ভারতের পরাধীনতা শুরু হয়েছে সেই দিন থেকে যেদিন মোহাম্মদ বিন কাসিম সিন্ধু দখল করে, সেই ৭১২ সালে।

“ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের শুরু কবে থেকে?”
ডাঃ মৃনাল কান্তি দেবনাথ
আমাদের ইতিহাস পাঠ্যে আমাদের শেখানো হয়, ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের শুরু স্বদেশী আন্দোলন এবং তার পরবর্তীতে এম কে গান্ধীর নেত্বৃত্বে কংগ্রেস নামক একটি দলের ‘আলোচনা চক্র’ ব্রিটিশ এর সঙ্গে।
একটি দেশ পরাধীন হয়, যখন বহিরাগত শক্তি সেই দেশ টাকে যুদ্ধ বিগ্রহ করে পরাভুত করে দখল করে নেয় এবং তাদের নিজস্ব শাসন ব্যাবস্থা প্রচলন করে এবং সেই দেশের আদি জন গোষ্টিকে তাদের মতো করে চালায়, তাদের নিজস্ব নিয়ম কানুন তৈরী করে।
তাহলে প্রশ্ন আসে ভারতবর্ষের আদি জন গোষ্টি বা আদি বাসিন্দা কারা এবং কবে থেকে তারা বিদেশী শাসনে বাস করতে শুরু করলো।
ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায়, পারস্য সম্রাট সাইরাস, গ্রীক রাজা আলেকজান্ডার, মধ্য এশিয়া থেকে শক, হুন ( এটিলা, মিহিরগুল), কুষান জাতি, মঙ্গোলিয়ান চেঙ্গীজ খান, আরবী মুসলমান (মহম্মদ বিন কাসিম) তুর্কী দাস  গজনীর সুলতান সুবুক্তিগীন (তুর্কি মুসলিম দাস) এবং তার ছেলে রক্ত লোলুপ ধর্মীয় উন্মাদ মাহমুদ, আর এক লুটেরা রক্ত পিপাসু  তৈমুর, ঘুর রাজ্যের ঘোরী, ফারগানার বাবুর এরাই সৈন্য বাহিনী নিয়ে নানা দেশে সাধারন মানুষের জীবন উৎপীড়িত করেছে, লুটপাঠ করেছে, দেশ দখল করেছে।
এর মধ্যে সম্রাট সাইরাস , চেঙ্গীজ খান, এটিলা দি হুন, মিহিরগুল, ভারত আক্রমন করেনি। তৈমুর এসেছিলো ভারতীয় সম্পদ লুট করতে এবং হিন্দু কাফেরদের হত্যা করতে এবং দিল্লীতে সেই কাজ করে চলে যায় নিজ দেশ সমরখন্দে। সুবুক্তিগীন তার জীবদ্দশায় পাঞ্জাব এবং কাস্মীরের শাহী রাজ জয়াপালাকে হারাতে পারেনি যা করেছিলো তার ছেলে বর্বর মাহমুদ। কিন্তু সেও স্থায়ী ভাবে থাকে নি।
মধ্য এশিয়া থেকে আগত এবং দখলকারী কুষানেরা খাইবার গিরিপথ এর উত্তরে এবং দক্ষিনে প্রাচীন ভারতের বিশাল অংশ দখল করে কুষান সাম্রাজ্য স্থাপন করে। এদের মুল উৎপত্তি বর্তমান উজবেকিস্থান এবং চীনের দক্ষিন অঞ্চলে।  কুষান সাম্রাজ্য ই প্রথম বহিরাগত বিদেশী সাম্রাজ্য ভারতের পুন্য ভুমিতে।
কালক্রমে কুষানেরা ভারতের ভুমি পুত্র সনাতনী বৈদিক সংষ্কৃতির ধারক এবং বাহক দের জীবনশৈলী গ্রহন কোরে ভারতীয় জন জীবনে ওতোপ্রোত ভাবে মিশে যায়। তাদের আলাদা ভাবে কোনো সংষ্কৃতি গড়ে তোলেনি। তাদের বংশধরদের আজ আর আলাদা ভাবে চেনা যাবে না।
শক জাতি বার বার এসেছে, কিছু কিছু রয়ে গেছে, কিন্তু  তারাও কালক্রমে ভারতীয় হয়ে গেছে। আলেকজান্ডারের সৈন্য বাহিনীর সামান্য এক টুকরো ভারতে রয়ে গেছে, তাদের আলাদা করে চিহ্নিত করাও হয়েছে এবং একটি গ্রামে তারা আজো আছে। পাঠানেরা মুলত মুসলিম এবং মোগলেরা তো সবই মুসলিম।
“শক হুন দল পাঠান মোঘল এক দেহে হলো লীন’—বিশ্ব কবির এই উক্তি পার্শ্বিক ভাবে সত্য কিছুটা অসত্য।
মোঘলেরা কোনোদিন ভারতীয় জীবন শৈলী গ্রহন করেনি। বাবুর নামা পড়লে বোঝা যায়, বাবুর তার নিজের দেশ ছেড়ে বিদেশে পড়ে থাকার জন্য কি ভাবে দুঃখ প্রকাশ করেছিলো। হুমায়ুন তার জীবনের বেশীর ভাগ সময় পারস্যে উদ্বাস্তুর জীবন যাপন করে গেছে। আকবরের হিন্দু প্রীতি লোক দেখানো, হিন্দু দেশে বিদেশী সাম্রাজ্য স্থাপনের জন্য রাজনৈতিক কৌশল মাত্র। জাহাঙ্গীর হিন্দু মায়ের সন্তান হয়েও প্রচন্ড হিন্দু বিদ্বেষী ছিলো। আওরংজেব তো কাফেরদের ধংস করার জন্য জীবন পন করেছিলো।
অনেক বুদ্ধিজীবিরা মানেন না যে, ভারতের পরাধীনতা শুরু হয়েছে সেই দিন থেকে যেদিন মোহাম্মদ বিন কাসিম সিন্ধু দখল করে, সেই ৭১২ সালে। ৭১২ সাল থেকে শুরু করে ১৭৫৭ সাল অবধি এই যে এক হাজার বছর, এর সত্য ইতিহাস হলো, “ বৈদিক ভারতকে আরবীয় ভারত বানানোর সার্বিক প্রচেষ্টা”। সেই প্রচেষ্টা, যার নাম “জেহাদ”। এটি একটি আরবীয় মরুভুমির বালির মতো রুক্ম, শুষ্ক, কঠিন , বর্বরীয়। এর মধ্যে “মানবিতা”র কোনো লেশ মাত্র নেই। এর উৎপত্তি ‘আরব’ নামক এক মরু দেশে। আরবী বেদুইন রা ছিলো অশিক্ষিত, অপরিশীলিত, অসংষ্কৃতিক, অমানবিক। লুট পাট, মারামারি , অন্যের সম্পত্তি দখল এদের মুল উপজিবীকা। দিকে দিকে ‘আরবী ঘোড়ায় চড়ে, হাতের তরোয়াল মানুষের রক্তে রাঙ্গিয়ে’ দেশ দখল করে সেই দেশের লোকজনকে ভয় দেখিয়ে নিজের দলে আনাই এক মাত্র লক্ষ্য। একে বলে “ইসলামিক ঊম্মা”। একেই বলে “ঔপনিবেশ” স্থাপন করা। ভারত সেই ৭১২ সাল থেকে ১৭৫৭ সাল অবধি এক “আরবীয় উপনিবেশ”। সত্য ইতিহাস এর সাক্ষী।
জিন্না বলেছিলো, যেদিন ভারতে প্রথম একটি হিন্দু হয়েছে, সেই দিন ই ‘পাকিস্তান’ সৃষ্টি শুরু হয়েছে। দুদিন আগে আমেরিকার প্রসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন, “ ভারত এবং পাকিস্তানের সমস্যা মুলত ধর্মীয়”। আজো চলছে হাজার বছরের সেই ‘ধর্মীয় প্রতিযোগীতা”- এক দিকে ‘আরবী ধর্মের প্রতিষ্ঠা, অন্যদিকে প্রাচীন বৈদিক ধর্মের রক্ষা। এর মধ্যে অন্য কিছু নেই।
ইংরেজ রা বেনিয়ার জাত। তারা উপনিবেশ স্থাপন করেছিলো পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে। তাদের মুল উদ্দেশ্য ‘ধর্মীয়’ ছিলো না। ইসলামিক লুট পাঠ শেষে, সমরখন্দ, গজনী, বাগদাদ, তুরষ্ক ধনী হবার পর ঝড়তি পড়তি যা ধন সম্পত্তি পড়ে ছিলো সেই সম্পদ ইংরেজ রা অবশ্যই লুটেছে। খ্রীষ্টান ধর্ম যাজক এসেছে কিন্তু গলায় তরোয়াল ঠেকিয়ে ধর্ম পরিবর্তন করেনি যা করেছে আরবী, তুর্কিরা।
ভারতের, ভারতীয় হিন্দুদের স্বাধীনতা রক্ষার সংগ্রাম তাই শুরু হয়নি কোনো কংগ্রেস, গান্ধী নেহেরুর দ্বারা। সেটা শুরু হয়েছে সেই ৭১২ সাল থেকে, চলছে আজো।
রাজা দাহির,  রাজা জয়াপালা, বীর পৃথ্বীরাজের আত্মবলিদান, রানী রানী বাই, রানী পদ্মিনী, অসংখ্য হিন্দু নারীর অগ্নিকুন্ডে এবং জহর ব্রতে প্রান বিসর্জন (রানী বাই ছিলেন রাজা দাহিরের স্ত্রী এবং ৬০০০ হিন্দু নারীকে নিয়ে তিনি অগ্নিকুন্ডে জীবন বিসর্জন দেন শুধু মাত্র নারীর সম্মান রক্ষার্থে) রানাপ্রতাপ, রাজা শিবাজী ( গান্ধীর ভাষায় পথভ্রষ্ট ডাকাত) এবং আরো অনেক নাম না জানা, ভারতীয় ইতিহাসে অবহেলিত, উপেক্ষিত হিন্দু নারী এবং রাজা আছেন যারা, এই আরবী/তুর্কিদের নৃশংষতার বিরুদ্ধে সংগ্রাম ( দেখে আসুন বিজয় নগর সাম্রাজ্যের ধ্বংস স্তুপ হাম্পি) করেছিলেন, সেটাই আসল “হিন্দু রাজা দের স্বাধীনতা রক্ষার সংগ্রাম”।
ব্রিটিশের শাসন থেকে “অখন্ড ভারত” এর মুক্তির স্বপ্ন যারা দেখেছিলেন, উধম সিং, ভকত সিং থেকে শুরু করে ক্ষুদিরাম থেকে শুরু করে মাতঙ্গিনী হাজরা কে আজ আমরা ভুলতে বসেছি। নেতাজী বিলীন হয়ে গেলেন ইতিহাস থেকে, শ্যামাপ্রসাদ নিজের জীবন আহুতি দিলেন।
ভারতকে খন্ডিত করলো কে বা কারা????? ভারতের এক তৃতীয়াংশ এই আরবী/তুর্কীদের দিয়ে দিলো কারা??? জিন্না ( ঠাকুরদা ছিলেন হিন্দু), নেহেরু আর এম কে গান্ধী। মাউন্ট ব্যাটন নিমিত্ত মাত্র।।
হাজার বছরের অসংখ্য হিন্দু রাজা রানী, অসংখ্য নাম না জানা সৈন্য, সাধারন মানুষ ???? এরা কোথায় গেলো? এদের রক্তের কি মুল্য এই তিন জন দিলো?