ব্যক্তিত্বের প্রকারভেদ : আমরা জানি, প্রত্যেক মানুষের ব্যক্তিত্ব
অন্যজনের ব্যক্তিত্ব থেকে আলাদা। সেজন্য ব্যক্তিত্বের বিভিন্ন তত্ত্ব তৈরি
হয়েছে। বিভিন্ন মানুষের ব্যক্তিগত বৈশিষ্ট্য বা স্বাতন্ত্র্যের মাঝে সাধারণ
মিল বা সূত্র খুঁজে বের করাই ব্যক্তিত্বের তত্ত্বের লক্ষ্য। ব্যক্তিত্বের
নানারূপ বৈশিষ্ট্যের পরিপ্রেক্ষিতে গবেষকরা ব্যক্তিত্বকে বিভিন্ন
প্রকারভেদে ভাগ করেছেন। এর মধ্যে শারীরিক গঠনতত্ত্ব এবং মনস্তাত্ত্বিক
প্রকারভেদতত্ত্ব উল্লেখযোগ্য।

শারীরিক গঠনতত্ত্ব : সর্বপ্রথম মানুষের ব্যক্তিত্ব নিয়ে আলোচনা করেন
গ্রিক বৈজ্ঞানিক হিপোক্রেটাস, যাকে চিকিৎসা শাস্ত্রের জনক বলা হয় এবং এটা
নবী ঈসা (আ:) এর জন্মের প্রায় সাড়ে তিনশত বছর আগের কথা। হিপোক্রিটাস মনে
করতেন মানুষের শরীর চার প্রকার তরল পদার্থের সমন্বয়ে গঠিত। যেমন-রক্ত, হলুদ
পিত্ত, কৃষ্ণ পিত্ত ও শ্লেষ্মা। একেকটি তরল পদার্থের প্রাধান্যের জন্য
মানুষের ব্যক্তিত্বে একেক রকম গুণাবলী সৃষ্টি হয় বলে তিনি বিশ্বাস করতেন,
যেমন- রক্তপ্রধান ব্যক্তিত্ব, পিত্তপ্রধান ব্যক্তিত্ব ও শ্লেষ্মাপ্রধান
ব্যক্তিত্ব। অবৈজ্ঞানিক বলে এসব শ্রেণী বিভাগ আজকাল পরিত্যক্ত হয়েছে।
কিন্তু তবুও আয়ুর্বেদশাস্ত্রে এটাকে গুরুত্ব দেয়া হয় বলে প্রাচীন আয়ুর্বেদে
উল্লেখ আছে। জার্মান মনোচিকিৎসক ক্রেসমার মনে করেন, মানুষের মেজাজের সাথে
শারীরিক গঠনের একটি সম্পর্ক আছে। তিনি শরীরের গঠনকে তিনটি শ্রেণীতে ভাগ
করেন।

  • খাটো, গোলগাল, মেদবহুল ও মোটাসোটা দেহকে বলেছেন পিকনিক। পিকনিক শ্রেণীর
    ব্যক্তিরা সাইক্লায়েড মেজাজের হয় অর্থাৎ তারা কখনও বিষন্নতা এবং কখনো অতি
    উল্লসিতভাবে থাকে।
  • লম্বা, হালকা ও পাতলা গড়নকে এসথেনিক বলেছেন। এসথেনিক শ্রেণীর লোকেরা
    স্কিজয়েড মেজাজের হয় অর্থাৎ তারা অন্তর্মুখী, নির্জনপ্রিয়,
    বন্ধুবান্ধববিহীন, সামাজিক সম্পর্কবিমুখ হয়ে থাকে।
  • শক্তিশালী, সুগঠিত মাংসপেশি ও অস্থিপ্রধান দেহকে তিনি অ্যাথলেটিক
    শ্রেণীভুক্ত করেন। এ্যাথলেটিক শ্রেণীর লোকেরা সাধারণত কর্মঠ, সাহসী,
    আগ্রাসী, আত্মপ্রতিষ্ঠার ভাব এবং ঝুঁকি নেয়ার প্রবণতা ইত্যাদি ধরনের হয়ে
    থাকে।

শেলডন নামে আরেকজন খ্যাতনামা গবেষক ১৯৪০ সালের দিকে শরীরের গড়নের সাথে
ব্যক্তিত্বের গুণাবলির সম্পর্ক আবিষ্কার করার চেষ্টা করেন। তিনি শারীরিক
গঠনকে তিন ভাগে ভাগ করেন-

  • গোলগাল, মেদবহুল ও নরম শরীরকে তিনি এনডোমরফি;
  • পেশি ও অস্থিপ্রধান দেহকে মেসোমরফি এবং
  • লম্বা, হালকা ও সরু অস্থিপ্রধান শরীরকে একটোমরফি বলেছেন,

অতঃপর শেলডন ব্যক্তিত্বের বিভিন্ন গুণাবলিকে তিন ভাগে ভাগ করেছেন

  • আরামপ্রিয়, ভোজনবিলাসী, পরনির্ভরশীল ও সামাজিক স্বীকৃতি প্রত্যাশাকে তিনি ভিসেরোটনীয়
  • কর্মঠ, সাহসী, আগ্রাসী, আত্মপ্রতিষ্ঠার ভাব ও ঝুঁকি নেয়ার প্রবণতাকে সোমোটোটনিয়া বলেন।

পরিশেষে শেলডন বহুসংখ্যক মানুষের ব্যক্তিত্বের ওপর পর্যবেক্ষণ করে
উল্লিখিত তিনটি গুণাবলির সাথে তিন ধরনের শারীরিক গঠনের সম্পর্ক খুঁজে পান।
যেমন- এনডোমরফির সাথে ভিসেরোনিয়া, মেসোমরফীর সাথে সোমাটোনিয়া এবং এনটোমরফির
সাথে সেরেব্রোটনিয়ার সম্পর্ক।

মনস্তাত্ত্বিক প্রকারভেদতত্ত্ব

ক. কার্ল ইয়ুংয়ের তত্ত্ব : সুইজারল্যান্ডের বিখ্যাত মনোবিজ্ঞানী কার্ল
ইয়ুং মানসিক গুণাবলির ভিত্তিতে ব্যক্তিত্বকে দু’ভাগে ভাগ করেছেন;

অন্তর্মুখী ব্যক্তিত্ব (Introvert) : এরা একা ও আলাদা থাকতে পছন্দ করে,
কিন্তু চিন্তাশীল ও সৃজনশীল প্রতিভার অধিকারী হয়। এ ধরনের ব্যক্তিরা তাদের
সুপ্ত প্রতিভাকে বিকশিত করতে বদ্ধপরিকর। তারা সাহিত্য, শিল্পকর্ম ও
জ্ঞান-বিজ্ঞানে যথেষ্ট অবদান রাখতে পারে।

বহির্মুখী ব্যক্তিত্ব (Extrovert): এ ধরনের লোকেরা বাইরের জগতের নানাবিধ
কাজকর্মের সাথে নিজেকে নিয়োজিত রাখে। তারা অন্যের কাজকর্ম করে দিতে পারলে
নিজেকে ধন্য মনে করে। এরা ব্যবসা-বাণিজ্য, খেলাধুলা, সমাজসেবা, রাজনীতি,
বিদেশ সফর প্রভৃতি কাজে উৎসাহ বোধ করে থাকে। আধুনিক মনোবিজ্ঞানীরা ইয়ুংয়ের
মতামতকে সমালোচনা করেছেন। তারা বলেন, মাত্র দু’টি শ্রেণীতে ব্যক্তিত্বকে
ভাগ করা ঠিক হবে না। কেননা অনেক লোক অন্তর্মুখী ও বহির্মুখী ব্যক্তিত্বের
মধ্যবর্তী পর্যায়ে পড়ে। গবেষণায় দেখা গেছে, বেশির ভাগ লোক মাঝামাঝি পর্যায়ে
পড়ে; তারা সম্পূর্ণ অন্তর্মুখী নয়, আবার বহির্মুখীও নয় এবং তাদের
ব্যক্তিত্বকে উভয়মুখী (Ambivert personality) বলা হয়।

মনোবিজ্ঞানী আইজেঙ্ক (Eysenk-1947) তার গবেষণায় ইয়ুংয়ের
ব্যক্তিত্বতত্ত্ব পরীক্ষা করে দেখেছেন। তিনি বিশ্লেষণ করে ব্যক্তিত্বের
তিনটি মৌলিক সংরক্ষণের (Trait) সন্ধান পান। সেগুলো হলো-

  • অন্তর্মুখিতা বহির্মুখিতা (Introvert Extrovert)
  • নিউরসিস প্রবণতা (Neuroticism) ও
  • সাইকসিস প্রবণতা (Psychoticism)

“মহাজগতের
ইতিহাসে তোমার মত আর কেউ ছিলনা, আর আগামী অসীম সময়ে তোমার মত আর কেউ হবে
না। তুমি বিরল৷ তুমি মৌলিক। তুমি অনুপম। তোমার সেই অনুপম সত্তাকে নিয়ে উৎসব
পালন কর।”

   – শ্রী শ্রী রবিশঙ্কর

তোমার মনোরম উপস্থিতিকে আবিষ্কার কর

খেয়াল করেছ একটি শিশু কোনো একটি ঘরে প্রবেশ করলে সেই ঘরে উপস্থিত সবাই
তার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে ওঠে!তার জন্যে শিশুটিকে কোনো উদ্যোগ নিতে হয় না। সব
কিছু সহজ ভাবেই ঘটে যায়। আমরা আমাদের বাক্য থেকে বেশি সংযোগ তৈরি করি
আমাদের উপস্থিতির মাধ্যমে। কিন্তু আমরা যত বেশি বড় হতে থাকি, যে কোনো
কারণেই হোক আমাদের এই সুপ্ত সত্তাকে লালন করতে ভুলে যাই। আমাদের জীবনের
অসংখ্য অতীত অভিজ্ঞতার ছাপ আমাদের উপস্থিতিকে দুর্বল করে তোলে আর মনকে বদ্ধ
করে রাখে।

কিভাবে আমরা সেই শিশুসুলভ সতেজতা, বন্ধুত্বপূর্ণ মনোভাব আর সহজ
স্বাভাবিক মানসিকতা ও আচরণ ফিরে পেতে পারি? এটা সম্ভব সহজ অথচ শক্তিশালী সুদর্শন ক্রিয়া
শ্বাসের প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। আমাদের অস্তিত্বের বিভিন্ন স্তরকে এই
প্রক্রিয়া পরিশুদ্ধ করতে সাহায্য করে, শরীর থেকে শুরু করে সূক্ষ্ম আত্মার
স্তরকে এই প্রক্রিয়া পরিশুদ্ধ করে মানসিক চাপ আর অতীতের অভিজ্ঞতার পীড়ন
মুক্ত করে আমাদের আকর্ষণ ক্ষমতা ও মধুর ব্যক্তিত্বকে ফিরিয়ে আনে, উপস্থিতির
গুরুত্বকে উদ্ধার করে।

কত তাড়াতাড়ি সাফল্য অর্জন করতে চান?

সবাই চায় জীবনে সফল হতে৷ কিন্তু খুব বড় অঙ্কের ব্যাঙ্ক ব্যালেন্স আর
বিলাসবহুল জীবন কাটানোকেই কি সাফল্য বলে? কারো হয়তো ব্যাঙ্কে অনেক টাকা
রয়েছে, কিন্তু সে প্রায়ই অসুস্থ থাকে, তাই তার যা রয়েছে তা ভোগ করতে
পারেনা। অনেক ক্ষেত্রেই মানুষ সম্পদশালী হবার তাড়নায় অর্দ্ধেক স্বাস্থ্য
খুইয়ে বসে আর সেই হারানো স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধারের জন্যে বাকী অর্দ্ধেক সম্পদ
ব্যয় করে ফেলে। একে কি সত্যিকার অর্থে সাফল্য বলে?

Iকল্পনা কর এমন একটি অবস্থার – যেখানে তোমার সমস্যাগুলো আর সমস্যা মনে
হবে না, তুমি সাগ্রহে হাসিমুখে সেগুলোর মুখোমুখি হবার শক্তি লাভ করবে, আর
মনে করবে সেই পরিস্থিতি তোমার ক্ষমতাকে প্রমাণ করার একটি সুযোগ মাত্র!
তোমার কি মনেহয়না এটাই সফল ব্যক্তিত্বের লক্ষণ? আর্ট অফ লিভিংয়ের শেখানো
কলাকৌশল তোমাকে এভাবে তৈরি করতে পারে।

যত তাড়াতাড়ি যোগ, প্রাণায়াম, ধ্যান অভ্যাসের মাধ্যমে তুমি নিজেকে
আবিষ্কার করতে পারবে, তত তাড়াতাড়ি তুমি সাফল্যকে জীবনে সব দিক দিয়ে দ্রুত
অর্জন করতে পারবে।

অন্তর থেকে এক অবিচলিত ব্যক্তিত্ব গড়ে তুলুন

আধ্যাত্মিক জ্ঞানের আর নিজে নিজে জানবার জন্য প্রয়োজনীয় বই সর্বত্র
সহজেই পাওয়া যায় – কিন্তু বই যা দিতে পারেনা তা হচ্ছে ব্যক্তির আধ্যাত্মিক
শক্তি, তার সহৃদয় উপস্থিতি, বন্ধুত্ব আর ভালোবাসাময় উষ্ণ পরিমন্ডল, যা একজন
আধ্যাত্মিক ব্যক্তি তার সঙ্গে বহন করেন। প্রাচীন কালের প্রাণায়াম আর
ধ্যানের অভ্যাস যা আর্ট অফ লিভিংয়ের কর্মশালায় শেখানো হয় তা আত্মাকে
উচ্চস্তরে উন্নীত করে, ষষ্ঠেন্দ্রিয়কে জাগ্রত করে, উৎসাহ, সৃষ্টিশীলতা ও
বুদ্ধিকে বাড়ায় ও ব্যক্তিত্বকে ঋজু ও আকর্ষণীয় করে তোলে৷ প্রতিদিন এইসব
আধ্যাত্মিক ক্রিয়ার অভ্যাস করলে আপনার মুখের হাসি আর কেউ কেড়ে নিতে
পারবেনা৷ জীবনে যা কিছু আপনি চান তা পাবার যোগ্যতা আপনার আছে, এই
আত্মবিশ্বাস আপনার মধ্যে জাগ্রত হবে৷ অন্যরা আপনাকে দেখে প্রভাবিত হবে,
উদ্বুদ্ধ হয়ে উঠবে৷