“খ্রীষ্টানদের নিয়ে একটি ঘটনা”
ডাঃ মৃনাল কান্তি দেবনাথ
দুটি ঘটনা, জানলে বুঝবেন যে খ্রীষ্টান রা তাদের ধর্ম প্রচার নিয়ে, প্রকারান্তরে দল ভারী করতে কেমন চেষ্টা চালায়।
১৯৮৪ সাল। দক্ষিন আমেরিকার ‘ব্রিটিশ গায়ানা’ ছেড়ে ওয়েষ্ট ইন্ডিজের একটি দ্বীপে এসেছি। আগেই বলেছি, ৯৯.৯৯% খ্রীষ্টান। এদের মধ্যে প্রায় ৮৫ % নিগ্রো, ৬% ভারতীয় বংশোদ্ভুত যারা সবাই খ্রীষ্টান, বাকী সব ইউরোপীয়, তাও খ্রীষ্টান। মোড়ে মোড়ে চার্চের ছড়া ছড়ি। আমরা মাত্র ৫ ঘর হিন্দু, যারা সদ্য ভারত থেকে গিয়েছি। তার মধ্যে একজন মিসেস দেবনাথের বড়দির ছেলে, ডাক্তার। একজন বাংলাদেশের ডাক্তার, যিনি মানবতার কথা, ‘সর্ব ধর্ম সমন্বয়ের কথা বলেন, পুজা পাঠ তার কাছে, “ভগবানের কাছে ঘ্যানর ঘ্যানর করা” । তার ঘরে বসার ঘরে রামকৃষ্ণদেব, স্বামী বিবেকানন্দ, মা সারদা, যীশু খ্রীষ্টের ছবি আছে । আর আছে একটি ছবি যার ফ্রেমটা খালি সাদা কাগজ, কোনো ধর্ম গুরুর ছবি নেই। তিনি বলেন ওটা নবী মহম্মদের ছবি।
বাকী দুজনের একজন মালয়ালী, একজন তেলেগু। সবাই ডাক্তার।
আমার বাড়ির পাশে একটি ছোট চার্চ। সেখানে ‘সানডে স্কুল’ হয়— ছোট ছোট ছেলে মেয়েদের বাইবেল শিক্ষা কেন্দ্র। মিঃ ও মিসেস ব্রায়ান্ট, আমেরিকান, সেই চার্চ এবং সানডে স্কুল চালান।
মিসেস ব্রায়ান্ট এলেন আমার বাড়ি। মিসেস দেবনাথকে জানালেন তিনি পিয়ানো বাজানো শেখাতে পারেন। কার কাছে শুনেছেন মিসেস দেবনাথ ‘মিউজিক’ ভালো বাসেন। মিসেস দেবনাথ তো আল্লাদে আটখানা। পিয়ানো শেখা যাবে তাও আবার বাড়ি বসে। কিনলাম পিয়ানো। শুরু হলো আমার রবিবারের সকাল মাটি হওয়া। ছুটির দিনে বাড়িতে একটু নিরিবিলি থাকা আমার চিরকালের প্রেম।
একদিন মিসেস ব্রায়ান্ট বললেন, আপনার বাচ্চারা রবিবারে কি করে? ওরা ছোট, ৬ বছর আর ৪ বছরের। কি করবে, খেলা ধুলা করে, ভাই বোনে হুল্লোড়ি করে, আমার চুপ চাপ থাকা বন্ধ করে। দেখলাম, পরের সপ্তাহ থেকে রবিবার সকালে বাড়ি একদম ফাকা। ছেলে মেয়েরা সানডে স্কুলে, সঙ্গে মিসেস দেবনাথ ওখানেই পিয়ানো শিখছেন। আমি হাফ ছেড়ে বাচলাম।
বোধ হয় মাস ছয়েক পরের কথা। মিসেস ও মিঃ ব্রায়ান্ট আমাদের নিমন্ত্রন করলেন তার বাড়িতে লাঞ্চে। গেলাম । লাঞ্চ সেরে বারান্দায় বসে দূরে সমুদ্রের শোভা দেখছি। ওরা দুজনে এলেন। মিসেস দেবনাথ ও আছেন।
“So, when are you Baptizing doctor?”—
“What?” I asked surprisingly. Mr. Bryant repeated.
“Why should I (we) do that?” I exclaimed.
“Your Children are enjoying Sunday School. Mrs Debnath is quite comfortable with us. Now, we thought, it is the most rightful act to save yourself and your family from sin.” Mr. Bryant was most confident.
It was a Saturday. I said, “we will give you answer tomorrow morning”.
সন্ধ্যায়, আমরা নিত্য দিনের মতো আমাদের সন্ধ্যারতি, ভজন, কীর্তন এবং গীতা পাঠ করলাম। সব শেষ হলে , আমার মেয়ে বললো, “বাবা, আমরা আর কাল থেকে সানডে স্কুলে যাবো না”।
“কেনো” আমি জিজ্ঞাষা করলাম।
“ওনারা যে বললেন, সানডে স্কুলে গেলে খ্রীষ্টান হতে হবে। তা আমরা তো তা হবো না। মায়ের একদম ভালো লাগেনি। মাও আর পিয়ানো শিখবেন না”।
আমি একটু হাসলাম। আমি জানতাম, কাল কি উত্তর নিয়ে মিসেস দেবনাথ ওদের কাছে যাবেন।
এর পর মিঃ ও মিসেস ব্রায়ান্ট আর আমাদের সংগে যোগা যোগ রাখেননি।
এর কয়েক মাস বাদে মালয়ালী এবং তেলেগু ডাক্তার দুজন খ্রীষ্টান হয়ে যায়। বর্তমানে ওই দ্বীপে মাত্র একজন হিন্দু আছে- আমার শালীর ছেলে আর ঐ সর্ব ধর্ম সমন্বয়ের মতাদর্শী। তার এক ছেলে আমেরিকায় গিয়েই একটি খ্রীষ্টান (আমেরিকান) মেয়েকে বিয়ে করেছে । তাতে তার “গ্রীন কার্ড “পেতে সুবিধা হয়েছে।
আমাদের দুই সন্তান, তিন নাতনী এবং এক নাতি ওই আমেরিকাতেই আছে,কিন্তু তারা এখানকার হিন্দুদের থেকেও বেশী হিন্দু।