♨🚫 এক্সক্লুসিভঃ ‘নিষিদ্ধ হোক বোরকা, বোরকা পরার স্বাস্থ্যগত, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় কুপ্রভাব’ – ২য় পর্ব 🚫♨
লেখকঃ 💙💚 মুশফিক ইমতিয়াজ চৌধুরী 💚💙
ফেসবুক আইডিঃ https://www.facebook.com/mushfiqueimtiaz
বোরকা উন্মোচন সিরিজের ১ম পর্বে শরীরের হাড়তন্ত্রের বিভিন্ন অসুখের ক্ষেত্রে বোরকা পরা তথা সূর্যালোক না পেয়ে ভিটামিন ডি স্বল্পতার ভূমিকা আলোচনা করা হয়েছিল। আজ হাড়তন্ত্রের অসুখ ব্যতীত অন্যান্য তন্ত্রের অসুখে বোরকার ক্ষতিকর ভূমিকা আলোচনা করা হবে। আসুন শুরু করা যাক আজকের আলোচনা।
📛 প্রশ্নঃ তাপ ও ঘর্ম উৎপাদক পোশাক বোরকা শরীরে কী কী ক্ষতিকারক অবস্থা সৃষ্টি করতে পারে ?
✅ উত্তরঃ বোরকা সাধারণত কালো বা নীল রঙের হয়ে থাকে, এবং হালকা রংয়ের চেয়ে গাঢ় রং অনেক বেশি তাপ শোষণ করে। ফলে গাঢ় রংয়ের পোশাক পরলে গরম বেশি লাগে, শরীর জলদি ঘেমে যায় এবং বোরকা থেকে সেই তাপ শরীরের বাইরে বের হতে পারে না, শরীরেই রয়ে যায়।
☑ ব্যাখ্যাঃ আমরা জানি যে,
👉 শক্তির সংরক্ষণশীলতা নীতিঃ শক্তির সৃষ্টি বা বিনাশ নেই, শক্তি কেবল একরূপ থেকে অপর এক বা একাধিকরূপে পরিবর্তিত হতে পারে। মহাবিশ্বের মোট শক্তির পরিমাণ নির্দিষ্ট ও অপরিবর্তনীয়।
👉 গাঢ় রঙ বেশি আলোকরশ্মি শোষণ করে, হালক রঙ কম আলোকশক্তি শোষণ করে। কালো রঙের পোশাক কালার স্পেকট্রামের সকল আলোকরশ্মি শোষণ করে। এই শোষিত শক্তি হারিয়ে যায় না বরং এক রূপ থেকে অন্য রূপে রূপান্তরিত হয় অর্থাৎ সূর্যালোকের আলোকশক্তি বোরকা দ্বারা শোষিত হয়ে তাপশক্তিতে রূপান্তরিত হয়। ফলে, কালো, নীল ও গাঢ় রঙগুলোর বোরকাতে গরম বেশি লাগে আর সাদা রঙের বোরকাতে তুলনামূলক কম গরম লাগে। সাদা রঙ আলোকরশ্মি শোষণ না করে প্রতিফলিত করলেও বোরকার ক্ষেত্রে সমস্যা আছে। সমস্যাটি হলো, বোরকা এমন একটি পোশাক যেটিতে শরীর পুরোটাই আবৃত থাকে। ফলে বোরকা দ্বারা শোষিত আলোকরশ্মি বোরকার ভেতরে তাপশক্তি হয়ে রয়ে যায়, দ্রুত বাইরে বের হতে পারে না। ফলে বোরকার সমগ্র শরীর ঢেকে রাখা – ডিজাইনের কারণে সাদা বোরকাতেও গরম লাগে।
সূত্রঃ http://www.whyzz.com/why-do-dark-colors-absorb-heat
👉 শরীরে অত্যাধিক ঘর্ম উৎপাদনের ফলে ১) পানিশূন্যতা (Dehydration) ২) ঘামের দুর্গন্ধ (Bad Odour) ৩) মূর্ছা যাওয়া (Syncope) ৪) মাথা ঘোরা (Dizziness) ৫) অস্থিরতা (Restlessness) ৬) জ্বর (Pyrexia) ৭) বুক ধড়ফড়ানি (Palpitation) ৮) শারীরিক তাপমাত্র বৃদ্ধি (Hyperthermia) ৯) মলত্যাগে অস্বাভাবিক পরিবর্তন (Altered Bowel Habit) ১০) মানসিক অস্বস্তি (Mental Incontinence) ইত্যাদি সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে।
সূত্রঃ http://en.wikipedia.org/wiki/Hyperhidrosis
👉 Heat Illness বা তাপমাত্রা সংক্রান্ত অসুস্থতাগুলোর অন্যতম কারণ বোরকা যাতে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা (Thermoregulation) চরমভাবে ব্যহত হয়। হিট ইলনেসের মধ্যে রয়েছে –
১) Heat Stroke ২) Heat Exhaustion ৩) Heat Syncope ৪) Heat Edema ৫) Heat Cramp ৬) Hit Rash ৭) Heat Tetany
👉 হিট স্ট্রোক প্রতিরোধের জন্য হালকা রঙের সুতি পোশাক পরতে বলা হয় আর সেখানে গাঢ় রংয়ের বোরকা পরলে Evaporation বা বাষ্পীভবন সহজে হতে পারে না। তাই তাপ শরীরেই রয়ে যায়, বাইরে বের হতে পারে না –
In environments that are not only hot but also humid, it is important to recognize that humidity reduces the degree to which the body can lose heat by evaporation. In such environments, it helps to wear light clothing such as cotton in light colors
সূত্রঃ http://en.wikipedia.org/wiki/Heat_stroke
📛 প্রশ্নঃ বোরকা পরিহিতা মহিলাদের মধ্যে স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বেশি কেন?
✅ উত্তরঃ ভিটামিন ডি স্বল্পতার সঙ্গে স্তন ক্যান্সারের খুবই গভীর সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। আরব বিশ্বে নারীদের স্তন ক্যান্সারের প্রকোপ বেশি যার জন্য অন্যতম দায়ী চরম রক্ষণশীল ইসলামিক সমাজ। ‘স্তন’ সম্পর্কিত যে কোন বিষয় মধ্যপ্রাচ্যে এক প্রকার নিষিদ্ধ এবং ট্যাবু হিশেবে গণ্য করা হয়। স্ত্রীর স্তন একজন পরপুরুষ দেখে ফেলবে কিংবা নিজের স্তন দেখালে স্বামী সেটাকে মেনে নেবে না – এই ভয়ে মধ্যপ্রাচ্যে অনেক মহিলাই ব্রেস্ট ক্যান্সার চিকিৎসার ব্যাপারে নিরুৎসাহী এবং তাদের স্বামীরাও এটি চান না। কি নিদারুণ পরিহাস যে, ইসলামের পুরুষতান্ত্রিকতা ও রক্ষণশীলতার কাছে জীবন নয় বরং ইসলামী আইনকানুন অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। স্তন ক্যান্সারে একজন নারী মারা যাচ্ছে, তারপরও সেই তথাকথিত অনিয়মের নিয়মকেই তারা বড় করে দেখছে। দেখুন –
One Saudi woman ignored the cancer growing in her breast because she didn’t want to risk a referral to a male doctor. Another was divorced by her husband on the mere suspicion she had the disease, while a third was dragged away from a mammogram machine because the technicians were men.
সূত্রঃ http://www.msnbc.msn.com/id/21455455/ns/health-cancer/t/breast-cancer-often-untreated-middle-east
👉 ব্বিজ্ঞানী জো এলেন ওয়েলশের ২৫ বছর ব্যাপী রিসার্চে প্রমাণিত হয়েছে যে ভিটামিন ডি কতিপয় রিসেপটরকে বাইন্ডের মাধ্যমে অ্যাকটিভেট করে যেসব রিসেপটরের অকার্যকারিতা স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি চরম বাড়িয়ে দেয়। এই রিসেপ্টরগুলোকে বলা হয় VDR এবং ভিটামিন ডি স্বল্পতায় VDR mediated Gene Expression বাধাগ্রস্ত হয় যা বক্ষকোষগুলোর সাধারণ কোষ থেকে ক্যান্সার কোষে রূপান্তর ঘটায়। আসুন দেখি –
1α,25-Dihydroxyvitamin D3 [1,25(OH)2D3], the biologically active form of vitamin D that interacts with the vitamin D receptor (VDR), is a coordinate regulator of proliferation, differentiation, and survival of breast cancer cells. Therefore, vitamin D compounds that bind and activate VDRs offer promise as therapeutic agents for the treatment of established breast cancer. In addition, epidemiologic, clinical, and animal studies suggested that vitamin D status is important for protection against the development of breast cancer….In turn, suboptimal generation of 1,25(OH)2D3 in the mammary gland would result in deregulation of VDR-mediated gene expression and would possibly predispose mammary cells to transformation.
সূত্রঃ http://www.ajcn.org/content/80/6/1721S.abstract
অতিরিক্ত পাঠঃ
ক) Gissel T, Rejnmark L, Mosekilde L, Vestergaard P. Intake of vitamin D and risk of breast cancer–a meta-analysis. Journal of Steroid Biochemistry and Molecular Biology 2008; 111(3–5):195–199.
খ) http://abcnews.go.com/GMA/OnCall/study-vitamin-d-kills-cancer-cells/story?id=9904415
গ) http://abcnews.go.com/GMA/OnCallPlus/story?id=3759570&page=1
ঘ) http://www.thepeninsulaqatar.com/qatar/131111-arab-women-at-risk-of-breast-cancer-studies.html
☑ সিদ্ধান্তঃ এভাবে অজস্র আরব নারী চিকিৎসাহীনভাবেই ধীরে ধীরে Metastatic Breast Cancer বা শরীরের অন্যত্র ছড়িয়ে পড়া স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। বোরকা পরিধান এক্ষেত্রে অন্যতম প্রভাবক হিশেবে কাজ করে।
📛 প্রশ্নঃ বোরকা পরিহিতাদের শ্বসনতন্ত্রের সংক্রমণ বেশি হয় কেন ?
✅ উত্তরঃ ভিটামিন ডি এর অভাবে। বোরকা পরিহিতা নারীদের মধ্যে ইনফ্লুয়েঞ্জাসহ অন্যান্য রেস্পাইরেটরি ডিজিজের প্রকোপ বেশি ।
সূত্রঃ
ক) Cannell JJ, Vieth R, Umhau JC, et al. (December 2006). “Epidemic influenza and vitamin D”. Epidemiol. Infect. 134 (6): 1129–40. doi:10.1017/S0950268806007175. PMC 2870528. PMID 16959053.
খ) Cannell JJ, Zasloff M, Garland CF, Scragg R, Giovannucci E (2008). “On the epidemiology of influenza”. Virol. J. 5: 29. doi:10.1186/1743-422X-5-29. PMC 2279112. PMID 18298852.
২০১৭ সালের প্রায় ১০০০০ রোগীর ওপর পরিচালিত একটি সিস্টেমিক রিভিউ ও মেটা অ্যানালাইসিস রিপোর্ট জানাচ্ছে – কমন কোল্ড থেকে নিউমোনিয়া কিংবা ব্রঙ্কাইটিসের ক্ষেত্রে ভিটামিন ডি স্বল্পতার উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রয়েছে। ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে ভিটামিন ডি একটি প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা তৈরি করে যার ফলে শ্বসনতন্ত্রের সংক্রমণ সহসা হতে পারে না।
সূত্রঃ https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pmc/articles/PMC5310969
📛 প্রশ্নঃ কার্ডিওভাস্কুলার, নিউরোলজিক্যাল, অটোইমিউন ইত্যাদি বিভিন্ন অসুখগুলোর ক্ষেত্রে ভিটামিন ডি এর সংশ্লিষ্টতা কী?
✅ উত্তরঃ
👉 ১) Stroke, Ishchemic Heart Disease, Atherosclerosis, Peripheral Arterial Disease সহ বিভিন্ন Cardiovascular Disease এর পেছনে ভিটামিন ডি স্বল্পতার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।
সূত্রঃ
ক) https://en.wikipedia.org/wiki/Vitamin_D#Cardiovascular_disease
খ) Pittas, AG; Chung, M; Trikalinos, T; Mitri, J; Brendel, M; Patel, K; Lichtenstein, AH; Lau, J et al. (March 2010). “Systematic review: Vitamin D and cardiometabolic outcomes”. Annals of Internal Medicine 152 (5): 307–14.
👉 ২) রিউমাটয়েড আর্থরাইটিস, মাল্টিপল স্ক্লেরোসিস, জুভেনাইল ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন অটোইমিউন ডিজিজ প্রতিরোধে ভিটামিন ডি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে বিশিষ্ট বিজ্ঞানী মাইকেল হলিকের “Sunlight and vitamin D for bone health and prevention of autoimmune diseases, cancers, and cardiovascular disease” শীর্ষক রিসার্চে প্রমাণিত হয়েছে –
সূত্রঃ https://academic.oup.com/ajcn/article-pdf/80/6/1678S/23714706/1678s.pdf
👉 ৩) পারকিনসন্স এবং আলঝেইমার্স ডিজিজের সঙ্গে ভিটামিন ডি স্বল্পতার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। “Prevalence of vitamin d insufficiency in patients with Parkinson disease and Alzheimer disease”. শীর্ষক রিসার্চে যক্ষা ও এইচআইভি প্রতিরোধেও ভিটামিন ডি কিছুটা ভূমিকা রাখে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
সূত্রঃ Evatt, ML; Delong, MR; Khazai, N; Rosen, A; Triche, S; Tangpricha, V (2008). “Prevalence of vitamin d insufficiency in patients with Parkinson disease and Alzheimer disease”. Archives of neurology 65 (10): 1348–52. doi:10.1001/archneur.65.10.1348. PMC 2746037. PMID 18852350.
👉 ৪) বয়স বাড়ার সাথে সাথে চুল পড়ার প্রবণতাও বেড়ে যায়, নতুন চুল গজানোর ক্ষমতাও হ্রাস পায়। “Does D matter? The role of vitamin D in hair disorders and hair follicle cycling” শীর্ষক রিসার্চ থেকে দেখা যায় – ভিটামিন ডি এর সাথে হেয়ার ফলিকল গ্রোথের সম্পর্ক রয়েছে ।
সূত্রঃ https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pubmed/20178699
👉 ৫) বোরকা পরিহিতাদের মধ্যে ভিটামিন ডি স্বল্পতার কারণে মাংসপেশীর দুর্বলতা (Muscle Ache & Weakness) ও ঝাঁকি মারা (Muscle Fasciculation & Twitching) খুবই স্বাভাবিক।
সূত্রঃ https://www.livestrong.com/article/486552-can-excessive-vitamin-d-supplements-cause-muscle-cramps
👉 ৬) ভিটামিন ডি এর অভাবে দাঁতের প্রদাহ এবং ক্ষয় হতে পারে যাকে আমরা Periodontitis বলে অভিহিত করি এবং এটি থেকে রোগী পুরো দাঁতটাই খোয়াতে পারেন।
সূত্রঃ https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pubmed/27696284
👉 ৭) Malabsorption, Celiac Disease, Pre-eclampsia, and Prematurity অর্থাৎ ত্রুটিপূর্ণ খাদ্য শোষণ ও গ্লুটেন সমৃদ্ধ খাদ্য গ্রহণে ক্ষুদ্রান্ত্রের ড্যামেজ, গর্ভবতী নারীর উচ্চরক্তচাপ এবং ৩৭ সপ্তাহের আগেই অপরিণত শিশু জন্মদান ইত্যাদি সমস্যার সঙ্গে ভিটামিন ডি স্বল্পতার সম্পর্ক আছে বলে অধুনা রিসার্চ থেকে জানা যায়।
সূত্রঃ https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pubmed/27245342
👉 ৮) ভিটামিন ডি স্বল্পতায় আক্রান্ত নারীদের মধ্যে বিষণ্নতার হার বেশি বলে অধুনা রিসার্চে প্রমাণিত হয়েছে।
সূত্রঃ https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pubmed/27750060
👉 ৯) কলোরেকটাল, প্রস্টেট, স্কিন ও প্যানক্রিয়েটিক ক্যান্সারের ঝুঁকি মোকাবেলায় ভিটামিন ডির ইতিবাচক ভূমিকা রয়েছে। বিভিন্ন এপিডেমিওলজিক স্টাডি ও র্যান্ডোমাইজড কন্ট্রোলড ট্রায়াল থেকে প্রমাণিত হয়েছে যে উপরিউক্ত ক্যান্সার সৃষ্টি ও বাড়াতে ভিটামিন ডি স্বল্পতার একটি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রয়েছে। ফলে বোরকাধারীদের মধ্যে ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি সাধারণ পোশাকধারী ও সূর্যালোকে প্রতিদিন অন্তত ১০ মিনিট অতিবাহিতকারীদের থেকে অনেক বেশি।
সূত্রঃ http://www.cancer.gov/cancertopics/factsheet/prevention/vitamin-D
👉 ১০) লক্ষণীয়, ইউরোপের অজস্র দেশের হাসপাতালে নিকাব পরা নিষিদ্ধ। আসুন যুক্তরাজ্যের হাসপাতালগুলো নিকাব সম্পর্কে কী বলে জেনে নেই –
সূত্রঃ http://www.nhsemployers.org/your-workforce/plan/building-a-diverse-workforce/need-to-know/wearing-face-veils-in-the-workplace
📛 প্রশ্নঃ বোরকা পরিধান করা নারীদের মধ্যে শুয়ে থাকার প্রবণতা ও ঘুমকাতুরতা বেশি কেন ?
✅ উত্তরঃ বোরকা পরিধান করা নারীদের মধ্যে অত্যাধিক ঘুমকাতরতা এবং শুয়ে থাকার প্রবণতা খুবই বেশি যেটি স্থূলত্ব ও ডায়াবেটিসসহ অনেক ক্রনিক ডিজিজের অন্যতম কারণ।
👉 সূর্যের আলো চোখের মধ্য দিয়ে আমাদের শরীরের ভেতরে প্রবেশ করে মেলাটোনিন নামক একটি হরমোন তৈরীতে বাধা দেয় যা ঘুম উৎপাদক। উল্লেখ্য এই হরমোনটি শুধু অন্ধকারেই প্রস্তুত হয়, আলোতে হতে পারে না। অনিদ্রার রোগীদের নিদ্রা আনয়ন করতে নিদ্রা উদ্দীপক হিসেবে এটি ব্যবহৃত হয়। কিন্তু সূর্যালোক থেকে চরমভাবে বঞ্চিত হওয়ায় অনেক মুসলিম নারী মেলাটোনিনের অধিক নিঃসরণের ফলে দিনের বেলাতেও ঘুমকাতরতা অনুভব করেন যেটির কারণে তাদের মধ্যে শুয়ে থাকার প্রবণতা সৃষ্টি হয় এবং এটি Diabetes, Obesity & Cardiovascular Disease সহ বিভিন্ন অসুখের রিস্ক ফ্যাক্টররূপে কাজ করে।
সূত্রঃ http://www.truestarhealth.com/members/cm_archives13ML3P1A8.html
☑ সিদ্ধান্তঃ সুতরাং, বোরকা পরিধানের কারণে সূর্যালোক থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন ডি তৈরি করতে না পারা বোরকা পরিহিতাদের জীবন একেবারেই স্বাস্থ্যকর জীবন নয়। হাড়ের সমস্যা, হিট ইলনেস ও ব্রেস্ট ক্যান্সারের ঝুঁকি তাদের মধ্যে চরমভাবে বেশি এবং তাদের একাংশের মধ্যে বাকি সমস্যাগুলোও দেখা যায়। ধর্মীয় গোঁড়ামির জন্য এভাবে জীবনকে বিভিন্ন স্বাস্থ্যগত ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেওয়া ও অসুস্থ জীবনযাপন করা কোনভাবেই বরদাশত করার নয়।
📛 প্রশ্নঃ মুসলিমদের বক্তব্য মোতাবেক, ম্যালিগন্যান্ট মেলানোমা নামক স্কিন ক্যান্সার প্রতিরোধ করার জন্য কি বোরকা পরিধান করা আদৌ জরুরী ?
✅ উত্তরঃ একদমই জরুরী নয়। কারণ –
👉 ১) ম্যালিগন্যান্ট মেলানোমা সাধারণত এমন মানুষেরই হয় যাদের উল্লেখিত ব্যাপারগুলো রয়েছে – Fair skin, Red or blonde hair, Light eyes, More than 50 moles, History of sunburn or UV exposure, Family & Personal history of skin cancer
👉 ২) ম্যালিগন্যান্ট মেলানোমার জন্য দায়ী সূর্যের আল্ট্রা ভায়োলেট রে এর এ+বি উভয় প্রকরণ থেকে বাঁচতে দরকার ব্রড স্পেকট্রাম উচ্চ সান প্রোটেকটিং ফ্যাক্টর ৩০ বা তদূর্ধ্ব সানস্ক্রিন কিংবা সানব্লক, সানগ্লাস, টুপি ও সাদা/হালকা রঙের কাপড়, একদম দুপুরে যেন রোদ না লাগে – সেটি নিশ্চিত করা, ইনডোর ট্যানিং বেড ব্যবহার না করা, তীব্র রোদে পুকুর-নদী, বরফাচ্ছন্ন ও ধুলোবালিময় এলাকায় না থাকা এবং সর্বোপরি পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন ডি উৎস সামুদ্রিক মাছ ও সাপলিমেন্ট গ্রহণ করা, বোরকা নয়।
সূত্রঃ https://www.curemelanoma.org/about-melanoma/prevention
সূত্রঃ http://en.wikipedia.org/wiki/Melanoma
👉 ৩) অন্যান্য ক্যান্সারের তুলনায় মেলানোমা হওয়ার সম্ভাবনা বিরল। আসুন আমেরিকান সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল ও প্রিভেনশনের গ্রাফটি দেখি –
সূত্রঃ https://nccd.cdc.gov/uscs/toptencancers.aspx
দেখা যাচ্ছে – প্রাদুর্ভাবের বিচারে ব্রেস্ট ক্যান্সারের অবস্থান যেখানে শীর্ষে, মেলানোমার অবস্থান সেখানে ৬ষ্ঠ স্থানে। প্রতি ১ লাখ মানুষে ব্রেস্ট ক্যান্সার ১২৩.৯ জনে পক্ষান্তরে মেলানোমা মাত্র ২১.৪ জনে। ১২৩.৯ – ২১.৪ = বিশাল ১০২.৫ ব্যবধান ! এজন্যই দুনিয়ার কোটি কোটি মানুষ বোরকা ছাড়াই সূর্যালোকে অবস্থান করছে এবং তাদের খুব সামান্য অংশেরই ম্যালিগন্যান্ট মেলানোমা হয়েছে। তাছাড়া মেলানোমা এমনিতে হয়না, এটি হতে হলে মাত্রাতিরিক্ত এক্সপোজার (Over Exposure) প্রয়োজন এবং মাত্রাতিরিক্ত এক্সপোজার শুধুমাত্র তাদেরই হয় যাদের সূর্যালোকে প্রতিদিন একটি বিশাল সময় অবস্থান করে কাজ করতে হয়। পক্ষান্তরে মেডিকেল সায়েন্স বলে সপ্তাহে ৩-৪ বার ১০-১৫ মিনিটের জন্য সূর্যালোকে অবস্থান করলেই ভিটামিন ডি’র চাহিদা সাধারণত পূরণ হয়ে যায়। আর আরেকটি বিষয় হলো – মানবসৃষ্ট সমস্যা ওজোন লেয়ারের ক্ষয়, অর্থাৎ গ্রীন হাউজ এফেক্টের পরিণামে আল্ট্রা ভায়োলেট রশ্মি অধিকহারে পৃথিবীতে প্রবেশ করার সুযোগ পাচ্ছে যা একটি মানবসৃষ্ট সমস্যা। পরিমিত আল্ট্রা ভায়োলেট রশ্মি শরীরের জন্য স্বাস্থ্যকর কেননা এটিই ভিটামিন ডি উৎপাদনের উদ্দীপক।
গ্রাফটিতে লক্ষ করুন, ব্ল্যাক, এশিয়ান, হিস্প্যানিক ও রেড-ইন্ডিয়ান-আলাস্কানদের হয় এমন শীর্ষ ১০টি ক্যান্সারের তালিকায় ম্যালিগন্যান্ট মেলানোমা নেই !
☑ সিদ্ধান্তঃ সুতরাং, বুঝতেই পারছেন যেসব মুসলিম গোঁজামিল দিয়ে বলতে চান যে সূর্যালোকে হাঁটলে ম্যালিগন্যান্ট মেলানোমা হয়, তারা সম্পূর্ণই মিথ্যেবাদী।
অনেক পণ্ডিতম্মন্য মূর্খ মুসলিমেরা বলার চেষ্টা করেন যে – ভিটামিন ডি স্বল্পতা পূরণে ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্ট খেলেই তো হয় কিন্তু বোরকা ছাড়া যাবেনা। প্রকৃতপক্ষে তারা অজ্ঞ বলেই এমনটি বলে থাকেন কেননা ন্যাচারাল সোর্স আর সিনথেটিক সোর্সের মধ্যে অনেক পার্থক্য ।
📛 প্রশ্নঃ ভিটামিন ডি উৎপন্নে সূর্যালোকের ন্যাচারাল সোর্স আর সিনথেটিক সোর্সের মধ্যে কোনটি অধিকতর ভালো ?
✅ উত্তরঃ নিঃসন্দেহে সূর্যালোক বা ন্যাচারাল সোর্স। কেননা,
👉 ১) ভিটামিন ডি বিষক্রিয়া (Hypervitaminosis D or Vitamin D Toxicity) এর জন্য সূর্যালোক নয় বরং শুধুমাত্র সিনথেটিক সোর্স দায়ী বলে বিভিন্ন রিসার্চে প্রমাণিত হয়েছে যা ওপরে লিংক সহকারে দেখানো হয়েছে।
👉 ২) সূর্যালোক দ্বারা ত্বকে প্রস্তুত ভিটামিন ডির Bioavailibility অত্যন্ত বেশি অর্থাৎ শরীর এটিকে সিনথেটিক ভিটামিনের চেয়ে দ্রুত এবং কার্যকরভাবে শরীরের পুষ্টি সাধনে কাজে লাগাতে পারে। এটি জলদি শরীর দ্বারা শোষিত হয় বলে অন্যান্য পুষ্টি উপাদানের চাহিদাও কম থাকে এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদান তখন শরীরের অন্যান্য কাজে যেমন – ফ্রি র্যাডিকেল ধ্বংস করতে ব্যবহৃত হওয়ার সুযোগ পায়। আমরা ডাক্তারগণ রোগীদের মাঝে মাঝে ভিটামিন সাপলিমেন্ট প্রেসক্রাইব করি এবং রোগী কয়েকদিন বা কয়েকমাস পরে অভিযোগ করেন যে ভিটামিন খেয়ে তাদের কোন লাভ হয়নি। এর অন্যতম কারণ সিনথেটিক ভিটামিনের Bioavailibility কম, তাই অনেকের শরীরই এটিকে দ্রুত এবং কার্যকরভাবে গ্রহণ করতে পারেনা। এছাড়া ভিটামিন ক্যাপসুলে আসলেই ভিটামিন থাকে কী না কিংবা কতটুকু থাকে এবং কী মানের কাঁচামাল থেকে প্রস্তুত করা হয় – এই বিষয়গুলো চিন্তার দাবি রাখে।
👉 ৩) সূর্যালোক ব্যতীত অন্যান্য ন্যাচারাল সোর্স শরীরে পর্যাপ্ত ভিটামিন ডি উৎপাদন করতে অক্ষম বলে রিসার্চে জানা গেছে –
Very few foods naturally contain vitamin D, and foods that are fortified with vitamin D are often inadequate to satisfy either a child’s or an adult’s vitamin D requirement.
সূত্রঃ https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pubmed/18400738
☑ সিদ্ধান্তঃ অতএব, ভিটামিন ডি এর ক্ষেত্রে সূর্যালোকের সমতুল্য বিকল্প কখনো ডায়েটারি সাপ্লিমেন্ট হতে পারে না।
সূত্রঃ
ক) http://www.usingvitaminswisely.com/natural-vitamins.html
খ) http://psicologiauigv.com/synthetic-vs-natural-vitamin-supplements-which-is-better.html
🎲 উপসংহারঃ
বোরকা উন্মোচন সিরিজের ১ম ও ২য় পর্বের আলোচনা থেকে এটি পানির মত পরিষ্কার যে বোরকা পরিধান বিভিন্ন স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি ও ক্ষতির কারণ এবং সেজন্য অবশ্যই বর্জনীয়। আগামী পর্বে বোরকা পরিধানের মাধ্যমে সংঘটিত ব্যক্তিগত, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় ক্ষতিগুলো আলোচনা করা হবে।
যারা বোরকা উন্মোচন সিরিজের ১ম পর্বটি এখনো পড়েননি, তারা নিচে প্রদত্ত সূত্র থেকে পড়ে নিতে পারেন।
সূত্রঃ https://www.facebook.com/mushfiqueimtiaz/posts/1797900426938959
লেখাটি ভাল লাগলে লাইক দিতে ভুলবেন না কেননা এই মুহূর্তে নাস্তিকতার বিকাশ ও প্রসারের স্বার্থে জনগণের একটি বিশাল অংশের সমর্থন প্রয়োজন। আপনার ১টি মাত্র লাইক বিপুল জনসমর্থন সৃষ্টির ক্ষেত্রে প্রভাবক হিশেবে কাজ করবে। আর যারা পারবেন তারা শেয়ার করবেন এবং মন্তব্য অংশে আপনাদের সুচিন্তিত মন্তব্য জানাবেন। আপনাদের লাইক-শেয়ার-কমেন্টে আমার যতটা না লাভ হবে, তার চেয়ে বেশি লাভ হবে নাস্তিক্যবাদের প্রচার ও প্রসারের যা এই মুহূর্তে একান্ত দরকার। লেখার দায়িত্ব আমার, শুধু আপনারা আমার ওপর আস্থা রেখে পাশে থাকবেন এবং অনুপ্রেরণা ও সমর্থন দিয়ে যাবেন। তাহলেই অল্প দিনেই একটি বড় অংশকে আমরা সন্দেহ ও সংশয়বাদী করে তুলতে সমর্থ হবো। সকলকে অসংখ্য ধন্যবাদ। ♥️✌️♥️