ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে মুসলমানদের ভূমিকা প্রসঙ্গে পি আর ঠাকুর মহাশয় বলছেন …….
“এই সময় আমি দেখিতাম কলিকাতায় হিন্দুগণ অপেক্ষা মুসলমানগণ এই অসহযোগ আন্দোলনে অধিকতর উৎসাহ দেখাইত এবং ইহারা হিন্দুগণ অপেক্ষাও দেশপ্রেমিক বলিয়া মনে হইত| মুসলমানেরা মনে করিত হিন্দুগণের সহিত আন্দোলনে যুক্ত হইয়া তাহারা তুরস্কের খিলাফত সমস্যার সমাধান করিয়া লইবে| পক্ষান্তরে হিন্দুরা মনে করিত মুসলমানদিগকে দলে টানিয়া অসহযোগ আন্দোলনকে অধিকতর ঘোরাল করিয়া তুলিতে পারিলে জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকান্ডের তীব্র প্রতিবাদ জ্ঞাপন করা হইবে এবং তদ্বারা দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামকে বিশ্বের চক্ষে সমুজ্জ্বল করিয়া তুলিবার সুযোগ উপস্থিত হইবে| হিন্দুগণকে ধৈর্য ও দৃঢ়তার সহিত এই আন্দোলনে যোগদান করিতে দেখিতাম| পরন্তু মুসলমানদিগকে এই সম্পর্কে ক্ষিপ্রতার সহিত অগ্রসর হইতে দেখিয়া আমার মনে হইত ইহারা কোন দেশপ্রেম দ্বারা প্রণোদিত হইয়া কার্য করিতেছে না, খিলাফত সমস্যা ইহাদিগকে ধর্মোন্মাদ করিয়া তুলিয়াছে মাত্র| কারণ খিলাফত সমস্যা ভারতের কোন সমস্যা নহে| উহা সম্পূর্ণ বৈদেশিক ব্যাপার| ভারতীয় মুসলমানদিগের এই বিষয়ে কোন উত্তেজনা করার কোন অর্থই হইতে পারে না|………… এই খিলাফত উন্মত্ততা একটি অবাঞ্ছনীয় সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ব্যাতীত অন্য কোন আখ্যা দ্বারা ইহাকে ভূষিত করা চলে না| জালিয়ানওয়ালার হত্যাকান্ডের জন্য প্রতি অমুসলমান ভারতীয় যখন শোকে দুঃখে ও ক্ষোভে মূহ্যমান তখন ভারতের কোন মুসলমান কিংবা কোন মুসলমান প্রতিষ্ঠান এই গুরুতর হত্যাকান্ডের জন্য এক বিন্দু অশ্রুপাত করে নাই| তাই তখন ভাবিতে বাধ্য হইতাম ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে ভারতীয় মুসলমানদের কণামাত্র অবদান নাই|” ……..
শ্রী শ্রী প্রমথ রঞ্জন ঠাকুর
মহাসঙ্ঘাধিপতি, মতুয়া মহাসঙ্ঘ
” আত্মচরিত ও পূর্বস্মৃতি”
প্রথম সংস্করণ, পৃষ্ঠা : ১৯৬,১৯৭