ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত এবং রিপোর্টার অভিজিৎ ভট্টাচার্যের উপরভ তাদের প্রতি ইসলাম বিদ্বেষ

বিষয়টা নিয়ে হাসবো না কাঁদবো বুঝে উঠতে পারছি না! মাদ্রাসার দাখিল পর্যায়ের নবম-দশম শ্রেণীর পাঠ্য বইয়ে ‘অশ্লীলতার’ অভিযোগ পাওয়াতে কর্তৃপক্ষ ২৩ লাখ বই উঠিয়ে নিয়েছে বিতরণ করার আগেই। এটিকে সংশ্লিষ্টরা বলছেন মাদ্রাসার বইতে এইরকম অশ্লীল জিনিস দিয়ে চরম ইসলাম অবমাননা ঘটানো হয়েছে। অপরদিকে দাখিলের নবম-দশম শ্রেণীতে রাখা হাদিসকে অশ্লীল বলাতে ইসলামপন্থিরা পাল্টা ইসলাম অবমাননার অভিযোগ তুলেছে! এবার মাদ্রাসার বইতে ‘নৈতিকতা’ শিক্ষা দিতে গিয়ে এই হাদিসটি ব্যবহার করা হয়েছিলো- ‘একদা এক ব্যক্তি হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) কে জিজ্ঞাসা করলেন, আমি কি আমার মায়ের কাছে প্রবেশ করতে অনুমতি প্রার্থনা করব? তিনি বললেন হ্যাঁ। তখন লোকটি বলল, আমি তো তার খাদেম। হজরত রসুলুল্লাহ বললেন, তুমি তার কাছে অনুমতি চাও। তুমি তোমার মাকে বিবস্ত্র অবস্থায় দেখতে পছন্দ করো?’

সন্দেহ নেই এই হাদিস নবম-দশক শ্রেণীর একজন শিক্ষার্থীর মনজগতকে বিকৃতভাবে তৈরি করবে। কিন্তু নিউজ করার কারণে ইসলাম প্রেমি তৌহদী জনতার প্রধান রোষ গিয়ে পড়েছে ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত এবং রিপোর্টার অভিজিৎ ভট্টাচার্যের উপরভ তাদের প্রতি ইসলাম বিদ্বেষ এবং রসূল্লাহর হাদিসকে অশ্লীল বলে চরম ইসলাম অবমাননা করেছে বলে অভিযোগ এনেছে।

শিক্ষাক্রম থেকে ধর্মীয় শিক্ষা উঠিয়ে না দিলে এইরকম অশ্লীল অনৈতিক বিষয়গুলো আটকানো যাবে না। তার উপর আছে ধর্মের সাম্প্রদায়িক ভেদ বিচার। আছে ইসলাম ধর্মের জিহাদ, কতল, খিলাফত, গণিমতের মালের মত সন্ত্রাস আর অশ্লীষ কদর্য বিষয়। যে কোন ধর্মীয় শিক্ষাই দেশের শিক্ষাক্রম থেকে উঠিয়ে না দিলে আমরা একজন শিক্ষার্থীকে অপবিজ্ঞান, নারী বৈষম্য, ঘৃণা ও সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসকে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছড়িয়ে দিবো। সভ্য জাতিগুলো জাতীয় শিক্ষাক্রমে ক্রমশ ধর্মীয় শিক্ষা বাতিল করে দিচ্ছে। আমার আমাদের এখানে সলিমুল্লাহ খানদের মত লোকজন মাদ্রাসা শিক্ষার পক্ষে দালালী করে বক্তব্য রাখেন! মাদ্রাসাতে রামমোহন তৈরি হয় নাকি মধ্যযুগীয় সব বদমাশ তৈরি হয় আসুন মাদ্রাসার উপরের ক্লাশে কি ধরণের হাদিস পড়ানো হয় তার থেকে ধারণা করি-

সহি বুখারিঃ ভলিউম-১, বুক নং-৪, হাদিস নং-২৩১, সুলাইমান বিন ইয়াছার হতে বর্ণিত, আমি আয়েশাকে বীর্যজড়িত কাপড় সম্পর্কে প্রশ্ন করলে তিনি উত্তর করেন, “আমি রাসুলুল্লাহর (দঃ) কাপড় হতে বীর্য ধৌত করে দিতাম এবং পানির দাগ ভালভাবে না শুকাতেই তিনি তা পড়ে নামাজ পড়তেন”।

সুনান আবু দাউদঃ বুক নং-১১, হাদিস নং-২১৬১, উম্মুল মোমেনিন আয়েশা হতে বর্ণিত, আমার ঋতুকালে রাসুলুল্লাহ (দঃ) এবং আমি একই কাপড়ের নীচে শুয়ে থাকতাম। যদি আমার (শরীর) থেকে কোন কিছু তার কাপড়ে লাগত, তিনি সেই জায়গা ধুয়ে ফেলতেন, এর বাইরে ধুতেন না। যদি নিজের স্খলন হতে কাপড়ে দাগ লাগত, তিনি সে জায়গা ধুয়ে ফেলতেন, এর বাইরে ধুতেন না; এবং তা পরিধান করেই নামাজ পড়তেন।

সহি মুসলিমঃ বুক নং-৮, হাদিস নং-৩৪৪৫, আবু বকর বিন আব্দুর রহমান বর্ণনা করেছেন যে রাসুলুল্লাহ (দঃ) উম্মে সালমাকে বিয়ে করলেন এবং তার ঘরে গেলেন। অতঃপর যখন তিনি সেখান থেকে বের হয়ে আসার উদ্যোগ নিচ্ছিলেন, তখন তিনি (উম্মে সালমা) তার কাপড় আকড়িয়ে ধরলেন। রাসুলুল্লাহ (দঃ) এতে বললেন – যদি তুমি ইচ্ছে করো, আমি তোমার সাথে আরও বেশী সময় থাকতে পারি, সেক্ষেত্রে আমাকে সময় গণনা করতে হবে (অর্থাৎ যে সময়টুকু আমি তোমার সাথে কাটাব, অন্য স্ত্রীদের সাথেও আমাকে ঠিক সেই পরিমাণ সময় কাটাতে হবে)। কুমারি বউয়ের জন্যে এক সপ্তাহ, পূর্ব-বিবাহিতার জন্যে তিন দিন।

মুয়াত্তা : বুক নং-২৯, হাদিস নং-২৯.১৭.৫১, …আব্দুল্লাহ ইবনে উমর বলেছেন, “যদি কোন ব্যক্তি তদীয় দাসকে বিয়ে করার অনুমতি দেয়, তাহলে স্ত্রীকে তালাক দেয়ার ক্ষমতা উক্ত দাসের হাতে, এবং তার এই তালাক দেয়ার ক্ষমতার উপর কারও কোন হাত নেই। মনিব ইচ্ছে করলে তার পুরুষ দাসের স্লেভ-গার্ল কিংবা মেয়ে-দাসীর স্লেভ গার্লকে (নিজের অধিকারে) নিয়ে নিতে পারে, এরূপ করতে চাইলে কেউ তাকে বিরত রাখতে পারে না”।

মুয়াত্তাঃ বুক নং-৩০, হাদিস নং-৩০.১.৮, …উম্মুল মোমেনীন হাফসা আসিম বিন আব্দুল্লাহ বিন সা’দকে তার (হাফসার) বোন ফাতিমা বিন্ত উমর ইবনুল খাত্তাবের নিকট পাঠিয়েছিলেন যেন তিনি তাকে দশবার বুকের দুধ খাওয়ান; তা’হলে সে (আসিম) তার কাছে যেতে পাারবে এবং দেখা করতে পারবে। তিনি (ফাতিমা) তা করেছিলেন, সুতরাং সে (আসিম) তার (হাফসার) সাথে দেখা করতে যেতো।

মুয়াত্তাঃ বুক নং-৩০, হাদিস নং-৩০.২.১৩, আব্দুল্লাহ ইবনে দিনার বলেন, “লোকদেরকে যেখানে বিচার করা হয় সেখানে একদিন আমি আব্দুল্লাহ ইবনে উমরের সাথে বসা ছিলাম। তখন একজন লোক তার কাছে আসল এবং বয়স্ক লোকদেরকে বুকের দুধ খাওয়ানোর ব্যাপারে জিজ্ঞেস করল। উত্তরে আব্দুল্লাহ ইবনে উমর বলল-‘একবার এক লোক উমর ইবনে খাত্তাবের কাছে এসে বলল-‘আমার একটি ক্রীতদাসী আছে, তার সাথে আমি নিয়মিত যৌনসঙ্গম করি। আমার স্ত্রী তার কাছে গিয়ে তাকে বুকের দুধ খাইয়েছে। এরপর যখন আমি মেয়েটির কাছে গেলাম, আমার স্ত্রী আমাকে বের হয়ে যেতে বলল, কারণ সে নাকি তাকে বুকের দুধ খাইয়েছে’। উমর লোকটিকে স্ত্রীকে প্রহার করার আদেশ দিলেন এবং (আগের মতোই) সে তার দাসীমেয়েটির কাছে যেতে পারবে বললেন। কারণ বুকের দুধ খাওয়ানোর মাধ্যমে যে আত্মীয়তা প্রতিষ্ঠিত হয় তা কেবল ছোটদের বেলায়।”

মুয়াত্তাঃ বুক নং-৩০, হাদিস নং-৩০.২.১৪, আবু মুসা আল আশারিকে জনৈক লোক জিজ্ঞেস করল “আমি আমার স্ত্রীর স্তন্য হতে কিছু দুধ খেয়ে ফেলেছি, তা আমার পাকস্থলীতে চলে গেছে”। আবু মুসা বললেন, “আমি তোমাকে শুধু এটুকুই বলতে পারি যে সে তোমার জন্যে হারাম হয়ে গেছে”। (তখন) আব্দুল্লাহ ইবনে মাসুদ বললেন, “তুমি কী বলছ তা ভেবে দেখ”। আবু মুসা বললেন, “তা’হলে তোমার মত কী”? আব্দুল্লাহ ইবনে মাসুদ বললেন, “দুধ খাওয়ার কারণে আত্মীয়তা প্রতিষ্ঠিত হয় কেবল প্রথম দু’বছরে”। (অর্থাৎ দুই বছর বা এর কম বয়েসী শিশু যখন মা ছাড়া অন্য নারীর দুধ পান করে, তখনই কেবল শিশুটি এবং দুগ্ধদানকারী স্ত্রীলোকটির মধ্যে আত্মীয়তা প্রতিষ্ঠিত হয়)। আবু মুসা বললেন, “এই জ্ঞানী লোকটি যতক্ষণ আমাদের মাঝে থাকবেন, তোমরা আমাকে কোন কিছুর ব্যাপারে জিজ্ঞেস করো না”।