আফগানিস্তান বিজয়

আরবদের আফগানিস্তান বিজয়।

আরবদের আফগানিস্তান বিজয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সময়ে প্রায় পঞ্চাশ বৎসর ব্যাপি পৃথিবীতে চলেছিলো ক্যমুনিষ্ট রাশিয়া আর ধনতান্ত্রিক আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে “ঠান্ডা যুদ্ধ”।

১৯৯১ সালে ক্যমুনিষ্ট রাশিয়ার প্রাধান্য খর্ব হওয়ার মাধ্যমে সেই দুঃসহ পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়। এই কয়েক বছরে পৃথিবীর বহু দেশে নানা উথাল পাথাল হয়েছে মুলত এই দুই বিরোধী শক্তির দ্বন্ধের জন্য।

এই পৃথিবীতে ইসলামের অভ্যুদয়ের আগে (সপ্তম শতাব্দী) দুই বিরোধী রাজনৈতিক শক্তি মুলত ভারতবর্ষের দোড় গোড়া থেকে (সিন্ধু পশ্চিম পাড় ) শুরু করে ইউরোপ অবধি রাজনীতি নিয়ন্ত্রন করতো। বর্তমান আমেরিকা তখন উপজাতিদের দেশ, কেউ জানতো ও না।

দূর প্রাচ্য (রাশিয়া, চীন, মঙ্গোলিয়া,জাপান ইত্যাদি) ধরা ছোয়ার বাইরে। প্রবল পরাক্রমশালী রোম সাম্রাজ্য তখন “খ্রীষ্টান সাম্রাজ্যে” (বাইজান্টাইন) পরিবর্তিত হয়ে গেছে।

সেই খ্রীষ্টান সাম্রাজ্যের মুল ভর কেন্দ্র “কনষ্টান্টিনোপোল”। বসফরাস পেরোলেই পারস্য সাম্রাজ্য।

রোম সম্রাটদের সংগে পারস্য সাম্রাটদের শত্রুতা সেই সাইরাসের (মহান) সময় থেকে ( বা তার আগে থেকেই।

ইসলামের সমসাময়িক কালে ‘একেশ্বরবাদী’ খ্রীষ্টান বাইজান্টাইন সাম্রাজ্য, যার অধিকারে সারা ইউরোপ, আর পারস্য সাম্রাজ্যের (সাসানিদ= যাদের অধিকারে বর্তমান তুরষ্ক,ইরান,ইরাক, সিরিয়া, আফগানিস্তান) “শীতল যুদ্ধ” বন্ধ হয়নি। একে অপরের চক্ষুশুল।

কে বড়ো আর কে কাকে খেয়ে নিতে পারে সেই জিজ্ঞাষা চিহ্ন সব সময় রয়েই গিয়েছিলো।

খ্রীষ্টান সাম্রাজ্য “একেশ্বরবাদী”, সাসানিদ সাম্রাজ্য মুর্তি পুজক, অগ্নি পুজক, বৈদিক সভ্যতার সংষ্কৃতিতে প্রভাবান্বিত। সুতরাং শুধুমাত্র রাজনৈতিক শত্রুতাই সব নয়, সাংষ্কৃতিক বৈরিতাও এই ‘শীতল যুদ্ধ’ এর এক প্রধান কারন। সেই আমলে রাজনীতি এবং ধর্মীয় মতবাদকে পৃথক ভাবে ভাববার ভাবনা চিন্তা ছিলো না।

ইয়েমেনি ব্যাবসায়ীরা বর্তমান কাবা শরীফে (‘কালো পাথর’ বসিয়ে , ৩৬০ খানা মুর্তি বসিয়ে, বা আগেই বসানো ছিলো পুরা কাল থেকে), বেশ কিছু ঘর বানিয়ে সরাইখানার মতো করে রেখেছিলো, মক্কায় ওদের ব্যাবসা চলা কালীন থাকার জন্য।

ইয়েমেনীরা ধর্মীয় নীতিতে মুর্তি পুজক, রাজনীতিতে সাসানিদ (পারস্য সাম্রাজ্য=প্রাচীন বৈদিক) দের সংগে ছিলো।

মক্কার আরবী ব্যাবসায়ীরা, বিশেষ করে নবী মুহাম্মদের পরিবার, ‘একেশ্বরবাদী’ হানিফ গোষ্টির। তার প্রধান আবু তালিব মুহাম্মদের কাকা। তার ছেলে ‘আলী’ নামে প্রসিদ্ধ ,বর্তমান শিয়াদের প্রধান ইমাম।  

নবী মুহাম্মদ নিজেকেও নবী আব্রাহাম (নবী ইব্রাহিম এর পুত্র ‘ইসমেল’ (ইসমাইল) এর বংশধর বলে মনে করতেন। এই হানিফ গোষ্টি খ্রীষ্টান বাইজান্টাইন (একেশ্বরবাদী) দের সমর্থক। ইয়েমেনী ব্যাবসায়ীদের সংগে আরবী ব্যাবসায়ীরা তাই ‘শীতল যুদ্ধে’ জড়িত ছিলো।

এই ‘শীতল যুদ্ধ’ র ফলশ্রুতি, কে কাবার অধিকার কায়েম করবে ? যে গোষ্টি এই কাবাকে পরিচালিত করবে সেই গোষ্টি ব্যাবসাতেও প্রাধান্য পাবে। ইয়েমেনীদের আরবীরা বিদেশী ব্যাবসায়ী হিসাবেই গন্য করতো।

সেই শুরু হলো সংগ্রাম। প্রাপ্ত বয়ষ্ক নবী মুহাম্মদ (তিনি তখনো ধর্ম প্রচার শুরু করেন নি,অর্থ্যাত নবী হন নি) এই বিরোধিতায় সামিল হলেন।

কাকা আবু তালিব সেই গোষ্টির (হানিফ=বাইজান্টাইন=একেশ্বরবাদী) প্রধান। সেই হিসাবে সুক্ষ্ম চালে মুহাম্মদকেই বেছে নেওয়া হলো কাবার দখল নেবার।

এক সকালে সঙ্গী সাথী নিয়ে সেই কাজ করলেন নবী মুহাম্মদ, ভেংগে গুড়িয়ে দিলেন বেশ কিছু প্রাচীন মুর্তি ( কেউ জানে না কতো কালের, স্মরন করুন আফগানিস্তানের বেমিয়ানের বুদ্ধ মুর্তি গুড়িয়ে দেওয়া), বাকী দের কিছু ঘরের মধ্যে রেখে দেওয়া হলো। ইয়েমেনীদের হাত থেকে পরিচালনা চলে এলো আরবী ‘হানিফ গোষ্টি কুরাইশ’ দের হাতে।

আফগানিস্তান বিজয়

৬২২ থেকে (হিজরা শুরু করে, ৬৩২ খ্রীষ্টাব্দে নবী মুহাম্মদের মৃত্যু অবধি, এই দশ বছরে আরব ইসলামের পতাকার ছত্র ছায়ায় চলে এলো। শুধু এক নতুন ধর্মই নয়, শুরু হলো এক নতুন সাম্রাজ্যবাদী (‘ইসলামিক উম্মা’) শক্তির জয়যাত্রা। নবীর মৃত্যুর পর সেই দ্বায়িত্ব এলো পরবর্তী খলিফাদের ওপরে।

প্রতিবেশী ‘সাসানিধ সাম্রাজ্য’ মুর্তি পুজক ,অগ্নি পুজকদের দেশ একে একে দখল হতে থাকলো।

পরবর্তী দশ বছরে সেই কাজ সমাধা হলো, সমগ্র সাসানিধ সাম্রাজ্য ধংস করে সেখানে প্রতিষ্ঠা হলো ‘শান্তির ধর্ম’।

সেই শান্তির ধর্মের দুতেরা, আরবী ঘোড়ার সওয়ার হয়ে, উন্মুক্ত তরবারি হাতে এসে উপস্থিত হলো এবারে একেবারে “বৈদিক সভ্যতার” সুতিকাগার ভারতবর্ষের পশ্চিম সীমান্তে, “উত্তরাপথ” এর পথ ধরে বর্তমান আফগানিস্তানে।   

এর আগে আফগানিস্তান মুলত তিনিটি অঞ্চলে বিভক্ত ছিলো। উত্তর পশ্চিমে (বর্তমান হিরাট প্রদেশ) পৌরানিক ‘কেকয় দেশ’, উত্তর পুর্বে কম্বোজ জাতির শাসিত ছোট বড়ো জনপদ, যাদের রাজধানী বর্তমান ‘নুরীস্তান’ (কাফিরিস্তান), দক্ষিনে কাবুল উপত্যকায় গান্ধার রাজ্য, যার রাজধানী তক্ষশীলা।

এই তিন অঞ্চল, সেই রামায়ন মহাভারতের যুগ থেকে রাজনৈতিক এবং সাংষ্কৃতিক দিক দিয়ে মুল ভারত বর্ষের সংগেই যুক্ত ছিলো। কেকয় রাজ্য থেকে রাজা দশরথের এক স্ত্রী কৈকেয়ী এসেছিলেন। তার পুত্র রাজা ভরতের বড়ো ছেলে তক্ষকের নামে তক্ষশীলা।

ছোট ছেলে পুষ্কলের নামে ‘পুষ্কলাবতী’ (মধ্য এশিয়ার উপজাতি অধ্যুষিত অঞ্চল), যা আলেকজান্ডারের ভারত আক্রমনে সক্রিয় ভাবে বাধা দিয়েছিলো।

মহাভারতেও আমরা দেখতে পাই, কুন্তীর পাচ বোনের বিয়ে হয়েছিলো ওই কেকয় দেশে। তাদের পুত্ররা কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহন করেছিলো।

ইসলামের জয়ধ্বজা সাসানিদ সাম্রাজ্য দখল করে আক্রমন করে বর্তমান আফগানিস্তান। কিন্তু ওখানকার হিন্দু/বৌদ্ধিক শাসকেরা প্রবল বিরোধিতা করায়, বিশেষ করে ‘কম্বোজ জাতির’ অনমনীয় বীরত্ব পুর্ন সংগ্রামে না পেরে উঠে চলে যায় বর্তমান তুর্কমেনিস্তান, উজবেকিস্তান ইত্যাদি মধ্য এশিয়ার অঞ্চলে।

সেখানকার প্রক্তন হিন্দুরা (শক জাতির বংশধর) এবং অন্যান্য উপজাতিরা বাধা দিলেও ইসলামের ঘোড় সওয়ারদের হিংস্রতার কাছে এটে উঠতে পারেনি।

বিজিত তুর্কি (তুর্কমেনিস্তান) হিন্দু এবং অন্যান্য উপজাতিদের দাস বানানো হলো। পরবর্তিতে এই দাসেরা দখল নিলো সারা আফগানিস্তানের। সেই দাসেরাই পরে দিল্লীতে সুলতানী দাস বংশের রাজত্ব চালু করে। সেই দাসের নাম কুতুবুদ্দিন আইবেক। তার গায়ে কিছুটা হলেও বৈদিক হিন্দু রক্ত ছিলো ।

ইসলামের আফগানিস্তান বিজয়কে তাই ভারতবর্ষে ইসলামী শাসনের থেকে আলাদা করে দেখলে চলবে না। কারন, একমাত্র মুহাম্মদ বিন কাসিম ছাড়া অন্য কোনো খাটি আরবী ভারতবর্ষে ইসলামী শাসন কায়েম করতে আসেনি।

এসেছে, ইসলামের দাসেরা, যাদের মধ্যে আছে সুবুক্তিগীন, তার ছেলে গজনীর মাহমুদ, মুহাম্মদ ঘোরী, আবদালী, করনানি, খলজী, দুরানী, মোঘল বাবুর ইত্যাদি। সবাই এসেছে, আফগানিস্তান এবং মধ্যে এশিয়ার গজনী, ঘুর , সমরখন্দ, ফারগানা, বুখারা থেকে।

লুট করে নিয়েছে ভারতের সম্পদ, সেই ভারতীয় সমদে বলীয়ান হয়ে সেই রাজ্য গুলি ফুলে ফেপে উঠেছে, নির্মিত হয়েছে অসংখ্য সৌধ, চোখ ধাঁধানো মসজিদ, রাস্তা ঘাট, ফল ফুলের বাগান শোভিত নান্দনিক সব জায়গা।

আরবী ইসলামের কাছে বৈদিক আফগানিস্তানের পরাজয়, ইসলামের ভারতে প্রবেশের পথ সুগম করে দেয়। না হলে, খাইবার গিরিপথ পার হয়ে ভারত বর্ষ বিজয় তাদের অধরাই থেকে যেতো।

ঠিক একই ভাবে শকেরা ভারতে এসেছিলো, হুনেরা এসেছিলো, মোগলেরা এসেছিলো। অন্য জাতিরা ভারতীয় জন জীবনে এবং ভারতীয় ধর্ম এবং সংষ্কৃতি গ্রহন করেছে।

করেনি শুধু মধ্য এশিয়া থেকে আগত জাতি গুলি যারা তাদের ধর্ম পরিবর্তন করেছিলো। সেই গজনীর শাসক, ঘুরের শাসক ঘোরী, , খলজী, দুরানী, আবদালী, মোগল বাবুর ভারতবর্ষের প্রত্যন্ত এলাকায় জ্বালিয়েছে ধংসের আগুন।

সেই আগুনে জ্বলে পুড়ে খাঁক হয়ে গেছে হাজার হাজার বছরের জ্ঞান তপস্বীদের জ্ঞান সমৃদ্ধ বৈদিক সভ্যতা। যা পড়ে আছে সেটা এক নিদারুন ভাবে কলুষিত, বিকৃত সভ্যতা। এই বিকৃতির জন্য দ্বায়ী ওই বৈদেশিক বর্বরতা।

“ইসলামের আফগানিস্তান বিজয়” ( মুল বই “হিন্দুরাজাদের স্বাধীনতা রক্ষার সংগ্রাম”।)

ডাঃ মৃনাল কান্তি দেবনাথ

আর পড়ুন….

আফগানিস্তান বিজয় আফগানিস্তান বিজয় আফগানিস্তান বিজয় আফগানিস্তান বিজয়