প্রতিদিন গড়ে ৫ শতাধিক হিন্দুকে প্রিয় মাতৃভূমি ছাড়তে হচ্ছে।

অসাম্প্রদায়িক চেতনার বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় যে রাজনৈতিক দল মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছে, সেই দল এখন ক্ষমতায়। তবুও ধর্মীয় সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা হ্রাস পাওয়া দূরের কথা, বেড়েই চলেছে।’ ‘প্রতিদিন গড়ে ৫ শতাধিক হিন্দুকে প্রিয় মাতৃভূমি ছাড়তে হচ্ছে। এমন পরিস্থিতির জন্যে দায়ীদের বিচারও হচ্ছে না।’ বললেন বাংলাদেশ মাইনোরিটি ওয়াচের প্রধান এডভোকেট রবীন্দ্র ঘোষ।

সম্প্রতি কানাডার টরন্টোস্থ ‘বাংলাদেশ মাইনোরিটি রাইটস এলায়েন্স’র উদ্যোগে এই সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্য তিনি একথা বলেন। যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, যুক্তরাজ্য, সুইডেন, বাংলাদেশ এবং কানাডার বিভিন্ন সংগঠনের শতাধিক নেতা-কর্মী এ সেমিনারে অংশ নেন।

হোস্ট সংগঠনের সভাপতি অরুন দত্ত স্বাগত বক্তব্যের পর বিষয়ভিত্তিক আলোচনাকালে বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের ইউরোপ শাখার সভাপতি তরুন কান্তি চৌধুরী বলেন, ‘৯২% মুসলমানের সমর্থন ব্যতিত বাংলাদেশের ৮% ধর্মীয় সংখ্যালঘু কখনোই স্বস্তিতে বাস করতে পারবে না। এজন্যে হিন্দু-মুসলমান পরস্পরের সহযোগী হয়ে কাজ করতে হবে। বহু বছরের পুরনো বিরোধ-বিবাদ মিটাতে সকলকে উদারতা প্রদর্শন করতে হবে।’

তরুণ কান্তি বলেন, ‘মানবাধিকার নিয়ে কর্মরত আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সাথেও মতবিনিময় করতে হবে সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠির প্রতিনিধিদের পাশে রেখে।’

যুক্তরাষ্ট্র ঐক্য পরিষদের সভাপতি নব্যেন্দু বিকাশ দত্ত বলেন, ‘২০০১ সালের নির্বাচনের পর বিএনপি-জামাত-শিবিরের ধ্বংসযজ্ঞের বিরুদ্ধে আমরা মার্কিন কংগ্রেস, স্টেট ডিপার্টমেন্ট এবং জাতিসংঘে লবিং করেছিলাম। সে ধরনের পরিস্থিতি আবারো তৈরী করতে সকলকে একযোগে কাজ করতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘আইন করে লাভ হবে না। সমগ্র জনগোষ্ঠিকে সজাগ করতে হবে নিজ নিজ ধর্ম-কর্ম অবাধে প্রতিপালনে।’

যুক্তরাজ্যস্থ সেক্যুলার বাংলাদেশ মুভমেন্টের নেত্রী পুষ্পিতা গুপ্তা বলেন, ‘আমরা সকলে যদি ঐক্যবদ্ধ হতে পারি, তাহলে আমরাও সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনে সক্ষম হবো।’

রাশিয়ার একটি ইউনিভার্সিটির অর্থনীতির অধ্যাপক ও মানবাধিকার সংগঠক ড. তরুন কান্তি চক্রবর্তী বলেন, ‘বিভিন্ন দেশের কর্মকান্ডের প্রতি গভীরভাবে দৃষ্টিপাত করলে সহজেই অনুমান করা যায় যে, উন্নয়ন আর সমৃদ্ধির অভিযাত্রা অব্যাহত রাখতে হলে অবশ্যই সংখ্যালঘুদের স্বাভাবিক জীবন-যাত্রার পথ সুগম রাখতে হবে। যুক্তরাষ্ট্র, কানাডাসহ উন্নত বিশ্ব এর বড় উদাহরন।’

কানাডার মানবাধিকার সংগঠক আকবর হোসেন বলেন, ‘যে দেশের ৯০ ভাগ মানুষ মুসলমান, সে দেশ কখনোই অসাম্প্রদায়িক হতে পারে না। বাহাত্তরের সংবিধানে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ রচনার যে তথ্য সন্নিবেশিত হয়েছে, সেটি একটি বড় ধরনের ভুল। আর সে ভুলের স্পষ্ট প্রকাশ ঘটেছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব কর্তৃক ওআইসিতে অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে।’

যুক্তরাষ্ট্র বঙ্গবন্ধু পরিষদের সেক্রেটারি ও ঐক্য পরিষদের আন্তর্জাতিক সমন্বয়কারি শিতাংশু গুহ বলেন, ‘বাংলাদেশ নিয়ে আশাহত হবার কিছু নেই। আমাদের নতুন প্রজন্ম সেক্যুলার বাংলাদেশ রচনায় জোরদার ভূমিকায় অবতীর্ণ হবেই।’ ‘সামনের জাতীয় নির্বাচনে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ভোট ব্যাংক-কে যথাযথভাবে কাজে লাগাতে হবে মানবিক বিবেচনাবোধ সম্পন্ন প্রার্থীদের জয়ী করার মধ্য দিয়ে’-উল্লেখ করেন শিতাংশু গুহ।

যুক্তরাজ্যের মানবাধিকার সংঘঠক অজন্তা দেব রায় বলেন, ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রেই কোরআন ও সুন্নাহ্্র সমলোচনা না করার প্রসঙ্গ রয়েছে। তাহলে সেই দলটি কীভাবে অসাম্প্রদায়িক চেতনা লালন করবে। আসলে একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে বেঙ্গলী নেশনালিজমের ভিত্তিতে। সে ধারায় এখন মানুষের ধর্মীয় অনুভ’তি নিয়ে প্রায় সকলেই রাজনীতি করছেন। ভোটের রাজনীতিতেও তা আমরা দেখতে পাচ্ছি।’

অধ্যাপিকা রেখা পাঠক বলেন, ‘কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বসবাসরত হিন্দু দম্পতিরা যদি বেশি করে সন্তান ধারন করতে পারি, তাহলেই আমােেদর সংখ্যালঘুর অপবাদ ঘুচে যাবে।’

মন্ট্রিয়লের ঐক্য পরিষদ নেতা দিলীপ কর্মকার বলেন, ‘২০০৮ সালের নির্বাচনে শেখ হাসিনার অঙ্গিকার ছিল বাহাত্তরের সংবিধানের পুনরুজ্জীবন ঘটাবেন। তা এখনও হয়নি।’ দিলীপ কর্মকর্তার নানা প্রসঙ্গের অবতারণা করে বলেন, ‘আমরা আওয়ামী লীগকে সবচেয়ে কাছের বন্ধু মনে করি। অথচ বিএনপি-জামাত ক্ষমতায় থাকতে সবচেয়ে কম আক্রমণের শিকার হয়েছি হিন্দু-বৌদ্ধরা। আওয়ামী লীগ আমলে সবচেয়ে বেশী হামলা হচ্ছে, বাড়ি-ঘর এবং আবাদি জমি বেদখল দেয়া হচ্ছে।’

দিলীপ কর্মকার বলেন, হিন্দুদের রক্তের ওপর বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। অথচ সেই হিন্দুরা এখন আওয়ামী লীগের প্রধান টার্গেট হিসেবে পরিণত হয়েছে।

মন্ট্রিয়লের বিদ্যুৎ ভৌমিক বলেন, ‘বাংলাদেশে আইনের শাসন নেই বলে ধর্মীয় সংখ্যালঘু বিলুপ্তির মুখে। এটি কোনভাবেই সুখকর সংবাদ নয়।’Rezaul Manik