শুনুন,দলিত-মুমিনৈক্যের ধ্বজাধারীরা,বাবাসাহেব আম্বেদকরের কিছু কথা৷যেগুলো সচরাচর বলা হয় না…….

শুনুন,দলিত-মুমিনৈক্যের ধ্বজাধারীরা,বাবাসাহেব আম্বেদকরের কিছু কথা৷যেগুলো সচরাচর বলা হয় না…….
“ইনশাল্লাহ, আমরা পাকিস্তান পাব।” –মিঃ জিন্নাহ।
” It is my conviction that the State of Pakistan will be one of the most powerful, resourceful and magnificent countries in the world.”– Mr. Jogendranath  Mandal 
“আমি প্রতিজ্ঞা করে বলছি, ভারত রক্ষার ব্যাপারে আমি আমার জীবন উৎসর্গ করবো।” —ডঃ আম্বেদকর।
অতীত ইতিহাসের আলোকে বর্তমানকে বিচার বিশ্লেষণ করে ভবিষ্যৎ জীবন ও কর্মপন্থা যারা নির্ধারণ না করেন এবং লােক দেখানাে দরদ দেখিয়ে রাজনৈতিক সংকট কালে স্বার্থ বুদ্ধিতে গোঁজামিলের পথ ধরেন, তাঁদের রাজনীতি সাধারণ মানুষের জীবন বিপন্নই করে তােলে।নেতারা তাদের অর্থনৈতিক,সামাজিক ক্ষমতা বলে বেঁচে যান৷প্রোপাগান্ডা মেশিনারীকে কাজে লাগিয়ে অতীতের কালিমাতে জেল্লাদার এশিয়ান পেন্ট ঘষে ‘মহাপ্রাণ’ ও হয়ে যান৷শুধু বরিশাল- খুলনা- যশোর- ফরিদপুর ডেল্টার তথাকথিত নিম্নবর্ণ সমাজ অসহায়ের মত দেখতে থাকে.কিভাবে বুকের রক্ত জল করে নির্মিত ভিটেমাটিতে প্রিয়জনের বুকের পাঁজর জ্বলছে৷
 যােগেনবাবুর সম্ভবত লীগের চরিত্র, রাজনীতি ও ভ্রাতৃত্ব, পাক কিতাবের শিক্ষা ও অনুশাসন এবং কাফেরদের প্রতি তাদের দৃষ্টিভঙ্গি ও আচরণ সম্পর্কে কিছুমাত্র ধারণা ছিল না।যেহেতু আরব সাম্রাজ্যবাদীরা ই$লামিক ব্রাদারহুড ব্যাতীত অপর কোন জাতি,ভাষিক পরিচয়ে বিশ্বাস রাখেন না,তাই হিন্দু বৌদ্ধসহ  পৃথিবীর কোন দেশে অন্য সম্প্রদায়ের সংখ্যালঘুরা তাদের ধর্মীয় বিধি-বিধান মেনে এদের সঙ্গে শান্তিতে সহাবস্থান করতে পারে না। স্বাধীনতার উষালগ্নে বঙ্গীয় রাজনীতি দেখিয়ে দিয়েছিলো যে উপমহাদেশে অস্তিত্ব,মুক্তচিন্তা,স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের লড়াইয়ের অক্ষটি সম্পূর্নভাবে আরব বনাম মানুষের৷বাবাসাহেব আম্বেদকর এই চরম সত্য পূর্বেই বুঝেছিলেন৷ যোগেন্দ্রনাথ মন্ডল বরিশালে লিগের পেলেতুল্য পদাঘাত খাওয়ার পর বুঝলেন৷ভারতীয় দর্শনে বর্ণিত বিশ্বজনীন চিন্তার ধারক বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন “পৃথিবীতে দু’টি ধর্মসম্প্রদায় আচ্ছে অন্য সমস্ত ধর্মমতের সঙ্গে যাদের বিরুদ্ধতা। অগ্রগণ্য, হচ্ছে খ্রিস্টান আর মু$লমান ধর্ম।তারা নিজের ধর্ম পালন করেই সন্তুষ্ট নয়, অন্য ধর্মকে সংহার করতে উদ্যত। এ জন্য তাদের ধর্ম গ্রহণ করা ছাড়া তাদের সঙ্গে মেলার কোন উপায় নেই।”(কালান্তর, পৃ. ৩১৩)
বলা বাহুল্য,এসব কথা যােগেনবাবু একেবারেই মাথায় রাখেননি। উনি যদি আম্বেদকরের Pakistan or The Partition of India’ গ্রন্থটি আন্তরিক ভাবে পড়ে দেখতেন,তবে তিনি বাবাসাহেবের আদর্শকে বারে বারে অস্বীকার করতে পারতেন না৷৫৭% আরব সাম্রাজ্যবাদীর বাঙ্গালায় বাঙ্গালী হি$ন্দুদের নিরাপত্তা যে বিপন্ন,সে কথা খোদ বাবাসাহেব আম্বেদকর বলে গেছেন ১৯৪৫ সালে৷খাদ্য-খাদকের মধ্যে মিত্রতা হয় না, বোঝেন নি ‘মহাপ্রাণ’ যোগেন্দ্রনাথ মন্ডল৷
ডঃ আম্বেদকর উপরোক্ত গ্রন্থে অখন্ড ভারতের পক্ষে যুক্তি এবং পাকিস্তান দাবীর বিরুদ্ধে প্রশ্ন রেখেছিলেন,
 ক) ভারত একটি ভৌগােলিক একক। তার একক চরিত্র প্রকৃতির মতই প্রাচীন। এর (ভারতের) মু$লিম অধ্যুষিত বেশ কিছু অংশ সহজেই বাকি অংশ থেকে আলাদা হতে পারে – এই যুক্তিতে কি পাকিস্তান হতেই হবে? [Dr. Ambedkar, Vol.8. p-347-48.J ]
খ) কিছু সংখ্যক মু$লমান অখুশি বলেই কি ভারতের ঐক্য ধ্বংস করতে হবে?
[Ibid, p-348 ]
গ) ভারতের হি$ন্দু-মু$লমানদের মধ্যে সাম্প্রদায়িক বাদ-বিসম্বাদ আছে বলেই কি পাকিস্তান বানাতে হবে? [Ibid, p-348]
ঘ) মু$লমানরা একটি জাতি—এই কারণের জন্যই কি পাকিস্তান হতে হবে? [Ibid. p-352] .. (কিন্তু) আইনের দৃষ্টিতে ম$লমানরা এখনও জাতি হিসেবে গড়ে ওঠেনি। (‘in the de jure or de facto sense of the term’) [p-354]
 ঙ) কংগ্রেসের উপর বিশ্বাস হারানাের জন্যই কি পাকিস্তান বানাতে হবে? [Ibid, p 352] 
চ)  হি$ন্দুস্বরাজ হবে – এই যুক্তিতে কি পাকিস্তান বানাতে হবে?… হি$ন্দুরাজকে আটকাতে হবে। কিন্তু পাকিস্তান বানিয়ে তা কি সম্ভব হবে? [Ibid, p-355]
 যােগেনবাবু অখন্ড ভারতের পক্ষে কোন দিন একটি যুক্তি দেননি। বাবাসাহেব অখন্ড ভারতের পক্ষে উপরােক্ত যুক্তি দিয়ে শেষ অবধি ভারতের প্রতিরক্ষা এবং মু$লিম মানসিকতার কথা বিবেচনা করে ভারত বিভাজন কে সমর্থন করেছিলেন। [Ibid, p-363-64],যােগেনবাবুও ভারত বিভাজন চেয়েছিলেন। তবে তাঁর এই চাওয়া বাবাসাহেবের চাওয়ার মধ্যে পার্থক্য ততটুকু, যতটুকু পার্থক্য উত্তর আর দক্ষিণ মেরুর মধ্যে। বাবাসাহেবের চাওয়া ছিল শক্তিশালী ভারত গঠন এবং তার স্থায়িত্ব রক্ষার কারণে। আর যােগেনবাবু,ভারতের একটি বড় অংশকে আরব সাম্রাজ্যবাদীদের হাতে তুলে দেওয়ার উদ্দেশ্যে৷
 ১) বাবাসাহেব ভারত-বিভাজনকে সমর্থন করতে গিয়ে আরও দু’টো শর্ত দিয়েছিলেন – বাংলা ও পাঞ্জাবের বিভাজন এবং হিন্দুস্থান (ভারত) ও পাকিস্তানের মধ্যে সংখ্যালঘু বিনিময়৷ যােগেনবাবু এর তীব্র বিরোধিতা করেছেন। সংখ্যালঘু বিনিময়ের ব্যাপারে বাবাসাহেব যেখানে রাষ্ট্রবিজ্ঞান সন্মত লিখিত পরিকল্পনা দিয়েছেন। যােগেনবাবু বলেছেন,”না,এ কাজ সম্ভব নয়; এ কাজ অসম্ভব, অবাস্তব।” (ম. যোগেন্দ্রনাথ, ২য় খণ্ড; 88,)
২) দীর্ঘদিনের ইতিহাস পর্যালোচনা করে বাবাসাহেব বলেছেন ‘হি$ন্দু মু$লমানের মধ্যে মিলনের জন্য সম্ভাব্য সব চেষ্টাই করা হয়েছে এবং তা সবই ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে।” যােগেনবাবু এই সত্যকে একেবারেই অস্বীকার করেছেন। তার বক্তব্য ছিল বর্ণহিন্দুদের সঙ্গে মু$লমানদের বন্ধুত্ব সম্ভব না হলেও তফসিলী হি$ন্দুদের সঙ্গে এই মিলন সম্ভব। 
৩) বাবাসাহেব বলেছেন, তফসিলীদের কাছে মু$লমানরা হি$ন্দুদের চেয়ে বড় বন্ধু নয়,এখানে হিন্দুরা প্রায় সব রাজনৈতিক রক্ষাকবচ দেবেন’৷(“Muslims are not greater friends of the Scheduled Castes than the Hindus,Here Hindus will give almost all political protection”, Dr. Ambedkar’s Letter to Mr. J.N.Mandal dt. 2.6.1947) যােগেনবাবু বলেছেন মু$লমান, মু$লিম লীগ এবং জিন্নাহ শ্রেষ্ঠ বন্ধু। মিঃ জিন্নাহকে তিনি তফসিলীদের ত্রাণ কর্তা হিসাবে আখ্যায়িত করেছিলেন।যােগেনবাবু পাকিস্তানে গিয়ে লীগের কাছে কি কি রক্ষাকবচ চেয়েছিলেন এবং পেয়েছিলেন তার কোন হদিস দিচ্ছেন না কেউ। সাংবিধানিক রক্ষাকবচের চেয়ে পাকিস্তান ও মু&লিম লীগের প্রতি তফসিলীদের আনুগত্যের মূল্য যে অনেক বেশি এ কথা বলতে ভােলেননি তিনি। ‘৪৭-র ১০ আগষ্ট পাক গণ-পরিষদের এক দিনের সভাপতি মিঃ মণ্ডল গভীর আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে (পড়ুন রাজনৈতিকভাবে আত্মবিক্রয়ের বুদ্ধি নিয়ে) বলেছিলেন, “সংখ্যালঘু জনগণ রাষ্ট্রের প্রতি অনুগত এবং বিশ্বস্ত না হলে, তাদের জন্য নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা এমনকি নিরাপত্তার দাবি করা অযৌক্তিক।” (ম.যোগেন্দ্রনাথ-২, পৃ-৯৩) 
 ৪) ডঃ আম্বেদকর বলেছিলেন ‘’গরীব মু$লমানরা গরীব হি$ন্দুদের সমর্থন করবে না।”[Dr. Ambedkar, Vol. 8, p 236] যােগেনবাবু ছিলেন এই তত্ত্বের বিপরীত মেরুর মানুষ।তিনি গ্রেট ক্যালকাটা কিলিং এবং নোয়াখালীর দাঙ্গার পরও পুর্ববঙ্গের গ্রামে গ্রামে সভা করেছে বলেছেন,মু$লমান ও তফশীলীদের অর্থনৈতিক স্বার্থ এক৷এসব ধনী বর্ণহি$ন্দু ও মু$লিমদের মধ্যেকার উত্তেজনা, তফশিলীদের কোন ক্ষতি হয় নি৷খুলনার চিতলমারী গ্রামে এমনই এক জনসভায় তাকে জনসমক্ষে মিথ্যেবাদী বলে অভিহিত করেন বিশিষ্ট সমাজসেবী কিরণ ব্রহ্ম৷
 ৫) শুধু লিগের ডাইরেক্ট একশান ডের আহ্বান মঞ্চে উপস্থিত থাকাই নয়,লীগের প্রত্যক্ষ সংগ্রাম দিবসের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে বাংলা তফসিলী ফেডারেশনের সভাপতি হিসেবে মন্ত্রী যােগেনবাবু আনুষ্ঠানিক ভাবে ঐ প্রত্যক্ষ সংগ্রাম সমর্থন করলেন। একটি চিঠি দিয়ে কোলকাতা জিলা মু$লিম লীগের সেক্রেটারী মিঃ এস.এম, ওসমানকে জানালেন – “যেহেতু মু$লিমদের প্রতি বৃটিশ সরকারের ভ্রান্ত নীতি ও নিদারুণভাবে বিশ্বাস ভঙ্গের কারণে সর্বভারতীয় মু$লিম লীগ তার প্রতিবাদের নিদর্শন স্বরূপ প্রত্যক্ষ সংগ্রামের সিদ্ধান্ত লইয়াছে, যেহেতু ভারতের তফসিলি জাতি সমূহ ও অন্যান্য সংখ্যালঘুরা ১৬ আগষ্ট শুক্রবার সারা ভারত প্রত্যক্ষ সংগ্রাম দিবস’ হিসাবে পালন করার সিদ্ধান্ত লইয়াছে এবং বাংলার তফসিলী জাতি ফেডারেশন কোলকাতা জিলা মু$লিম লীগের ঘােষিত কার্যক্রমে সহযোগিতা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।” যােগেনবাবুর লেখা এই চিঠি পড়লে মনে হয় সমগ্র ভারতের তফসিলী এবং অন্যান্য সংখ্যালঘুরাও লীগের ঘােষিত ১৬ আগস্টের কার্যক্রমের অনুরূপ ঐ তারিখে সর্বভারতীয় ভাবে প্রত্যক্ষ সংগ্রাম দিবস’ পালন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন! যা সব্বৈব মিথ্যাচার৷ আসলে তেমন কোন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল কি? কোন প্রমাণ দিতে পারবেন কেউ?তাছাড়া ড. আম্বেদকরের অনুমতি নিয়ে কি বাংলা তফসিলী ফেডারেশন কোলকাতা জিলা মু$লিম লীগের ঘােষিত কার্যক্রমে সহযোগিতা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কি? বাবাসাহেব এই ধরনের অপকর্মের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারেন না। কারণ, বাবাসাহেব বরাবরই বলে এসেছেন যে, মু$লমানদের রাজনীতির সঙ্গে দলবদ্ধ গুন্ডামী ওতােপ্রােতভাবে যুক্ত। (“The third thing that is noticeable is the adoption by the Muzlims of the gangster’s method in politics.” – Dr. Ambedkar, Vol. S. page-269)৷পদত্যাগের পূর্ব যােগেনবাবু কিন্তু ঐ দলবদ্ধ গুণ্ডামির খোঁজ পাননি।১৯৫০র বরিশাল গণহত্যার পরে অবশ্য গভীর খেদের সাথে জানিয়েছেন,’আমি বুঝতে পারলাম ইস্লামের নামে পাকিস্তানে কি কি হতে চলেছে৷’
 ৬) বাবাসাহেবের মতে, “ভুল হোক আর নির্ভুল হোক তৎকালীন ভারতের অধিকাংশ মানুষ মনে করতেন যে, পাকিস্তান সৃষ্টির চূড়ান্ত উদ্দেশ্য মু$লিম শক্তি দ্বারা ভারতকে আক্রমণ করা এবং হি$ন্দুদেরকে তাদের অধীনে নিয়ে এসে ভারতে মু$লিম সাম্রাজ্য পুনঃ প্রতিষ্ঠিত করা।”[Ibid, p-376] যােগেনবাবু এসব কথা বেমালুম অস্বীকার করে বলেছিলেন, “মু$লিম লীগ শুধু মু$লিম সম্প্রদায়ের নয়, ভারতের সমস্ত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উন্নতি লাভের ও স্বাধীনতা আদায়ের মহান দায়িত্ব গ্রহণ করিয়াছে।”
৭) মু$লিম স্ক্রিপচারে একটি মারাত্মক সত্য হচ্ছে দার-উল-ই$লাম (মু$লমানদের আবাসভূমি)ও দার-উল-হারব(ই$লাম শত্রুদের দেশ) তত্ত্ব। বাবাসাহেব বলেছিলেন,”একটি দেশ দার-উল ই$লাম,যখন এটি মু$লিমদের দ্বারা শাসিত হয়। একটি দেশ দার-উল-হারব হয় যখন যেখানে কাফেরদেরও অংশীদারীত্ব থাকে৷ মু$লিমদের শ রী য়া আইন অনুসারে, ভারত হি$ন্দু এবং মু$লমানদের সাধারণ মিলনস্থল হতে পারে না। এটি মু$লমানের দেশ হতে পারে তবে এটি ‘হিন্দু ও মু$লমানদের সমানরূপে বসবাস’ এর দেশ হতে পারে না। এই দেশের মালিক  মু$লামানরা হতে পারে,যখন এটি মু$লিমদের দ্বারা অধীকৃত হয়৷এই তত্ত্ব অনুসারে ভারত হি$ন্দু ও মু$লমান এই দুই সম্প্রদায়ের মিলিত আবাসভূমি হতে পারে না।মু$লিমদের কাছে হি$ন্দুরা কাফের এবং বিশ্বাসের অযোগ্য” (Pakistan or Parition of India) গঙ্গা-যমুনী তেহজিব যে কতটা ভুঁয়ো,তা বাবাসাহেবই লিখে গেছেন৷ অথচ,পদত্যাগের পূর্বে, যােগেনবাবুর দলিত-মু মিন ঐক্যের ঢ্যাঁড়া পিটিয়ে গেছেন আজীবন৷
৮) ডঃ আম্বেদকর বলেছেন,”আমি চাই আমার মানুষেরা প্রথমে ভারতীয় হবেন, শেষে ভারতীয় হবেন এবং ভারতীয় ছাড়া অন্য কিছুই হবেন না।” যােগেনবাবু সমগ্র জীবনে এমন কোন বিবৃতি দেননি। বরং তিনি পাকিস্তানের অর্থ করেছিলেন ‘পবিত্র-ভূমি’ এবং জিম্মির অর্থ ‘সযত্নে রক্ষিত বস্তু’ । (ম. যোগেন্দ্রনাথ- ২, পৃ-৭৫) এই পবিত্র ভূমিতে তিনি তার এবং তফশিলী সমাজের আলোকোজ্জ্বল ভবিষ্যৎ দেখতে পেয়েছিলেন। 
৯)হি$ন্দু দর্শন ও আব্রাহামিক মতবাদের মধ্যে পার্থক্য নির্দেশ করে বাবাসাহেব বলেছিলেন, ‘এমন কোন কিছুই নেই  উভয় সম্প্রদায়কে এক জায়গায় নিয়ে আসতে পারে।’ [‘nothing to bring them in bosom. Vol. 8, p-193] যােগেনবাবু বাবাসাহেবের এই অভ্রান্ত মূল্যায়নকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে তফসিলী-মু$লিম ঐক্য গড়ে তােলার জন্য জীবনপাত করতে গেছিলেন। কিন্তু তাকে জীবন দিতে হয়নি। প্রাণ দিতে হয়েছে তফসিলীসহ হাজার হাজার বর্ণ হি$ন্দুকেও; সতীত্ব হারাতে হয়েছে হাজার হাজার মা-বােনকে। আজও ঐ পাশবিক অপকর্মের অবসান ঘটেনি।
 ১০) ডঃ আম্বেদকরের মতে, ‘প্রস্তাবিত হিন্দুস্থান ও পাকিস্তানের মধ্যে সংখ্যালঘু বিনিময়ই ছিল সাম্প্রদায়িক সমস্যা সমাধানের দীর্ঘস্থায়ী প্রতিষেধক।’ যােগেনবাবু এর বিপরীত কথাই বলেছেন। তিনি পাকিস্তানে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী থাকাকালীন সময়ে তফসিলী সম্প্রদায়ের মু$লিম লীগের প্রতীক চাঁদ তারা মার্কা ব্যাজ পড়তে বলেছিলেন।পক্ষান্তরে ঐ সময় বাবাসাহেব বলেছিলেন,”আপনারা যে ভাবে পারেন ভারতে চলে আসুন” (পৃ-৮৯)৷Pakistan or The Partition of India’ থেকে বাবাসাহেবের আর একটি অতি মূল্যবান মন্তব্য উল্লেখ করছি। “বাংলা ও পাঞ্জাবের মু$লমান সংখ্যালঘুদের ক্ষেত্রে রক্ষাকবচ নিয়ে খুশি থাকতে বলা নিরর্থক।”এক কথায় নেহেরু লিয়াকত চুক্তির যুক্তিগুলিকে পর্যদুস্ত করে গেছেন আম্বেদকর৷ ১৯৫৬ সালে মৃত্যুর পূর্বেও এই মত পরিবর্তন করেননি।
১১) ““আমি তফসিলি বর্ণকে বলতে চাই, যাদের জীবন পাকিস্তানের অভ্যন্তরে অভিশপ্ত হয়ে পড়েছে,তারা যে কোন উপায়ে ভারতে চলে আসুন৷ দ্বিতীয় কথাটি আমি বলতে চাই যে তপশিলি জাতিদের পক্ষে পাকিস্তান বা হায়দরাবাদে মু$লমান বা মু$লিম লীগের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা মারাত্মক হবে। বর্ণহি$ন্দুদের অপছন্দ করার কারণে তপশিলিদের কাছে মু%লমানদের তাদের বন্ধু হিসাবে দেখা অভ্যাস হয়ে গেছে। এটি একটি ভ্রান্ত মতামত, ”ড: আম্বেদকর বলেছেন। (The Free Press Journal, November 28, 1947. Cited in Dr Ambedkar: Life and Mission, Dhananjay Keer, p. 399)৷বাবাসাহেবের এই মন্তব্যকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়ে যােগেনবাবু বলেছেন, “মু$লিম লীগই আমাদের পরম বন্ধু, আপনারা কেউ ভারতে যাবেন না।” বর্ণ হিন্দুদের সঙ্গে কিছুটা দ্বন্ধ থাকা সত্ত্বেও বাবাসাহেব প্রতিজ্ঞা করে বলেছিলেন, “ভারত রক্ষার ব্যাপারে আমি আমার জীবন উৎসর্গ করবো৷” আর যােগেনবাবু এমন ধ্বংসকামী শক্তির সমর্থক ছিলেন, যে শক্তি ঘােষণা করেছে, ‘হয় আমরা ভারত ভাগ করবো নয়ত ভারতকে ধ্বংস করে দেবো৷’
১২) ক্যাবিনেট মিশন যে তফসিলীদের প্রতি মােটেও সুবিচার করেনি, ইংল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী আর্ল ক্লেমেন্ট রিচার্ড এ্যাটলির কাছে উইনস্টন চার্চিলের কাছে সে অভিযােগ জানাতে লন্ডন গিয়েছিলেন আম্বেদকর। নির্যাতিত শ্রেণীর রাজনৈতিক অধিকার লাভের তুলনায় মন্ত্রিত্ব পাওয়াটা তার কাছে ছিল অতি তুচ্ছ ব্যাপার। পরবর্তীকালে (১৯৫২) নেহেরু মন্ত্রিসভার মন্ত্রিত্ব ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে বেরিয়ে এসেছিলেন। একজন তফসিলী প্রতিনিধি সহ মু$লিম লীগ যে কেন্দ্রীয় সরকার যোগ দিয়েছে সে ব্যাপারে রয়টারের লন্ডন প্রতিনিধি তার প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি জানালেন “মন্ত্রিসভা শান্তিতে কাজ করতে পারবে কিনা সে বিষয়ে অনেক সন্দেহ আছে। একথা একদম নিশ্চিত যে, ওরা আমাদের বন্ধু নয়-ওরা আমাদের মিত্রও নয়।” তিনি আরও বলেন, “কোন্ লােকরা বন্ধু না হয়েও মিত্র তা আমরা চিনি। কিন্তু মু$লিম লীগ ও কংগ্রেস দল কেন্দ্রীয় সরকারে ঢুকেছে পরস্পর শক্ত হিসাবে। এদের কাছ থেকে আমরা কি আশা করতে পারি। আমাকে কেউ কোয়ালিশন সরকার বলতে পারে না। সত্যিকার অর্থে এটি এক দেশে দু’টি জাতির সরকার।”কিছুদিন পরেই বাবাসাহেবের কথা অক্ষরে অক্ষরে সত্য বলে প্রমাণিত হল। ঐ সরকার কাজ করতে পারেনি। বলা যায় রাজনৈতিক কাণ্ডজ্ঞানের অভাবেই যােগেনবাবু সেদিন এ কথা বুঝতে পারেননি।যােগেনবাবু তখন বাংলার বিভিন্ন গ্রামে গ্রামে ঘুরে ঘুরে,”তফসিলী জাতি হিন্দুদের আওতায় থাকিয়া ঘৃণিত জীবন যাপন করার চেয়ে মু$লমান অথবা অন্য কোন জাতির আওতায় স্বাধীন ও সম্মানের সহিত বাস করিতে বেশি পছন্দ করে।”,মর্মে লিগের জয়গান গাইছিলেন৷(ম, যোগেন্দ্রনাথ- ১,P-220-21)
‌ এখন যদি বলা হয় যে, প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে যােগেনবাবু বাবাসাহেবকে অমান্য করে রাজনীতি করেছেন, তাহলে খুব একটা ভুল বলা হবে কি? এই অমান্য করার বড় প্রমাণ মন্ডল মশাইয়ের অযৌক্তিক লীগ প্রীতি। কখনও লীগের বন্ধু, কখনও বা তাদের সহযোগী সদস্য হিসেবে নিজ সম্প্রদায়ের মুক্তির নামে তাদের সঙ্গে একাত্ম হয়ে সংখ্যালঘু বিনিময়-বিহীন পাকিস্তান সৃষ্টিতে বিশ্রীভাবে সহায়তা করেছেন, যে সৃষ্টি ভারত উপমহাদেশের অপূরণীয় ক্ষতি সাধন করেছে এবং এখনও করছে। এরই মধ্যে তিনি তার মন্ত্রীত্ব চালিয়ে যাচ্ছিলেন। সব নীতিবােধ বিসর্জন দিয়ে ‘অসত্য ও অর্ধ সত্য’ বিবৃতি দিয়েছিলেন। এরপরেও যখন জীবন সংশয় দেখা দিল তখন পালিয়ে এলেন এই ব্রাহ্মণ্যবাদী ভারতে। আর এখানে এসেই আবিষ্কার করলেন — “Pakistan is no place for Hindus to live in.” তিনি যে এখানকার সরকারি চাপের কাছে নতি স্বীকার করে অসত্য ও অর্ধসত্য’ বিবৃতি দিয়েছেন তাই তিনি স্বীকার করেছেন অকপটে। তার ভাষাতেই এই স্বীকারোক্তি উল্লেখ করছি,
 “এক দিকে সংসদীয় দলের নেতা এবং অপরদিকে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে আপনার ক্ষমতা প্রয়ােগ করে আপনি (মিঃ লিয়াকত আলি) আমাকে একটি বিবৃতি দিতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। আমি সে বিবৃতি দিই গত ৮ সেপ্টেম্বর (১৯৫০)। ঐ বিবৃতিটি ছিল অসত্য এবং অসত্যের চেয়েও ঘৃণ্য অর্ধসত্য তথ্য সম্বলিত। আপনি জানেন, আমি এই বিবৃতি দিতে চাইনি। কিন্তু আমি আপনার অধীনস্ত মন্ত্রী হিসাবে আপনার সঙ্গে কাজ করছিলাম। তাই আপনার অনুরােধ প্রত্যাখ্যান করা সম্ভব হয়নি।” নীতি বা আদর্শবান কোন মানুষ কি জেনে শুনে ঐ ধরনের মিথ্যা বিবৃতি দিতে পারে?
 একবিংশ শতকের ভারতে,বাবাসাহেব এবং যোগেন্দ্রনাথ মন্ডলকে একই সাথে শ্রদ্ধেয় বলতে শেখায় যে ভ্রান্ত চেতনা,তারাই পুনরায় হি$ন্দু সমাজকে বিভাজিত করে ফিরিয়ে আনতে চাইতে ৫০,৬০,৭০ এর দশকের সেই বিভীষিকাময় কালো দিনগুলি৷আজ ‘জয় ভীম,জয় মীম’ বাদী দলিত-মু মিন ঐক্যের প্রয়োজনীয়তা বোঝাতে ওয়েসীর সাথে আম্বেদকরের নাতির জোট দেখে, অজান্তেই দীর্ঘশ্বাস ফেলে সেদিনের বরিশাল-যশোর-খুলনা-ফরিদপুর ডেল্টায় শৃগাল-সারমেয়র খাদ্য হয়ে যাওয়া নমঃশুদ্র মৃতদেহগুলি এবং আম্বেদকর স্বয়ং৷মা ধরিত্রী,দ্বিধা হও৷৷
 মিঃ যোগেন মণ্ডল সেদিন গণপরিষদে পাকিস্তান দাবীর বিপক্ষে প্রদত্ত বাবা সাহেবের ঐতিহাসিক বক্তৃতার কানাকড়িও মূল্য না দিয়ে ৩১ ডিসেম্বর,১৯৪৬ কলকাতায় বঙ্গীয় প্রাদেশিক তফসিলী ফেডারেশনের চতুর্থ বার্ষিক অধিবেশনে মিঃ জিন্নাহর কণ্ঠে কণ্ঠ মেলাবার জন্য পাকিস্তানের পক্ষে জোরালাে বক্তব্য রাখেন। বলেন, “মু$লিম লীগের যে পাকিস্তান তাহা হইল পূর্ণ পাকিস্তান।” (মহাপ্রাণ যোগেন্দ্রনাথ- ১,পৃ-২৪৮) তিনি যদি সেদিন লীগের সঙ্গ ত্যাগ করে ডঃ আম্বেদকরের সঙ্গে একত্রিত হয়ে ভারতের অখন্ডতা রক্ষার আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়তেন,তাহলে কি ভারতের ইতিহাস অন্য রকম লেখা হত না?
 যোগেন্দ্রনাথ মন্ডল ভুলের বােঝা বইতে না পেরে পদত্যাগ করেছিলেন। উদাত্ত কণ্ঠে তিনি বলেছেন, ‘আমার বিবেক মিথ্যা চিন্তা-চেতনা এবং অসত্যের গুরুভার আর বহন করতে পারছে না। তাই মন্ত্রী হিসাবে আমি পদত্যাগ করছি,পদত্যাগের পরে হলেও তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে, সাম্প্রদায়িক সমস্যা স্থায়ী সমাধানের দু’টো পথ আছে” .. “হয় পূর্ববঙ্গকে ভারতের মধ্যে নিয়ে আসতে হবে, নয়ত ওখানকার হি$ন্দুদের ভারতে নিয়ে আসতে হবে।”
 আজ একদল অবমানব যােগেনবাবুর পদত্যাগ পত্রটিকে মুছে দিয়ে পদত্যাগ-পূর্ব মণ্ডল মশাইয়ের ভুলগুলিকে নির্ভুল বলে প্রচার করে বাবাসাহেবের অমূল্য সৃষ্টি ‘Pakistan or The Partition of India’-র মূল বক্তব্যকেই অস্বীকার করতে চাইছেন এবং সেই সঙ্গে নির্যাতিত শ্রেণীর মানুষদের এক মারাত্মক পরিণতির দিকে ঠেলে দিচ্ছেন৷ তারা কেন এই ধ্বংসাত্মক কাজে লিপ্ত হচ্ছেন,তা আমার মত ক্ষুদ্রবুদ্ধির মানুষের বুদ্ধির অগম্য। তবু ক্ষুদ্র মানুষ হিসাবেই তাঁদের উদ্দেশ্যে বলা যায় –
“অধর্মং ধর্ম্মমিতি যা মন্যতে তমসাবৃতা।
সর্ব্বার্থান বিপরীতাংশ্চ বুদ্ধিঃ সা পার্থতামসী।।”
 
– শ্রীমদ্ভাগবতগীতা
(কৃতজ্ঞতা : আমাগো একখান দ‍্যাশ আসিলো)
তথ্যসুত্র:-
১.Pakistan or Partition of India,Dr B R Ambedkar
২.মহাপ্রাণ যোগেন্দ্রনাথ মন্ডল,জগদীশচন্দ্র মন্ডল
৩.যোগেন্দ্রনাথ মন্ডলের পদত্যাগপত্র,১৯৫০
৪.ভারত ইতিহাস পরিক্রমা’, অধ্যাপক প্রভাংশু মাইতি, 
৫.’স্বাধীনতা সংগ্রামে ভারতের জাতীয় কংগ্রেস’,অমলেশ ত্রিপাঠী,
৬.তর্ক, বিতর্ক ও কুতর্ক, ড. অনিল বিশ্বাস
৭. শ্যামাপ্রসাদ ও বঙ্গবিভাগ ও পশ্চিমবঙ্গ, ডঃ দীনেশচন্দ্র সিংহ
৮.Dr. Babasaheb B.R. Ambedkar Writings and Speeches, Vols.2,3,8,
৯.ভারত বিভাজন যোগেন্দ্রনাথ মন্ডল ও ড. আম্বেদকর,বিপদভঞ্জন বিশ্বাস
১০.Dr. Ambedkar’s Role in National Movement, 1917-1947,D R Jatava
১১.কালান্তর,রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
১২.The statesman,October 22.1946
১৩.The Free Press Journal, November 28, 1947. Cited in Dr Ambedkar: Life and Mission, Dhananjay Keer
১৪.বাঙালীর মুক্তিযুদ্ধের অন্তরালে শেখ মুজিব,কালিদাস বৈদ্য