“৮০০ বছরের আরবী/তুর্কী বর্বরতা” সুলতানী আমল (৪০০ বছর)

“৮০০ বছরের আরবী/তুর্কী বর্বরতা”
সুলতানী আমল (৪০০ বছর)
ডাঃ মৃনাল কান্তি দেবনাথ

পৃথ্বীরাজ চৌহানের পরাজয়, সনাতনী হিন্দুদের , হিন্দু ভারত বর্ষের পায়ে পরাধীনতার শিকল পরানোর সুচনা। ছোট বড়ো প্রায় ১০০ রাজপুত রাজা পৃথ্বীরাজকে সৈন্য দিয়ে হিন্দুদের স্বাধীনতার সুর্য্য অম্লান করে রাখার শেষ চেষ্টা করেছিলো। পৃথ্বীরাজের ভাই গোবিন্দ রাজ যে বিক্রমের সংগে যুদ্ধ করে ছিলেন তার তুলনা ভারতীয় ইতিহাসে বিরল।

কনৌজের রাজা জয়চাঁদ, শুধু মাত্র পৃথীরাজের প্রতি অসুয়া বশত মহম্মদ ঘোরীকে পরামর্শ দিয়েছিলো, রাতের অন্ধকারে পৃথ্বীরাজের শিবির আক্রমন করতে। মহম্মদ ঘোরী তার নিজের কাজ হাসিল করতে জয়চাঁদ কে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলো যে, যুদ্ধ শেষে জয়চাঁদকে দিল্লী ও আজমীরের রাজত্ব দিয়ে নিজের রাজ্য ‘ঘূর রাজ্যে’ ফিরে যাবে। রাতের অন্ধকারে, ঘুমন্ত হিন্দু সৈন্যদের ওপরে চড়াও হয় ঘোরীর বর্বর সৈন্যরা। পৃথ্বীরাজের সৈন্যদের রক্তে হোলি খেলে, ঘোরী দিল্লী দখল করে। বন্ধী পৃথীরাজকে অন্ধ করে পায়ে হাটিয়ে কাবুলে নিয়ে যায়। এদিকে প্রকাশ্য বিচার সভাতেই ( পৃথ্বীরাজের দোষ তিনি কেনো নিজ সাম্রাজ্য রক্ষায় যুদ্ধ করেছিলেন) জয়চাঁদের মুন্ডচ্ছেদ করে। সুচতুর ছলনা করে ঘোরী একই সংগে আজমীর, দিল্লী এবং কনৌজের মতো বিশাল রাজ্য দখল করে নেয়। বর্বরদের ক্রুর রাজনীতি একেই বলে।

ঘোরী কাবুলে ফিরে যায়। পিছনে রেখে যায় তার দাস এবং ব্যাক্তিগত সহচর কুতুবুদ্দিন আইবেক কে। যাওয়ার আগে ফরমান দিয়ে যায়, পৃথ্বীরাজের দিল্লীর রাজধানী ‘পিথোরাগড়’ ( যেখানে আজ দাঁড়িয়ে আছে কুতুব মিনার) ধুলায় মিশিয়ে দিতে। বিজিত রাজ্যে কোথাও, দিল্লী, আজমীর, কনৌজে যারা ইসলাম গ্রহন না করবে তাদের মেরে ফেলতে এবং হিন্দু সৌধ, মন্দির, শিক্ষালয় সব ধংস করে দিতে, যাতে আর কোনোদিন হিন্দু সংষ্কৃতির প্রচার না হতে পারে।।

কুতুবুদ্দিন, সেই কাজ খুব পারদর্শীতার সংগেই করে। তার পরবর্তী  ‘দাস বংশীয়’ সুলতানেরা এই কাজ চালিয়ে যায় তাদের ‘জেহাদী’ আন্তরিকতায়।

ইতিহাসে ‘সুলতানী’ আমলের অমানুষিকতা, হিন্দুদের ওপরে অকথ্য অত্যচারের বর্ননা, বেশ কিছু ঐতিহাসিক লিখে রেখে গেছেন। কিন্তু সেই সব সত্য কাহিনী ইচ্ছাকৃত ভাবে চেপে গিয়ে সুলতানদের মহত্ব নিয়ে প্রচারের ধুম চলেছে আজো অবধি।

সুলতানী আমল প্রায় চারশো বছরের। কুতুবুদ্দিন থেকে শুরু করে, ইলতুতমিস, জালালউদ্দিন খলজী, আলাউদ্দিন খলজী, ফিরোজ শাহ, মহম্মদ বিন তুগলঘ ইত্যাদি সুলতানেরা তাদের রাজত্ব কালে হিন্দু ভারতকে ‘ইসলামী ভারতে পরিবর্তিত করার  নিরলস প্রচেষ্টা করে গেছে এবং ‘জেহাদী পতাকা’ উড়িয়ে গেছে স্বদর্পে। হিন্দু ধর্ম, হিন্দু দর্শন, হিন্দু সভ্যতা ক্রমে বিলীন হতে শুরু করে। সুলতানী অত্যাচারে হিন্দুরা নিজেকে হিন্দু বলতেই ভীত হয়ে পড়ে। ‘জিজিয়া কর’ এর চাপে গরীব হিন্দুরা অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে। মুসলিমদের এই কর দিতে হতো না। ইসলাম গ্রহন করলে বিভিন্ন রাজ চাকরী পাওয়া সম্ভব। এই সব কারনে হিন্দুরা, বিশেষ করে সমাজের অন্ত্যজ শ্রেনী দলে দলে ইসলাম গ্রহন করে।
হিন্দু ব্রাহ্মনেরা যারা সমাজকে চালিত করতেন, তাদের জ্ঞান বিদ্যা বুদ্ধি দিয়ে হিন্দু সমাজকে এক সুতোয় ধরে রেখেছিলেন, তারা রাজনৈতিক পরিবর্তনের ফলে দিশাহারা হয়ে পড়েন। ‘হিন্দু ক্ষত্রিয়’ ক্রমে বিলুপ্ত হয়ে গেলো। সনাতনী ভারতের রাজনৈতিক পট পরিবর্তিত হয়ে গেলো। ক্ষত্রিয় রা হিন্দুদের রক্ষা করতে অসমর্থ হয়ে পড়লো। সাধারন সুশীল, সংষ্কৃতি সম্পন্ন হিন্দুরা এক অসভ্য, বর্বর , অশিক্ষিত, অত্যাচারী শাসকের ‘জেহাদী আগ্রাসনের শিকার’ হয়ে কিং কর্তব্য বিমুঢ় হয়ে পড়লো।।

শাসকের ছত্র ছায়া সাধারন মানুষের মাথার ওপর থেকে, অতর্কিতে সম্পুর্ন ভীন ধর্মী, নিম্ন মানের, নিম্ন রুচির এবং বর্বরীয় সংষ্কৃতিহীন শাসকের হাতে চলে গেলে কি হয়?? শিক্ষিত ,সংষ্কৃতিবান মানুষ বুঝতে পারে না ‘এখন কি করবো’। এই অবস্থার পরিত্রান পেতে, সমাজ দুর্বলতম শ্রেনী, যাদের বিদ্যা বুদ্ধি কম, যাদের আর্থিক অবস্থা দুর্বল, তারা তাদের পরামর্শ দাতা খোজে। সেই পরামর্শ দাতা, ব্রাহ্মন শ্রেনী নিজেরাই অত্যাচারিত। মানুষ তখন আশ্রয় খোজে। সেই আশ্রয় দাতা ‘ক্ষত্রিয় রাজা’ রা রাজ্যহারা। সমাজের অর্থনৈতিক ভারসাম্য যারা বজায় রাখেন সেই বৈশ্যদের ব্যাবসা ক্রমে চলে যেতে থাকলো বিদেশীদের হাতে। সেই জন্য হিন্দু সমাজের অর্থনীতি ধ্বংসের মুখে এসে দাড়িয়েছে। হিন্দু সমাজে তখন চলছে, কালবৈশাখীর ঝড়, সুনামীর মতো প্লাবন, জেহাদী ভুমিকম্পে ‘মা ভগবতী কম্পমান’। নেই রাজা, নেই ব্রাহ্মনদের অভয় বানী, নেই ব্যাবসা বানিজ্য। সাধারন মানুষ তাই দিশাহার, কর্মহীন। তার ওপরে চাপ, হিন্দু থাকতে হলে ‘জিজিয়া কর দাও’ না দিলে ইসলাম কবুল করো, সব ঠিক হয়ে যাবে। হিন্দুরা যাবে কোথায়, কি করবে????

হিন্দু ভারতকে যারা ৮০০ বছর ধরে সাশন করেছে তাদের সবাই মধ্য এশিয়ার, উজবেকিস্তান, তুর্কমেনিস্থান, আফগানিস্থানের অসভ্য উপজাতির মানুষ। আজ থেকে প্রায় হাজার বছরের বেশী আগে এরা ঠিক কোন স্তরের বর্বর ছিলো তা হাল আমলের ‘জেহাদী তালিবান” দের শিক্ষা দীক্ষা, আচার আচরন, ক্রুরতা এবং পশ্চাদ্গামী মনোভাব দেখলেই বোঝা যায়। আরবীরা সিন্ধু প্রদেশ দখল করার সময়কার হিন্দু বীরত্ব দেখে বুঝে গিয়েছিলো যে, এখানে বেশী নাক গলানো ঠিক নয়।

তাই আরবী ‘যুদ্ধবাজ’ বেদুইনরা পামীরের উত্তর অঞ্চলকেই বেছে নেয় তাদের ‘জেহাদী কাজ কর্মের জন্য। লুট পাঠ করা, অন্যের ধন সম্পত্তি লুট করে নেওয়ায় বাধা নেই। হিন্দু নারী দের নির্বিচারে ভোগ করা এবং তাদের ধরে নিয়ে মধ্য প্রচ্যের নানা বাজারে সম্পুর্ন উলংগ করে খদ্দের দের মধ্যে বিক্রি করার মধ্যেও কোনো দোষ নেই। এই সুযোগ যেখানে আছে, সেই দলে ভিড়তে আফগান এবং তুর্কি উপজাতিদের মধ্যে বর্বরদের অভাব ছিলো না। রাজা দাহিরের পরাজয়ের পর ৩০০ বছরে আরবীরা বুঝেছিলো, এই উপজাতিদের দিয়েই ভারত একদিন দখল করতে হবে এবং ‘জেহাদী পতাকা’ তুলতে হবে। সেই জন্য আমরা দেখতে পাই, গজনীর মাহমুদ (আরবী দাস আলপ্তিগীনের নাতি এবং সুবুক্তিগীনের ছেলে ) থেকে শুরু করে ওই ঘোরী (উজবেকিস্তানের ঘুর প্রদেশ) সবাই এই হিন্দু ভারতকে চষে ফেলেছে, ভারতমাতাকে ধর্ষন করেছে।

সনাতনী ভারতে, যেখানে মানবতাবাদী মন্ত্র উচ্চৈঃস্বরে গীত করা হতো, সেখানে শুরু হলো মানবতা বিরোধী কর্কশ ‘জেহাদী গান’।।