মাননীয় যোগেন চৌধুরী মহাশয়ের কলম থেকে নেওয়া। নিজের হাতে শেষ বারের মতন বিষ ইঞ্জেকশন দিলেন নিজের কন্যাকে –
শেষে ডাক্তার পিতা হিন্দু কন্যার বাপ হওয়ার অপরাধের জ্বালা জুড়ালেন – নিজেও বিষ পান করে।
———————————————————————————
আজ ২০ শে জুন পশ্চিম বঙ্গ স্থাপনা দিবস – ১৯৪৭ এর এই দিনে বঙ্গ বিধানসভায় ভোটাভুটি হয় বাংলা ভাগের জন্য তাতে ৫৮ – ২১ ভোটে জিতে আজকের এই পশ্চিম বাংলা পাই আমরা - সেই দিন যদি আজকের মতন সেকু নামক নিকৃষ্ট জীবেরা থাকত এবং ঐ ৫৮ জন হিন্দু বীর সদস্যও ঐ ২১ জনের সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে পূর্ব পাকিস্তানের দিকে ভোট দিত তবে আমরা আর সেকুগিরী – মাকুগিরী মারানোর জন্য এই বাংলা পেতাম না – জ্যোতিবসু সহ আরও দুই কমিউনিস্ট সদস্য সেইদিন পশ্চিম বাংলা স্থাপনের পক্ষে বিধানসভায় উপস্থিত থেকেও ভোট দানে বিরত ছিল।
যে মহান মানুষটি এই পরিকল্পনা করেছিলেন সেই ডঃ শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জীকে আজকের এই পশ্চিম বাংলা স্থাপনা দিবসে জানাই শত কোটি প্রণাম।
———————————————————————————-
২০ শে জুন ১৯৪৭ এর প্রস্তাব মতন তো বাঙ্গালী হিন্দুদের জন্য পশ্চিম বাংলা গঠিত হলো। কিন্তু সকল হিন্দু পুর্ব পাকিস্তান থেকে চলে আসতে পারল না।
১৯৫০ সাল – ডঃ শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী বন্ধু মারফতই খবর পেতে লাগলেন পূর্ব বাংলায় নুতন করে হিন্দুদের উপরে প্রচন্ড অত্যাচার শুরু হয়েছে । বরিশাল, ফরিদপুর, রাজশাহী, পাবনা, এবং দিনাজপুরে হিন্দুদের উপরে অত্যাচার চরমে উঠেছে। হিন্দুরা প্রাণ বাঁচাতে নিজেদের মেয়ে – বউ – বোনকে দুষ্কৃতীদের ডেরায় রাতে পাঠাতে বাধ্য হচ্ছে ।
পূর্ব পাকিস্তানের পাবনা জেলার ‘ বেরা ‘ গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত হিন্দু ডাক্তার বসবাস করতেন তাঁর ১৭ বছরের প্রানাধিক প্রিয়তমা কন্যা আর তাঁর স্ত্রীকে নিয়ে। ১৬ ই জুন ১৯৫০ রাত ১২ টায় ৫ জন দুষ্কৃতী আসে একজন সিরিয়াস রোগীকে দেখার জন্য ডাক্তারবাবুকে নিয়ে যেতে। রাত ১ টায় আবার তারা ৩ দুষ্কৃতী এসে উনার স্ত্রীকে বলে – ডাক্তার বাবু অজ্ঞান হয়ে গেছে । সঙ্গে সঙ্গে উনার স্ত্রী ছুটে ওদের সঙ্গে বেরিয়ে যায়।
এর পরে কিছুদূরে ঐ ডাক্তারের সঙ্গে উনার স্ত্রীকেও তারা বন্দী করে।প্রস্তাব দেওয়া হয় তাঁদের ১৭ বছরের কন্যাকে তাঁদের এক জনের সঙ্গে বিয়ে দিতে হবে।তারা মৃত মানুষের মতন মাথা নেড়ে সায় দেন। ১৭ ই জুন ১৯৫০ তথাকথিত বিবাহ হয় দুষ্কৃতীদের একজনের সঙ্গে। ১৮ ই জুন ওই মেয়েটি অত্যন্ত অসুস্থ হওয়ায় ডাক্তার পিতাকে ডাকা হয়।
ডাক্তার পিতা এসে পরীক্ষা করে দেখেন তাঁর প্রানাধিক প্রিয়তমা কন্যার নিম্নাঙ্গ প্রচন্ড অত্যাচারে অসার হয়ে গেছে। হিন্দু ডাক্তার পিতা বুকে পাথর বেঁধে ঔষধ দেওয়ার নাম করে এক ডোজ বিষ ইঞ্জেকশন দিয়ে এলেন প্রিয়তমা কন্যার হাতের বাহুতে।
শেষে বাড়ি ফিরে ডাক্তার পিতা আর উনার স্ত্রী বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করে হিন্দু কন্যার পিতা মাতা হওয়ার জ্বালা জুড়ালেন।
———————————————————————————এই ঘটনা তৎকালীন ১৯৫০ সালের মাসিক বাংলা পত্রিকা বসুমতির ” আষাঢ় ” সংখ্যা মারফত সকলেই জানতে পারল। যুবক নেতা জ্যোতিবসুও জানলেন এই ঘটনা। ডঃ মুখার্জী ঐ ঘটনায় শোকে বুকে পাথর চেপে সারা বাংলা জুড়ে পুর্ব বঙ্গ আগত হিন্দু শরনার্থীদের জন্য রিলিফ ক্যাম্প ঘুরে ঘুরে কাজ করে যেতে লাগলেন।
আজ পশ্চিম বাংলায় পাকিস্তান জিতলে বাজি ফাটছে প্রকাশ্যেই মিছিল বের হচ্ছে – প্রকাশ্যেই পাকিস্তান জিন্দাবাদ ধ্বনি উঠছে - আজ তারকেশ্বর মন্দিরে মাথায় যাকে ইচ্ছা তাকে বসিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ধীরে ধীরে হিন্দুদেরকে এই পশ্চিম বাংলায় ব্রাত্য করে ফেলা হচ্ছে -
বড় হতাশ লাগে আজ ২০ শে জুন ১৯৪৭ এ যে ৫৮ জন পশ্চিম বাংলা গঠনের পক্ষে ভোট দিয়েছিলেন তারা কি এই ভাবে হিন্দুদেরকেই একদিন এই বাংলায় ব্রাত্য করে দেওয়া হবে এটা ভেবে দিয়েছিলেন ??
সত্যি পশ্চিম বাংলার একজন হিন্দু নাগরিক হয়ে আজ বড্ড হতাশ লাগে- হিন্দু হবার কারনে বড্ড অসহায় লাগে নিজেকে।