ধর্মে এরকম মত থাকলে একজন কি করে অসাম্প্রদায়িক উদার হবে?

শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে টি-টুয়েন্টি সিরিজ জিতে নিয়ে ভারতীয় ক্রিকেট দল যখন ফটোশটে পোজ দিচ্ছে তখন গোটা দলের সদস্যদের মাথায় সান্তাক্লোজের লাল-সাদা টুপি। বড়দিনের আগের দিনের আমেজ ভর করেছিলো যেন। ভারত মোটেই খ্রিস্টান প্রধান দেশ নয়। সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দুদের দেশ। ভারতীয় দলেও ধর্মের পরিচয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু। হিন্দু ধর্মও ধরণে প্রকরণে সেমিটিক ধর্মের আশপাশ দিয়েও যায় না। তবু ভারতীয় দল বড়দিনের শুভেচ্ছা জানাচ্ছে ভক্তদের। এসব কারণে ভারতীয় দলকে তাদের সমর্থকরা বলেনি তারা বড়দিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে হিন্দুত্বের অবমাননা করেছে। কিংবা সান্তাক্লোজের টুপি পড়ে কুফরীর পরিচয় দিয়েছে। পক্ষান্তরে সাবেক ভারতীয় ক্রিকেটের তারকা মোহাম্মদ কাইফ বড়দিনের ক্রিসমাস ট্রি সাজিয়ে স্ত্রী সন্তানসহ ফেইসবুকে পোস্ট দেয়াতে বহু মুসলমান ক্ষুব্ধ হয়েছে। তারা সরাসরি একজন মুসলমানকে কাফেরদের উৎসব পালন করতে নিষেধ করেছে। যথারীতি ভারতীয় ক্রিকেট সদস্যদের পেইজে ঘুরঘুর করা বাংলাদেশী মুমিনরা বাংলাতে কাইফকে চোখ গরম করে বলেছে, ‘তুই না মুসলমান, মুসলমান হয়ে তুই বড়দিন পালন করিস কি করে?…’।

এসব কারণেই ওয়াসিম আক্রামের মত চলনে-বলেন পাশ্চত্যমুখীরা তাদের আন্তর্জাতিক মহলে বহু বন্ধুবান্ধব থাকার পরও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বড়দিনের শুভেচ্ছা জানাতে পারে না। এছাড়া মুসলিম খেলোয়ারদের মধ্যে অমুসলিমদের প্রতি ধর্মীয় অবস্থানগত বিশ্বাসের কারণেও এ ধরণের সম্প্রীতির মনোভাব আমরা কখনই দেখতে পাই না। ভারতীয় দলের মত আমরা কি কল্পনা করতে পারে বাংলাদেশ ক্রিকেট টিম বড়দিনের প্রাক্কালে সান্তাক্লোজের টুপি করে ম্যাচ জয়ের আনন্দ উপভোগ করছে? কখনই নয়। কারণ ঐ দুটি। তাদের ভক্তদের প্রচন্ড রকম ধর্মীয় বিদ্বেষের ভয় এবং খেলোয়ারদের ব্যক্তিগত ধর্ম বিশ্বাস। কারণ ইসলামের চার মাযহাবের ফিকাহবিদরা মত দিয়েছেন, ‘মুশরিকদের উৎসবের দিনে তোমরা তাদের উপাসনালয়ে প্রবেশ করো না। কেননা তাদের উপর আল্লাহ্র অসন্তুষ্টি নাযিল হতে থাকে। তিনি আরও বলেন, তোমরা আল্লাহ্র শত্রুদেরকে তাদের উৎসবের দিনগুলোতে এড়িয়ে চলবে। ইমাম বাইহাকী আব্দুল্লাহ্ বিন আমর (রাঃ) থেকে ‘জায়্যিদ-সনদ’ এ বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন, যে ব্যক্তি বিধর্মীদের দেশে গিয়ে তাদের নওরোজ ও মেলা পালন করেছে, তাদের সাথে সাদৃশ্য গ্রহণ করেছে এবং মৃত্যু পর্যন্ত এভাবে কাটিয়েছে কিয়ামতের দিন তাদের সাথে তার হাশর হবে’ (আহকামু আহলিয যিম্মাহ্,  ১/৭২৩-৭২৪)।

ধর্মে এরকম মত থাকলে একজন মুসলমান কি করে অসাম্প্রদায়িক উদার হবে? আশ্চর্য কি জানেন, ইসলাম একজন অমুসলিম অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যাওয়াকেও হারাম বলে ঘোষণা করেছে!ইবনে মুফলিহ আল-হাম্বলি (রহঃ) বলেছেন, ‘তাদের (কাফেরদের) রোগী দেখতে যাওয়া, তাদেরকে শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করা কিংবা সমবেদনা জানানো হারাম। তবে কিছু ইমাম মত দিয়েছে যদি অসুস্থ কাফেরদের দেখেতে গিয়ে সুযোগ মত ইসলাম গ্রহণের দাওয়াত দেয়া যায় তাহলে এটি বৈধ হতে পারে। আবু দাউদ উল্লেখ আছে, যদি ইসলামের দিকে দাওয়াত দেয়ার উদ্দেশ্যে কাফের অমুসলিমকে দেখতে যায় তবে সেটা জায়েজ হতে পারে (আল-ফুরু ওয়া তাসহীহুল ফুরু, ১০/৩৩৪)।

ইসলামের প্রতি ঝুঁকে যাওয়া মুসলমান এ কারণেই আস্ত একটা সাম্প্রদায়িক দানবে পরিণত হয়।