‘রমজানুল করিম’ কথাটার অর্থ হচ্ছে খুশির রমজান! আদৌ রমজান মাস খুশির নয় বরং আতংকের। এই মাসে কেউ প্রকাশ্যে খেলে তাকে ইসলামিক বিশ্বে শাস্তি পেতে হয়। রমজানকে সন্মান করতে বলা হয়েছে। এই সন্মানটা বেশ অদ্ভূত। মনে করেন আপনি অমুসলমান আর রমজান মাসে রাস্তায় দাড়িয়ে এই গরমে একটা কোল্ড ডিংকস খাচ্ছেন, ইসলাম মতে এটি হচ্ছে রমজানকে অসন্মান করা। হতে পারেন আপনি অমুসলিম কাফের, আপনার জন্য রোজা রাখা ফরজ নয় তবু আপনি এই মাসে প্রকাশ্যে খেয়ে রমজানকে অসন্মান করতে পারবেন না। পৃথিবীর বিভিন্ন ইসলামিক শাসিত দেশে তাই রমজানে প্রকাশ্যে অমুসলিমদের খাবার খাওয়ার অনুমতি নেই। তাদের খেতে হবে গোপনে পর্দার আড়ালে। বাংলাদেশ পাকিস্তানে এই মাসে মুসলমান তো বটেই, অমুসলিমরা প্রকাশ্যে খেতে সাহস করে না ভয়ে। মুসলমানরা কাউকে খেতে দেখলে ক্ষিপ্ত হবে ভেবে তারা সতর্ক থাকে। কিন্তু একই মাসে ভারত, শ্রীলংকা, নেপাল, ভূটান, জাপান, হংকং, চীন, আমেরিকা… ইউরোপ সারা পৃথিবীতে যেখানে মুসলমানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ নয় সেখানে রমজান মাসে দিনের বেলা স্বাভাবিক খাওয়া দাওয়া চলছে। তর্কের খাতিরে যদি ধরি এই দেশগুলিতে যদি মুসলমানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ হতো তাহলে নিশ্চিত করেই দিনের বেলা স্বাভাবিক প্রকাশ্য খাওয়া দাওয়া বন্ধ হয়ে যেতো। মুসলমানদের অনুভূতিতে আঘাত লাগবে ভেবে সবাই সতর্ক থাকত। তাহলে ‘রমজানুল করিম’ কেমন করে খুশির রমজান হলো?
মুসলমানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়ে গেলেই অন্যের স্বাভাবিক অধিকারকে কেড়ে নিবে! তার ধর্মীয় বিধানকে অমুসলিমদেরও সন্মান করতে হবে। যদিও সে অন্যের ধর্ম বিশ্বাস নিয়ে সন্দেহ, কটুক্তি, ঘৃণা সবই প্রকাশ করতে পারবে…। প্রতি বছর মন্দিরে, মঠে কিংবা গির্জাতে ইফতার আয়োজনের খবর চোখে পড়ে। এবছর চোখে পড়ল ভারতীয় একজন খ্রিস্টান ব্যবসায়ী তার কারখানার শ্রমিকদের জন্য মসজিদ করে দিয়েছিলেন সেখানে এবার ৮০০ মুসলমানকে তিনি ইফতারি খাওয়াচ্ছেন…। ব্যাপারটা বেশ মজার, ইফতার খাবে খ্রিস্টানের পয়সায় কিন্তু দোয়া করবে খালি ‘মুসলিম উম্মাহর’! এই যে সামনে আসবে জামাতুল বিদা’ সেখানেও মসজিদে মসজিদে কেবলমাত্র ‘মুসলিম উম্মাহ’র সুখ শাস্তি ও সমৃদ্ধির জন্য দোয়া করা হবে’। এই সংক্রীর্ণতাকে গর্বভরে প্রকাশ করতে বিন্দুমাত্র লজ্জ্বিত হয় না মুসলমানরা। কারণ ইসলামে অমুসলিম বা কাফেরদের জন্য কল্যাণ কামনা করা কঠরভাবে নিষেধ করা হয়েছে। কাজেই ইসকন মন্দিরে যতই ইফতার সেহরি খাওয়াক, মঠে যতই ইফতার বিরতরণ করুক- মুসলমানদের বদদোয়া তাদের জন্য নির্ধারিত থাকবেই…।
দুবাই ভিত্তিক একটা সংবাদপত্র জানিয়েছে ‘রজমানুল করিম’ অমুসলিমদের জন্যও উৎসব হতে পারে যেমন ইফতার সেহরিতে যোগদান করে। তাদের জন্য রোজা রাখা নিয়ম না হলেও তারা দিনের বেলা ঘরের ভেতর পর্দা টাঙ্গিয়ে লোকচক্ষুর অন্তরালে খাওয়া দাওয়া সারবে। একই সঙ্গে তারা মুসলমানদের ইফতার সেহরিতে যোগ দিতে পারে রমজানের ভাবগাম্ভির্যকে অনুসরণ করে। এরকম নিজ দেশে পরবাসী হয়ে থেকে নিশ্চয় অমুসলিমরা ইফতার পার্টিতে নিমন্ত্রণ পেয়ে খুশিতে বগল বাজাবে! ইস, ইসলাম কত উদার দেখো, তারা ইফতারে অমুসলিমদেরও ডাকে! আমাকে একটা জিনিস বুঝান, রমজান মাসে কেন দিনের বেলা খাওয়া যাবে না? এটি তো কেবলমাত্র মুসলমানদের একটি ধর্মীয় প্রথা। যখন কোন মুসলমান এটি পালন করবে তখন কেবলমাত্র এই নিষেধাজ্ঞা তার জন্য। দিনের বেলা খাওয়া যাবে না এটি রোজার একটি শর্ত। এটি কেমন করে একটি দেশের আইন হতে পারে? কেমন করে এটি বিশেষ একটি সম্প্রদায়ের ভয়ে প্রকাশ্য খাওয়া থেকে বিরত থাকতে মানুষকে বাধ্য করতে পারে? ইসলাম যে একটি রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়াশীল ধর্ম এর মধ্য দিয়ে আরো একবার সেটি প্রকাশিত হয়। অন্যকে বাধ্য করা, যিনি আপনার বিধানের সঙ্গে একমত নয় তাকেও মানতে বাধ্য করা থেকে ইসলামের প্রতিক্রিয়াশীল মনোভাব প্রকাশিত হয়। পৃথিবীতে আর দ্বিতীয় একটি ধর্ম পাওয়া যাবে না যেখানে তাদের প্রথা বিশ্বাসকে জোর করে পালন করতে বাধ্য করা হয়। কেউ কি একাদশীর দিনে মাছ মাংসের দোকান বন্ধ করে বা পর্দার আড়ালে বেচাবিক্রি করতে বাধ্য করে? মজাটা হচ্ছে, তর্কের খাতিরে মনে করুন ধরে নেই ভারতের হিন্দুত্ববাদীরা এরকম হাস্যকর কোন দাবী জানায় ভবিষ্যতে তখন যারা এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হবেন তারা কিন্তু রমজান নিয়ে মুসলমানদের যুগ যুগ ধরে চর্চা করা প্রতিক্রিয়াশীলতাকে অত্যন্ত স্বাভাবিকভাবেই নেন। কেউ প্রশ্ন করে না, বাংলাদেশে কেন রোজার দিনে রাস্তায দাঁড়িয়ে চা খাওয়া যাবে না, কেন ও কিসের জন্য? ভারতের কিছু স্থানে সত্যিই মুসলমানদের গরুর মাংস খাওয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। বাংলাদেশে তো রমজান মাসে প্রকাশ্যে মুসলমান তো বটেই, কোন অমুসলিম প্রকাশ্যে দিনের বেলা একটা সিগারটে খেতে পারবে না! পাড়া মহল্লার সুপরিচিত কোন হিন্দুকেও চোরের মত নাস্তার হোটেলে ঢুকতে হয়। অফিসে ক্যান্টিনে রোজা না রেখেও মুসলমান স্টাফ কিছু খেতে পারবে না। অমুসলিম কর্মচারী খাবে স্টোর রুমের পর্দার আড়ালে সবার চক্ষুর বাইরে থেকে…। আরব বিশ্বে কেউ দিনের বেলা খেতে পারবে না। এসব কত স্বাভাবিক ব্যাপার! হিন্দুদের কাছে গরু পবিত্র প্রাণী তাই এটাকে তারা কাউকে খেতে দিবে না। এর জন্য প্রয়োজনে জোর খাটাবে। ঠিক রমজানে দিনের বেলা পানাহার করা মুসলমানদের জন্য নিষেধ তাই তারা কাউকেই দিনের বেলা জোর করে খেতে দিবে না! দুটো জিনিস একই রকম- তবু একটি উগ্রদের প্রতীক অন্যটি শাস্তির ধর্মের প্রতীক!