বহুমাত্রিক অস্তিত্ব নিয়ে যারা সচেতন, যারা জানেন ব্যক্তিমানুষের অনেকগুলো পরিচয় থাকে, এবং সবকটাই সত্যি, সবকটা সমান গুরুত্বপূর্ণ বলছি না, কিন্তু সবগুলোই সত্যি, চতুর বানিয়া বলা হলে গান্ধীকে তাদের অন্তত লাফঝাঁপ দেওয়া উচিত নয়। বিশেষত মোদী আর অমিত শাহ দুজনেই তো গুজরাটি বানিয়া, ওই গান্ধীর মতই। ইট টেকস ওয়ান টু নো ওয়ান। চিত্তরঞ্জন দাশ বা কেশব সেন বা জীবনানন্দ দাশ বদ্যি ছিলেন তো। এবং সেটা তাদের অবস্থান ও কর্মকাণ্ড বোঝার জন্য একটা গুরুত্বপূর্ণ ডাইমেনশন। কিন্তু কেউ সেটা বললে লিবেরালরা হাঁহাঁ করে তেড়ে আসেন। এতে ইতিহাসচর্চায় অত্যন্ত সমস্যা হয়। সব আইডেন্টিটির উর্ধ্বে উঠে বিশ্বমানবিক গ্যাসবেলুন হয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে যে কঠিন সাধনা এরা শুরু করেছেন, তার ফলে লাভ এই হয়েছে যে ইতিহাসের ন্যারেটিভের অনেক, অনেকগুলো জরুরি সুতো ছিঁড়ে গেছে, অনেকগুলো পদচিহ্ন হারিয়ে গেছে। গান্ধীকে বুঝতে গেলে তিনি যে চতুর বানিয়া ছিলেন সেটা জানা দরকার বৈকি। তিনি কি মায়ের পেট থেকেই দেশ-জাতি-বর্ণ-ভাষা-ধর্ম ইত্যাদি সবকিছুর উর্ধ্বে মহাত্মা হয়ে জন্মেছিলেন, আমাদের ইন্টেলেকচুয়াল পার্থ চ্যাটার্জিদের মত?
গান্ধীকে অপমান করতে কথাটা অমিত শাহ যে বলেননি, সে বিষয়ে আমি নিশ্চিত, কারণ উত্তর ভারত হোক বা দক্ষিণ ভারত, সবাই যে যার কাস্ট নিয়ে অত্যন্ত কমিউনাল। দেশের রাষ্ট্রপিতা হয়েছেন এক বানিয়া, এবং গুজরাটি বানিয়া, এ নিয়ে আরেক গুজরাটি আহ্লাদ করেছে মাত্র, বাঙালিরা এর মধ্যে বোকার মত তৃতীয় ছাগল হতে যাচ্ছে কেন কে জানে।
এদিকে ওই রাষ্ট্রপিতা কথাটা প্রথমে আমাদের সুরেন ব্যানার্জিকেই বলা হত, সেখান থেকে প্রায় উড়েদের চুরির স্টাইলে গান্ধীবাদীরা হাইজ্যাক করে নিলেন। গান্ধী বাঙালিবিদ্বেষী ছিলেন এবং কংগ্রেসের মধ্যে বাঙালিকে কোনঠাসা করার জন্য গান্ধীকে স্ট্র্যাটেজিক ভাবে ব্যবহার করা হয়েছিল। কিন্তু এই জাতির পিতা নিয়ে আমার একটা আপত্তির কারণ হল, যে দেশের পাঁচ হাজার বছরের ইতিহাস, সে দেশে গান্ধী কিভাবে জাতির পিতা হবেন? এ দেশে জাতির পিতা বলতে গেলে কপিলমুনিকেই বলতে হয়, কারণ এই পুরো দেশ, হরপ্পা থেকে পাণ্ডু রাজার ঢিবি, কাশ্মির থেকে কন্যাকুমারী, হয় শিব, নয়ত শক্তির উপাসনা করেছে। গান্ধী আধুনিক বা স্বাধীন ভারতেরও পিতা নন। আধুনিক ভারতের জন্ম দিয়েছে বাংলা রেনেসাঁস এবং স্বাধীন ভারতের জন্মদাতা নেতাজি সুভাষ।
গান্ধী সম্পর্কে চতুর বানিয়া বলে অমিত শাহ একটা জরুরি কাজ করেছেন। বাঙালি বিপ্লবীরা অনেক আগে থেকেই যেটা বলে আসছিলেন, সেটার একটা কনফার্মেশন পাওয়া গেছে। মহা ঘোড়েল ও ধড়িবাজ ছিলেন ভদ্রলোক। যাই হোক। বাঙালির কথায় আসি।
গান্ধী গুজরাটি গন্ধবণিক ছিলেন। বাঙালি গন্ধবণিকরাও দারুণ সফল কমিউনিটি, কলেজ স্ট্রিটের থেকে বড়বাজার পর্যন্ত আদতে ওদেরই রাজত্ব। বাংলা রেনেসাঁসের এত কাছে, এত কাছ ঘেঁষে ওরা রয়েছেন, ওদের ইতিহাস আজ পর্যন্ত কেউ লিখলেন না। ফাটাকেষ্ট বাঙালি গন্ধবণিক ছিলেন, জানতেন আপনি?